বিদ্যুেকন্দ্রে চাহিদামতো গ্যাস দিতে পারলে বিদ্যুতের ভর্তুকি প্রায় ৭০ শতাংশই কমে আসত বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের গ্যাসের চাহিদা রয়েছে দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু আমরা বিদ্যুেকন্দ্রে আমদানীকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসসহ (এলএনজি) সর্বোচ্চ গ্যাস দিতে পারছি এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। যদি বিদ্যুতে দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিতে পারতাম, তাহলে বিদ্যুতের ভর্তুকি প্রায় ৭০ শতাংশ কমে আসত।
মোট গ্যাস সরবরাহের ১৭ শতাংশ যাচ্ছে ক্যাপটিভে (শিল্পের নিজস্ব বিদ্যুেকন্দ্র) এবং ৪৩ শতাংশ গ্যাস যাচ্ছে গ্রিড বিদ্যুেকন্দ্রে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পেট্রোবাংলায় আয়োজিত গ্যাস চাহিদা ও সরবরাহ বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। নসরুল হামিদ বলেন, ‘পুরো অর্থনীতি জ্বালানি খাতের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় যথাযথ গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি বিভাগ গণ্ডির মধ্যে আটকে আছে।
কেউ কারো জায়গা ছাড়তে চায় না। আপনারা ডিলিং করেন, আমাদের গ্যাস দরকার। টাকার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রিজার্ভ কমে আসায় দেশীয় গ্যাসফিল্ডের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে।
দুই-তিন বছর কমবে, পরে আবার বাড়বে। ৪৮টি কূপ খনন প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী দুই বছরে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাব। কিন্তু দুই বছরে গ্যাসের চাহিদা আরো বাড়বে। কিভাবে এ ঘাটতি সামাল দেব, তার পরিকল্পনা থাকতে হবে।’
গ্যাস বিতরণ কম্পানিগুলোকে জবাবদিহির আনতে হবে উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, ‘শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়ে বসব।
গ্রাহককে গ্যাস সরবরাহ করতে না পারলে বিতরণ কম্পানিগুলোর জরিমানা দিতে হবে।’
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, সরকার গ্যাসের চাহিদা পূরণ করতে চায়। স্মার্ট বাংলাদেশে সরকার মানুষকে অল্প খরচে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায়। দেশের উন্নয়নে জ্বালানিকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে। আমদানি করে গ্যাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাই সবাইকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিদিনের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম প্রডাকশন অ্যান্ড এক্সপ্লোরেশন কম্পানিকে (বাপেক্স) আরো কাজ করতে নির্দেশ দেন তিনি।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চালিকাশক্তি হচ্ছে গ্যাস। আমাদের চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতির কারণে সমালোচনা হচ্ছে। সে কারণে আজকের এই সেমিনারে সবাইকে ডাকা হয়েছে, কী করে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো যায়।’ তিনি বলেন, ‘চলমান ৪৮টি কূপ খননের পাশাপাশি আরো ১০০টি কূপ খনন করব ২০২৮ সালের মধ্যে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বান করতে প্রস্তুত হয়েছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব নুরুল আলম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম ও পেট্রোবাংলার জেনারেল ম্যানেজার (রিজার্ভ এবং ডাটা ম্যানেজমেন্ট) মেহেরুল হাসান।