বাংলাদেশ ২০০৭ সাল থেকে বয়সজনিত অধিক কর্মক্ষম জনসংখ্যার সুফল ভোগ করছে। তবে মূলত কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে এ সুফল কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। আবার যাঁরা চাকরির খোঁজে বিদেশে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশই প্রশিক্ষণহীন।
দক্ষতার অভাবে জনসংখ্যার ‘বোনাসকাল’ হাতছাড়া হচ্ছে
এম আর মাসফি

জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর মতে, কোনো দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে কর্মক্ষম জনসংখ্যার আকার কর্মক্ষমতাহীন জনসংখ্যার চেয়ে বেশি হলে, তা একটা বড় সুবিধা। একে তত্ত্বীয় ভাষায় বলে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’। তবে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছরের বেশি ভোগ করা যায় না।
সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে বাংলাদেশে কর্মহীন জনসংখ্যা প্রায় ৩.৫ শতাংশ। তবে কর্মহীন বা বেকার জনসংখ্যার ব্যাপারে বিবিএসের সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট শিক্ষিত জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশ বেকার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যায় বেকারত্বের হার ১০.৫ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। শিক্ষাব্যবস্থা কর্মমুখী হওয়া দরকার। লেখাপড়া শুধু পরীক্ষা আর ডিগ্রিকেন্দ্রিক হলে হবে না। লেখাপড়া হতে হবে জ্ঞানকেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। শুধু কেতাবি শিক্ষা কাজে লাগছে না।’
বিবিএসের তথ্য মতে, দেশে ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি ৫০ লাখ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ। জনসংখ্যার ৪২.৮৪ শতাংশ ১৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী। আর তরুণ শ্রেণি মোট জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে তরুণদের ওপরই নির্ভর করতে হবে সবচেয়ে বেশি। তবে তাদের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না।
বেকারের মিছিল বড় হচ্ছে
বিবিএসের তথ্য মতে, দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। অন্যদিকে যাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার মাত্র ১.০৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রাপ্ত শিক্ষাকে অনেক ক্ষেত্রেই উপার্জনের কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বৃত্তিমূলক শিক্ষার অভাবের পাশাপাশি শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এসব কারণে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অধিক হারে বাড়ছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই বেকার থাকছেন। ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি পান। ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো অন্য কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা কারিগরি শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ৩ শতাংশ নিজ উদ্যোগে কিছু করছেন।
প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদেশ যায় ৯০ শতাংশ
বিবিএসের আর্থ-সামাজিক ও জনমিতিক জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিদেশ গমনকারীদের বেশির ভাগ (৫৩.৯১ শতাংশ) পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। এইচএসসি বা সমমান পর্যন্ত পড়াশোনা করে বিদেশ গেছে ১৮.৯৬ শতাংশ। জরিপ অনুযায়ী, বিদেশ যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন মাত্র ১০ শতাংশ কর্মী।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রতি অনীহা রয়েছে। তারা পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে যেতে চায়, কিন্তু ১০ হাজার টাকা খরচ করে প্রশিক্ষণ নিতে চায় না। এ কারণে কম বেতনসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও বিপদের সম্মুখীন হয়।’
চাকরিবিষয়ক অন্যতম প্রধান অনলাইন মার্কেট বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম ফাহিম মাসরুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাঁদের কোনো দক্ষতা আছে তাঁদের চাকরি পেতে দেরি হয় না। দক্ষতা না থাকলে অনেক দিন বেকার থাকতে হয়। চাকরির বাজারে কম্পানিগুলোতে এত গ্র্যাজুয়েটের প্রয়োজন নেই। তাদের শ্রমিকসহ সাধারণ কর্মী বেশি দরকার।’
দেশে-বিদেশে বেশির ভাগ বাংলাদেশি কর্মীর আয়ের প্রধান উৎস অল্প মজুরির কাজ। দেশে যেমন পোশাকশিল্প বা সেকেলে প্রযুক্তির কৃষি খাত, তেমনি বিদেশেও মূলত কায়িক শ্রমের কাজ। এর প্রধান কারণ সময়োপযোগী শিক্ষা-প্রশিক্ষণের অভাব।
দক্ষ জনবল তৈরির প্রকল্প গতিহীন
দেশে দক্ষ জনশক্তির সংকট কাটাতে নেওয়া প্রকল্পগুলো চলছে কচ্ছপগতিতে। এমন গতিতে প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কোনোভাবেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিতে ২০১৪ সালে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রগ্রাম (এসইআইপি) প্রকল্প নেয় সরকার। আট বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আট লাখ ৪১ হাজার ৬৮০ জনকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, তিন হাজার ৮০০ জনকে মধ্যম ও উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সাত হাজার ৮০০ জনকে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, ৯৭৫ জনকে পলিসি অ্যানালিসিস কোর্স ও হাজার ৫০০ জনকে অন্যান্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ২০১৬ সালে দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও রপ্তানির জন্য ৪০ উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং চট্টগ্রামে একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয়। এ প্রকল্পে এরই মধ্যে ২৪টি কেন্দ্র চালু হয়েছে। এ বিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহীদুল আলম বলেন, বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠাতে এবং দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে প্রকল্পটি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।’
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে সারা দেশে ৯টি প্রকল্প নিয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৫২৫ কোটি টাকায় উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্প চলছে। তবে চার বছরে মাত্র সাতটি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের জমি অধিগ্রহণ ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেই
এক পর্যায়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের জন্য প্রশংসিত হলেও সাম্প্রতিককালে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি দৃশ্যত অগ্রাধিকারের মধ্যে না থাকায় বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না। করোনাকালে কয়েক বছর ধরে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও বাল্যবিবাহ বেড়েছে। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩০ শতাংশ। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবার পরিকল্পনা সেবার মানোন্নয়নে ইউনিয়ন পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাল্যবিবাহে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। করোনা মহামারির মধ্যে দেশে বাল্যবিবাহ ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। জনসংখ্যাবিষয়ক বিভিন্ন সূচক এগিয়ে নিতে সরকার নানা ধরনের কর্মসূচি নিলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সম্পর্কিত খবর

শোভাযাত্রা

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে জুলাই কন্যারা রিকশা শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। ছবি : কালের কণ্ঠ
।
রাতে ফেসবুক পোস্ট ভোরে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবনির্মিত রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইক (২৩) নামের এক শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে।
পুলিশ ও হল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
জগন্নাথ হলের স্টাফ মানিক কুমার দাস বলেন, ‘ভোরবেলা দেখি ভবনের নিচে একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে অন্য স্টাফদের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাঁকে মৃত বলে জানান।’
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর বলেন, ‘রবীন্দ্র ভবনের পাশে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি।
ওসি আরো বলেন, ‘এ ঘটনায় আপাতত অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে রাত আড়াইটার দিকে সঞ্জুর নিজ ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি, উল্টো মানুষকে দোষারোপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি, আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি, নিজের দোষ ঢেকে অন্যজনকে দোষ দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমার কারণে কারো কোনো ক্ষতি হলে সেই দায় একান্তই আমার, আমি ক্ষমা চাচ্ছি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সঞ্জু মানসিকভাবে কিছুটা অস্থিরতায় ভুগছিলেন বলে সহপাঠীরা জানিয়েছে। দুই দিন ধরে সে হলে ছিল না। রবিবার ভোর ৪টার দিকে হলে ফিরে আসে, তবে কিছুক্ষণ পরই ছাদের দিকে চলে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফরা তাকে ভবনের নিচ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন।’

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিকল্প প্রস্তাব
৭৬ আসনের উচ্চকক্ষ ও সরাসরি ভোট, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের স্বার্থে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হতে পারে ৭৬ এবং এসব আসনের সদস্যরা নির্বাচিত হবেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। একই সঙ্গে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে বিরোধ থাকায় সেখানেও বিকল্প প্রস্তাব আনা হয়েছে। সেখানে সংরক্ষিত নারী আসন বাদ দিয়ে বিদ্যমান সংসদীয় আসনের নির্বাচনে দলগুলোকে এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৩তম দিনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। আজ মঙ্গলবার আবারও আলোচনা চলবে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।
কমিশন সূত্র জানায়, সংসদের উচ্চকক্ষের নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলা ও প্রতিটি সিটি করপোরেশন এলাকা উচ্চকক্ষের একেকটি একেক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত বা চিহ্নিত হবে এবং প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকা থেকে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন করে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। বর্তমানে দেশে ৬৪টি প্রশাসনিক জেলা ও ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে বিধায় উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হবে ৭৬। জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষের নাম প্রস্তাব করা হয় সিনেট। রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে একমত হলেও উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচনের বিষয়ে মতভেদ দেখা দেয়। যে কারণে নতুন এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।
সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সমাজের বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কী পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন হবে সে ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়া যাচ্ছে না।
সংসদে নারীদের জন্য স্থায়ীভাবে ১০০ আসন করার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন উল্লেখ করে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, এ ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত প্রশ্ন এখনো রয়েছে। এ পদ্ধতি নির্ধারণে আমরা এখনো একমতের জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও নারী আসন বৃদ্ধির প্রশ্নে বিএনপি আগের অবস্থানে রয়েছে বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবে বিএনপি একমত। তবে ওই আসনগুলোতে নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতে হতে হবে।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা উচ্চকক্ষের বিষয়ে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা চালুর পক্ষে। অধিকাংশ দল এ বিষয়ে একমত। নারী আসনের বিষয়েও আমরা ১০০ আসনে পিআর পদ্ধতির পক্ষে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করেছে কমিশন। আমরা এর বিরোধী। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হতে হবে। কমিশন এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন বাধ্যবাধকতার কথা বলেছে। আমরা এটি সমর্থন করি। তবে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এ জন্য আরো সময় প্রয়োজন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কমিশনের কর্মকাণ্ড সংগত মনে হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে দলের অভ্যন্তরে ৩০ শতাংশ নারীকে কমিটিতে রাখতে পারছে না, সেখানে ৩০ শতাংশ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সামর্থ্য আছে বলে মনে করি না।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বর্তমান ৬৫ অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত আসন চায় না কমিশন। আমরা বলেছি, সংরক্ষিত আসন ১০০ করতে। আর বর্তমান বাস্তবতায় ৩০ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কঠিন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা বলেছি এবার ৫ শতাংশ দেওয়া যেতে পারে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কমিশন নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল ও ৩৩ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা এই মুহূর্তে অসম্ভব।
বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ দল একমত।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, নারীদের সংরক্ষিত আসন দরকার নেই; বরং তাদের নির্বাচিত হয়েই সংসদে আসা উচিত।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নারীদের আসনে সরাসরি নির্বাচন করতে হবে। তিনটি সাধারণ আসন মিলে একটি নারী আসনে ভোট হতে হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, নারীদের সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারলেই তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।

খুলনায় যুবদল নেতা হত্যা
আরো একজন তথ্যদাতা গ্রেপ্তার, কিলিং মিশনের তিনজন এখনো অধরা
খুলনা অফিস

খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আলাউদ্দিনকে (২২) গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে রবিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
এদিকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে কিলিং মিশনের যে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে, তাদের কেউ এখনো ধরা পড়েনি।
শনিবার রাতে প্রথমে গ্রেপ্তার করা সজল শেখ নামের চরমপন্থী সদস্য বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে। আজ মঙ্গলবার রিমান্ড শেষে তাঁকে আবার আদালতে তোলা হবে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কেএমপির দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানিয়েছেন।
যুবদল নেতা মাহবুবকে শুক্রবার দুপুরে দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ার নিজ বাড়ির সামনে তিন অস্ত্রধারী প্রথমে একাধিক গুলি করে এবং পরে দুই পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।
দৌলতপুর থানার ওসি জানান, ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে আলাউদ্দিনকে রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পশ্চিম মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সজলের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা দুজনই নিহত মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে খুনিরা এসে মাহবুব মোল্লাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করে।
কিলিং মিশনের তিন সদস্যকে দ্রুতই গ্রেপ্তর করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে পুলিশ।