<p>শালবন বলতেই আমাদের মনে পড়ে ভাওয়াল বা মধুপুর গড়ের শালবনের কথা। কিন্তু উত্তরের জনপদ দিনাজপুরেও রয়েছে এক দৃষ্টিননন্দন শালবন। উত্তরের অনেক মানুষ সবুজের সান্নিধ্যে পেতে চাইলে ছুটে যায় বীরগঞ্জের শালবনে। এখন সারি সারি শালগাছ নতুন পাতা গায়ে জড়িয়ে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। বনের ভেতরে আঁকাবাঁকা নিরিবিলি পথ। শান্ত পরিবেশে পাখির ডাক ছাড়া তেমন আওয়াজ নেই।</p> <p>বীরগঞ্জ উপজেলার দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও হাইওয়ের পাশেই দেখা মিলবে শালবনের। এই বন বীরগঞ্জ পৌরসভায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাকড়াই মৌজায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে শালগাছ ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষলতা ও গুল্ম। যেমন—শিমুল, সোনালু, বাঁশ, বেত ইত্যাদি। তবে শালই হচ্ছে এখানকার প্রধান বৃক্ষ। বাগানের ঝরাপাতা আশপাশের মানুষজন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। তাই পাতা ঝরার মৌসুমে দেখা যায় পাতাকুড়ুনিদের ভিড়। এই জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও কিছু ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে। বনের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে সুদৃশ্য ঢেপা নদী। ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বরে ১৬৮.৫৬ হেক্টর জমি নিয়ে এই জাতীয় উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়।</p> <p>বীরগঞ্জ উপজেলা বিট কর্মকর্তা নিরঞ্জন রায় কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি বর্তমানে বীরগঞ্জ ও সেতাবগঞ্জ দুটি বিটের দায়িত্বে আছেন। বীরগঞ্জ বিটে তাঁর সহযোগী দুজন স্টাফ নিয়ে পরিচালনা করতে হয়। জনবল সংকটের কারণে এক শ্রেণির মানুষ রাতের আঁধারে রাষ্ট্রীয় সম্পদ গাছের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। বন্য পাখিদের বাসাও তাদের হাত থেকে রক্ষা পায় না। তাঁর মতে, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বীরগঞ্জ জাতীয় উদ্যানের সীমানাপ্রাচীর করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। বিট কর্মকর্তা নিরঞ্জন রায় আরো জানান, সরকারিভাবে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এগুলো শিগগিরই শুরু হবে বলে তাঁরা আশা করছেন। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটক আসবে। বনটি এলাকার মানুষের জন্যও ভালো বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গণ্য হবে।</p> <p>বীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. মোশারফ হোসেন বাবুল বলেন, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা শালবন বীরগঞ্জ পৌরবাসীর জন্য আশীর্বাদ। এটি এখন পর্যন্ত বন বিভাগের অধীন। বন বিভাগের উন্নয়নমূলক কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে এর সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে।</p> <p>দিনাজপুরেই রয়েছে সিংড়া শালবন। এটি বীরগঞ্জ উপজেলার ৮ নম্বর ভোগনগর ইউনিয়নে অবস্থিত। বনটি ঠাকুরগাঁও রেঞ্জ এবং দিনাজপুর বন বিভাগের অধীন। দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কের ২৫ মাইল নামক স্থান থেকে একটু সামনে দক্ষিণ দিকে এক কিলোমিটার ভেতরে এই বনের বিস্তৃতি।</p> <p>সিংড়া শালবনের মোট আয়তন ৩৫৫ হেক্টর। চারটি মৌজা নিয়ে এ শালবনটি বিস্তৃত। বনটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে বনটির ৩০৫.৬৯ হেক্টর এলাকা ‌‘সংরক্ষিত এলাকা’ তথা জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।</p> <p> </p>