রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় সাঈদ নামের দুই বছরের এক শিশুর হাত কামড়ে নিয়েছে হায়েনা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শিশুটিকে উদ্ধার করে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা তদন্তে আলাদা তিনটি কমিটি করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
শিশুটির বাবা সুমন মিয়া ও মা শিউলি বেগম জানান, সাঈদ মায়ের কোল থেকে নেমে প্রাণী শেডের বড় গেট খোলা পেয়ে ঢুকে পড়ে এবং খাঁচার সামনে গিয়ে ফাঁকা জায়গা দিয়ে হাত ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। তখন সঙ্গে সঙ্গে হায়েনাটি সাঈদের হাত কামড়ে ধরে এবং কবজি পর্যন্ত ছিনিয়ে নেয়। তাঁরা অভিযোগ করেন, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সময়মতো তাঁদের সন্তানকে চিকিৎসা দিতে আসেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পরিবারের সঙ্গে শিশুটি চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসে।
শিশুটির মা-বাবাই নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে শিশুটিকে নিয়ে হায়েনার খাঁচার কাছে চলে আসেন। যদিও খাঁচায় নেট দেওয়া ছিল। কিন্তু ছোট বাচ্চা নেটের ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দেয়। তখনই বাচ্চাটার হাত কামড়ে কবজি থেকে আলাদা করে ফেলে হায়েনা এবং হাতটি খেয়ে ফেলে।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই নিরাপত্তাকর্মী শিশুটিকে চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি হাসপাতালে নিয়ে যান এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শিশুটির হাতে ওষুধ লাগিয়ে দেন চিকিৎসক। এরপর তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই অধিদপ্তর থেকে কর্মকর্তারা এসে সব কিছু ঘুরে দেখেন।
তিনি জানান, বর্তমানে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শিশুটি চিকিৎসাধীন আছে। আর এ ঘটনা তদন্তে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও চিড়িয়াখানা থেকে আলাদা তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এতে কারো দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে মন্ত্রীও বিষয়টির খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে এ ঘটনার পর চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে বলে জানান তিনি।
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার সাবেক পরিচালক ডা. আব্দুল লতিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, এখানে মনে হচ্ছে নিরাপত্তাকর্মীদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ছিল। কারণ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এভাবে একটি শিশু হায়েনার কাছে যেতে পারত না। তার আগেই তাকে সাবধান করে দেওয়া হতো। এ ছাড়া শিশুটির অভিভাবকেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাঁরা বাচ্চাকে এভাবে ছেড়ে দিয়েছেন দেখেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
শাহআলী থানা পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় রাত ৮টার পর্যন্ত আহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে থানা পুলিশের সদস্যরা হাসপাতালে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।