বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট। কোথাও সারি বেঁধে, আবার কোথাও পাঁচ-ছয়জন মিলে গোল হয়ে বসে আছে। ধনী-গরিব নেই ভেদাভেদ। তারা নানা পেশার মানুষ।
আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ
একসঙ্গে হাজারো মানুষের ইফতার
- কাজী মনজুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

এখানে প্রতিদিন একসঙ্গে দু-তিন হাজার মানুষের ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। রমজানের শেষ দিকে এই সংখ্যা চার-পাঁচ হাজারে পৌঁছে।
গতকাল শনিবার আসরের নামাজের পর মসজিদটিতে গিয়ে দেখা যায়, বারান্দায় সাজিয়ে রাখা হচ্ছে খেজুর, ছোলা, মুড়ির প্যাকেট, পিঁয়াজু, বেগুনি, সমুচা, পাকোরা, জিলাপি ও আলুর চপ।
বিকেল ৫টার পর থেকে এসব ইফতারি বিভিন্ন প্লেট ও ডিশে সাজিয়ে রাখা হয়। গতকাল ৯ পদের ইফতারি সাজিয়ে রাখতে দেখা গেছে।
ইফতারের আগমুহূর্ত পর্যন্ত আসতে থাকে মানুষ। পাশের মঞ্চে চলে আলোচনা। ইফতারের পাঁচ মিনিট আগে মোনাজাতে অংশ নেয় সব মুসল্লি। আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ইফতার।
পবিত্র রমজানে প্রতিদিন ইফতারের এই বিশাল আয়োজনের শুরু সকাল ৮টায়। ২০ জন বাবুর্চি ইফতারির রকমারি পদ তৈরিতে কাজ করেন। বিলিবণ্টনে সহযোগিতা করেন ৩০ থেকে ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবী।
প্রতিদিন এত রোজাদারকে ইফতার করানোর কাজটির নেপথ্যে রয়েছেন মসজিদের খতিব হজরত ছাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন তাহের জাবেরী আল মাদানী। তিনি ২০০১ সালে ছোট পরিসরে প্রথমে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন। তবে করোনার কারণে মাঝে দুই বছর বন্ধ ছিল এই আয়োজন।
মসজিদের খতিবের হয়ে এই আয়োজনের সব কিছু দেখভাল করেন তাঁর সহকারী মো. হাসান মুরাদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, মসজিদের খতিব হুজুর মক্কা ও মদিনা শরিফের আদলে রোজাদারদের জন্য ইফতার আয়োজনের ব্যবস্থা করেন। ২০০১ সাল থেকে এই ইফতার বড় পরিসরে রূপ নেয়।
তিনি বলেন, শুরুর দিকে মুসল্লি কম ছিল। এখন প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার মুসল্লির জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। এখানে ৯টি আইটেমের ইফতার আয়োজন করা হয়। বাবুর্চি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে আছেন ৪০ জন।
হাসান মুরাদ বলেন, যাঁরা এখানে ইফতার আয়োজনে সহযোগিতা করে থাকেন, তাঁরা নাম প্রকাশ করেন না। আল্লাহকে খুশি করার জন্য গোপনে দান করেন। এখানে যাঁর যাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী দেন।
২০ বছর ধরে এখানে ইফতারের আয়োজনে সহযোগিতা করে আসছেন মোহাম্মদ মনির। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘এখানে আজ শরবত তৈরি করে জগে রাখছি। এখান থেকে শরবত আশপাশের লোকজনও নিয়ে থাকেন। এই মসজিদের ইফতারে ধনী-গরিব ভেদাভেদ নেই।’
মুহাম্মদ আবুল কালাম দুই বছর ধরে এখানে কাজ করেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে বাবুর্চিরা কাজ করে থাকেন। পরে আমরা ইফতারি সাজানোর কাজ করি। আমাদের প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী সহযোগিতা করে থাকেন। এখানে কাজ করে আমরা টাকা পাই, ইফতারিও পেয়ে থাকি। এত মানুষের ইফতার আয়োজনে শরিক হতে পেরে ভালো লাগে।’
চট্টগ্রামের বউবাজার এলাকা থেকে এসেছেন আলী আকবর। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গতকাল বন্ধ থাকায় ইফতার করতে এসেছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে বেশি মানুষের সঙ্গে ইফতার করতে এখানে চলে এসেছি।’
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স