<p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অনেক দিন পর জায়গা থেকে সরল ঢাকার অন্যতম বিখ্যাত ঐতিহাসিক নিদর্শন মীর জুমলার কামান। অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিক থেকেই এটি শহরের এক দর্শনীয় বস্তু হিসেবে পরিচিত। এই কামানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঢাকার এক মোগল সুবাদার বা গভর্নর মীর জুমলার নাম। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ঐতিহাসিক এই কামান সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার ওসমানী উদ্যানের কাছ থেকে কামানটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ঢাকার আরেক ঐতিহাসিক নিদর্শন ঢাকা গেটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কার্জন হল পেরিয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির দিকে এগোতেই প্রাচীন স্থাপনা ঢাকা গেট। এটিও নতুন করে সংস্কার করেছে ডিএসসিসি। আগামী মাসে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা গেটের কাছে রাখা হবে কামানটি। এ জন্য নির্ধারিত জায়গায় একটি বেদিও তৈরি করা হয়েছে। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলা স্বয়ং সম্রাটেরই এক ভাই যুবরাজ শাহ সুজাকে লড়াইয়ে পরাস্ত করে হাজির হয়েছিলেন তখনকার সুবা বাংলার ঢাকা শহরে। মীর জুমলা ঢাকায় পৌঁছার কয়েক দিনের মধ্যেই পান বাংলার সুবাদারের পদ। সেটি ১৬৬০ সালের কথা। ঢাকায় থাকতে মীর জুমলা বাংলার প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দেন। রাজধানী শহরটির নাম তখন অবশ্য জাহাঙ্গীরনগর। সেই ১৬১০ সালেই ইসলাম খান চিশতি সুবাহ বাংলার রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেছিলেন। মোগল সম্রাটের নামানুসারে ঢাকার নাম রাখেন জাহাঙ্গীরনগর।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মীর জুমলা নজর দেন এ নগরের উন্নয়নেও। তৈরি করেন দুটি রাস্তা ও দুটি সেতু। এ সময় প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে কয়েকটি দুর্গও নির্মাণ করা হয়। এ সময় মীর জুমলা আরো পূর্ব দিকে এগিয়ে আসাম জয়েরও সিদ্ধান্ত নেন। ১৬৬১ সালের ১ নভেম্বর শুরু হওয়া মীর জুমলার আসাম অভিযানে অন্যান্য কামানের সঙ্গে ছিল ঢাকার এই কামানও। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৬৬৩ সালের জানুয়ারিতে ঘিলাজহরিঘাট চুক্তিতে শেষ হয় মীর জুমলার আসাম অভিযান। ঢাকায় ফেরার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। তবে তাঁর বাহিনীর একটি কামানের স্থান হয় এখনকার পুরান ঢাকার বড় কাটরার কাছের সোয়ারীঘাটে। সেখানেই কামানটি ছিল দীর্ঘ ১৭৭ বছর। আরো ভালোভাবে সংরক্ষণ করার জন্য ১৮৪০ সালে ঢাকার ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কামানটি বুড়িগঙ্গার কাদাপানি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন চকবাজারে। তখন কামানটির জনপ্রিয়তা খুব বেড়ে যায়। কামানটির মুখে দুধ ঢালতেন হিন্দু রমণীরা। ফুল, সিঁদুরের ফোঁটা দেওয়া এবং ভেতরে প্রদীপও জ্বালানো চলত। চকবাজারে কামানটি অবস্থান করে ৮৫ বছর। এরপর এলাকাটি ঘিঞ্জি হয়ে গেলে ১৯২৫ সালে ঢাকার তৎকালীন জাদুঘরের কিউরেটর নলিনীকান্ত ভট্টশালী কামানটি সরিয়ে সদরঘাটে স্থাপন করেন। তখন সদরঘাটই ছিল ঢাকার সবচেয়ে মনোরম স্থান। পাকিস্তান আমলে মীর জুমলার কামান আবার নড়েচড়ে বসে। সদরঘাট থেকে এটি এবার হাজির হয় তৎকালীন জিন্নাহ এভিনিউতে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) অবস্থিত গুলিস্তান সিনেমা হলের সামনে। তখন গুলিস্তান ছিল ঢাকার কেন্দ্রস্থল এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। এখানে এনে রাখার পর কামানটি </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গুলিস্তানের কামান</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> নামেও পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার এক যুগ সময় গুলিস্তানেই ছিল এই মোগল কামান। ১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের সময় মীর জুমলার কামান ব্যস্ত গুলিস্তানের মোড় থেকে উঠিয়ে এনে অদূরেই ওসমানী উদ্যানের প্রধান ফটকের পেছনে স্থাপন করা হয়। তাতে কামানটি চলে যায় লোকচক্ষুর অনেকটা অন্তরালে। এই সময়টায় কামানটির কিছু ক্ষতিও হয়। কামানে থাকা চারটি লোহার আংটা এরই মধ্যে চুরি হয়ে গেছে।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ওসমানী উদ্যানে বসে থাকার ঠিক ৪০ বছর পর নড়েচড়ে বসল ঢাকার ৩৫০ বছরের পুরনো এই মোগল কামান। স্থানান্তরের কাজটি ছিল বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। সকালে ডিএসসিসির একটি ক্রেন নিয়ে আসা হয় ওসমানী উদ্যানে। এর আগে ডিএসসিসির কর্মীরা কামানের বেদি ভেঙে ফেলেন হাতুড়ির ঘায়ে। এরপর কামানটি বিশাল সেই ক্রেনের মাধ্যমে তুলে ট্রাকে উঠিয়ে নেওয়া হয় ঢাকা গেটের সামনে। আজ অথবা আগামীকাল এটি মূল বেদিতে স্থাপন করা হবে বলে জানালেন ডিএসসিসির সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. আহসান হাবীব। তিনি বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মীর জুমলার কামানের স্থানান্তরের কাজটি বেশ কঠিন ছিল। আমরা সাধারণত এ ধরনের কাজে অভ্যস্ত নই। কামানটি ঐতিহাসিক। তাই আমাদের বেশ চিন্তা-ভাবনা করে কাজটি করতে হয়েছে। এখন নির্ধারিত প্ল্যাটফরমে এটি স্থাপন করা হবে। ঢাকা গেট উদ্বোধনের পর কামানটি সবার দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><img alt="নতুন ঠিকানায় মীর জুমলার কামান" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/12.December/30-12-2023/22222_kaler-kantho-12-2023.jpg" width="1000" /></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কামানটি এনে রাখা হয়েছে ঢাকা গেটে</span></span></span></span></span></span></span></span></p>