উপ-রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (যুগ্ম সচিব) কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিয়োগের বিষয়টি লম্বা প্রক্রিয়া। এটি মন্ত্রণালয় থেকে (স্থানীয় সরকার) জনপ্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে, আশা করছি পেয়ে যাব। আমাদের একজন প্রগ্রামার রয়েছেন। তবে দুই সপ্তাহ আগে অ্যাসিস্ট্যান্ট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগদান করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধনসহ কিছু কাজ করতে চাই। কিন্তু বর্তমান জনবল দিয়ে কাজগুলো করা সম্ভব না। আসলে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সিস্টেমটাকে চালু রাখা। ২০১১ সালে কাজ শুরু হলেও আমাদের অফিস করা হয়েছে ২০১৬ সালে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই সিস্টেমের দেখভাল। এ জন্য পর্যাপ্ত লোকবলও দরকার। অথচ এত বড় একটি সিস্টেম চালু রাখার জন্য লোকবল খুব কম।’
ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘প্রগ্রামারসহ বিভিন্ন বিভাগে জনবল বাড়ানো জরুরি। আমরা অন্তত আরো তিনজন প্রগ্রামার ও সহকারী প্রগ্রামার চেয়েছি। ডেপুটি রেজিস্ট্রার জেনারেল, সিস্টেম অ্যানালিস্টসহ বিভিন্ন পদে আমরা ১৬৫ জন চেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় ২২ কোটি জন্ম নিবন্ধন ও এক কোটি মৃত্যু নিবন্ধন রয়েছে। সংশোধন, নতুন নিবন্ধন, কারো মৃত্যু নিবন্ধন করা হলে জন্ম নিবন্ধন বাতিল করা, তথ্য হালনাগাদ এবং দেখভালের জন্য পর্যাপ্ত জনবল জরুরি। এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) কার্যক্রম যেভাবে চলে, আমরা যে সে রকম একটি অর্গানোগ্রাম চাচ্ছি।’
জানা গেছে, জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ অনুযায়ী বর্তমানে দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৩ হাজার জন্ম নিবন্ধন রয়েছে। মৃত্যু নিবন্ধন রয়েছে এক কোটি তিন লাখ দুই হাজার পাঁচটি।
জনশুমারির সঙ্গে জনসংখ্যার এই পার্থক্যের বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় জানিয়েছে, একই ব্যক্তির একাধিক জন্ম নিবন্ধন করা হচ্ছে। এসব নিবন্ধন বাতিল না করাসহ কিছু কারণে এমন পার্থক্য হয়েছে। তবে ওয়েবসাইট উন্নয়ন করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে কেউ একাধিক জন্ম নিবন্ধন চাইলেও পারবে না।
দেখা গেছে, ২০২৩ সালের শুধু জানুয়ারি মাসে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়ে ১৯ লাখ দুই হাজার ৮৫৬টি। এর মধ্যে ১৫ লাখ পাঁচ হাজার ১৬০টি নিবন্ধন করা হয়। সেখান থেকে ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪টি জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রিন্ট দেওয়া হয়। একই সময় জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন জমা পড়ে ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬টি। সংশোধন করা হয় পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৯টি, চলমান বা দেওয়া হয়নি পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার ৩৬৭টি আবেদন।
জানা যায়, সারা দেশে ১২টি সিটি করপোরেশনের ১২৪টি আঞ্চলিক কার্যালয়, ৩২৯টি পৌরসভা, চার হাজার ৫৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১৫টি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং ৪৪টি দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৫৫টি দূতাবাস বা মিশনসহ প্রায় ছয় হাজার নিবন্ধন কার্যালয়ে সরাসরি ও নিয়মিত যোগাযোগ সমন্বয় করে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের কার্যক্রম চলছে। ২০২৩ সালে অফিশিয়াল ইউজার আইডি দিয়ে একাধিক ডিভাইস থেকে লগইন এবং জালিয়াতি করে জন্ম সনদ তৈরির কয়েকটি ঘটনার পর সিস্টেমের পরিবর্তন করে অফিশিয়াল ইউজারের মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি দিয়ে একটি ডিভাইস নিশ্চিত করার কাজ শুরু হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।
রাজধানীতে ভুগছে মানুষ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে ব্যয় করা অর্থ উঠছে না দাবি করে গত বছরের জুন মাস থেকে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে কার্যক্রম বন্ধ রাখে। বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠিও দেওয়া হয়। সমঝোতার জন্য সভা করেও কার্যত পরিবর্তন ঘটেনি। উল্টো নিজস্ব সার্ভার দিয়ে জন্ম নিবন্ধন দেওয়া শুরু করে সংস্থাটি। তবে এই নিবন্ধন কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দক্ষিণের বাসিন্দারা।
উত্তর সিটি করপোরেশনের সবকটি অঞ্চলে কার্যক্রম চালু থাকলেও ভোগান্তি রয়ে গেছে। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে এই জটিলতা আরো বেশি।
সম্প্রতি ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইসার আলী নিজের এবং সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে গেলে নতুন জন্ম সনদ করতে অপারগতা জানান। তিনি আঞ্চলিক (অঞ্চল-১০) অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে যোগাযোগ করলেও কোনো কাজ হয়নি। ইসার আলী বলেন, ‘ছেলের রেজিস্ট্রেশনের জন্য জন্ম নিবন্ধনটা দ্রুত প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখনো পাচ্ছি না।’
এ বিষয়ে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নাছিমা খানম জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। তাই বিস্তারিত কিছু বলতে পারছেন না। তবে নতুন ওয়ার্ডগুলোতে ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড না দেওয়াতে কাজ করায় জটিলতা হচ্ছে।