ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

অর্পিত সম্পত্তি আইনের তিনটি ধারা বৈধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
অর্পিত সম্পত্তি আইনের তিনটি ধারা বৈধ

এক দশক আগে কার্যকর হওয়া অর্পিত সম্পত্তি আইনের তিনটি ধারা মৌলিক অধিকার পরিপন্থী নয় বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১-এর ৯, ১৩ ও ১৪ ধারা সাংবিধানিকভাবে বৈধ।

এ রায়ের ফলে আইনের ১৪ ধারা অনুসারে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত সেই সম্পত্তি ইজারা দেওয়ার বা ইজারা বাতিল করার যে ক্ষমতা আইনে জেলা প্রশাসকদের দেওয়া আছে, সেটি বৈধ। রায়ে বলা হয়েছে, আইনের ১৪ ধারা অনুসারে সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে না হলে জনগণের সম্পত্তি বেহাত হবে।

সরকার রাজস্ব হারাবে। তাই এই বিধান যথাযথ।

এসংক্রান্ত দুটি রিটে জারি করা রুল খারিজ করে বৃহস্পতিবার এ রায় দিয়েছেন বিচারপতি নাইমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি হলেন বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি এ এম কুদ্দুস জামান।

রায়ে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে দেশের বিভিন্ন দেওয়ানি আদালতে বিচারাধীন বা অনিষ্পন্ন সব মোকদ্দমা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এসব মোকদ্দমা বাতিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতের কোনো আদেশের প্রয়োজন পড়বে না।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী ও ওমর ফারুক। ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

রায়ের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট রুল জারির সময় আবেদনকারীদের দাবি করা সম্পত্তিতে স্থিতাবস্থা জারি করেছিলেন। সেই স্থিতাবস্থা তুলে নিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত দুই রিট আবেদনকারীকে নিয়ে বলেছেন, যেহেতু অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালে তাঁদের মোকদ্দমা চলছে, ফলে আইনের ১৩ ধারা অনুসারে দেওয়ানি আদালতের মোকদ্দমা বাতিল হলেও তাঁদের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে না।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্পত্তির প্রকৃত মালিককে তাঁর সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া।

ফলে এটি কোনোভাবেই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় বলে রায় দিয়েছেন

হাইকোর্ট।

তবে রিট আবেদনকারী চট্টগ্রামের মো. মশিউর রহমানের আইনজীবী ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, আইনে জেলা প্রশাসককে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, আমরা মনে করি এই ক্ষমতা অবাধ, স্বেচ্ছাচারী, নীতিবহির্ভূত। এই ক্ষমতার প্রয়োগ মানেই ক্ষমতার অপব্যবহার। এই বিধান থাকা মানেই নাগরিকের প্রতি অন্যায় করা, যা সংবিধানের ৪২ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। আইনটি বহাল থাকলেও জেলা প্রশাসকের ক্ষমতাসংক্রান্ত বিধানটি বাতিল ঘোষণার আরজি ছিল আমাদের। পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত বা পর্যবেক্ষণ আসে জানি না। তবে আদালত বলেছেন, আমাদের যুক্তিগুলো তুলে ধরে সিদ্ধান্ত, অভিমত বা পর্যবেক্ষণ দেওয়া হবে। তবে জেলা প্রশাসকের ক্ষমতাসংক্রান্ত বিধানের ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, যে আইনটি এখন আছে, সেটি অনেকবার সংশোধন হওয়ার পর এই পর্যায়ে এসেছে। আমি মনে করি হাইকোর্টের রায় যথাযথ হয়েছে।

তিনি বলেন, যখন আইনের অধীনে ট্রাইব্যুনাল থাকে তখন অন্য কোর্টের আর এখতিয়ার থাকে না। ফলে আইনে যেভাবে নির্দেশনা আছে সেভাবেই কার্যকর হবে। তবে একটা সমস্য হচ্ছে, আইনে জেলা প্রশাসককে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সে বিষয়টি হাইকোর্ট বিবেচনা করতে পারতেন। কারণ জেলা প্রশাসকদের দাপট ও কর্মকাণ্ডে এমনিতেই মানুষ নিগৃহীত। সম্পত্তি অর্পণ করার আগ পর্যন্ত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, ইজারা দেওয়া বা ইজারা বাতিল করার যে ক্ষমতা জেলা প্রশাসকদের দেওয়া হয়েছে, তাতে এ ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়বে। জনসাধারণের হয়রানি বাড়বে বলে আমি মনে করি।

চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালে ৪৪ হাজার ৬২৭টি মামলা বিচারাধীন বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।

আইনের প্রেক্ষাপট : ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল ১৭ দিন। যুদ্ধ শুরুর দিন পাকিস্তান সরকার জরুরি অবস্থার সঙ্গে পাকিস্তান প্রতিরক্ষা অধ্যাদেশ ও পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বিধি জারি করে। এই অধ্যাদেশের ধারাবাহিকতায় ৬ সেপ্টেম্বরের আগে থেকে ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতে বসবাসরত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে ওই একই দিন সংখ্যালঘুদের ওপর আরোপিত হয় শত্রু সম্পত্তি জরুরি বিধান অবিরত নামের এক অধ্যাদেশ।

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর পাকিস্তান আমলের অনেক আইন বাতিল করা হলেও শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রণীত শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করা হয় না। নতুন মোড়কে শত্রু সম্পত্তি আইন অর্পিত সম্পত্তি নামকরণে বহাল রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে অর্পিত সম্পত্তি এ দেশে বসবাসকারী মূল মালিকদের বরাবর প্রত্যর্পণের উদ্যোগ নেয়। প্রণীত হয় অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১। আইনটি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ পর্যায়ে প্রণীত হওয়ায় ওই সময় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমান সরকার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১ একাধিকবার সংশোধন করেছে। ২০১৩ সালের ১৮ এপ্রিল ৩ নম্বর অধ্যাদেশ জারি করে সরকার আইনটিতে ব্যাপক সংশোধনী আনায় ট্রাইব্যুনালে মোকদ্দমা দ্রুত নিষ্পত্তির সুযোগ তৈরি হয়।

২০০১ সালে প্রণীত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০১২ সালে কার্যকর হওয়ার পর সরকার ওই বছর ৮ এপ্রিল অর্পিত সম্পত্তি তফসিলভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে। তফসিলভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি নিজের দাবি করে খুলনার শ্যামল কুমার সিংহ রায় ও চট্টগ্রামের মো. মশিউর রহমান হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে তফসিলভুক্তির আদেশের পাশাপাশি আইনটির ৯, ১৩ ও ১৪ ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়।

রিটে বলা হয়, সংবিধানের ৪২ অনুচ্ছেদ অনুসারে সম্পত্তির অধিকার ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। সুতরাং রাষ্ট্র বা সরকারের কোনো কর্মকর্তা বা কোনো কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করতে পারবে না। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১-এর ৯, ১৩ ও ১৪ ধারা আবেদনকারীদের সেই মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে। সুতরাং তিনটি ধারা বাতিলযোগ্য। আদালত দুটি রিটে প্রাথমিক শুনানির পর রুল জারি করেন। রুলে তিনটি ধারা বাতিল এবং রিট আবেদনকারীদের দাবি করা সম্পত্তি তফসিলভুক্ত করে প্রকাশিত গেজেট কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। একই সঙ্গে তফসিলভুক্ত সম্পত্তি আবেদনকারীদের বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে। আইনসচিব, ভূমিসচিব, খুলনা ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, জনশক্তি ব্যুরোর উপপরিচালকসহ ১২ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুল জারির পর প্রধান বিচারপতি রিট মামলা দুটি নিষ্পত্তির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন। সেই বেঞ্চে দীর্ঘ শুনানির পর রায় দিলেন উচ্চ আদালত।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ

সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে
সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে
শেয়ার
স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ
পঞ্চম উইকেটে ৭৭ রানের দারুণ এক জুটিতে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের মঞ্চ সাজিয়ে দেন লিটন দাস ও শামিম হোসেন। পরে বোলারদের দাপটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।ছবি : মীর ফরিদ, ডাম্বুলা থেকে

ক্রিকেট ম্যাচ, তার ওপর রবিবার। গতকাল তাই উদ্দাম পার্টির প্রস্তুতি ছিল রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের উপড়ে পড়া গ্যালারির। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে ডিজের মিউজিক, দর্শকদের ড্রাম পেটানো আর ট্রাম্পেটের চড়া সুরে কান পাতা দায়। সেই পার্টিই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় দারুণ ক্ষিপ্রতায় কুশল মেন্ডিসকে শামীম হোসেন রান আউট করতেই।

এর পরও ফুর্তিবাজ লঙ্কানরা দুলেছে। তবে ১৭৭ রানের পূঁজি গড়া বাংলাদেশ দল ওই রান আউটে রক্তের স্বাদ পেয়ে গেছে। স্বাগতিকদের ৯৪ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ৮৩ রানের দাপুটে জয়ে সিরিজে ফেরা তাই একরকম নির্ধারিতই ছিল!

বিশ ওভারের ক্রিকেটে ছন্দ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুতলয়ের ক্রিকেটে ছন্দের সেই গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে পেয়ে আর পেছনে তাকায়নি বাংলাদেশ দল।

প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষ বোলারদের তুলাধোনা করা লঙ্কান সিংহকে বাংলাদেশ খাঁচাবন্দি করে ফেলে ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ওই বলে তুলে নেন শ্রীলঙ্কার শেষ ভরসা অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কাকে। স্বাগতিকরা থমকে যায় ৩০ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে। এমন অবস্থায় এক প্রান্ত আগলে রেখে পাথুম নিশাঙ্কা শেষ চেষ্টা করেছিলেন দাসুন শানাকাকে সঙ্গী করে।
কিন্তু বাংলাদেশকে এদিন কে রোখে! এই ম্যাচে একাদশে জায়গা করে নেওয়া শরিফুল ইসলামের সুইং, মোস্তাফিজুর রহমানের কাটার আর রিশাদ হোসেনের লেগস্পিন সামলানোর সক্ষমতা ততক্ষণে হারিয়ে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। এঁদের মধ্যে শেষোক্তজনের কথা ম্যাচ শেষে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক। তবে ঘুরেফিরে দুই অধিনায়কের মুখেও উচ্চারিত হয়েছে শামীম হোসেনের সেই রান আউটের ঘটনাটি। বাংলাদেশের বোলার আর ফিল্ডারদের দক্ষতায় দুজন ছাড়া শ্রীলঙ্কার আর কোনো ব্যাটারই দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেননি।

অবশ্য ম্যাচজুড়েই শামীমের প্রতিপত্তি দেখা গেছে।

ব্যাটিং পাওয়ার প্লে যাঁদের কাজে লাগানোর কথা, সেই দুই ওপেনারতানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন একযোগে ব্যর্থ হয়েছেন গতকাল। এরপর রানখরায় ভোগা অধিনায়ক লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের রক্ষণশীল ব্যাটিংয়ে মনে হচ্ছিল, বেশিদূর যাওয়া হবে না বাংলাদেশ দলের।

কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন লিটন ও শামীম। অধিনায়কের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়ে তাওহিদ ফেরেন, একই ওভারে তাঁর সঙ্গে ড্রেসিংরুমে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই ধাক্কায় অবশ্য কাবু হওয়ার অবস্থায় নেই শামীম। আগের ম্যাচে ৫ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকা এই বাঁহাতি শুরু থেকে চড়াও হন লঙ্কান বোলারদের ওপর। ওদিকে অধিনায়কও থিতু হয়ে গেছেন উইকেটে। তাঁরা জুটি বেঁধে ছোটান রানের গতি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে লিটন ও শামীম মিলে তোলেন ৭৭ রান, তা-ও মাত্র ২১ বলে! ১৩ ম্যাচ পর ফিফটির দেখা পান লিটন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের দ্বাদশ পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস। এক বাউন্ডারি আর পাঁচ ছক্কায় ৫০ বলে ৭৬ রান করে যখন আউট হন অধিনায়ক, ততক্ষণে লড়াইয়ের জন্য আশাব্যঞ্জক পূঁজি এক রকম হয়ে গেছে বাংলাদেশের। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেতে মরণপণ দৌড়েও ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি শামীম। তাতে ২৭ বলে তাঁর ৪৮ রানের ইনিংস পঞ্চাশ ছুঁতে না পারার আক্ষেপে শেষ হয়েছে। অবশ্য তাঁর মনে কোনো আক্ষেপ নেই, দল জিতেছে। তাতে অবদান রাখতে পেরেছি। এতেই আমি খুশি। শামীম আরো খুশি ১৬ জুলাই কলম্বোয় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা নয়, জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। 

ম্যাচ শুরুর আগের রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের চালচিত্র না বললেই নয়। হাজার তিরিশেক দর্শকের ঠাঁই হয় এ মাঠে। তবে দুই দিন ধরে টিকিটের জন্য আহাজারি শোনা যাচ্ছিল, তাতে বোঝাই যাচ্ছিল যে পর্যাপ্ত আসন নেই। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় খেলা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে গ্যালারি ভরে গেছে। বরাবরের মতো গ্যালারি লাগোয়া গাছেও চড়ে বসেন বিনা টিকিটের দর্শক। তাই বলে সিঁধ কেটে বিনা টিকিটের দর্শক ঢোকে ডাম্বুলায়, সেটি অজানা ছিল। গতকাল সেটিও দেখা হলো, বাংলাদেশ ইনিংসের ব্যাটিং পাওয়ার প্লে চলাকালে ভিআইপি স্ট্যান্ডের দিককার কাঁটাতারের বেড়ার নিচের মাটি সরিয়ে অন্তত শ খানেক টিকিটহীন দর্শক ঢুকে পড়লেন স্টেডিয়াম চত্বরে। বিনা বাধায় যোগ দিলেন গ্যালারির উৎসবে। নিজ দলের ব্যাটিং ভরাডুবিতে ক্ষণে ক্ষণে লাউড স্পিকার থেমেছিল বটে। তবে পুরোপুরি থামেনি। পুরস্কার বিতরণীর পরও কিছু দর্শককে দেখা গেছে হাসিমুখে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কয়েকজন তো বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বলেও গেলেন, ওয়েল প্লেইড বাংলাদেশ!

মন্তব্য

অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

শেয়ার
অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবৈধ ব্যাটারির রিকশার দাপট বেড়েছে। সেগুলো জব্দে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। গতকাল মালিবাগে অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দ করে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি : ফোকাস বাংলা

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ পলাতক ২৪ আসামিকে আত্মসমর্পণের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে বাংলা-ইংরেজি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছে। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল রবিবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারক হলেন মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।

শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এর আগে ১০ জুলাই এই মামলার ২৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

পরে জানা যায়, এই মামলার দুজন আসামি এরই মধ্যে অন্য দুটি মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। সে কারণে ট্রাইব্যুনাল মৌখিকভাবে আদেশ দিলেও তাতে স্বাক্ষর করেননি। তবে আগের আদেশ উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আগের আদেশটি পরিমার্জন করা হলো।
২৬ জন আসামির মধ্যে যে দুজন গ্রেপ্তার আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য নয়।

পরে ট্রাইব্যুনাল আগামী ২২ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন। যে দুজন আসামি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন তাঁরা হলেন রাফিউল হাসান রাসেল ও মো. আনোয়ার পারভেজ।

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় মোট ৩০ জন আসামি। এর মধ্যে চারজনকে এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

তাঁরা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ১৬ জুলাই ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই মামলার শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। শুনানিতে তিনি বলেন, পলাতক আট আসামির গ্রেপ্তার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় প্রয়োজন। তখন ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। আদেশের সময় মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার আটজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

মন্তব্য
হত্যা মামলায় জামিন

আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস
অপু বিশ্বাস

জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানার এনামুল হক নামের এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আত্মসমর্পণ করে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস জামিন পেয়েছেন। গতকাল রবিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। শুনানি চলাকালে অপু বিশ্বাস বলেন, আমি একজন অভিনয়শিল্পী। এটাই আমার পেশা।

আমি রাজনীতি বুঝি না, আমি রাজনীতি করতে চাই না।

এদিন অপু বিশ্বাস আদালতে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি মুখে কালো মাস্ক, মাথায় সাদা ওড়না ও বোরকা পরেছিলেন। তাঁর আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, আসামি যে অর্থের জোগান দিয়েছেন, তা এজাহারে বলা নেই। নুসরাত ফারিয়াকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাদী হলফনামা দিয়ে বলেছেন, আমার ভুল হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
আসামি একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাঁর জামিন চাই। এ সময় বিচারক আসামি অপু বিশ্বাসের কাছে তাঁর বক্তব্য জানতে চান। কিন্তু তিনি দুইবার মাথা নেড়ে না উত্তর দেন। এ সময় তাঁর মুখে হাসিও দেখা যায়।
তখন পাশ থেকে আইনজীবীরা বলতে থাকেন, অপু বিশ্বাস ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী। টাকার বিনিময়ে মঞ্চে স্টেজে নেচে-গেয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে এগিয়ে দিতেন। তিনি আবার হাসেন। এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখে-মুখে ভীতি দেখা যায়। তখন তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, আমি কিছু বলতে চাই। তখন তাঁকে থামিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, র‌্যাব-পুলিশ সেনাবাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। লাশের বন্যা বয়ে যায়। এ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যাঁরা ছিলেন সবাই শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন। এই অপু বিশ্বাসরা ফেরদৌসের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেন। শেখ হাসিনা আবার আসবে বলে তাঁরা মনে করেন।

এরপর অপু বিশ্বাস বলেন, আমি একজন অভিনেত্রী। অভিনয় করার জন্য অনেক কিছু করতে হয়েছে। আমি রাজনীতি বুঝি না। রাজনীতি করিও না। করতেও চাই না। এ সময় আইনজীবীরা আহা আহা সাধু বলতে থাকেন। অনেক আইনজীবী উত্তেজিত হয়ে বলেন, অপু বিশ্বাস এমপি হতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দোসর তিনি। এ সময় অপু বিশ্বাস বলেন, আমি অভিনেত্রী। আমাকে যে পোশাক দেওয়া হয়, সে পোশাক পরে অভিনয় করতে হয়। অভিনয় এমনই। ওই সময় আমি খারাপ অবস্থায় ছিলাম। পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। আমার একটা বাচ্চা আছে। এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখ ছলছল করতে দেখা যায়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।

এর আগে অপু বিশ্বাস গত ২ জুন হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান। পরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিননামা দাখিল করেন তিনি।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয়। এনামুল হকের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার শ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেন তিনি। মামলায় অপু বিশ্বাস, আশ্না হাবিব ভাবনা, নুসরাত ফারিয়া, অভিনেতা জায়েদ খানসহ ১৭ জন তারকাকেও আসামি করা হয়। মামলায় এসব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে এই মামলায় গত ১৮ মে গ্রেপ্তার হন আরেক চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। পরদিন তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২০ মে জামিন পান তিনি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ