চট্টগ্রাম কাস্টমের অকশন শেডে সাবেক সংসদ সদস্যদের (এমপি) আনা ২৪টি বিলাসবহুল গাড়িসহ মোট ৪৪টির নিলাম অনুষ্ঠিত হবে আজ সোমবার। এসব গাড়ি এমপিরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় এনেছিলেন, কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কারণে ওই গাড়িগুলো তাঁদের ভাগ্যে জোটেনি। এর মধ্যে এমপিদের গাড়িগুলোর একেকটির মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। সেই গাড়িগুলোই এবার অনলাইনভিত্তিক ই-নিলামে বিক্রি করবে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
নিলামে উঠছে সাবেক এমপিদের গাড়ি
- ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য
- ৪৪টি গাড়ির নিলাম হবে আজ
- এসব গাড়ি এমপিরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় এনেছিলেন
- গাড়িগুলোর একেকটির মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম কাস্টম সূত্র জানায়, নিলামে অংশ নিতে আগ্রহীরা ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত অনলাইনে দর জমা দিয়েছেন। কতজন জমা দিয়েছেন, সেটি আজ জানা যাবে। দুপুর ২টায় দরপত্রের বাক্স খোলা হবে।
জানা যায়, নিলামে তোলা হচ্ছে টয়োটা ব্র্যান্ডের ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি। এসব গাড়ি আমদানি করেছিলেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি মোহাম্মদ সাদিক, ময়মনসিংহ-৭ আসনের সাবেক এমপি এ বি এম আনিসুজ্জামান, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মজিবুর রহমান ও জান্নাত আরা হেনরী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সানজিদা খানম, এস এম কামাল হোসেন, মুজিবুর রহমান, মো. আসাদুজ্জামান, নাদিয়া বিনতে আমিন, মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, অনুপম শাহজাহান জয়, সাজ্জাদুল হাসান, মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তারানা হালিম, সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, আখতারউজ্জামান, মো. আবুল কালাম আজাদ, রুনু রেজা, মো. তৌহিদুজ্জামান, শাহ সারোয়ার কবীর, এস এ কে একরামুজ্জামান, এস এম আল মামুন, আবদুল মোতালেব, শাম্মী আহমেদ ও মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ।
চট্টগ্রাম কাস্টম নিলামের ক্যাটালগ তথ্য থেকে জানা যায়, এই নিলামে শুধু ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িই আছে মোট ২৬টি।
২০১৯ সালে তৈরি এক হাজার ৯৮৬ সিসির আরেকটি হ্যারিয়ার গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ লাখ ৫১ হাজার ৪৮২ টাকা। এ ছাড়া ২০১৮ সালে তৈরি এক হাজার ৯৮৬ সিসির আরেকটি হ্যারিয়ার গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ লাখ ৫১ হাজার ৭৮৭ টাকা। নিলামে জাপানি টয়োটা র্যাব ফোর মডেলের এক হাজার ৯৮৬ সিসির গাড়ি রয়েছে দুটি। এর মধ্যে ২০২০ সালের মডেলের গাড়িটির সংরক্ষিত মূল্য ৫৬ লাখ ২২ হাজার ১০৭ টাকা এবং ২০১৯ সালের মডেলের গাড়িটির সংরক্ষিত মূল্য ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গাড়ির এই নিলামে রয়েছে ২০২৪ সালে চায়নায় তৈরি হোয়ো ৩৪০ মডেলের ১০টি হেভি ডিউটি সিনো ডাম্প ট্রাক, যার মধ্যে ধরনভেদে ছয়টির প্রতিটির সংরক্ষিত মূল্য ৮৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯৩২ টাকা। বাকি চারটির সংরক্ষিত মূল্য ৮৫ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮১ টাকা। নিলামে একটি গাড়ি রয়েছে টয়োটা এস্কোয়ার ২০১৯ সালের মডেলের। এক হাজার ৯৮৬ সিসি এই গাড়িটির সংরক্ষিত মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ লাখ ৩৮ হাজর ১৬৮ টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে মূল্যবান জায়গা খালি করার একটি নির্দেশনা রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গাড়িগুলো সরিয়ে কাস্টম অকশন শেডে আনা হয়েছে। এসব গাড়ি দ্রুত নিলামে বিক্রি করতে পারলে লোকসান হবে না। যত দেরি হবে, ততই গাড়িগুলো নষ্ট হবে, কার্যক্ষমতা হারাবে। তাই নিলামে ভালো বিডার বা অংশগ্রহণকারী পাওয়ার জন্য অনলাইন নিলাম ডাকা হয়েছে। এর ফলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আগ্রহীরা গাড়ির নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, এমপিদের মেয়াদে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা একেকটি গাড়িতে অগ্রিম আয়কর বাবদ চার লাখ ৮০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। এখন প্রথম নিলামে বিক্রি করা গেলে একেকটি গাড়িতে সোয়া সাত কোটি টাকা পাওয়া যাবে। এই হিসাবে গাড়িগুলো থেকে ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা রয়েছে।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’