ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

সেলাই মেশিনে ফিরবে নারীদের সচ্ছলতা

  • পাবনায় স্কুল ও পাঠাগার উদ্বোধন
পাবনা প্রতিনিধি
পাবনা প্রতিনিধি
শেয়ার
সেলাই মেশিনে ফিরবে নারীদের সচ্ছলতা
পাবনার সুজানগরে এক নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিচ্ছেন কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির ও ইউএনও তরিকুল ইসলাম। ছবি : কালের কণ্ঠ

পাবনার সুজানগর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে গতকাল শনিবার বিকেলে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল উদ্বোধন করা হয়েছে। স্কুলটি উদ্বোধন করেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। পরে সেখানে মাসব্যাপী সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে ২০ জন অসহায় দুস্থ নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন তিনি। এর আগে সকালে পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার পুরান মাসুমদিয়া গ্রামে নবীন সংঘে শুভসংঘ পাঠাগার উদ্বোধন করেন ইমদাদুল হক মিলন।

বসুন্ধরা শুভসংঘ এসব আয়োজন করে।

সেলাই মেশিনে ফিরবে নারীদের সচ্ছলতাসেলাই মেশিন উপহার অনুষ্ঠানে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে আমরা সারা দেশেই অসচ্ছল নারীদের সচ্ছল করার জন্য এই প্রকল্প হাতে নিয়েছি। নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেলাই মেশিন উপহার দিচ্ছি, এটা ব্যবহার করে যেন তাঁরা সচ্ছল হতে পারেন। আমরা কাজটি শুরু করেছি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশে।

অনুষ্ঠানে অতিথি পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, ‘অসচ্ছল নারীদের সচ্ছল করার এই মহৎ উদ্যোগের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতা দূর করে প্রান্তিক নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। এতে দূর হবে বেকারত্ব, সচ্ছলতা আসবে ঘরে ঘরে। গ্রামীণ এই বেকার নারীদের মাঝে আশার আলো ছড়াচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

সেলাই মেশিন উপহার পেয়ে মোছা. মাছুরা খাতুন (৩০) কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাত-আট বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছিল পাবনা সদর উপজেলায়। স্বামী স্বর্ণকারের দোকানে কাজ করত। বিয়ের এক বছরের মাথায় স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। এখন মথুরাপুরে বাড়িতে থাকি। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে সেলাই শিখছি।

এরা সেলাই মেশিনও উপহার দিছে। এহন নিজের পায়ে দাঁড়াবের পারব।’

সেলাই মেশিন পাওয়া মথুরাপুরের মোছা. মুন্নি খাতুন (৩২) বলেন, ‘এহন সেলাইয়ের কাজ করে ছাওয়ালডার নিয়ে ভালো করে চলবের পারব।’

তুলসী রানী সরকারের (৪৪) বাড়ি সুজানগর পৌর এলাকার রাধানগরে। তাঁর স্বামী আনন্দ চন্দ্র সরকার কয়েক বছর ধরে স্ট্রোক করে বিছানায়। তুলসী রানী বলেন, ‘সেলাই মেশিনটা দিয়ে কাজ করে সংসারের হাল ধরবের পারব।’

সুজানগরের নারায়ণপুরের মোছা. সিমা খাতুনের (৪৫) স্বামী শারীরিক প্রতিবন্ধী। সিমা বলেন, ‘এহন কাজ করে খাবের পারব। এত দিন কেউ পাশে দাঁড়াই নাই, বসুন্ধরা গ্রুপ পাশে দাঁড়াইছে। তাদের কী বলে ধন্যবাদ জানাব।’

 

শুভসংঘ স্কুল

সুজানগরের মথুরাপুরে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল (১৫তম) উদ্বোধনের পর ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ সারা দেশে ৬০টি ভালো মানের স্কুলসহ বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য স্কুল করবে। এখানকার মেধাবী শিক্ষার্থীরা যত দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করতে চায়, তাদের তত দূর পর্যন্ত লেখাপড়ার দায়িত্ব নেবে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গ্রুপ দুই হাজারের বেশি মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছে।

এ সময় অনুষ্ঠানের অতিথি সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য মাসে এক বেলার খাবার দেওয়ার ঘোষণা দেন।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কেন্দ্রীয় কমিটির সুচিত্রা পূজা, মেহবীন মুশফিকা, লতা সরকার, জান্নাত মারজান ঐশী, শরীফ মাহিদ আশরাফ জীবন, ইয়াছির আরাফাত রাফি, আলী আকবর রাজু, পাবনা বসুন্ধরা শুভসংঘের কামরুন নাহার লুনা, শফিকুর রহমান শান্ত, বাবলা ওয়াজেদ, ফারহানা আফরোজ, নুসরাত জাহান স্বর্ণা, সুজানগর বসুন্ধরা শুভসংঘের আফজাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

 

শিশুদের মেধা বিকাশের জন্য পাঠাগার

বেড়া উপজেলার পুরান মাসুমদিয়ায় শুভসংঘ পাঠাগার উদ্বোধনের সময় ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের মেধা বিকাশ ও পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুভসংঘ পাঠাগার স্থাপন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যন্ত মাসুমদিয়ার মানুষ ইমদাদুল হক মিলনকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। তারা পাঠাগার স্থাপনের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়। সার্বিক সহযোগিতা করেন মাসুমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিরোজ হোসেন।

উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রিয়াজ উদ্দিন সরদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিদির উদ্দিন সরদার, পুরান মাসুমদিয়া নবীন সংঘের  সভাপতি খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হোসেন, ক্রীড়া সম্পাদক আলামিন খান আপন, নিউজটোয়েন্টিফোরের পাবনা প্রতিনিধি আহমেদ উল রানা, কালের কণ্ঠ’র পাবনা প্রতিনিধি প্রবীর সাহাসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

 

‘প্লাস্টিক দাও, গাছের চারা নাও’

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা) জানান, প্লাস্টিকের দূষণ রোধে এলাকার শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে বসুন্ধরা শুভসংঘ ঢাকার কাফরুল থানা শাখার আয়োজনে শনিবার ‘প্লাস্টিক দাও, গাছের চারা নিয়ে যাও’ শিরোনামে গাছের চারা বিতরণ করা হয়। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক কুড়িয়ে জমা দিয়ে একটি করে গাছের চারা উপহার পায়। শুভসংঘের সদস্যরা সবাইকে প্লাস্টিকের অপকারিতা ও গাছের উপকারিতার কথা জানান।

আয়োজনটি সমন্বয় করেন শুভসংঘের কাফরুল থানা শাখার সভাপতি মাহাদী মোস্তফা, সদস্য বিথি রায়, নুসরাত জাহান শ্রাবণী, দিবা দেবনাথ, অরিন চাকমা, আব্দুল্লাহ আল রাজিন, সাবিহা সুলতানা, মারুফ, সাদিয়া মেঘলা, সামিন, মোস্তফা মহসিন সাদিফ প্রমুখ।

মাহাদী মোস্তফা বলেন, ‘প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশদূষণ রোধে আমাদের সবাইকে কাজ করে যেতে হবে। ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। আর আমাদের সবাইকে বেশি করে গাছের চারা রোপণ করতে হবে। তাহলেই পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শোভাযাত্রা

শেয়ার
শোভাযাত্রা

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে জুলাই কন্যারা রিকশা শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

রাতে ফেসবুক পোস্ট ভোরে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রাতে ফেসবুক পোস্ট ভোরে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবনির্মিত রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইক (২৩) নামের এক শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে।

পুলিশ ও হল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে ভোর সোয়া ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

জগন্নাথ হলের স্টাফ মানিক কুমার দাস বলেন, ভোরবেলা দেখি ভবনের নিচে একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে অন্য স্টাফদের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাঁকে মৃত বলে জানান।

শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর বলেন, রবীন্দ্র ভবনের পাশে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি।

ফুটেজে দেখা গেছে, সঞ্জু ভবনের ছাদ থেকে পড়ে যান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

ওসি আরো বলেন, এ ঘটনায় আপাতত অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এর আগে রাত আড়াইটার দিকে সঞ্জুর নিজ ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে লেখা ছিল, আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি, উল্টো মানুষকে দোষারোপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি, আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি, নিজের দোষ ঢেকে অন্যজনকে দোষ দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমার কারণে কারো কোনো ক্ষতি হলে সেই দায় একান্তই আমার, আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সঞ্জু মানসিকভাবে কিছুটা অস্থিরতায় ভুগছিলেন বলে সহপাঠীরা জানিয়েছে। দুই দিন ধরে সে হলে ছিল না। রবিবার ভোর ৪টার দিকে হলে ফিরে আসে, তবে কিছুক্ষণ পরই ছাদের দিকে চলে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফরা তাকে ভবনের নিচ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন।

মন্তব্য
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিকল্প প্রস্তাব

৭৬ আসনের উচ্চকক্ষ ও সরাসরি ভোট, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
৭৬ আসনের উচ্চকক্ষ ও সরাসরি ভোট, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের স্বার্থে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হতে পারে ৭৬ এবং এসব আসনের সদস্যরা নির্বাচিত হবেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। একই সঙ্গে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে বিরোধ থাকায় সেখানেও বিকল্প প্রস্তাব আনা হয়েছে। সেখানে সংরক্ষিত নারী আসন বাদ দিয়ে বিদ্যমান সংসদীয় আসনের নির্বাচনে দলগুলোকে এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৩তম দিনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। আজ মঙ্গলবার আবারও আলোচনা চলবে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

কমিশন সূত্র জানায়, সংসদের উচ্চকক্ষের নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলা ও প্রতিটি সিটি করপোরেশন এলাকা উচ্চকক্ষের একেকটি একেক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত বা চিহ্নিত হবে এবং প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকা থেকে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন করে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। বর্তমানে দেশে ৬৪টি প্রশাসনিক জেলা ও ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে বিধায় উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হবে ৭৬। জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষের নাম প্রস্তাব করা হয় সিনেট। রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে একমত হলেও উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচনের বিষয়ে মতভেদ দেখা দেয়। যে কারণে নতুন এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।

সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সমাজের বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কী পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন হবে সে ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কমিশন থেকে দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায়ও কিছু কিছু প্রস্তাব এসেছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। 

সংসদে নারীদের জন্য স্থায়ীভাবে ১০০ আসন করার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন উল্লেখ করে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, এ ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত প্রশ্ন এখনো রয়েছে। এ পদ্ধতি নির্ধারণে আমরা এখনো একমতের জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও নারী আসন বৃদ্ধির প্রশ্নে বিএনপি আগের অবস্থানে রয়েছে বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবে বিএনপি একমত। তবে ওই আসনগুলোতে নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতে হতে হবে।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা উচ্চকক্ষের বিষয়ে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা চালুর পক্ষে। অধিকাংশ দল এ বিষয়ে একমত। নারী আসনের বিষয়েও আমরা ১০০ আসনে পিআর পদ্ধতির পক্ষে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করেছে কমিশন। আমরা এর বিরোধী। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হতে হবে। কমিশন এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন বাধ্যবাধকতার কথা বলেছে। আমরা এটি সমর্থন করি। তবে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এ জন্য আরো সময় প্রয়োজন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কমিশনের কর্মকাণ্ড সংগত মনে হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে দলের অভ্যন্তরে ৩০ শতাংশ নারীকে কমিটিতে রাখতে পারছে না, সেখানে ৩০ শতাংশ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সামর্থ্য আছে বলে মনে করি না।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বর্তমান ৬৫ অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত আসন চায় না কমিশন। আমরা বলেছি, সংরক্ষিত আসন ১০০ করতে। আর বর্তমান বাস্তবতায় ৩০ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কঠিন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা বলেছি এবার ৫ শতাংশ দেওয়া যেতে পারে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কমিশন নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল ও ৩৩ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা এই মুহূর্তে অসম্ভব।

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ দল একমত।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, নারীদের সংরক্ষিত আসন দরকার নেই; বরং তাদের নির্বাচিত হয়েই সংসদে আসা উচিত।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নারীদের আসনে সরাসরি নির্বাচন করতে হবে। তিনটি সাধারণ আসন মিলে একটি নারী আসনে ভোট হতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, নারীদের সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারলেই তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।

মন্তব্য
খুলনায় যুবদল নেতা হত্যা

আরো একজন তথ্যদাতা গ্রেপ্তার, কিলিং মিশনের তিনজন এখনো অধরা

খুলনা অফিস
খুলনা অফিস
শেয়ার
আরো একজন তথ্যদাতা গ্রেপ্তার, কিলিং মিশনের তিনজন এখনো অধরা

খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আলাউদ্দিনকে (২২) গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে রবিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

এদিকে সিসিটিভির  ফুটেজ দেখে কিলিং মিশনের যে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে, তাদের কেউ এখনো ধরা পড়েনি।

তবে ওই মামলায় এ পর্যন্ত মোট দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার রাতে প্রথমে গ্রেপ্তার করা সজল শেখ নামের চরমপন্থী সদস্য বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে। আজ মঙ্গলবার  রিমান্ড শেষে তাঁকে আবার আদালতে তোলা হবে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কেএমপির দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানিয়েছেন।

যুবদল নেতা মাহবুবকে শুক্রবার দুপুরে দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ার নিজ বাড়ির সামনে তিন অস্ত্রধারী প্রথমে একাধিক গুলি করে এবং পরে দুই পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।

দৌলতপুর থানার ওসি জানান, ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে আলাউদ্দিনকে রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পশ্চিম মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সজলের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা দুজনই নিহত মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে খুনিরা এসে মাহবুব মোল্লাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করে।

দুটি গুলি তাঁর মাথা ও মুখের ডান পাশে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য দুই পায়ের রগ কেটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে দুর্বৃত্তরা।

কিলিং মিশনের তিন সদস্যকে দ্রুতই গ্রেপ্তর করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে পুলিশ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ