ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

কৃষক ঠকিয়ে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য

নিজামুল হক
নিজামুল হক
শেয়ার
কৃষক ঠকিয়ে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য

কৃষকের ফসল সুরক্ষার কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ পেস্টিসাইড (বালাইনাশক) এখন সিন্ডিকেটের খপ্পরে।  অভিযোগ উঠেছে, পেস্টিসাইড ব্যবসায়ী নেতাদের একটি অংশ এই পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, জিম্মি করছে অসহায় কৃষকদের। তারা পেস্টিসাইডসংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য হয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে কৃষকের স্বার্থবিরোধী নীতি তৈরি করিয়ে নিচ্ছে। তার পরও ওই নীতি পুরোপুরি মানছে না।

রাজস্ব কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি করছে। এতে নিম্নমানের পণ্যের পাশাপাশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এসংক্রান্ত একটি  সিন্ডিকেটে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অসাধু কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের  মাধ্যমে ৭৫০টির মতো বেসরকারি পেস্টিসাইড কম্পানিকে আমদানির জন্য প্রায় ১২ হাজার ব্র্যান্ড অনুমোদন দিয়েছে।

অধিদপ্তরের  তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই রাসায়নিক উপাদানের বাজার প্রায় ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকার। এই চাহিদার ৯০ শতাংশই আমদানিনির্ভর এবং বাকি ১০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশে উৎপাদন করা হয়। পণ্যটি আমদানিনির্ভর হওয়ায় কৃষকদের জিম্মি করার সুযোগও বেশি।

 

কৃষকদের ঠকাচ্ছে সিন্ডিকেট

অনুসন্ধানে জানা যায়, মানিক ২০ এসপি বালাইনাশকটি ধানের বাদামি গাছ ফড়িং, সবজির ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা, জাব পোকা, সাদা মাছি ও বিভিন্ন ধরনের শোষক পোকা দমনের কাজে ব্যবহার করা হয়।

বিদেশ থেকে প্রতি কেজি এই পণ্য কেনা হচ্ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৯৬ টাকায়। কিন্তু কৃষকের কাছে এই বালাইনাশক বিক্রি করা হচ্ছে তিন হাজার ২৪০ টাকায়।

পেস্টিসাইড ব্যবসায়ী মিলন রহমান জানান, বিদেশ থেকে  কেনার পর আমদানি ব্যয়, পরিবহন, প্যাকিং খরচ, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বাজারজাতসব মিলিয়ে প্রতিটি পণ্যে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ খরচ হয়। সে হিসাবে ৬৯৬ টাকার পণ্যে সর্বোচ্চ ২৪৪ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ব্যয় হতে পারে। এর সঙ্গে  ১২ শতাংশ লাভ হিসাবে যোগ হতে পারে আরো ১১২ টাকা।

পণ্যটি কৃষকের কাছে এক হাজার ৫২ টাকায় বিক্রি করা উচিত, কিন্তু বিক্রি করা হচ্ছে তিন হাজার ২৪০ টাকায়। অন্য একটি বালাইনাশকের রাসায়নিক নাম কারটাপ। এক হাজার ২০ টাকায় কিনে বিক্রি করা হচ্ছে তিন হাজার ৪০০ টাকায়। ম্যানকোজেব মেটাল এক্সিল প্রতি কেজি ৪৩৮ টাকায় কিনে বিক্রি করা হচ্ছে দুই হাজার ১০ টাকায়।  ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এভাবেই বেশি লাভে (২৫০ থেকে ৩০০ শতাংশ) বিক্রি করে কৃষকদের ঠকিয়ে আসছে। বেশি মূল্যে কীটনাশক বিক্রি হওয়ায় উৎপাদন খরচও বাড়ছে।   

এভাবে বেশি মূল্যে পেস্টিসাইড বিক্রি করায় কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচও বাড়ছে। পেস্টিসাইড আমদানিকারকদের বাণিজ্য সংগঠনের নাম বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির শীর্ষ পদের ক্ষমতা অপব্যবহার করে পেস্টিসাইড ব্যবসায়ীরা একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, এই সিন্ডিকেট ২৫০ থেকে ৩০০ শতাংশ মুনাফা তুলে নিচ্ছে অসহায় কৃষকদের কাছ থেকে। মানিক ২০-এর আমদানিকারক মিমপেক্স অ্যাগ্রোকেমিক্যালস লিমিটেড। কম্পানিটির কর্ণধার এম সাইদুজ্জামান একই সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও। অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, একটি গ্রুপ আমার ব্যবসায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

 

তিন সংস্থা মিলে সিন্ডিকেট

পেস্টিসাইড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি কমিটি (পিটাক) পেস্টিসাইডসংশ্লিষ্ট সব নীতি নির্ধারণ করে থাকে। পিটাকের সভাপতি কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান। সদস্যসচিব হিসেবে থাকেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের পরিচালক। কমিটিতে সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও থাকেন।

এই তিনটি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়েই সিন্ডিকেট। পিটাক যেহেতু পেস্টিসাইড রেজিস্ট্রেশন অনুমোদন দেওয়ার পাশাপাশি সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, তাই এই তিন সংস্থার সিন্ডিকেটের কারণেই কৃষকরা ঠকছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন। পিটাকে থেকে ব্যবসায়ী নেতারা আমদানি নীতি ও কৌশল নির্ধারণে প্রভাব রাখেন এবং  তাঁদের সুবিধামতোই নীতি তৈরি করে নেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক সভায় সরকারি এক কর্মকর্তা একই পেস্টিসাইডের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কম্পানির দামের ব্যাপক পার্থক্য হওয়ায় দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম সাইদুজ্জামান। তিনি  ছয় বছর ধরে এই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, অন্য কম্পানির পণ্যগুলোর সঙ্গে মিল রেখে আমাদের মূল্য নির্ধারণ করতে হয়। তবে পণ্যের গায়ে যে মূল্য লেখা থাকে তার চেয়ে অনেক কম মূল্যে আমরা পণ্য বিক্রি করে থাকি। যেভাবে মুনাফার তথ্য দেওয়া হয়েছে ততটা মুনাফা হয় না।

এই সিন্ডিকেটর বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সোসাইটি। মানববন্ধনে এম সাইদুজ্জামানসহ সিন্ডিকেটে জড়িতদের বিচারের দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. ইউসুফ মিয়া বলেন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। কিন্তু কৃষকের কাছে আমদানি করা নিম্নমানের বালাইনাশক ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে উচ্চ মূল্যে বিক্রির কারণে তাঁরা পথে বসছেন এবং আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। নিম্নমানের বালাইনাশক আমদানির কারণে কৃষক তথা সর্বস্তরের জনগোষ্ঠী সমহারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা নিম্নমানের বালাইনাশক আমদানি রোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।  ওই কর্মসূচিতে সংগঠনটির সহসভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন,  পেস্টিসাইড ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

সিন্ডিকেট আমদানির ক্ষেত্রেও

জানা যায়, কৃষকদের জিম্মি করার কৌশলের শুরু আমদানির প্রক্রিয়া থেকেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬৮তম পিটাক সভায় বিভিন্ন কম্পানি রেজিস্টার্ড পেস্টিসাইডের শুধু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে উৎস (উৎপাদনকারী দেশ ও কম্পানির নাম) পরিবর্তন করে আমদানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের পর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিজেদের মতো উৎস পরিবর্তন করে নেন। এর পরেই উৎস নির্দিষ্ট করার উদ্যোগ নেয় সিন্ডিকেট। ৭৭তম পিটাক সভায় উৎস নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রেজিস্টার্ড পেস্টিসাইডের উৎস পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্তির প্রথম দুই বছর উৎস পরিবর্তন করা যাবে না। একই সঙ্গে দুই বছর পর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ল্যাবরেটরি টেস্টের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের তিন বছর পর অনুষ্ঠিত ৮৪তম পিটাক সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ অন্য সদস্যদের আপত্তি উপেক্ষা করে একক উৎস নীত অনুমোদন করায় উৎস উন্মুক্তকরণের পথ সরাসরি রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, উৎস উন্মুক্ত করা যাবে না। অথচ যে ব্যবসায়ী নেতাদের প্রস্তাবে এই নীতি নির্ধারণ করা হয়, তাঁরাও এটি মানেননি।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                       

 

নিজেদের  নীতি নিজেরাই মানছেন না

বালাইনাশক শিল্পের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আনুমানিক ৭৫০টি দেশীয় কম্পানির মধ্যে একটি সিন্ডিকেট রেজিস্টার্ড সোর্সের বাইরে অনুমোদনহীন কম্পানি থেকে বছরের পর বছর পণ্য আমদানি করে আসছে। অথচ সরকারকে নির্ধারিত ২৩ হাজার টাকা প্রতিটি চালানে জমা দিয়ে বালাইনাশক নীতিমালা অনুযায়ী উৎস পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মাঠে বালাইনাশকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। 

অভিযোগ রয়েছে,  ওই সিন্ডিকেট এই নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ উৎস  থেকে পেস্টিসাইড আমদানি করে প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করছে। এতে একদিকে যেমন সরকার একটি বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে,  সেই সঙ্গে এই নিম্নমানের বালাইনাশক ব্যবহার করে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চলতি বছরের জুলাই মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরদারি জোরদারের ফলে চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে অনুমোদনহীন উৎস থেকে আমদানি করা প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বালাইনাশক আটক করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৎকালীন উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের পরিচালক ও পিটাকের সদস্যসচিব আশরাফ উদ্দিনের মধ্যস্থতায় অবৈধভাবে এসব পণ্য ছাড় করা হয়। তিনি একটি সরকারি চিঠিতে কৃষি উৎপাদন ও সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার অজুহাত দেখান। কিন্তু এই বালাইনাশক কোনো ধরনের মাঠ পরীক্ষা ছাড়া কৃষকদের কাছে বিক্রি করলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারেনএই  বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

একজন ব্যবসায়ী নেতার একটি কম্পানি গত বছর রেজিস্টার্ড ব্র্যান্ডের ৯টি পণ্য ২৮টি এলসির মাধ্যমে অননুমোদিত উৎস থেকে আমদানি করে, যার তথ্য এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।  

সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, জুলাইয়ে আগেও অনেক পণ্য অবৈধ উৎস থেকে আনা হলেও সেগুলো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সংস্থা এরই মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিন বলেন, কোনো রাসায়নিক দ্রব্য অবৈধ হলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত এবং ধ্বংস করে ফেলতে হয়। অবৈধ উৎস থেকে আমদানি করা এসব পণ্য কখনো এতই নিম্নমানের হয় যে নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্যকর উপাদান প্রায় শূন্য থাকে। এসব পেস্টিসাইডের রাসায়নিক পরীক্ষা এবং ফসলসংশ্লিষ্ট গবেষণাপ্রতিষ্ঠান  থেকে মাঠ পরীক্ষারও সুযোগ থাকে না।

এই অভিযোগ সম্পর্কে এম সাইদুজ্জামান বলেন, আইন অনুযায়ী নির্ধারিত উৎসর বাইরে পেস্টিসাইড আমদানি করা ঠিক নয়। তবে খাদ্য নিরপাত্তর স্বার্থেই এমনটি করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক বালাইনাশকের নিবন্ধিত উৎস কম্পানি  তাদের বালাইনাশক ব্যবসা বন্ধ করার কারণে বাধ্য হয়ে উৎস পরিবর্তন করতে হয়েছে। তবে তাঁর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন অন্য ব্যবসায়ীরা। 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা

শেয়ার
রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা
রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। গতকাল রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক-বাঘাইহাই সড়ক থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য

কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

    চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।

কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।

ওই জমিতে সেচ দিতে গেলে রাজু মিয়ার লোকজন বাধা দেয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান।

রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।

এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে।

এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরে খুলনায় নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যাময়নাতদন্তের পর বলা যাবে।

ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

মন্তব্য

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
শেয়ার
বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

চট্টগ্রামে অবতরণের পর ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। এরপর হঠাৎ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

 

মন্তব্য

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।

এরপর তা খুঁজে বের করতে জরুরি তল্লাশি অভিযান চলছিল বলে জানান আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলোভ। কিন্তু পরে জানানো হয়, এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তারা বিমানের ফিউজলেজের সন্ধান পেয়েছে।

ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।

এমআই-৮ হেলিকপ্টার বিমানটির ফিউজলেজ দেখতে পেয়েছে। এই হেলিকপ্টারটি পরিচালনা করে রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ রোসাভিয়াতসিয়া।

বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।

এটা হতে এটা হতে পারে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার একটি কারণ। সাইবেরিয়াভিত্তিক আঙ্গারা এয়ারলাইনস পরিচালিত বিমানটি চীনের সীমানা লাগোয়া আমুর অঞ্চলের তিন্দা শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এমন সময় এটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।

স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।

তার মধ্যে পাঁচজন শিশু। তাদের সঙ্গে ছয়জন ক্রু সদস্যও ছিলেন। তিনি বলেন, বিমান অনুসন্ধানে সব প্রয়োজনীয় বাহিনী ও সরঞ্জাম মোতায়েন করা হয়।

উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।

১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।

সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ