<p class="body" style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাঙামাটি আমাকে নানাভাবে আকর্ষণ করে। একেক ঋতুতে দেখি তার একেক রূপ। সেই একই পাহাড়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, একই জলাশয়, একই অরণ্য। তবু ঋতুতে ঋতুতে তার কী রূপবদল! একেক গাছের একেক শোভা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একেক ধরনের ফুল ও ফল। সময়ভেদে তাতে আবার বৈচিত্র্যের মেলা। ছয়টি ঋতুতেই রাঙামাটির বর্ণাঢ্য রূপ প্রাণ ভরে উপভোগের সৌভাগ্য আমার হয়েছে।</span></span></span></span></span></span></p> <p class="body" style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক শীতকালের কথা বলি। রাঙামাটি সদর উপজেলা ভবনের সামনে ছোট্ট একটি বাগানের মতো জায়গায় একটি গাছের কয়েক থোকা ফুলে একদিন আমার চোখ আটকে গেল। দেখেই মনে হলো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, এ ফুল তো আগে কখনো দেখিনি! একবার মনে হলো হয়তো স্থলপদ্ম, তার নতুন কোনো জাত হয়তো বিদেশ থেকে এসেছে। কিন্তু মন তেমনটা সায় দিচ্ছে না। ফুলগুলোর রংটা অনেকটাই স্থলপদ্মের মতো, তবে একটু গাঢ় গোলাপি। ছোট ছোট ঘণ্টার মতো অনেকগুলো ফুল খোঁপার মতো থোকায় ফুটে ছিল। বেলা বেড়েছিল বলে শীতের শিশিরবিন্দুগুলো মিলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এর পরও যেটুকু শিশির জমে আছে পাপড়িগুলোয়, তাতেই যেন ফুলগুলো সদ্যঃস্নাতার মতো লাবণ্যময় আর মোহনীয়। প্রকৃতির অপার শিল্পনৈপুণ্যে মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। ক্ষুদ্র এক ফুলের ভেতরেও সৃজিত হয়েছে বিস্ময়কর রঙের এমন খেলা, যা মর্ত্যলোকের কোনো শিল্পীর পক্ষেই অনুকরণ করা বুঝি সম্ভব নয়। </span></span></span></span></span></span></p> <p class="body" style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খুব বিস্মিত হলাম গাছের শুকনো ফুলগুলো দেখেও। কিছু ফুল শুকিয়ে তামাটে বাদামি হয়ে গেছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, কিন্তু সেগুলোর একটি পাপড়িও ঝরে পড়েনি। মরা ফুলগুলোও যেন সমানতালে শোভা বিলাচ্ছে তাজা ফুলের মতোই। আশপাশে থাকা কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম ফুলটার নাম কী। কিন্তু কেউই বলতে পারল না। অবশেষে ঢাকায় ফিরে এসে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ট্রপিক্যাল গার্ডেন প্ল্যান্টস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বইটিতে ছবি মিলিয়ে ফুলটিকে চেনা হলো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, দেখলাম নাম তার ডম্বিয়া।</span></span></span></span></span></span></p> <p class="body" style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফরাসি উদ্ভিদবিদ ও চিকিৎসক জোসেফ ডম্বিয়ার নামকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এর গণগত নাম রাখা হয়েছে ডম্বিয়া। বাংলায় এর নাম দেওয়া হয়েছে ডমরুপানি ও শুক্রপানি। দুটি আলাদা প্রজাতির গাছ। সারা বিশ্বে ডম্বিয়ার এ রকম ১৯৭টি প্রজাতির গাছ রয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে আছে দুই প্রজাতির ডম্বিয়া। ডমরুপানি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">Dombeya mastersii</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">) গাছের ফুলের রং গাঢ় গোলাপি ও পাতার কিনারা গভীরভাবে খাঁজকাটা, অনেকটা ম্যাপলপাতার মতো আকৃতি। শুক্রপানি (</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">Dombeya spectabilis</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">) গাছের ফুলের রং হালকা গোলাপি ও পাতা হৃৎপিণ্ডাকার, কিনারা হালকা খাঁজকাটা। পাতাগুলো কিছুটা খসখসে। ফুল প্রায় দুই থেকে আড়াই সেন্টিমিটার, পাপড়ি পাঁচটি। ফুল ফোটে নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে।</span></span></span></span></span></span></p> <p class="body" style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডম্বিয়াগাছ বহুবর্ষজীবী গুল্ম স্বভাবের। ফুল শুকিয়ে গেলে তার মাঝখানে ফল ও বীজ হয়। ডম্বিয়ার জন্ম আফ্রিকার মাদাগাস্কারে হলেও সে এখন বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাগানে ফুলের গাছ হিসেবে এখন এ উপমহাদেশের অনেক স্থানে লাগানো হচ্ছে। তবে গাছটি সহসা চোখে পড়ে না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, স্থলপদ্মের জ্ঞাতি ভাই হলেও তার মতো সুলভ নয়। ডম্বিয়া আর স্থলপদ্ম দুটি গাছই মালভেসি গোত্রের। </span></span></span></span></span></span></p> <p class="body" style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে রাঙামাটির পর ডম্বিয়াগাছের দেখা পেয়েছি ঢাকায় মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের নার্সারি ও সাভারের কয়েকটি নার্সারিতে। শীতের দিনে ডম্বিয়া এক দীর্ঘস্থায়ী ফুল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, তাই এ গাছ বাগানে লাগিয়ে শোভা বাড়ানো যেতে পারে। ডাল কেটে বা গুটিকলম করে এর চারা তৈরি করা যায়। বীজ থেকেও চারা হয়। মাটিতে বীজ বোনার পর চারা গজাতে তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে। রৌদ্রোজ্জ্বল স্থানে গাছ ভালো হয়, তবে আংশিক ছায়াচ্ছন্ন জায়গায়ও ডম্বিয়া জন্মে। মাটি ভেজা থাকলেও গাছের ক্ষতি হয় না।</span></span></span></span></span></span></p>