ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চাকুয়া গ্রাম থেকে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় আসছিলেন দুই প্রতিবেশী মো. নাসির (৩২) ও মো. হৃদয় (২২)। পথে রাত হয়ে যায়। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের নামিলা গ্রামে পৌঁছে তাঁরা যাত্রাবিরতি দেন। সেখানে রাস্তার পাশে একটি দোকানে বসে দুজনে চা পান করছিলেন।
চার মাসে গণপিটুনিতে ২৪ হত্যা
রেজোয়ান বিশ্বাস

শুধু নাসির ও হৃদয়কে হত্যা নয়, প্রায়ই খবর পাওয়া যায়, দেশের কোথাও না কোথাও বিভিন্ন কারণে সন্দেহের জেরে গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নে মন্দিরে আগুনের ঘটনায় সন্দেহের জেরে দুজন শ্রমিক আশরাফুল খান ও আসাদুল খানকে (আপন ভাই) গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে গতকালও সংশ্লিষ্ট এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির পরিসংখ্যান বলছে, দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ২৪ জনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়েছে।
কাপাসিয়ায় গণপিটুনিতে নিহত মো. নাসির দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি এলাকায় মাছের খামার করেন। তাঁর দুটি শিশুসন্তান রয়েছে।
নুর নাহারের সঙ্গে কথা হলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী নিরপরাধ মানুষ ছিলেন। আর অপরাধ করলেও আইনের তোয়াক্কা না করে কাউকে কি এ রকম নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা যায়? যারা আমার স্বামীকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
গণপিটুনিতে নির্দয় হত্যাকাণ্ডের বড় উদাহরণ রেনু হত্যাকাণ্ড। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তসলিমা বেগম রেনু নামের এক নারীকে। ওই সময়টায় ছেলেধরা গুজব চলছিল।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে দিন দিন গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলেছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব মতে, ২০২৩ সালে দেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ৫১ জন, ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৬, ২০২১ সালে ২৮, ২০২০ সালে ৩৫ এবং ২০১৯ সালে ৬৫। আর ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ২৪৮ জন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলেছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে গণপিটুনিতে দেশে যেসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের অপারেশনস বিভাগের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোনোভাবেই কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা মেনে নেওয়া যায় না। দেশের কোনো নাগরিক নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারেন না। যারা এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের অনাস্থা। যারা এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর আরো তৎপর হতে হবে।
কাপাসিয়ার সিংহশ্রীতে দুজনকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে
মালয়েশিয়াপ্রবাসী মো. নাসির ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চাকুয়া গ্রামের মাসুদ সেখের ছেলে। আর হৃদয় একই এলাকার আবু শাহীদের ছেলে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, করনাকালে নাসির মালয়েশিয়া থেকে দেশে এসে আর ফিরে যাননি। গ্রামে বেশ কটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। পাশাপাশি অন্য ছুটা কাজও করতেন। ঈদের আগে প্রতিবেশী হৃদয়ের সঙ্গে গ্রাম থেকে রাজধানীতে আসছিলেন বাড়তি রোজগারের আশায়। কিন্তু কাপাসিয়ার গুদারাঘাট পার হয়ে রাত ১০টার দিকে নামিলা গ্রামে পৌঁছে একটি দোকানে চা পান করতে যান। ওই সময় গরুচোর সন্দেহে তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা।
নিহত নাসিরের ভাই মাসুম বলেন, ‘নাসির ও হৃদয় কোনো অপরাধী নন। দেশের কোথাও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এর পরও লোকজন শুধু সন্দেহের জেরে গণপিটুনি দিয়ে তাঁদের হত্যা করে।’
তিনি বলেন, ‘নাসিরের নুসরাত (৩) ও করবী (তিন মাস) নামে দুটি শিশুসন্তান রয়েছে। তাঁর স্ত্রী নুর নাহার ঘটনার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখন এই দুই মাসুম বাচ্চা ও স্ত্রীর দায়িত্ব কে নেবে! যারা দেশের আইনকে তোয়াক্কা না করে মানুষ পিটিয়ে হত্যা করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’
এ ঘটনায় গ্রাম পুলিশ জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। তবে এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। কারণ জানতে চাইলে কাপাসিয়া থানার ওসি আবু বকর মিয়া বলেন, ‘এ ঘটনার তদন্ত চলছে।’
অপরাধ বিশ্লেষক মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ সাইন্স অ্যান্ড ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘গণপিটুনির নামে আইন কোনোভাবেই নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। যারা এভাবে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করছে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। বিশেষ করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে মানুষকে সচেতন করতে হবে।’
সম্পর্কিত খবর

ভোগান্তি

রাজধানীর উত্তরার আবদুল্লাপুর সড়কটিতে জমে আছে পানি। পানির নিচে খানাখন্দ ও বড় গর্ত থাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছে ওই পথে চলাচল করা যানবাহন ও পথচারীরা। গতকাল সকালে তোলা। ছবি : লুৎফর রহমান
।
কুলাউড়া সীমান্ত
বাংলাদেশি ৩ যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে মাছ শিকারের সময় বাংলাদেশি তিন যুবককে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের হরিপুর সীমান্ত এলাকা থেকে বিএসএফ তাঁদের ধরে নিয়ে যায়।
তিন যুবক হলেন শরীফপুর ইউনিয়নের সঞ্জরপুর গ্রামের আনু মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়া (২৩), হরিপুর গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে মাসুক রহমান মন্টুরি (২০) এবং তৈয়ব আলী ডাগা মিয়ার ছেলে সিপার আহমদ (২২)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে সোহাগ, মাসুক ও সিপার হরিপুর এলাকায় মাছ ধরছিলেন।
আটক মাসুক রহমান মন্টুরির ভাই ময়নুল মিয়া বলেন, ‘ওরা বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরেই মাছ ধরছিল। ওই সময় সীমান্ত এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা বিজিবিকে জানালে তারা জানায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় শরীফপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য হারুন মিয়া বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছি, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা মাছ ধরতে গিয়ে বিএসএফের হাতে আটক হন। বিষয়টি বিজিবিকে জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে ৪৬ বিজিবির (শ্রীমঙ্গল) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়ার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ভয়ংকর রাতের ঢাকা ছয় মাসে ৯৭২ ছিনতাই
রেজোয়ান বিশ্বাস

সড়কে বেপরোয়া ছিনতাই কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে গলির রাস্তায় দেশি অস্ত্রে পথচারীদের কাছ থেকে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। সর্বশেষ গত ১২ জুলাই ভোরের দিকে শ্যামলী এলাকায় একটি গলিতে চাপাতি ধরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শিমিয়ন ত্রিপুরার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, এমনকি পায়ের জুতা ও গায়ের কাপড় পর্যন্ত ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
এর আগে এসএসসি পরীক্ষার্থী মোরশেদ আলম গত ১ জুলাই রাতে পুরান ঢাকার একটি সড়ক দিয়ে রিকশাযোগে বাসায় ফিরছিল।
গত ৩ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় ধানমণ্ডির মেহেরুন্নেছা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রিনা ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি থেকে গভীর রাতে ঢাকায় ফিরে রিকশাযোগে ধানমণ্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের হোস্টেলে যাচ্ছিলেন। পথে ছিনতাইকারীরা তাঁর মাথায় ও ঘাড়ে কুপিয়ে সঙ্গে থাকা টাকা, অ্যাডমিট কার্ড, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, মোবাইল নিয়ে সটকে পড়ে।
এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় বৈঠক করেছে পুলিশ। তবে কিছুতেই ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঠিক নজরদারি না থাকায় ছিনতাইকারীরা সুযোগ নিচ্ছে। রাতের ঢাকায় ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে না আনলে মানুষের জান-মালের আরো ক্ষতি হতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের অপরাধীকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। নিয়মিত টহল জোরদার, অপরাধপ্রবণ এলাকায় নজরদারি বাড়ানো, চেকপোস্ট পরিচালনা করা, মামলা তদন্তে অগ্রগতির পাশাপাশি মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়াতে হবে। গত মঙ্গলবার রাজারবাগে পুলিশ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত জুন-২০২৫ মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত মাসে (জুনে) রাজধানীর বিভিন্ন ধানায় ৩২টি দস্যুতার মামলা হয়েছে। এর আগে জানুয়ারি মাসে ৫৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ৪৬টি, মার্চে ৩৮টি, এপ্রিলে ৩৭টি ও মে মাসে ৩২টি দস্যুতার মামলা হয় রাজধানীর বিভিন্ন থানায়।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২৫টি ছিনতাইয়ের মামলা হয় বিভিন্ন থানায়। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন সাতজন।
পুলিশ সদর দপ্তরের মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের গত ছয় মাসে সারা দেশের বিভিন্ন থানায় ৯৭২টি ছিনতাই বা দস্যুতার মামলা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী ও হাসপাতাল সূত্র বলছে, মামলার চেয়ে দেশে অনেক বেশি ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে মানুষ।
পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, রাজধানীর আটটি ক্রাইম জোনের সব থানাতেই কমবেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর, রমনা, ধানমণ্ডি, উত্তরাসহ পুরান ঢাকা এলাকায় ছিনতাই বাড়ছে। এ ছাড়া নিউমার্কেট, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, হাজারীবাগ, চকবাজার, শাহ আলী, এমনকি গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। মূলত সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ছিনতাই বেড়ে যায়।
জানা গেছে, রাতের ঢাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর টহল কার্যক্রম তেমন সক্রিয় নয়। রাজধানীর তেজগাঁও, রমনা ও পুরান ঢাকা এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রাতের ঢাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তেমন উপস্থিতি নেই। ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলোতে সক্রিয় নয় পুলিশের টহল। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ভোরের দিকে, গভীর রাতে, এমনকি সন্ধ্যার দিকেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করছে, বাস্তবায়নের চেয়ে তা টেবিলকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে বেশি। ফলে বাস্তব পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে আলোচনাগুলো হচ্ছে না। যাঁরা নতুন করে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন, তাঁদের রাজধানী বা ঢাকার অপরাধের ধরন, অপরাধীদের বৈশিষ্ট্য বুঝে উঠতে সময় লাগছে। কার্যত এর সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীচক্রগুলো।
সরকার পরিবর্তনের পর নতুন সরকার ঢাকায় পুলিশের জনবলে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। পুলিশের সর্বোচ্চ পদ আইজি ও ডিএমপি কমিশনার পদে পরিবর্তন আনা হয়। তবে পুলিশ সদস্যরা এখনো তেমন সক্রিয় হতে পারছেন না।
স্কুলছাত্র মোরশেদ আলমের মামা তারেক হোসেন বলেন, ‘এখন তো রাতে রাস্তায় বের হতেই ভয় করে। কেউ নিরাপদ নয়। স্কুলছাত্রকেও ছাড়ছে না অপরাধীরা।’ তিনি বলেন, ‘আমার ভাগিনা মোরশেদ আলম তানিম পুরান ঢাকার আহমেদ ভবানী স্কুলের ছাত্র ছিল। প্রয়োজনীয় কাজ শেষে রাতে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরি মেরে রাস্তায় ফেলে রাখে। তাকে চকবাজার বাকুশা মাজারের সামনে থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সে মারা যায়।’
আহত শিক্ষার্থী রিনা জুয়েল ত্রিপুরার ভাই বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের কারণে আমার বোনের পরীক্ষা হুমকির মুখে পড়ে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাগান থানার ওসি ফজলে আশিক বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
আবার গভীর রাতে ছিনতাইকে কেন্দ্র করে গণপিটুনির ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি রাজধানীর মুগদা এলাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে আলামিন নামের এক তরুণকে রাস্তা থেকে ধরে গণপিটুনি দেয় একদল লোক। হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। মুগদা থানার ওসি সাজেদুর রহমান এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, আলামিন নামের এক তরুণকে ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা করে একদল লোক। হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, গত ৯ মাসে রাজধানীতে ছিনতাইকারীসহ এ ধরনের অপরাধে জড়িত দুই হাজারের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে।
শ্যামলী এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কবির, আল আমিন ও আসলাম নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃৃতি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীচক্রের সদস্য। তারা চাপাতি ও মোটরসাইকেল ভাড়া দেয় মাঠ পর্যায়ের ছিনতাইকারীদের। কোনো ছিনতাইকারী যখন গ্রেপ্তার হয় তখন দাদন (ব্যবসার জন্য অগ্রিম টাকা ধার, সাধারণত সুদসহ টাকা ধার দেওয়ার জন্য বেশি পরিচিত) দেয় চক্রটি, যাতে ছিনতাইকারী আসামি আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসতে পারে।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় আসামি শনাক্তের পর গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। যারা ছিনতাইয়ের জন্য চাপাতি আর মোটরসাইকেল ভাড়া দেয় তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ডাকাতের ফাঁদে পড়ে বাইকচালক নিহত, ছয় জেলায় ৭ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

সিলেটে সড়কে ডাকাতের পাতা ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেলচালক। বরিশালে ভাড়া বাসা থেকে এক স্কুল শিক্ষকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে উদ্ধার হয়েছে আরো পাঁচজনের লাশ।
কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
সিলেট : বিমানবন্দর-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে ডাকাতের পাতা রশির ফাঁদে প্রাণ গেল সবুজ আহমদ (২১) নামের এক মোটরসাইকেলচালকের।
নিহত সবুজ কোম্পানীগঞ্জের উত্তর কলাবাড়ী গ্রামের মৃত মনিরুল ইসলামের (তোতা মিয়া) ছেলে।
হতাহতদের স্বজনরা জানিয়েছেন, রাস্তার ওপর ডাকাতদের আড়াআড়িভাবে টানিয়ে রাখা রশি সবুজের গলায় আঘাত হানলে তিনি ও সঙ্গের দুই আরোহী মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন।
চট্টগ্রাম : নগরীর টাইগার পাস এলাকার একটি ড্রেন থেকে গতকাল মামুন (৩৭) নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
খুলশী থানার ওসি আফতাব উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, মামুন রিকশা চালাতেন, আবার বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের কাজ করতেন।
ওসি আরো বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে তাঁকে খুন করা হয়েছে কি না।’
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) : ফটিকছড়িতে মো. এনাম (৪৮) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
নিহতের চাচাতো ভাই জসিমসহ স্থানীয়রা জানান, নিহত এনাম দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন এবং চোখেও ঠিকমতো দেখতে পেতেন না। পরিবারের সদস্যরা সব সময় তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করত।
ফটিকছড়ি থানার ওসি নুর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, পরিবারের চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ : নিখোঁজের চার দিন পর এক অটো ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে উল্লাপাড়া উপজেলার ক্ষুদ্র মনোহরা গ্রামে ফুলজোর নদীর কচুরিপানার ভেতর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত জেলহক ওরফে সোহাগ (২০) এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে।
বরিশাল : গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল নগরীর করিম কুটির এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মো. মহিউদ্দিন নামের স্কুল শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি নগরীর হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।
মো. মহিউদ্দিন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হরিদ্রাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ মাঝির ছেলে। তাঁর ছোট ভাই বরিশাল বিএম স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম নিয়ে তাঁর ভাইয়ের বিবাদ চলে আসছিল। স্কুলের দুর্নীতি নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে তাঁর ভাই লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন। সাংবাদিকদেরও তা জানিয়েছেন। এ জন্য তাঁকে বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
তাই স্বজনদের অভিযোগ, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ওই শিক্ষকের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
ফরিদপুর : ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লিফটের নিচ থেকে রাজু মাতুব্বর (৪৮) নামের এক ব্যক্তির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল দুপুরের দিকে হাসপাতালের ১০ তলা ভবনের নিচতলার বি ব্লকের ২ নম্বর লিফটের নিচ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তি বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মৃত শহীদ মাতুব্বরের ছেলে বলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুরাদ শেখ নিশ্চিত করেছেন।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুমায়ন কবির বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ওই লিফট দিয়ে মালামাল নিয়ে একজন মেকানিক ও একজন ওয়ার্ড মাস্টার ওপরে ওঠার সময় দুর্গন্ধ পান। পরে লিফটের নিচে খুলে পানিতে ভাসমান একটি মরদেহ দেখতে পান। বিষয়টি আমাকে জানালে রাতেই পুলিশকে জানানো হয়। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : গোমস্তাপুর উপজেলা থেকে লাইলী বেগম (৫০) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দৌলতপুর মিনিবাজার এলাকার শাহজাহানের স্ত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিজ বসতবাড়ির রান্নাঘরের চালের বাঁশের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দেন লাইলী। পরে প্রতিবেশীরা খবর দিলে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক ধারণা, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
পরিবারের বরাতে গোমস্তাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দারেশ আলী বলেন, ‘ওই গৃহবধূ মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন।’