ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

কৌশলে ১৫০ বিঘা জমির মালিক ‘রিপন সাব’

বিশ্বজিৎ পাল বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বিশ্বজিৎ পাল বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
শেয়ার
কৌশলে ১৫০ বিঘা জমির মালিক ‘রিপন সাব’
রিপন মিয়া

ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন যে গলায় যদি ফাঁসও লাগানো হয় তাহলে দম থাকা পর্যন্ত জমি কিনবেন, সম্পদ বাড়াবেন। এভাবেই রিপন মিয়া এখন দেড় শ বিঘা জমির মালিক। তবে তাঁর এই জমি কেনা মানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্রাস করা। এতে কেউ বাদ সাধলেই নেমে আসে খড়্গ।

এলাকায় তিনি রিপন সাব হিসেবে পরিচিত। ঢাকায় থাকলেও তাঁর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে, কাইতলা উত্তর ইউনিয়নের নারুই (ব্রাহ্মণহাতা) গ্রামে। দামি গাড়িতে চড়ে এলাকায় এসে শুক্র ও শনিবার থেকে বিচারসহ অন্যান্য কাজ সারেন।

জমি নিয়ে বিরোধে রিপন মিয়ার সর্বশেষ অত্যাচারের শিকার হয়েছেন আমিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।

এ ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন নবীনগরের বাসিন্দা ও হেফাজতে ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মেহেদী হাসান।

মোবাইল ফোনে কথা হলে মেহেদী হাসান বলেন, রিপন মিয়া ধনাঢ্য ব্যক্তি। তাঁর জমি কেনার শখ থাকলে কিনতে থাকুন। কিন্তু মানুষের ওপর অত্যাচার করে কেন?

রাধিকা-নবীনগর সড়ক হয়ে ৪০ টাকা ভাড়ায় নারুই অটোরিকশাস্ট্যান্ড।

সেখান থেকে রিপন মিয়ার সাম্রাজ্যে হেঁটে যেতে সময় লাগে ২৫ মিনিটের মতো। নদীর পার ঘেঁষে বিশাল এলাকাজুড়ে সেই সাম্রাজ্য। প্রবেশপথের ডানেই নদীর পার ঘেঁষে বালু ফেলে উঁচু করা হয়েছে। বাঁ পাশে নানা জাতের ফলের বাগান। বহুদূর বিস্তৃত সীমানাদেয়াল।
ভেতরে তিনতলা ভবন, শেষ প্রান্তে একটি দিঘি।

রিপন মিয়ার অত্যাচারের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দিয়েছেন নারুই গ্রামের বৃদ্ধ প্রকাশ দাস বুটাই। অভিযোগটির অনুলিপি বিভিন্ন দপ্তরেও দেওয়া হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বুটাইয়ের চার কানি জমি কিনতে চান রিপন মিয়া। তবে জমির দাম অনেক কম বলায় ২০২২ সালের আগস্টে বুটাই জমি বিক্রি করে দেন জাকির হোসেনের কাছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রিপন মিয়া ডিসেম্বর মাসে বুটাইকে জমি বিক্রির স্ট্যাম্প ও চেক নিয়ে তাঁর বাড়িতে আসতে বলেন। বুটাই সেখানে গেলে রিপন স্ট্যাম্প ও চেক রেখে দেন, খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও করিয়ে রাখেন।

পরে জাকির হোসেন ওই জমিতে চাষ করতে গেলে বাধা দেয় রিপনের লোকজন। বাধ্য হয়ে জাকির ওই জমি ছেড়ে দেন। এ নিয়ে বুটাই ও জাকিরের বিরুদ্ধে সালিস বসিয়ে বুটাইকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জমিতে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিক আবু হোসেন, সাজিদ ভূঁইয়া, কামরুল ইসলাম ও কাজী কামালকে গলায় গামছা দিয়ে মাফ চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সালিসে থাকা কামরুল ও সাজিদ সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান। কামাল ও আবুল ক্ষমা চাইতে না আসায় তাঁদের আউলিয়া বিলে আটকে মারধর করা হয়।

ভাতিজার জমি রিপন মিয়া জোর করে নিতে চাইলে প্রতিবাদ করেছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য অলিউল্লাহ মুন্সী। এখন তিনিই ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মোবাইল ফোনে অলিউল্লাহ বলেন, রিপন মিয়া ভাতিজা আমিরুলের ৭৯ শতক জমির ধান জোর করে কেটে নিতে চায়। ৯৯৯-এ ফোন করে ওই যাত্রায় রক্ষা পায় আমীরুল। পরে এ নিয়ে রিপনের আদালতে আমাকে ৪৬ লাখ ও আমিরুলকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়। জরিমানা না দেওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়।

দরিদ্র সোহেল মিয়ার মাত্র পাঁচ শতক জমিতেও নজর পড়ে রিপন মিয়ার। জায়গাটি দিতে গড়িমসি করায় তাঁকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা না দেওয়ায় তাঁর ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত শশুরবাড়ি কুমিল্লায় চলে যান সোহেল। পরে সোহেলের বাবা জরিমানার ৯০ হাজার টাকা দিলেও ওই পাঁচ শতক জমি ঠিকই দখলে নিয়ে নেন রিপন মিয়া।

দুই এলাকার বিরোধেরও সুযোগ নেন রিপন মিয়া। প্রায় ৬০ একরের বেশি জমি নিয়ে নারুই ও নোয়াগাঁও গ্রামের মানুষের বিরোধ শত বছর আগে থেকেই। দুই এলাকার মানুষকে নিয়ে বসে রিপন মিয়া সিদ্ধান্ত দেন যে নোয়াগাঁও গ্রামের মানুষ ৬০ শতাংশ ও নারুই গ্রামের মানুষ ৪০ শতাংশ জায়গা পাবে। তবে রিপন মিয়াই এখন ওই জায়গা ভোগদখল করে আছেন।

নবীনগরের এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধি বলেন, রিপন মিয়া আগে গ্রামে সালিস করতেন। আমি দু-একটি সালিসে গিয়েছি। তিনি কারো ওপর অত্যাচার করেন সেটা আমার জানা নেই। তবে অনেক সময় দেখা গেছে, এলাকার লোকজন রিপন মিয়ার কাছে মৌখিকভাবে জমি বিক্রি করে রেখেছে। হয়তো দু-চার বছর পর টাকা নেওয়ার সময় জায়গার দাম তখন বেশি। এ অবস্থায় বিক্রেতা পুরনো কথা থেকে সরে গিয়ে নতুন দাম হাঁকান।

রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে জেলা প্রশাসন। গত বছরের ৬ জুলাই তদন্ত করতে আসেন ওই সময়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমীন। তিনি স্থানীয় লোকজন, প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। ভিডিও বক্তব্য নেন রিপন মিয়ার।

এ বিষয়ে রুহুল আমীন কালের কণ্ঠকে বলেন, রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে নদী দখল এবং অন্যায়ভাবে সালিস করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এসব বিষয় তুলে ধরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে রিপন মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকার জমি বিক্রি করে গ্রামে জমি কিনতাম। এ ছাড়া আমার গার্মেন্টস ব্যবসার টাকায় জমি কিনতাম। ওই জমিগুলো থেকে নানাভাবে আমার আয় আসছে। সব মিলিয়ে এখন আমার দেড় শ বিঘার মতো জমি।

আমিরুলের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত জুয়া খেলা নিয়ে মারামারিতে আমিরুল আহত হয়। আর অলিউল্লাহ তো আমারও চাচা। দেখলে সালাম দিই। আমার কারণে কেন তিনি বাড়িছাড়া, সেটা বুঝতে পারছি না।

প্রশাসনের তদন্তেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া প্রসঙ্গে রিপন মিয়া বলেন, আমার জায়গা থেকে নদী আরো ৯ ফুট দূরে। প্রশাসনের লোকজনকে বলেছি, যদি মেপে দেখিয়ে দেয় তাহলে আমি মাটি সরিয়ে নেব। আমি কোনো সালিসও করি না। এসব অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে যত জায়গা আছে আমি সব লিখে দিয়ে চলে আসব।

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু

শুল্ক আলোচনায় ইতিবাচক সমাধান চায় পোশাক খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুল্ক আলোচনায় ইতিবাচক সমাধান চায় পোশাক খাত

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর)। এই আলোচনা ৯ জুলাই শুরু হয়ে ১১ জুলাই পর্যন্ত চলবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প গত ৭ জুলাই ১৪টি দেশের সরকারপ্রধানদের কাছে চিঠি পাঠানোর পর বাংলাদেশ নতুন দফায় আলোচনা শুরু করা প্রথম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন, যিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে উপস্থিত থেকে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেবেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন।

এ ছাড়া বাণিজ্যসচিব এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নিতে এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন।

শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশ আশা করছে, গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ফলপ্রসূ আলোচনার অগ্রগতির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে।

এর আগে সোমবার বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে।

এদিকে শুল্ক আলোচনায় ইতিবাচক সমাধান আশা করেছে দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর হলে দেশের রপ্তানি খাতের ওপর বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

আমরা ভেবেছিলাম শুল্ক ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকবে। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, সেটা খুবই চিন্তার বিষয়। যেসব কারখানার রপ্তানির ৫০ শতাংশ বা তার বেশি যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর, সেসব প্রতিষ্ঠান বেশি বিপদে পড়বে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় একক বাজার। শুরু থেকেই আমরা সরকারকে বলেছি যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে।

আমরাও নিজেদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তার প্রস্তুতি রেখেছি। কিন্তু শুল্ক নিয়ে আলোচনার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়নি।

ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আদায় হয়েছে। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।

 

মন্তব্য

শিশু কান্না

শেয়ার
শিশু কান্না
দাবি আদায়ে কয়েক দিন ধরেই আন্দোলন করছেন তথ্য আপারা। গতকালও মিছিল করেন তাঁরা। বাড়িতে ছোট সন্তানদের দেখার কেউ না থাকায় সঙ্গে নিয়ে আসেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মেট্রো রেল স্টেশনে বসিয়ে রাখেন তাদের। দীর্ঘ সময় একা থেকে এক শিশু কান্না শুরু করেছে। পাশেই আরেক শিশু ঘুমিয়ে পড়েছে। গতকাল তোলা। ছবি : শেখ হাসান
মন্তব্য
চীনা রাষ্ট্রদূত

বিনিয়োগের অনুকূলে পরিবেশ আনতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বিনিয়োগের অনুকূলে পরিবেশ আনতে হবে

বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও চীনা কম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ আরো অনুকূলে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে চায়না-বাংলাদেশ শিল্প ও সরবরাহ চেইন সহযোগিতা শীর্ষক এক সেমিনারে এ কথা জানান রাষ্ট্রদূত।

ইয়াও ওয়েন জানান, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০টি চীনা কম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যাদের মোট প্রত্যাশিত বিনিয়োগ অঙ্গীকার কয়েক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

তিনি বলেছেন, সুরক্ষার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় ফোরামের আলোচনা হচ্ছে। এতে অন্য কোনো দেশের উদ্বেগের কিছু নেই।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে অবকাঠামো, এনার্জি, বন্দর খাতে বিনিয়োগে চ্যালেঞ্জ আছে।

এসব চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়েও চীনা কম্পানিগুলো বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগে আগ্রহী।

চায়নিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিএইবি) আয়োজিত সেমিনারে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে যেকোনো দেশ বিনিয়োগ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিডা সহযোগিতা করবে। চীনা বিনিয়োগ বাড়াতে সেখানে বিডার একটি অফিস খোলা হবে।

তবে বাংলাদেশে চায়না টাউন নেই। ঢাকায় একটি চায়না টাউন প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এ ছাড়া তিনি বলেন, বাংলাদেশের শক্তিশালী ও দক্ষ শ্রমশক্তিকে, বৈশ্বিকভাবে কাজ করা চীনা কম্পানিগুলোর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে শীর্ষ দেশও চীন। তবে চীনের সঙ্গে আমাদের এনার্জি ও বিদ্যুৎ খাতে দুই দেশের সহযোগিতার আরো সুযোগ আছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন চীনা কম্পানি আইসিটি খাতে সহযোগিতা করছে। সাইবার নিরাপত্তা খাতেও আমরা চীনের সহযোগিতা পাচ্ছি। তবে আমাদের হাই-টেক পার্কে চীনা বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আরো সুযোগ নিতে পারেন।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন চায়নিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের সভাপতি হান কুন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাহেলা আক্তার, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মোকছেদ আলী ও ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম বেপারী।

 

১২ ক্ষেত্রে কাজ করতে সম্মত তিন দেশ

সম্প্রতি কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১২টি ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান। বাংলাদেশে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গতকাল ঢাকায় এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

ইয়াও ওয়েন জানান, ১২টি ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে তিন দেশ। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, শিল্প, পরিবেশ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি সহযোগিতা ইত্যাদি। তিন দেশের সহযোগিতার ভিত্তি হলো পারস্পরিক আস্থা।

এক প্রশ্নের উত্তরে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির পরিপ্রেক্ষিতে চীন সুরক্ষা পেতে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেও সুরক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে। আশা করি, বাংলাদেশ এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা জামায়াতে ইসলামী ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। সে লক্ষ্যেই এই বৈঠক হয়েছে। তবে সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি, কেননা নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণের বিষয়।

মন্তব্য

কলকাতায় চোরাচালানের কাঠি নাড়ছেন

    তাজুল : রাজনীতি মানেই দুর্নীতি—শেষ পর্ব
বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
কলকাতায় চোরাচালানের কাঠি নাড়ছেন

সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের আদি ব্যবসা ছিল চোরাচালান। চোরাচালানের মাধ্যমেই ব্যবসায় হাতিখড়ি হয়েছিল তাঁর। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন এই দুর্নীতিবাজ। সেখান থেকে তিনি আবার তাঁর পুরনো ব্যবসা নতুন করে চালু করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাজুল কলকাতায় অবস্থান করে বাংলাদেশ-ভারতের চোরাচালানের একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কলকাতায় বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন। সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ-ভারত চোরাচালান রুটে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেই শূন্যতা পূরণ করেছেন তাজুল। কলকাতায় চোরাচালানের পুরনো সাথিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন করে শুরু করেছেন তাঁর আদি ব্যবসাটি।
জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর বিপুল সম্পদ আছে। তাঁর ঘনিষ্ঠরা সেই সম্পদগুলো দেখভাল করছেন। তাজুলের আত্মীয়, এপিএস এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। দুবাইয়েও তাজুলের রয়েছে বিপুল সম্পত্তি।
দুবাই ছাড়াও তাঁর সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। তবে তাজুল কৌশলগত কারণে কলকাতায়ই অবস্থান করছেন। তাঁর ছোট ভাই অবস্থান করছেন দুবাইয়ে। তাঁদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। সবকিছুই পরিচালিত হচ্ছে তাজুলের নির্দেশে।

কলকাতা থেকে তাজুল নিজে এখন দুবাই যাচ্ছেন না। কারণ দুবাইয়ে তাঁর যেসব সম্পদ আছে সেগুলো দেখভাল করার জন্য বিশ্বস্ত লোক রয়েছে। কলকাতা থেকে ব্যবসা পরিচালনা তাঁর জন্য সহজ। এখনো বিপুল অবৈধ অর্থের লেনদেনের লোভেই কলকাতায় থিতু হয়েছেন তিনি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দুবাইয়ে শুধু তাজুল ইসলাম নয়, তাঁর স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামেরও বিপুল সম্পদ রয়েছে। দুবাইয়ে কমপক্ষে চারটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক তাজুল। এসব অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁর ছোট ভাই ও এপিএস এগুলো দেখাশোনা করেন। দুবাইয়ে তাজুল ইসলামের আরো কিছু বিনিয়োগ রয়েছে। সেগুলো আছে অন্যদের নামে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তাজুলের একাধিক বাড়ি রয়েছে। সেগুলোও আছে অন্যদের নামে। এসব বাড়ি দেখভাল করেন তাজুল ইসলামের ছেলে ও ভাতিজা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় তাজুল ইসলামের বাড়ি রয়েছে দুটাি। বাড়ি দুটির মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ কোটি টাকা। কানাডার টরন্টোতেও তাজুল ইসলামের বাড়ি আছে। বাড়িটি এক কেয়ারটেকার দেখাশোনা করছেন। দেশে তাজুলের জব্দ হওয়া সম্পদ তাজুলের প্রকৃত সম্পদের তুলনায় সামান্যই। দেশে তাজুলের বেশির ভাগ সম্পদই এখনো অনেকের কাছে অজানা। বিদেশেও তাঁর বহু অবৈধ সম্পদ সম্পর্কে খোঁজ নেয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, বেনামি সম্পদগুলোর ব্যাপারে দুদক কিছু করতে পারছে না। দুদক শুধু সেটুকুই জব্দ করেছে, যেগুলো তাজুলের নিজের বা তাঁর পরিবারের নামে ছিল। যেসব সম্পদ বেনামে রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে কোনো কিছু করার ক্ষেত্রে আইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

তাজুল ও তাঁর স্ত্রীর দেশে বিভিন্ন নামে, এমনকি তাজুলের গাড়িচালকের নামেও জমি, ফ্ল্যাট রয়েছে। শুধু রাজধানীর গুলশান, বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় নয়, ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, খিলগাঁও, মিরপুরেও বিনিয়োগ রয়েছে তাঁর। ঢাকা মহানগরে তাজুল ইসলামের কম হলেও ৪২টি ছোট-বড় ফ্ল্যাট রয়েছে। বিভিন্ন শপিং মলে দোকান রয়েছে কম হলেও ৫০টি। এসব ফ্ল্যাট ও দোকান তাঁর সহকারী, গৃহকর্মী ও গাড়িচালকের নামে কেনা হয়েছে। তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছিলেন আজমল। আজমলের নামে মিরপুরে একটি এবং জোয়ারসাহারায় আরো একটি অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। বর্তমানে আজমল পলাতক রয়েছেন। তবে তাঁর নামে কেনা এই অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এসব অ্যাপার্টমেন্টে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যাঁরা বাড়িতে ভাড়া থাকেন, তাঁরা জানেন, এটি সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বাড়ি। ধানমণ্ডি ও খিলগাঁওয়ে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তাজুল ইসলামের বিশেষ সহকারীর নামে। এ ছাড়া তাজুল ইসলাম যে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার, সেই ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তার নামেও বাড়ি আছে। এগুলোর মূল মালিক তাজুল। তাজুল তাঁদের দিয়ে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন। আবার হেবা দলিলের মাধ্যমে এসব সম্পদের নিজের মালিকানা নিশ্চিত করেছেন। বাড়িগুলো এখন পর্যন্ত জব্দ করা হয়নি। এসব বাড়ির ভাড়া বাবদ যে বিপুল অর্থ আসছে, তা হুন্ডির মাধ্যমে কলকাতায় যাচ্ছে তাজুল ইসলামের কাছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, বাংলাদেশে এখনো তাজুল ইসলামের বিপুল বিনিয়োগ আছে, সেখান থেকে অর্থ তোলা হচ্ছে। কুমিল্লা শহরে তাজুল ইসলামের বেনামে একটি বহুতল মার্কেট রয়েছে, যেখান থেকে প্রতি মাসে অন্তত ১০ লাখ টাকা ভাড়া তোলা হয়। ভাড়ার অর্থ সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছেন। এ কারণে তাজুল কলকাতায় সপরিবারে অবস্থান করছেন নির্ভাবনায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যায়, কলকাতায় আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা অভাব-অনটনে আছেন। তবে তাজুল নিউ টাউনের একটি সুরম্য ফ্ল্যাটে সপরিবারে থাকছেন। বিশাল ফ্ল্যাটে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভাড়ায় থাকেন বলা হলেও কেউ কেউ মনে করছেন, চোরাচালানের চক্রের পক্ষ থেকে তাঁকে সেখানে রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁকে কোনো ভাড়া দিতে হয় না। বাংলাদেশে যেমন রাজকীয়ভাবে তাজুল ইসলাম চলতেন, এখন কলকাতায়ও ঠিক একই রাজকীয় কায়দায় চলছেন। বিলাসবহুল গাড়ি, দামি বাড়ি ছাড়াও তাজুল ইসলামের রয়েছে ব্যক্তিগত কর্মচারী। সম্প্রতি একটি অফিসও নিয়েছেন বলে শোনা গেছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, তাজুল ইসলাম শিগগিরই দুবাই যাবেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পরই তাজুল বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর এপিএস ও ছোট ভাইদুজনই গত বছরের ৩ আগস্ট দুবাই চলে যান। তাঁরা সেখানেই অবস্থান করছেন। অন্যদিকে তাজুল ইসলামের স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলাম গত বছরের ৫ আগস্টের পর কিছুদিন কলকাতায় অবস্থান করেন। তারপর সেখান থেকে দুবাই গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আবার কলকাতায় ফেরেন। সূত্র জানায়, তাজুল ইসলাম তাঁর পুরনো ব্যবসা ঠিকঠাক করে দুবাইয়ে পাড়ি জমাবেন এবং সেখানেই তিনি অবস্থান করবেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের বেশি সময়ে রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিণত করেছেন তাজুল। এই দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুণ্ঠন করেছেন, তার খুব সামান্যই এখন পর্যন্ত নজরে এসেছে এবং দুদক সেগুলো জব্দ করেছে। এখনো তাঁর বিপুল সম্পদ ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পরও তাজুল বহাল তবিয়তে আছেন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ