ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

রাজনীতিতে ওসমান পরিবারের ভরাডুবি

মনিরুজ্জামান মনির, নারায়ণগঞ্জ (আঞ্চলিক)
মনিরুজ্জামান মনির, নারায়ণগঞ্জ (আঞ্চলিক)
শেয়ার
রাজনীতিতে ওসমান পরিবারের ভরাডুবি

সোনারগাঁর কাঁচপুরে একটি চায়ের দোকানে সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় বিভিন্ন পেশার ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ বসে চা পান করছিলেন। সেখানে এটা-সেটা আলোচনার পাশাপাশি উঠে আসে নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি। এই একটি চায়ের দোকানই শুধু নয়, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে জেলার সর্বত্র মানুষের মুখে মুখে ওসমান পরিবারের নানা অপকর্মের কাহিনি। 

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ওসমান পরিবারের ভূমিকা নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মানুষের মুখে মুখে আবারও উঠে আসে ওসমান পরিবারের অপকর্ম। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাদের ভাষ্য মতে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে খান সাহেব ওসমান আলী, শামছুজ্জোহা, নাসিম ওসমান-সেলিম ওসমান-শামীম ওসমান আওয়ামী ও জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে এই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম রাজনীতিতে আসার পর টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হলেও চতুর্থ প্রজন্মে পরিবারটির রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে।

পরিবারটির চতুর্থ প্রজন্ম নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান এবং শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের চাঁদাবাজি, দখল, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জেলার ব্যবসায়ী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও অতিষ্ঠ। অভিযোগ রয়েছে, অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমানের অপকর্মে সায় ছিল শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের দাম্ভিকতা সব সীমা অতিক্রম করে। প্রভাবশালী এই দুই সংসদ সদস্যকে ঘিরে তাঁদের আত্মীয়-স্বজন ও ক্যাডার বাহিনী চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।

বিভিন্ন সময় শামীম ওসমান নিজেকে সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজি ও জঙ্গিবিরোধী আন্দোলনের শাহানশাহ দাবি করে প্রচারণা চালালেও বাস্তবে নানা অপকর্মে জড়িয়ে সমালোচিত হয়েছেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রবীণ নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের চাঁদাবাজিতে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমান সোনারগাঁ, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে এসব এলাকার শিল্প-কারখানার নির্মাণকাজ, বালু ভরাট, ঝুট ব্যবসাসহ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। জেলার তিনটি সংসদীয় আসন বন্দর-নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা, সোনারগাঁর কেউ এই দুই সহোদর, তাঁদের সন্তান এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ক্যাডারদের পাশ কাটিয়ে বৈধ-অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা চাঁদাবাজি করতে পারতেন না। সব কিছুতে ভাগ বসাত শামীম ওসমান ও তাঁর ক্যাডার বাহিনী। ওসমান পরিবারের সিদ্ধান্ত ছাড়া এসব এলাকায় কেউ একখণ্ড জমিও কিনতে পারত না।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ওসমান পরিবারকে আগে থেকে ম্যানেজ করে তাদের কাঙ্ক্ষিত চাঁদার অর্থ না দেওয়া পর্যন্ত কেউ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারতেন না। দলের কেউ তাদের চাঁদা না দিলে অন্য দলের নেতাদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে দল সমর্থিত প্রার্থী এবং তাঁদের সমর্থকদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে জয়ী করার অনেক নজির আছে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে। এর একটি উদাহরণ ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু। 

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জনরোষে পড়ার ভয়ে বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ ওসমান পরিবারের সদস্য ও ক্যাডাররা। নারায়ণগঞ্জ শহরে ওসমান পরিবারের একাধিক টর্চার সেল রয়েছে বলেও জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশব্যাপী আলোচিত নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত নতুন করে শুরু করেছে র‌্যাব। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের তিন সহযোগী ও গাড়িচালককে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, গ্রেপ্তারের পর আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাজল হাওলাদার আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে তাঁর টর্চার সেলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলে আদালতে জানান তিনি। পরে র‌্যাব সদস্যরা আজমেরী ওসমানের টর্চার সেল ও হত্যাকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করেছেন।

ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বী অভিযোগ করে বলেন, ত্বকী হত্যার সাড়ে ১১ বছর পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ত্বকী হত্যাকাণ্ড বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। ওসমান পরিবার যে খুনি পরিবার, তা আবারও প্রমাণিত হলো। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ ত্বকী নিখোঁজ হয়। ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ত্বকীর বাবার অভিযোগ, ক্ষমতার দাপটে গত সাড়ে ১১ বছর ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ বন্ধ রাখেন সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। জেলাবাসী বর্তমানে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ওসমান পরিবারকে দায়ী করে তাদের শাস্তির দাবি করছে।

সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান জানান, ওসমান পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে এত দিন সোনারগাঁয় সব ধরনের চাঁদাবাজি ও অপকর্ম করেছে আওয়ামী ক্যাডাররা।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ

সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে
সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে
শেয়ার
স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ
পঞ্চম উইকেটে ৭৭ রানের দারুণ এক জুটিতে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের মঞ্চ সাজিয়ে দেন লিটন দাস ও শামিম হোসেন। পরে বোলারদের দাপটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।ছবি : মীর ফরিদ, ডাম্বুলা থেকে

ক্রিকেট ম্যাচ, তার ওপর রবিবার। গতকাল তাই উদ্দাম পার্টির প্রস্তুতি ছিল রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের উপড়ে পড়া গ্যালারির। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে ডিজের মিউজিক, দর্শকদের ড্রাম পেটানো আর ট্রাম্পেটের চড়া সুরে কান পাতা দায়। সেই পার্টিই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় দারুণ ক্ষিপ্রতায় কুশল মেন্ডিসকে শামীম হোসেন রান আউট করতেই।

এর পরও ফুর্তিবাজ লঙ্কানরা দুলেছে। তবে ১৭৭ রানের পূঁজি গড়া বাংলাদেশ দল ওই রান আউটে রক্তের স্বাদ পেয়ে গেছে। স্বাগতিকদের ৯৪ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ৮৩ রানের দাপুটে জয়ে সিরিজে ফেরা তাই একরকম নির্ধারিতই ছিল!

বিশ ওভারের ক্রিকেটে ছন্দ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুতলয়ের ক্রিকেটে ছন্দের সেই গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে পেয়ে আর পেছনে তাকায়নি বাংলাদেশ দল।

প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষ বোলারদের তুলাধোনা করা লঙ্কান সিংহকে বাংলাদেশ খাঁচাবন্দি করে ফেলে ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ওই বলে তুলে নেন শ্রীলঙ্কার শেষ ভরসা অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কাকে। স্বাগতিকরা থমকে যায় ৩০ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে। এমন অবস্থায় এক প্রান্ত আগলে রেখে পাথুম নিশাঙ্কা শেষ চেষ্টা করেছিলেন দাসুন শানাকাকে সঙ্গী করে।
কিন্তু বাংলাদেশকে এদিন কে রোখে! এই ম্যাচে একাদশে জায়গা করে নেওয়া শরিফুল ইসলামের সুইং, মোস্তাফিজুর রহমানের কাটার আর রিশাদ হোসেনের লেগস্পিন সামলানোর সক্ষমতা ততক্ষণে হারিয়ে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। এঁদের মধ্যে শেষোক্তজনের কথা ম্যাচ শেষে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক। তবে ঘুরেফিরে দুই অধিনায়কের মুখেও উচ্চারিত হয়েছে শামীম হোসেনের সেই রান আউটের ঘটনাটি। বাংলাদেশের বোলার আর ফিল্ডারদের দক্ষতায় দুজন ছাড়া শ্রীলঙ্কার আর কোনো ব্যাটারই দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেননি।

অবশ্য ম্যাচজুড়েই শামীমের প্রতিপত্তি দেখা গেছে।

ব্যাটিং পাওয়ার প্লে যাঁদের কাজে লাগানোর কথা, সেই দুই ওপেনারতানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন একযোগে ব্যর্থ হয়েছেন গতকাল। এরপর রানখরায় ভোগা অধিনায়ক লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের রক্ষণশীল ব্যাটিংয়ে মনে হচ্ছিল, বেশিদূর যাওয়া হবে না বাংলাদেশ দলের।

কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন লিটন ও শামীম। অধিনায়কের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়ে তাওহিদ ফেরেন, একই ওভারে তাঁর সঙ্গে ড্রেসিংরুমে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই ধাক্কায় অবশ্য কাবু হওয়ার অবস্থায় নেই শামীম। আগের ম্যাচে ৫ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকা এই বাঁহাতি শুরু থেকে চড়াও হন লঙ্কান বোলারদের ওপর। ওদিকে অধিনায়কও থিতু হয়ে গেছেন উইকেটে। তাঁরা জুটি বেঁধে ছোটান রানের গতি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে লিটন ও শামীম মিলে তোলেন ৭৭ রান, তা-ও মাত্র ২১ বলে! ১৩ ম্যাচ পর ফিফটির দেখা পান লিটন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের দ্বাদশ পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস। এক বাউন্ডারি আর পাঁচ ছক্কায় ৫০ বলে ৭৬ রান করে যখন আউট হন অধিনায়ক, ততক্ষণে লড়াইয়ের জন্য আশাব্যঞ্জক পূঁজি এক রকম হয়ে গেছে বাংলাদেশের। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেতে মরণপণ দৌড়েও ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি শামীম। তাতে ২৭ বলে তাঁর ৪৮ রানের ইনিংস পঞ্চাশ ছুঁতে না পারার আক্ষেপে শেষ হয়েছে। অবশ্য তাঁর মনে কোনো আক্ষেপ নেই, দল জিতেছে। তাতে অবদান রাখতে পেরেছি। এতেই আমি খুশি। শামীম আরো খুশি ১৬ জুলাই কলম্বোয় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা নয়, জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। 

ম্যাচ শুরুর আগের রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের চালচিত্র না বললেই নয়। হাজার তিরিশেক দর্শকের ঠাঁই হয় এ মাঠে। তবে দুই দিন ধরে টিকিটের জন্য আহাজারি শোনা যাচ্ছিল, তাতে বোঝাই যাচ্ছিল যে পর্যাপ্ত আসন নেই। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় খেলা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে গ্যালারি ভরে গেছে। বরাবরের মতো গ্যালারি লাগোয়া গাছেও চড়ে বসেন বিনা টিকিটের দর্শক। তাই বলে সিঁধ কেটে বিনা টিকিটের দর্শক ঢোকে ডাম্বুলায়, সেটি অজানা ছিল। গতকাল সেটিও দেখা হলো, বাংলাদেশ ইনিংসের ব্যাটিং পাওয়ার প্লে চলাকালে ভিআইপি স্ট্যান্ডের দিককার কাঁটাতারের বেড়ার নিচের মাটি সরিয়ে অন্তত শ খানেক টিকিটহীন দর্শক ঢুকে পড়লেন স্টেডিয়াম চত্বরে। বিনা বাধায় যোগ দিলেন গ্যালারির উৎসবে। নিজ দলের ব্যাটিং ভরাডুবিতে ক্ষণে ক্ষণে লাউড স্পিকার থেমেছিল বটে। তবে পুরোপুরি থামেনি। পুরস্কার বিতরণীর পরও কিছু দর্শককে দেখা গেছে হাসিমুখে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কয়েকজন তো বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বলেও গেলেন, ওয়েল প্লেইড বাংলাদেশ!

মন্তব্য

অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

শেয়ার
অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবৈধ ব্যাটারির রিকশার দাপট বেড়েছে। সেগুলো জব্দে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। গতকাল মালিবাগে অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দ করে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি : ফোকাস বাংলা

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ পলাতক ২৪ আসামিকে আত্মসমর্পণের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে বাংলা-ইংরেজি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছে। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল রবিবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারক হলেন মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।

শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এর আগে ১০ জুলাই এই মামলার ২৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

পরে জানা যায়, এই মামলার দুজন আসামি এরই মধ্যে অন্য দুটি মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। সে কারণে ট্রাইব্যুনাল মৌখিকভাবে আদেশ দিলেও তাতে স্বাক্ষর করেননি। তবে আগের আদেশ উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আগের আদেশটি পরিমার্জন করা হলো।
২৬ জন আসামির মধ্যে যে দুজন গ্রেপ্তার আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য নয়।

পরে ট্রাইব্যুনাল আগামী ২২ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন। যে দুজন আসামি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন তাঁরা হলেন রাফিউল হাসান রাসেল ও মো. আনোয়ার পারভেজ।

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় মোট ৩০ জন আসামি। এর মধ্যে চারজনকে এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

তাঁরা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ১৬ জুলাই ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই মামলার শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। শুনানিতে তিনি বলেন, পলাতক আট আসামির গ্রেপ্তার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় প্রয়োজন। তখন ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। আদেশের সময় মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার আটজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

মন্তব্য
হত্যা মামলায় জামিন

আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস
অপু বিশ্বাস

জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানার এনামুল হক নামের এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আত্মসমর্পণ করে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস জামিন পেয়েছেন। গতকাল রবিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। শুনানি চলাকালে অপু বিশ্বাস বলেন, আমি একজন অভিনয়শিল্পী। এটাই আমার পেশা।

আমি রাজনীতি বুঝি না, আমি রাজনীতি করতে চাই না।

এদিন অপু বিশ্বাস আদালতে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি মুখে কালো মাস্ক, মাথায় সাদা ওড়না ও বোরকা পরেছিলেন। তাঁর আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, আসামি যে অর্থের জোগান দিয়েছেন, তা এজাহারে বলা নেই। নুসরাত ফারিয়াকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাদী হলফনামা দিয়ে বলেছেন, আমার ভুল হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
আসামি একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাঁর জামিন চাই। এ সময় বিচারক আসামি অপু বিশ্বাসের কাছে তাঁর বক্তব্য জানতে চান। কিন্তু তিনি দুইবার মাথা নেড়ে না উত্তর দেন। এ সময় তাঁর মুখে হাসিও দেখা যায়।
তখন পাশ থেকে আইনজীবীরা বলতে থাকেন, অপু বিশ্বাস ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী। টাকার বিনিময়ে মঞ্চে স্টেজে নেচে-গেয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে এগিয়ে দিতেন। তিনি আবার হাসেন। এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখে-মুখে ভীতি দেখা যায়। তখন তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, আমি কিছু বলতে চাই। তখন তাঁকে থামিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, র‌্যাব-পুলিশ সেনাবাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। লাশের বন্যা বয়ে যায়। এ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যাঁরা ছিলেন সবাই শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন। এই অপু বিশ্বাসরা ফেরদৌসের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেন। শেখ হাসিনা আবার আসবে বলে তাঁরা মনে করেন।

এরপর অপু বিশ্বাস বলেন, আমি একজন অভিনেত্রী। অভিনয় করার জন্য অনেক কিছু করতে হয়েছে। আমি রাজনীতি বুঝি না। রাজনীতি করিও না। করতেও চাই না। এ সময় আইনজীবীরা আহা আহা সাধু বলতে থাকেন। অনেক আইনজীবী উত্তেজিত হয়ে বলেন, অপু বিশ্বাস এমপি হতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দোসর তিনি। এ সময় অপু বিশ্বাস বলেন, আমি অভিনেত্রী। আমাকে যে পোশাক দেওয়া হয়, সে পোশাক পরে অভিনয় করতে হয়। অভিনয় এমনই। ওই সময় আমি খারাপ অবস্থায় ছিলাম। পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। আমার একটা বাচ্চা আছে। এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখ ছলছল করতে দেখা যায়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।

এর আগে অপু বিশ্বাস গত ২ জুন হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান। পরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিননামা দাখিল করেন তিনি।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয়। এনামুল হকের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার শ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেন তিনি। মামলায় অপু বিশ্বাস, আশ্না হাবিব ভাবনা, নুসরাত ফারিয়া, অভিনেতা জায়েদ খানসহ ১৭ জন তারকাকেও আসামি করা হয়। মামলায় এসব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে এই মামলায় গত ১৮ মে গ্রেপ্তার হন আরেক চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। পরদিন তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২০ মে জামিন পান তিনি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ