ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো যৌক্তিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো যৌক্তিক

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ। তাই আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি মনে করে, ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ করা উচিত। একই সঙ্গে সংস্থাটি দাবি করেছে, এ সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ঠিক হবে না।

এতে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে। গতকাল রবিবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও গবেষক মুনতাসীর কামাল অংশ নেন।

বর্তমান ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের ওপর ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ শতাংশ হারে কর বসে। প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপর কর নেই। পরের প্রথম এক লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী চার লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ এবং বাকি অর্থের ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর বসবে।

এ ছাড়া মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা হলো চার লাখ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা হবে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকা হবে। আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা-মাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যর জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা আরো ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল।

খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির তুলনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেশি। এ ছাড়া শহরের চেয়ে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। সাধারণ মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি। আগামী অর্থবছর এটি বাড়িয়ে চার লাখ টাকা নির্ধারণ করা উচিত। চলতি বাজেটে যা রয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা।

তিনি বলেন, অর্থবছর শেষে রাজস্ব ঘাটতি এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। গত মাসে মূল্যস্ফীতি কমেছে, তবে গ্যাসের দামের যে প্রস্তাব আছে, সেটা যদি অনুমোদিত হয় তবে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যাবে। বৈশ্বিক শুল্ক যুদ্ধ ও মূল্যস্ফীতির ধারা বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুন শেষে মূল্যস্ফীতির হার ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনার কথা বলেছে, সেটি অর্জন করা কঠিন হবে।   

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটে দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক পুনুরুদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। নতুন বাজেটে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলার জন্য স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রমের পাশাপাশি অর্থনীতিকে কিভাবে স্থিতিশীল করা যায়, তার জন্য মধ্যমেয়াদি সংস্কারের কিছু ভিত্তি স্থাপন করা প্রয়োজন বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতের আর্থিক সংকটের দুষ্টচক্র ভাঙা, এনবিআরের সংস্কার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, চ্যালেঞ্জপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট প্রণয়ন করবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব সংগ্রহে স্থবিরতা, ব্যাংকিং খাতে তারল্যসংকটসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকট সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি প্রায় অসম্ভব। ২০২৬ অর্থবছরের বাজেট এমন একটি সময়ে প্রণয়ন করা হচ্ছে যখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এটি মোকাবেলায় দুরদর্শী ও সমন্বিত নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। মুদ্রানীতির স্থিতিশীলতা আনয়ন নীতিনির্ধারকদের অন্যতম কাজ। এটি অর্জনের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার স্থিতিশীল করা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেকে মনে করছেন, এর কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে বা চায়নার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে ২০১৬-এর পর চায়নার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি কিন্তু কমে গেছে, যা এই বছর আবার বেড়েছে। তাই এর কারণে সরাসরি আমাদের কোনো উপকার হবে, এটা আমি মনে করি না।

তিনি আরো বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ৯৩ শতাংশ রপ্তানি পণ্য হচ্ছে তৈরি পোশাক। যুক্তরাষ্ট্রে যে তৈরি পোশাক চায়না রপ্তানি করে, তার বেশির ভাগই হচ্ছে মেনমেইড ফাইবার তথা নন-কটন। কিন্তু বাংলাদেশ যা রপ্তানি করে তার মোটামুটি পুরোটাই হচ্ছে কটনভিত্তিক। তৈরি পোশাকের মধ্যে যে বৈচিত্র্য সেটিকে মাথায় রাখতে হবে।

এ ছাড়া ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই বাড়তি শুল্ক বসানোর যে নীতি গ্রহণ করেছে, এতে বাংলাদেশের রপ্তানির সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। বরং বাংলাদেশের রপ্তানির সুযোগ সীমিত ও স্থিমিত হওয়ার শঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মার্কিন শুল্ক সংকট

ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেও আসতে পারে সুখবর

    ৩৫% থেকে শুল্ক কমে ১৮-২০% হওয়ার প্রত্যাশা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেও আসতে পারে সুখবর

শুল্ক নিয়ে পুনরায় বৈঠকের সময় চেয়ে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে মার্কিন প্রশাসনকে। ওয়াশিংটনে গিয়ে সরাসরি বৈঠকের আহ্বান জানানো না হলেও আগামী ২৯ জুলাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভর্চুয়ালি বৈঠক করবেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। তবে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, ওই ভার্চুয়াল বেঠকের আগেই শুল্ক বিষয়ে ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশের জন্য আসতে পারে কোনো সুখবর। এর আগের টানা তিন দিনের বৈঠকের পর থেকে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়গুলো জানিয়ে যেসব ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে, তার আলোকেই বাংলাদেশের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে মার্কিন প্রশাসন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গতকাল শুক্রবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সূত্রে আরো জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৯ জুলাই ভার্চুয়ালি বৈঠক করা হবে এবং ওই বৈঠকেই শুল্ক বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর এখন পর্যন্ত নতুন করে মার্কিন প্রশাসন থেকে আর কিছু জানানো হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি, আগামী ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেও শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন করে কোনো ঘোষণা দিতে পারে।

কেননা আগের টানা তিন দিনের বৈঠকের পর থেকে আমরা যেসব ডকুমেন্ট তাদের দিয়েছি এবং এর পর থেকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিষয়ে আমরা যেসব উদ্যোগ নিয়েছি, সেগুলোর আলোকেই তারা একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিশেষ করে ইউএসটিআরের যেসব কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তাঁরা যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমাদের দেওয়া ডকুমেন্টের বিষয়গুলো জানান এবং আমরা এখনো পর্যন্ত কী কী উদ্যোগ নিয়েছি সেগুলো যদি তাঁকে জানানো হয়, তাহলে হয়তো ২৯ জুলাইয়ের আগেও কোনো ঘোষণা আসতে পারে।

বাংলাদেশের তরফ থেকে দেওয়া ডকুমেন্টগুলোতে কী ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ আসলে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে বাণিজ্যসচিব বলেন, আমরা তো তাদের সঙ্গে যে চুক্তি করব, তার ওপরই প্রস্তুতি নিচ্ছি। চুক্তির খসড়ার ওপর এবং তাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মূলত আমরা তথ্যাদি এবং আমাদের মতামত তুলে ধরেছি।

তারা তাদের অবস্থান ঠিক করেছে, আমরা আমাদের অবস্থান ঠিক করেছি। আমাদের তরফ থেকে যে অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে মূলত চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। এ ছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী কী পণ্য ক্রয় করব, যেমনতুলা, সয়াবিন, গম এবং এয়ারক্রাফট কিনবএসব বিষয় উল্লেখ করেছি। মাত্র কয়েক দিন আগে তাদের সঙ্গে আমরা গম ক্রয়ের চুক্তি করেছি। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর কথা বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা চট্টগ্রামের মিরসরাই ইপিজেডে ৬০০ একর জমি দিয়েছি। এসব বিষয় আমরা জানিয়েছি। এ ছাড়া ২৫টি বোয়িং কেনার উদ্যোগ নিয়েছি তাদের কাছ থেকে। এসব উদ্যোগ নেওয়াই তো হয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য। এ ছাড়া শুল্ক কমানোর বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি, যেগুলো হয়তো এখনই বলা যাচ্ছে না, চুক্তির পরই জানানো যাবে।

তিনি বলেন, মার্কিন প্রশাসন ইন্দোনেশিয়ার বিষয়ে জানিয়েছেতাদের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক ধার্য করবে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্কের বিষয় উল্লেখ করে চুক্তি হতে পারে। আমরাও প্রত্যাশা করছি, ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ১৮ থেকে ২০ শতাংশের মতো শুল্ক নির্ধারণ করা হতে পারে বা এর চেয়ে কমও হতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা এখন আগামী ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্যই অপেক্ষা করছি। সেই সঙ্গে আমরা আশা করছি, ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের পরিবর্তে মার্কিন প্রশাসন থেকে প্রস্তাব আসতে পারে সেখানে গিয়ে সরাসরি বৈঠকের। এই কয় দিনের মধ্যে সে রকম প্রস্তাব আসতে পারেএমন প্রত্যাশাও রয়েছে আমাদের।

 

 

 

মন্তব্য
সরেজমিন

আ. লীগের কার্যালয়ের সামনে নতুন ব্যানার করা হচ্ছে পরিষ্কার

তৌফিক হাসান
তৌফিক হাসান
শেয়ার
আ. লীগের কার্যালয়ের সামনে নতুন ব্যানার করা হচ্ছে পরিষ্কার
গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় এসে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে। ভবনটির সামনে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ লেখা ব্যানার টানানো হয়েছে। ছবি : কালের কণ্ঠ

রাজধানীর গুলিস্তানের শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ভবনটিকে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট হিসেবে তৈরি করা হবে। আর এই ইনস্টিটিউটেই ফ্যাসিবাদের উত্থান, কার্যকলাপ ও পতন নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করা হবে।

গতকাল শুক্রবার ওই কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে এবং সেখানে উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

দেখা যায়, ভবনটির দেয়ালে দুটি লাল রঙের ব্যানার লাগানো। উভয় ব্যানারেই লেখা, আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, নিচতলায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। ভেতরে জমে থাকা ময়লা পানি ওয়াসার স্যুয়ারেজের গাড়ি দিয়ে নিষ্কাশন করা হচ্ছে।

ভবনটির ভেতরে ইট-বালু, সিমেন্ট পরিষ্কারের কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। এরই মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা পরিষ্কার শেষ করে চতুর্থ তলা পরিষ্কার করা হচ্ছে।

শ্রমিকদের একজন হাফিজুর রহমান জানান, বুধবার থেকে তাঁরা এই কাজ করছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমরা দৈনিক হিসেবে কাজ করতাছি।

চারতলা পর্যন্ত পরিষ্কার করছি। আমরাই পুরোটা পরিষ্কার করব।

ভবনটির বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদস্য এস এম শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এখানে আমরা ফ্যাসিবাদের উত্থান-পতন নিয়ে স্টাডি করব। একই সঙ্গে ফ্যাসিজম রোধে আমরা কী করতে পারি তা নিয়েও বিস্তর স্টাডি করব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এটা নিয়ে সচেতন করব।

এটা নতুন পুরনো সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি শিক্ষাকেন্দ্র হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা চিন্তা করেছি যে গুলিস্তানের মতো ব্যবসায়ী অঞ্চলে একটা ভবন আমরা কিভাবে ব্যবহার না করে ফেলে রাখি। এটাকে ঠিকঠাক করতে পারলে আশপাশের জনগণ উপকৃত হবে। এটা হয়েছিল গণশৌচাগার। গুলিস্তানের মতো একটা জায়গায় এত দুর্গন্ধ সহনীয় নয়। তাই আমরা নিজস্ব উদ্যোগে এটা পরিষ্কারের কার্যক্রম শুরু করেছি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাত্রাবাড়ী থানার সংগঠক মুজাইদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, গত ১৭ বছর এখান থেকে যে ফ্যাসিজম চালানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই ভবনে। এটিকে সরকারিভাবে দেশের স্বার্থে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে চিন্তাই আমরা করছি। কবে নাগাদ এই কার্যক্রম শেষ হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

এর আগে গত ১৭ মে ভবনটিতে টাঙানো হয়েছিল জুলাই যোদ্ধাদের প্রধান কার্যালয় লেখা ব্যানার। তবে কে বা কারা এটি টাঙিয়েছিল সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভবনটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে ভবনটিকে গণশৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। প্রায় এক বছর ধরে মলমূত্র জমে থাকার কারণে উৎকট গন্ধও তৈরি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুলিস্তানে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১০ তলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ২০১৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করেছিলেন দলের সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল।

 

 

মন্তব্য
জামায়াত আমির

দল নিয়ন্ত্রণ করেছি দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দল নিয়ন্ত্রণ করেছি দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব
শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যারা নিজেদের দলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবে না।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বেগমপাড়া কিংবা পিসিপাড়া নেই উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা কখনোই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি এবং যাবেনও না।

যাঁরা দেশ ও জনগণকে ভালোবাসে না, তাঁরাই বিদেশে নিজেদের দ্বিতীয় ঠিকানা গড়ে তুলেছেন এবং তাঁরা নিজেদের স্বার্থে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

জামায়াত আমির বলেন, বিগত ৫৪ বছরে জামায়াতে ইসলামী দেশের একজন নাগরিকের প্রতিও অবিচার করেনি, জুলুম করেনি। জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি কিংবা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হননি, হবেও না। জামায়াত দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

যারা দলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের সংকটকালে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বিদেশ থেকে দেশে এসে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আধিপত্যবাদের দোসর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। যে কারণে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিচারিক হত্যা করা হয়েছে।

পৃথিবীর একমাত্র অসামপ্রদায়িক ধর্ম ইসলাম উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, ধর্ষক, খুনি, লুটেরাদের ভয় আছেএ জন্য তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে।

যারা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে, তাদের মা-বোন যদি প্রয়োজনে বাজারে যেতে পারে, হাসপাতালে যেতে পারে, প্রয়োজনীয় মৌলিক সব কাজ করতে পারেতাহলে কেন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে নারীদের চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি হবে?

আমিরে জামায়াত বলেন, সব ধর্মের নারী-পুরুষই রাষ্ট্রের কাছে সমান। রাষ্ট্র ধর্ম বা লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য করতে পারে না। ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ইসলাম ও দেশপ্রেমিক সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে চায় জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের রাজনীতি হবে কেবলই মানুষ ও মানবতার কল্যাণে।

জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রমুখ।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্যই জামায়াতে ইসলামী ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জামায়াতে ইসলামীকে কোনো ষড়যন্ত্রই অগ্রযাত্রা থেকে থামাতে পারেনি, পারবেও না। একটি বৈষম্যহীন, সুখী-সমৃদ্ধ, আধুনিক, কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

 

মন্তব্য

নীলক্ষেতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এইচএসসির ব্যাবহারিক খাতা

    অঙ্কনসহ পূর্ণ খাতা কিনে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মান ও নৈতিক অবক্ষয়ের অভিযোগ
মানজুর হোছাঈন মাহি
মানজুর হোছাঈন মাহি
শেয়ার
নীলক্ষেতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এইচএসসির ব্যাবহারিক খাতা

এইচএসসি পরীক্ষার ব্যাবহারিক খাতা শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে লেখার কথা। কারণ এতে কেবল তথ্য নয়, শেখার প্রক্রিয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে ঠিক উল্টো। রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় এখন একটি সরল হিসাবটাকা দিলেই মিলবে পুরো লেখা ও অঙ্কনসহ খাতা।

তারপর তা জমা পড়বে পরীক্ষাকেন্দ্রে, মিলবে নম্বর, পাসও।

রাজধানীর খিলগাঁও মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফ আহমেদ (ছদ্মনাম) চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সে এখনো কোনো ব্যাবহারিক খাতা লেখেনি। কারণ জানতে চাইলে বলে, সব খাতা নীলক্ষেত থেকে কিনে নেব।

নিজের হাতে লিখে লাভ কী? সবাই তো কিনে জমা দিচ্ছে।

শুধু শরীফ নয়, রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা ব্যাপক। তারা ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় নীলক্ষেত থেকে কেনে অঙ্কন ও লেখা সম্পন্ন ব্যাবহারিক খাতাযেন একটি অবাধ বাণিজ্য এবং চলছে প্রকাশ্যেই।

 

নীলক্ষেতের দোকানে সরেজমিন : লিখে দিচ্ছে আমাদের লোক

শিক্ষার্থী পরিচয়ে ঢাকার নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাবহারিক খাতার এই বাজার বেশ সুসংগঠিত।

দোকানে দোকানে পাওয়া যায় প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা খাতা। প্রতিটি খাতা আগেই লেখা ও অঙ্কন করা। চাহিদা অনুযায়ী সাজানো থাকে আলাদা আলাদা কলেজের নামে।

১৩৮ নম্বর দোকান হ্যাপি বুক হাউজ-এ গিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের খাতা চাইলে দোকানদার বলেন, পেয়ে যাবেন, আজকেই দেওয়া যাবে। একদম আপডেট খাতা।

দাম প্রথমে বলা হয় ৪০০ টাকা। দরদামের পর ৩০০ টাকায় বিক্রি করেন।

৯৪ নম্বর দোকান সালমা বই ঘর-এ গেলে পুরো বিজ্ঞান বিভাগের এক সেট খাতা দেখানো হয়। রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত ও আইসিটিসব বিষয়ের খাতা অঙ্কনসহ প্রস্তুত। দোকানদার জানান, প্রতিটি খাতা ৩০০ টাকা, আইসিটির জন্য ২০০ টাকামোট দাম তিন হাজার ৪০০ টাকা।

১০৩ নম্বর দোকান ইব্রাহীম মেডিকেল বুক হাউজ-এও একই চিত্র। প্রশ্ন করলে দোকানি বলেন, আমাদের লোক আছে, তারাই লিখে দেয়। আবার হ্যাপি বুক হাউজ-এর একজন বলেন, নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রীরা এগুলো লেখেন ও আঁকেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা শিক্ষাব্যবস্থার ভয়াবহ এক অনিয়ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশীদ বলেন, ব্যাবহারিক খাতার কেনাবেচা এখন এক ধরনের স্টার্টআপ বিজনেস-এ পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিখছে না, বরং শিখছে কিভাবে অর্থের বিনিময়ে পাস করা যায়।

তিনি আরো বলেন, এই সংস্কৃতি শিক্ষক, প্রিন্সিপাল ও প্রশাসনের জেনেও চোখ বন্ধ রাখার ফল। ওপেন সিক্রেট এই দুর্নীতি শুধু শিক্ষার মান নয়, একটি জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে।

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আরেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, এটি একাডেমিক ফ্রডের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। টার্ম পেপার, থিসিস, ব্যাবহারিকসবই টাকা দিয়ে কেনা যাচ্ছে। এখনই না থামালে ভবিষ্যতে আমরা আত্মপ্রবঞ্চনার মধ্যে ডুবে যাব।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহসানুল কবির বলেন, ব্যাবহারিক খাতার কেনাবেচা গুরুতর সমস্যা। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের খাতা নিজেরা লেখায় না, তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।

তিনি বলেন, শিক্ষকদের উচিত কেনা খাতা গ্রহণ না করা। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কড়া মনিটরিং ও অডিট চালু করতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ