কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে স্বভাবকবি খ্যাত রাধাপদ সরকারের (৮০) ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
হামলার শিকার কবি রাধাপদ সরকার গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নাগেশ্বরী থানায় মামলা করেছেন রাধাপদ সরকারের ছেলে জুগল রায়।
এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাশের কচুয়াপাড় এলাকার রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও কদুর রহমান (৪৫) নামের দুই ভাইয়ের সঙ্গে সাত বছর আগে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল রাধাপদ সরকারের। ওই বিরোধের জেরে মাঝে মাঝে তাঁরা কবি রাধাপদ সরকারকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন। গত শনিবার সকালে রাধাপদ সরকার বাড়ির পাশের ডুবুরির ব্রিজের কাছে মাছ ধরতে গেলে সেখানে লাঠিসোঁটা নিয়ে রফিকুল ইসলাম ও কদুর রহমান তাঁর ওপর হামলা চালালে তিনি গুরুতর আহত হন। রাধাপদ সরকারের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।
বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কবি রাধাপদ সরকারের ছেলে জুগল রায় বলেন, ‘সাত বছর আগে আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে অন্য এক লোকের লেনদেন ছিল। মাস ছয়েক আগে ওই লোকের পক্ষ নিয়ে কদুর রহমান আমাদের বাড়িতে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। বাবা এর প্রতিবাদ করলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
এর পর থেকে বাবাকে প্রাণে মারতে সুযোগ খুঁজছিল। বাবা শনিবার মাছ ধরতে গেলে হামলা চালিয়ে প্রাণনাশের চেষ্টা চালায়। আমার বৃদ্ধ বাবাকে তারা যেভাবে মেরেছে তা অবর্ণনীয়। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
রাধাপদ সরকারের স্ত্রী মিনতি রানী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ।
আমার স্বামী বিভিন্ন জায়গায় কবিতা বলে, গান গেয়ে যে আয় করেন তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। তাঁর ওপর এভাবে যারা অত্যাচার চালিয়েছে তাদের বিচার চাই।’
নাগেশ্বরীর সংস্কৃতিকর্মী সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, একজন প্রবীণ, নিরপরাধ সংস্কৃতিকর্মীর ওপর এ ধরনের হামলা মেনে নেওয়া যায় না।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
নাগেশ্বরী থানার ওসি আশিকুর রহমান বলেন, কবি রাধাপদ সরকার বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।
নিজের লেখা গান, কবিতা মানুষকে শুনিয়ে সামান্য উপার্জনে চলে তাঁর সংসার। আঞ্চলিক ভাষায় লেখা তাঁর কবিতা ও গান বিভিন্ন এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তাঁর লেখা কবিতা ‘কেয়ামতের নমুনা, জানি কিন্তু মানি না’, ‘বউয়ের কাণ্ড’ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। আঞ্চলিক ভাষায় রাধাপদ সরকারের লেখা শতাধিক গান ও কবিতা রয়েছে।
হামলার তীব্র নিন্দা বিশিষ্টজনদের : রাধাপদ রায়ের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
গতকাল সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে বিভিন্ন পেশার ২১ জন নাগরিক এই দাবি জানান। বিবৃতিদাতারা হলেন শিশুসংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুর রহমান সেলিম, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিতরঞ্জন দে প্রমুখ।