জয়পুরহাটে কিছুতেই থামছে না বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্রের ট্রান্সফরমার চুরি। ফসলের মাঠ থেকে প্রায় প্রতি রাতেই চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার। এর ফলে ট্রান্সফরমারের নিরাপত্তা নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্রের মালিকরা। এমনকি রাত্রিকালীন পাহারাদারদের হাত-পা বেঁধে, মারধর করেও চুরি করছে চোরের দল।
ছয় মাসে ২৩৭ ট্রান্সফরমার চুরি
আলমগীর চৌধুরী, জয়পুরহাট

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের বিল হাওয়াই মাঠে গত ১৭ নভেম্বর রাতে জিয়াপুর গ্রামের সেচ মালিক ছানোয়ার কাজী, আবুল কালাম ও আজিজুল ইসলামের তিনটি বিদ্যুত্চালিত গভীর নলকূপের ৯টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়।
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সেচযন্ত্র এবং শিল্প-কারখানায় সাধারণত ৫, ১০, ১৫ ও ২৫ কেভি পর্যন্ত ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ জন্য শক্তি অনুযায়ী এসব ট্রান্সফরমারের দামও ভিন্ন ভিন্ন। প্রথমবার চুরি হলে পাঁচ কেভির একটি ট্রান্সফরমার ৮০ হাজার, ১০ কেভির এক লাখ ২০ হাজার, ১৫ কেভির এক লাখ ৫০ থেকে এক লাখ ৬০ হাজার এবং ২৫ কেভি হলে আরো বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হয়। প্রতিটি সেচযন্ত্রে তিনটি করে ট্রান্সফরমার একত্রে একটি বক্সে থাকে। প্রথমবার চুরি হলে সেই গ্রাহককে ওই অর্ধেক মূল্য জমা দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনতে হয়। দ্বিতীয়বার চুরি হলে গ্রাহককে সমুদয় টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনতে হয়।
সূত্রটি জানায়, চলতি নভেম্বর মাসের ২২ দিনে জয়পুরহাটে ৬৫টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে আক্কেলপুর উপজেলায় ২৬টি পাঁচবিবিতে ১৭টি, সদর উপজেলায় ১১টি, ক্ষেতলালে ১০টি এবং কালাই উপজেলায় একটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া গত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চার মাসে জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৭২টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৬০টি, আগস্টে ৪৭টি, সেপ্টেম্বরে ১৬টি এবং অক্টোবর মাসে ৪৯টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। অর্থাৎ চলতি নভেম্বর মাসের ২২ দিনসহ জুলাই থেকে জেলায় ২৩৭টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে।
ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের আবুল কালাম মণ্ডল জানান, চুরি যাওয়ায় তাঁর তিনটি ট্রান্সফরমার কিনতে এখন দুই লাখ টাকা প্রয়োজন। কষ্ট করে টাকা জোগাড় হলেও মারপিটের ভয়ে মাঠে ট্রান্সফরমার পাহারায় লোক পাওয়া যাচ্ছে না।
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. ইউসুফ আলী ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘কিছুতেই ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারের ভেতরের তামার তার বের করে চোরেরা খোলস ফেলে রেখে যায়।’
জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, ‘চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। চোরচক্রকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।’
সম্পর্কিত খবর

সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে এক দিনে ৫৫ জনকে পুশ ইন
নিজস্ব প্রতিবেদক ও মহেশপুর (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা

ভারত থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার তিনটি সীমান্তপথে ৫৫ জন বাংলাদেশিকে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তাদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ, ৩৩ জন নারী এবং ১০টি শিশু।
গতকাল বুধবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে এই পুশ ইনের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট ৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক।
এর আগে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের ভারতীয় অংশে অবৈধভাবে অবস্থান করা সাত বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক আবু হানিফ মো. সিহানুক স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বিজিবি।
সিলেট বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা যায়, নোয়াকোট, কালাইরাগ, তামাবিল ও শ্রীপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত দিয়ে চারটি গ্রুপে এসব বাংলাদেশিকে পুশ ইন করা হয়। পরে সীমান্ত এলাকায় টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাদের সবাইকে আটক করেন।
বিজিবি সূত্র জানায়, সিলেট জেলার কালাইরাগ সীমান্তে সাতটি পরিবারের ১৯ জনকে আটক করা হয়। শ্রীপুর সীমান্তের মোকামপুঞ্জি এলাকা দিয়ে পুশ ইন করা হয় ১৩ জনকে। তামাবিল বিওপির নলজুরি থেকে দুজনকে আটক করা হয়।
অন্যদিকে সুনামগঞ্জ জেলার নোয়াকোট বিওপি এলাকার ছনবাড়ী সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করা হয় ২১ জনকে।
পুশ ইন হওয়া ৫৫ জনের মধ্যে নড়াইলের ২৩ জন, যশোরের ১২ জন, সাতক্ষীরার ১০ জন, সিলেটের চারজন, বরিশালের দুজন এবং কুষ্টিয়া, খুলনা, হবিগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকার একজন করে রয়েছে।
সিলেট ৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক জানান, আটককৃত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
মহেশপুর সীমান্তে ৭ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর
ঝিনাইদহের মহেশপুর বিজিবির পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক ভারত থেকে বাংলাদেশ আসার সময় বিএসএফ তাদের আটক করে। পরে মহেশপুর সীমান্তের বাগাডাঙ্গা বিওপিকে অবগত করে তারা। আটক ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে বিকেলে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের কাছ থেকে তাদের গ্রহণ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, এই সাতজনের মধ্যে দুজন পুরুষ, দুজন নারী এবং তিনটি শিশু রয়েছে। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তাদের মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

মাদানী এভিনিউ ১০০ ফুট সড়ক বেহাল
- ঠিকাদারের গড়িমসি
দ্রুত সড়ক ঠিক না করলে ব্যবস্থা নেবে রাজউক
জহিরুল ইসলাম

রাজধানীর নতুনবাজার (মাদানী এভিনিউ ১০০ ফুট) থেকে বালু নদীর দিকে চলে যাওয়া সড়কটির করুণ দশা কাটছে না। ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই’ প্রকল্পের অধীন ঢাকা ওয়াসার উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছে। তবে সড়ক মেরামতে ভিন্ন প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে না। ঢাকা ওয়াসার উন্নয়নকাজের কারণে খোঁড়াখুঁড়িতে সড়কটি এখনো ব্যবহারের অনুপযোগী রয়েছে।
জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার বিষনন্দী পয়েন্টে মেঘনা নদীর পশ্চিম তীরে গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগারটি অবস্থিত।
অটোতে থাকা যাত্রী আলী আশরাফ হাওলাদার বলেন, ‘এই সড়কটা কবে যে ঠিক হবে, আল্লাহ জানে। দিনে দিনে মৃত্যুকূপের মতো হয়ে যাচ্ছে। মানুষ মারা না গেলেও দুর্ঘটনা তো ঘটছে। আপনি নিজেই তো দেখলেন অল্পের জন্য পরিবার নিয়ে এখন বিপদে পড়ে যেতাম।’
সড়কটির করুণ অবস্থা নিয়ে স্থানীয়দের অনেককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনা করতে দেখা গেছে। রিনা আক্তার নামের একজন তাঁর ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করে টাইমলাইনে লেখেন, ‘আপনারা দ্রুত সংস্কার করে নিন, আর ভিডিওটা সবাই শেয়ার করে দিবেন। দেখেন একটা ব্যস্ততম সড়ক, যার কী বেহাল দশা। এখানে মেডিক্যাল কলেজ আছে, ইউনিভার্সিটি আছে, স্কুল আছে, মাদরাসা আছে, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ কেউ দেখেও কিছু দেখছে না।’
ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ওঅ্যান্ডএম) প্রকৌশলী এ কে এম সহিদ উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা কোনো প্রকল্পের কাজ শুরু করার আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিটি করপোরেশন বা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে সংস্কারকাজের অর্থ আগেই দিয়ে দেয়।’
ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টের ডিরেক্টর মো. ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদ বলেন, ‘আমাদের প্রজেক্টের কাজ শেষ। এখন রাজউক সড়ক সংস্কারের কাজ করবে অন্য একটি প্রকল্পের অধীন। কবে থেকে কাজ শুরু করবে, সেটা রাজউক ভালো বলতে পারবে। তবে শুনেছি দ্রুত শুরু হবে।’
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) এবং মাদানী এভিনিউ থেকে বালু নদী পর্যন্ত (মেজর রোড-৫) প্রশস্তকরণ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কাইছার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সড়কটির অবস্থা অনেক খারাপ। উন্নয়নকাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ শুরু করতে কেন জানি গড়িমসি করছে। আমরা আর কিছুদিন দেখব। এর মধ্যে কাজ শুরু না করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুমিল্লায় ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত নারীকে, দিনাজপুরে ভ্যানচালককে হত্যা
- রাজশাহীতে শিশুর লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুমিল্লায় ঘুমন্ত নারীর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও খুঁচিয়ে খুন করা হয়েছে। দিনাজপুরে চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। রাজশাহীর পুঠিয়ায় পাওয়া গেছে ছয় বছরের এক শিশুর লাশ। কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :
কুমিল্লা : দেবীদ্বার পৌর এলাকার সাইলচর গ্রামে মঙ্গলবার রাতে ঘুমন্ত নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
ঝরনা বেগমের স্বামী আব্দুল করিম জানান, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর পারিবারিক নানা বিষয়ে দূরত্ব ছিল। স্বামীর অসুস্থতার কারণে স্ত্রী তাঁকে প্রায়ই ঘুমের ওষুধ খাওয়াতেন। আগের রাতে ঝরনা তাঁকে আটটি ঘুমের বড়ি খাওয়ালে কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।
দেবীদ্বার-ব্রাহ্মণপাড়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. শাহীন বলেন, ‘ওই নারীর মাথায় তিনটি ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে।
দিনাজপুর : দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ৩ নম্বর ধামইর ইউনিয়নের মাটিয়ান গ্রামে চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সকালে রাস্তা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত আসাদুল ইসলাম (৩৫) উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের যুগীহারীখাড়িপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।
নিহতের বড় ভাই মকবুল হোসেন জানান, কয়েক দিন আগে পুরনো ভ্যান বিক্রি করে নতুন ভ্যান কেনেন আসাদুল ইসলাম। মঙ্গলবার সেই ভ্যান চালাতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি।
রাজশাহী : রাজশাহীর পুঠিয়ায় নিখোঁজ হওয়া এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার আগলা গ্রামে ঘাসের ভেতর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত মো. আবরার (৬) ওই এলাকার ডা. শওকত শরীফের ছেলে। ডা. শওকত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কিশোরী হেফাজতে রাখা হয়েছে। আরএমপির বেলপুকুর থানার ওসি সুমন কাদেরী এসব তথ্য কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে দুই কিশোরী আবরারকে খেলতে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে দুই কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আবরারকে ঘাসের ভেতরে পাওয়া যাবে বলে তারা জানায়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে।

নিয়োগ-পদোন্নতিতে রাজনৈতিক পরিচয় জানার বিধান থাকছে না
বিশেষ প্রতিনিধি

সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়ার বিধান বাতিল হচ্ছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন তা বাস্তবায়ন করবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ।
এ ছাড়া কোনো কর্মচারী যদি কোনো পদে পদোন্নতির সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছে যান এবং তিনি গুরুদণ্ডে দণ্ডিত না হন, তিনিও আর্থিক সুবিধা পাবেন।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ওই দিন দ্বিতীয় সভা হয়।
নিয়োগ-পদোন্নতিতে রাজনৈতিক যাচাই : দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে পুলিশ-গোয়েন্দাদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রার্থী ও পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিজের ও তাঁর আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক পরিচয় খোঁজা হয়। এর মাধ্যমে অনেক সময় চাকরির সুপারিশ পেয়েও অনেক প্রার্থীকে ‘বিরূপ মন্তব্যের’ কারণে নিয়োগ দেওয়া হয় না। একই কারণে অনেক যোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতি পান না।
বাতিল হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন : চাকরির লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফল ঘোষিত হওয়ার আগে কোনো প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশন করা যাবে না। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ বিভাগের কাছে শুধু সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা আছে কি না, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন চাইবে। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রতিবেদন চাইতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।
চুক্তিতে নিয়োগ : প্রস্তাবিত ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিসের’ বাইরে ৫ শতাংশ পদে সরকার বিশেষ কোনো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক যুগ্ম সচিব বা সংস্থাপ্রধান পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সংস্কার কমিশন। প্রচলিত পদ্ধতিতে বিশেষ কোটায় পার্শ্বনিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের সততা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে বলে আলোচনা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, এ নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের সমন্বয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি কমিটি করবে। কমিটি এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।
পদোন্নতি না হলেও আর্থিক সুবিধা : জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল, কোনো কর্মচারী যদি কোনো পদে পদোন্নতির সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছে যান এবং এরপর আর ইনক্রিমেন্ট না পান ও বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ডে দণ্ডিত না হন, তাহলে তাঁকে দুই বছর পর পরবর্তী বেতন স্কেল দেওয়া।
এ বিষয়ে সোমবারের সভায় অর্থ বিভাগের সচিব বলেন, পরবর্তী পে স্কেলের মাধ্যমে এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা সমীচীন হবে। এ অবস্থায় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এই সুপারিশ বাস্তবায়নে আর্থিক সংশ্লেষ থাকায় এ বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করে অর্থ বিভাগ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রস্তাব দেবে।
উপজেলা পরিষদ শক্তিশালী করতে কমিটি : উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) উপজেলা পরিষদের অধীন ন্যস্ত না রেখে তাঁদের সংরক্ষিত বিষয়, যেমন—আইন-শৃঙ্খলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়ে দেখাশোনার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করেছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এর উদ্দেশ্য হলো তাঁকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখা। এ ক্ষেত্রে একজন সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদের সচিব পদে নিয়োগ করতে বলেছে কমিশন। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব বা সচিবদের সমন্বয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি কমিটি গঠন করবে। এই কমিটি কমিশনের ওই সুপারিশ বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেবে।
স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন : জনপ্রশাসন সংস্কার কার্যক্রম চলমান বিষয় হওয়ায় এ নিয়ে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিবদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে, যাঁরা এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবেন। এ ছাড়া ভূমি রেজিস্ট্রেশন দপ্তর আইন মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্ত করার সুপারিশ শিগগিরই বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে সোমবারের সভায় মতামত দেন আইন ও বিভাগের প্রতিনিধিরা। পরে সভায় আলোচনা হয়, এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
আগের ৮ বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত হলো : গত ১৬ জুনের সভায় অপেক্ষাকৃত সহজে বাস্তবায়নযোগ্য আটটি প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এসবের অগ্রগতি নিয়েও সোমবারের সভায় আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যান্য কাজ শেষ করে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া এক মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের গুচ্ছে থাকা (ক্লাস্টার) ওয়েবসাইটগুলোর ইন্টারফেস পরিবর্তনসহ ওয়েবসাইট হালনাগাদ করতে হবে। সব সরকারি দপ্তরে নির্দিষ্ট বিরতিতে গণশুনানি নিশ্চিত করার বিষয়ে এুসংক্রান্ত সংশোধিত পরিপত্র ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে জারি করতে হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে গত বছরের ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে প্রথমে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনসহ ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। পরে আরো পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে।