ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনকে ঘিরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে রাজনৈতিক কারণে। ২ শতাংশেরও কম ঘটেছে সাম্প্রদায়িক কারণে। এ সময়ে সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলায় অন্তত ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ৪ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত এসব ঘটনা নিয়ে পুলিশের অনুসন্ধানে এই তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পুলিশের অনুসন্ধানের এ তথ্য এক বার্তায় গণমাধ্যমকে জানানো হয়। সরকার এরই মধ্যে এসব হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দেশের যেকোনো সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতি শূন্যসহিষ্ণু নীতি গ্রহণ করেছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং পুলিশের প্রতিবেদনের বরাতে বলেছে, অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রেস উইং আরো জানায়, এসব হামলার শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেছে সরকার।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ ও লিঙ্গ পরিচয়-নির্বিশেষে মানবাধিকার সমুন্নত রাখাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মোট এক হাজার ৭৬৯টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করে—এসব হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন, সম্পদ ও উপাসনালয়ের ওপর দুই হাজার ১০টি ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পুলিশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তৈরি করা অভিযোগের তালিকা সংগ্রহ করেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যারা এই সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু বলে দাবি করা হচ্ছে, পুলিশ সেই সব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
পুলিশ ঐক্য পরিষদের তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি স্থান, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে গিয়ে তদন্ত করেছে।
ভুক্তভোগীদের পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার অনুরোধ করা হয়েছে এবং তাদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশের ওই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, তদন্তের ভিত্তিতে এরই মধ্যে সাধারণ ডায়েরি, নিয়মিত মামলা এবং অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এক হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে পুলিশ এখন পর্যন্ত ৬২টি মামলার প্রাথমিক তথ্য নির্ধারণ করে মামলা দায়ের করেছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তের ভিত্তিতে অন্তত ৩৫ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তদন্তে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হামলাগুলো সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না বরং সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে এক হাজার ২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ২০টি ঘটনা সাম্প্রদায়িক ছিল।
কমপক্ষে ১৬১টি অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, মোট অভিযোগের ৮২.৮ শতাংশ বা এক হাজার ৪৫২টি ঘটনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঘটেছে, যেদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। ঐক্য পরিষদের তথ্য মতে, ৪ আগস্ট ৬৫টি এবং ৬ আগস্ট ৭০টি ঘটনা ঘটেছে।
ঐক্য পরিষদের হিসাবের বাইরে পুলিশ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ১৩৪টি অভিযোগ পেয়েছে।
পুলিশ এসব অভিযোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে অন্তত ৫৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৬৫ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে মোট ১১৫টি মামলা দায়ের হয়েছে এবং অন্তত ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করেছে উল্লেখ করে প্রেস উইং জানায়, তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ এলে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি ফোকাল পয়েন্ট সেই অভিযোগ পর্যালোচনা করছে। প্রতিটি অভিযোগ নিরসনে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।