দেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইউরিয়া সার কারখানাগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এই চাহিদা পূরণে বিদেশ থেকে প্রায় দ্বিগুণ দামে ইউরিয়া সার আমদানি করতে হচ্ছে। এতে আমদানি করা সারের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। এর পরও বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে কৃষকদের।
গ্যাস সংকটে ধুঁকছে সার কারখানা
শিহাবুল ইসলাম

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিলে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ২৭ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়া সারের দাম বেড়েছে। অথচ দেশের যেসব করখানা রয়েছে, সেগুলো যদি পুরো সক্ষমতায় ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে পারে, তাহলে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ে প্রায় ২০ টাকা।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বিদেশ থেকে ইউরিয়া সার আমদানির অনুমতি দেয়, যেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে ৬০ হাজার টন ইউরিয়া আমদানি করছে সরকার। এর মোট দাম ২৫২ কোটি ৬৩ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা।
এই হিসাবে প্রতি মেট্রিক টন সারের আমদানি খরচ ৪২ হাজার ১০৫ টাকা।
সার উৎপাদন ও আমদানির ব্যবস্থাপনায় রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। দেশের চাহিদা অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে তারা ইউরিয়া সারের জোগান দিয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কারখানার সক্ষমতা অনুযায়ী যদি ইউরিয়া উৎপাদন করা যায়, তাহলে সরকারকে অন্তত ইউরিয়ায় কোনো ভর্তুকি দিতে হবে না।
ইউরিয়া সার উৎপাদনের সক্ষমতা কত
দেশে প্রতিবছর ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়। এর বিপরীতে দেশের কারখানাগুলোতে সরকারিভাবে উৎপাদিত হয় প্রায় ১০ লাখ টন। আমদানি করতে হয় ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন। দেশে এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন, একইভাবে যমুনা ফার্টিলাইজার কম্পানি লিমিটেডের পাঁচ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কম্পানি লিমিটেডের পাঁচ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন এবং শাহজালাল ফার্টিলাইজার কম্পানি লিমিটেডের পাঁচ লাখ ৮১ হাজার মেট্রিক টন। নরসিংদীতে গ্যাসনির্ভর কারখানা ঘোড়াশাল-পলাশ ফার্টিলাইজার পাবলিক লিমিটেড কম্পানি চালু হয়েছে। এটির উৎপাদন সক্ষমতা ৯ লাখ ২৪ হাজার টন। যমুনা ও চিটাগাং সার কারখানায় গ্যাস না থাকার কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
যদি পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা যায়, তাহলে ঘোড়াশাল-পলাশ ফার্টিলাইজার পাবলিক লিমিটেড ছাড়া মোট উৎপাদন হবে ২২ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু গত অর্থবছরে উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টন। অর্থাৎ সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম উৎপাদিত হয়েছে। বাকি ১৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সরকারকে বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে, ডলার খরচ করে আমদানি করতে হয়েছে। দেশের মোট পাঁচ কারখানা যদি সক্ষমতা অনুযায়ী ইউরিয়া উৎপাদন করতে পারে, তাহলে ৩১ লাখ ৫৫ হাজার টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে, যা দেশের চাহিদার চেয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ টন বেশি।
ঘোড়াশাল কারখানার প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক বলেন, ‘গত ২৮ জানুয়ারি থেকে আমাদের কারখানায় সার উৎপাদন শুরু হয়েছে। ৯০ শতাংশ লোডে সার উৎপাদন হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এভাবে উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারলে দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব হবে।’
কোন কারখানায় কত উৎপাদন, কত খরচ
গত ১৫ জানুয়ারি গ্যাসের অভাবে যমুনা সার কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাস কবে পাওয়া যাবে, তা-ও বলতে পারেননি কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে জামালপুর জেলার তারাকান্দির যমুনা ফার্টিলাইজার কম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতা প্রতিদিন এক হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। বন্ধ হওয়ার আগে প্রতিদিন ৮৫ শতাংশ লোডে আমাদের উৎপাদন ছিল এক হাজার ৪২৫ মেট্রিক টন। এতে উৎপাদন খরচ প্রতি টন ২৫ হাজার টাকার কাছাকাছি। এর চেয়ে বেশি গ্যাস আমরা পাইনি। আমরা যদি আরো গ্যাস পাই, তাহলে সর্বোচ্চ এক হাজার ৭০০ টন উৎপাদন করা সম্ভব। এতে প্রতি টন সারের খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকার কাছাকাছি চলে আসবে।’
এ ব্যাপারে তিতাসের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়া গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় নরসিংদী ঘোড়াশাল সার কারখানাটি চালু করা হয়েছে। তাই সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে জামালপুরে যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।’
গ্যাসসংকটের কারণে চিটাগাং সার কারখানায় উৎপাদন গত ১৯ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যায়। তবে গ্যাস সরবরাহ শুরু হওয়ায় আবার চালু হচ্ছে। এই কারখানার ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়ার উৎপাদন খরচ ছিল প্রতি টন প্রায় ১৭-১৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি ১৭-১৯ টাকার মধ্যে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস না থাকার কারণে কমে গেছে উৎপাদন। অন্যদিকে সারের উৎপাদনও প্রতি কেজি ৩০ টাকার ওপরে উঠে গেছে। তবে এই কারখানার কর্মকর্তারা বলছেন, যদি পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে প্রতি কেজি সারের উৎপাদন খরচ ২০ টাকার নিচে চলে আসবে।
চিটাগাং সার কারখানার হিসাব ও অর্থ বিভাগের উপপ্রধান মো. মোবারক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন যখন বেশি হবে, তখন খরচও কমবে।’ তিনি বলেন, ‘বিসিআইসির যত কারখানা রয়েছে, এর মধ্যে এই কারখানায় সবচেয়ে কম উৎপাদন খরচ। পর্যাপ্ত গ্যাস থাকার ভিত্তিতে আমরা যদি বছরে তিন লাখ টন উৎপাদন করতে পারি, তাহলে প্রতি টন সার উৎপাদন ২০ হাজার টাকার নিচে চলে আসবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে মাত্র ৪০ হাজার ৭২০ টন উৎপাদন হয়েছে।’
সম্পর্কিত খবর

ডেঙ্গু রোগী বেড়েই চলেছে

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগী বেড়েই চলেছে। বড়দের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও। এক সপ্তাহ ধরে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ১০ মাস বয়সী মরিয়ম। গতকাল তোলা।

ঠাকুরগাঁও ও সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলি দুই বাংলাদেশি নিহত
ঠাকুরগাঁও ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মো. রাসেল (১৫) নামে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরে উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে শুক্রবার রাতে সুনামগঞ্জের বাগানবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন শফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের আরেকজন বাংলাদেশি।
নিহত রাসেল ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার রাজবাড়ী এলাকার নিয়াজ উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, গতকাল ভোর ৪টার দিকে রাসেলসহ কয়েকজন মিনাপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যায়। এ সময় ভারতের কিষানগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে রাসেল ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। নিহত যুবকের লাশ ফেরত আনার জন্য পতাকা বৈঠকে বসার আহবান জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে সুনামগঞ্জে নিহত শফিকুল ইসলাম দোয়ারাবাজার উপজেলার ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে শফিকুলসহ ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু আনতে যায়। তখন বিএসএফ টহল দলের নজরে পড়লে তারা চোরাকারবারিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিতে গুরুতর আহত শফিকুলকে সঙ্গীরা বাড়িতে নিয়ে আসে।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গুলিটি সরাসরি শফিকুলের বুকে লেগেছে।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. ক. জাকারিয়া কাদির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় বিবৃতি ও পতাকা বৈঠক আহবান করে প্রতিবাদ জানিয়েছি। পাশাপাশি সীমান্তে নজরদারি আরো জোরদার করা হয়েছে।
আড়াই মাস পর যুবকের মরদেহ ফেরত
ঝিনাইদহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবক ওবাইদুল হোসেনের মরদেহ প্রায় আড়াই মাস পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে গোপালপুর সীমান্ত এলাকায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁর মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ। এ সময় নিহত যুবকের পিতা হানেফ আলী, মহেশপুর থানার ওসি তদন্ত সাজ্জাদুর রহমান, স্থানীয় যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দীন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল মহেশপুর সীমান্তে ওবাইদুল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ।

ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব
ফ্যাসিজমমুক্ত করতেই নতুন টেলিকম নীতিমালা
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিজম থেকে টেলিকম খাতকে মুক্ত করতেই অন্তর্বর্তী সরকার নতুন নীতিমালা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি বলেছেন, টেলিকম খাতকে করমুক্ত করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের দাবি পূরণে নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। দ্রুতই প্রস্তাবিত নীতিমালা উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপিত হবে। নীতিমালাকে সমৃদ্ধ করতে যৌক্তিক পরামর্শগুলো বিবেচনা করা হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং লাইসেন্সিং নীতি সংস্কার’বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দের সভাপতিত্বে বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ জুলফিকার। তিনি জানান, ডিজিটাল অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে টেলিকম অপারেটররা।
প্রস্তাবিত নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, নতুন লাইসেন্সিং কাঠামো প্রযুক্তি নিরপেক্ষ করার পাশাপাশি নীতিমালায় লাইসেন্স তিনটিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে। একই লাইসেন্সের আওতায় একাধিক ধরনের সেবা দিতে পারবেন অপারেটররা। ভয়েস, ডেটা (ইন্টারনেট), ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভ্যাস) ও ওভার-দ্য-টপ (ওটিটি) সার্ভিস দেওয়ার সুযোগ থাকছে নতুন লাইসেন্স নীতিমালায়। এটি এই খাতের বিকাশে সহায়তা করবে। তবে শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ না রাখায় উন্নয়নের গতি স্লথ হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, ‘প্রজন্মের দাবি পূরণে কানেক্টিভিটি থেকে জেনারেশন সার্ভিস ট্রান্সফরমেশনের জন্য নতুন নীতিমালা হচ্ছে। অনেক বেশি জঞ্জালের ওপর থেকে এই নীতিমালা করতে যাওয়ায় এটিকে অনেকটা বিবরণমূলক করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশের কল্যাণে কারো কারো স্বার্থে আঘাত আসতে পারে। কেননা আমরা নেটওয়ার্কের জঞ্জাল ছেঁটে ফেলব। নীতিমালাকে সমৃদ্ধ করতে যৌক্তিক পরামর্শগুলো বিবেচনা করা হবে। একই সঙ্গে সরকারের ভালো উদ্যোগকেও সবার স্বাগত জানানো উচিত।’
বিশেষ সহকারী আরো বলেন, ‘নীতিমালায় লাইসেন্সের সংখ্যা কতগুলো হবে তা নির্ভর করবে লাইসেন্স অবলিগেশন অ্যান্ড কেপিআই পারফরম্যান্সের ওপর। তবে বিটিআরসি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারে কী পরিমাণ লাইসেন্স লাগবে বা কী পরিমাণ লাইসেন্স থাকলে অপটিমাল হয়। তবে এই লাইসেন্স সংখ্যার নাম করে নতুন বিনিয়োগকারীদের বাধা দেওয়া যাবে না। তা ছাড়া টোল কালেক্টর হিসেবে যে লাইসেন্সগুলো বিগত সরকারের সময় দেওয়া হয়েছিল সেগুলো কন্টিনিউ করা হবে না।’ বিদেশি কম্পানির দেশীয় প্রতিনিধিদের দেশের বৃহত্তম স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার আহবান জানান তিনি।
নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে তা অন্তত ১৫ বছরের জন্য টেলিযোগাযোগ খাতকে সুরক্ষা দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. জহুরুল ইসলাম।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ‘বিগত সময়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা পেশিশক্তি খাটিয়েছেন। এখনো ৯ কোটি মানুষ ও আড়াই কোটির মতো হাউসহোল্ড আনকানেক্টেড। এই অবস্থার উত্তরণ করতে, সেবার ব্যবহার সুফল বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। সে কারণে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে পলিসিটা ধীরে ধীরে করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘টেলিকম পলিসি সরকারের এখতিয়ার। অরাজক পরিস্থিতির উত্তরণ থেকে সরকার এই পরিবর্তন আনছে। তাই অংশীজনদের নিয়েই এরপর গাইডলাইন করবে। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কাউকে নতুন নীতিমালায় বঞ্চিত করা হবে না।
বিশ্বব্যাংক পরামর্শক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের বর্তমান লিডারশিপ গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য। তারা একটি যুগোপযোগী পলিসি উপহার দেবেন বলে সবার প্রত্যাশা।’
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির বলেন, ‘আমি মনে করি, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কনসিস্টিন্সি, ক্যাপাসিটি, কোলাবরেশন ও কো-অর্ডিনেশন দরকার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ থাকা দরকার। প্রতিবছর মোবাইল অপারেটররা নেটওয়ার্ক চালু রাখতে ৬০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। সে কারণে দেশে টেলিকম রোডম্যাপ দরকার।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘দেশের মানুষের মোট চাহিদা ৭.৫ টেরাবাইট। এর ৬৫-৭০ শতাংশ প্রয়োজন মেটায় আইএসপিরা। এ জন্য ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়। কিন্তু মোবাইল অপারেটরদের ৩৫ শতাংশ বাজার শেয়ার থাকলেও তাদের কর দিতে হচ্ছে না। এই বৈষম্য দূর করা দরকার। পলিসির মাধ্যমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যে নীতিমালা করা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক সরকারের সময় টিকবে কি না—তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
ফাইবার অ্যাট হোম সিআইও সুমন আহমেদ সাবির বলেন, গত সাত বছরে এই খাতে কত টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, তা হিসাব করা দরকার। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ খরচ সাশ্রয়ী পথ বেছে নিতে হবে।
বৈঠকে আরো বক্তৃতা করেন গ্রামীণফোন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান, রবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) (ভারপ্রাপ্ত) রিয়াজ রশীদ, বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইওহান বুসে, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ প্রমুখ।

ফেনীতে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম
বন্যা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সহায়তায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের চিন্তা সরকারের
ফেনী প্রতিনিধি

টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গতকাল শনিবার সকালে ফেনীর ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক)।
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা দুর্গত মানুষের খোঁজখবর নেন তিনি। অনেকে খাদ্য সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন। উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুধু খাদ্য নয়, প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘অতি দরিদ্র মানুষগুলো এখন অসহায়। তাদের ঘরবাড়ি নেই, খাবার নেই। প্রথমে তাদের বাঁচাতে হবে। এরপর ধাপে ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণে টেকসই বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ যেন সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন হয়, সে জন্য আমরা সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার চিন্তা করছি। এটি একটি বৃহৎ প্রকল্প—কারিগরি দক্ষতাসহ সব বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন ত্রাণ নয়, শুধু টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প, বাস্তবায়নে সময় লাগবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মিরাজ হোসেনের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘ত্রাণ কার্যক্রমে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। সবাইকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমিও একজন সেবক।
এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ফেনীর মানুষ যেন বারবার এই দুর্ভোগে না পড়ে, সে জন্য একটি স্থায়ী, টেকসই পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। কাজের মান খারাপ হলে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।’
তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে তিনি আবার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে আসবেন।
এদিকে গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘ফেনী বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ব্যানারে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরে টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণের দাবিতে এই কর্মসূচি হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে মানুষের জানমাল ও জীবিকা বিপন্ন হয়েছে। এই অবস্থায় টেকসই বাঁধ নির্মাণই একমাত্র সমাধান।