সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার দরকার। সংস্কার না হলে স্বৈরতন্ত্র মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। এতে দেশে দুঃশাসন ফিরে আসবে। তবে এই সংস্কার অন্তর্ভুক্তিমূলক, রাজনৈতিক, সুশাসনসহ সব বিষয় মাথায় রেখে করতে হবে।
সুজনের গোলটেবিল বৈঠক
সংস্কার না হলে দেশে দুঃশাসন ফিরে আসবে : আলী রীয়াজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে বৈঠকে বত্তৃদ্ধতা করেন বিচারব্যবস্থা কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাংবাদিক মনির হায়দার, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সঠিক গণতন্ত্রের চর্চা না থাকার কারণে দুর্বল ও ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন উঠতে পারে—কেন সংস্কার করতে হবে, কারা তুলছে এ সংস্কারের প্রস্তাব? এটা মূলত এসেছে জনগণের কাছ থেকে, তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ থেকে এসেছে। এখন কাঠামোগত বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া স্বৈরতন্ত্রের মোকাবেলা করা যাবে না।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, নির্বাচনের নামে প্রহসন করা হয়েছিল। আবার বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, এটা গণতান্ত্রিক নয়। বিচারহীনতা থেকে বেরিয়ে আসতে সংস্কার করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা কতগুলো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। সেখানে রাজনৈতিক দলের সংস্কারের কথাও বলা হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চা, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত, মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধসহ বেশ কিছু সুপারিশ রয়েছে। এসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র ভঙ্গুর হয়ে গেছে। চারদিকে অনেক অসংগতি। এ দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি ভেঙে গেছে। এ দেশের নির্বাচনী ও রাজনৈতিক অঙ্গন পরিচ্ছন্ন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করতে হবে। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
বিচারব্যবস্থা কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে অনেক দিন থেকেই নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। যে কারণে সংস্কার প্রস্তাবে বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতার কারণে এই প্রস্তাব প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রস্তাবের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজকে ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে।
বিগত দিনে সংবিধান সংশোধনের ৯০ শতাংশই ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তিনি বলেন, জনস্বার্থে সংবিধান সংস্কার জরুরি হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর বাধার কারণে বিগত দিনে তা সম্ভব হয়নি। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান সংস্কারের পক্ষে একটি ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছে, যা ইতিবাচক। ফলে নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও আশাবাদী হওয়ার জায়গা আছে। সবার সহযোগিতায় সংস্কার উদ্যোগ সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’