রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর কেটে গেছে ১০ দিন। তবে শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে এখনো আতঙ্কের রেশ রয়ে গেছে। পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ, থমথমে ক্যাম্পাসের পরিবেশ। চিকিৎসা নিতে প্রতিদিনের মতো গতকাল বুধবারও ক্যাম্পাসে ছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও কর্মচারীর আনাগোনা।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে তিনটি কক্ষজুড়ে চলছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। কক্ষগুলোতে চিকিৎসকের পাশাপাশি রয়েছেন শিক্ষক ও কাউন্সেলর। সেবা নিতে বসে আছেন শিশুশিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরাও। লোকজনের সমাগম থাকলেও সবার মুখ ছিল ফ্যাকাসে।
এখনো যেন তারা একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল আমীনের বাবা রুহুল আমীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিমানে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা আগুন, কয়লার মতো মানুষ, বাতাসে পোড়া গন্ধ—এই দুর্বিষহ স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। রাতে মাঝেমধ্যে আতঙ্কে ঘুম ভেঙে যায়। খেতে গেলে বমি বমি লাগে।
এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছি।’
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় সবাই একই সমস্যায় ভুগছে। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা তাদের মানসিকভাবে যন্ত্রণা দিচ্ছে। শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি। তারা তাদের খেলার সাথীদের চোখের সামনে হারিয়েছে।
ক্যাম্পাসের আরো একটি ভবনে চলছে বিমানবাহিনীর স্বাস্থ্যসেবা। সেখানে দুটি কক্ষে সেবাদান চলছে। বিমান দুর্ঘটনায় যাদের হাত-পা বা শরীরের বিভিন্ন অংশ সামান্য পুড়েছে, তারা সেখানে চিকিৎসা নিতে আসছে। বিনামূল্যে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা, ড্রেসিং ও ওষুধ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
গত ২১ জুলাই ওই বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩৪ জন। বর্তমানে রাজধানীর তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো ৪৫ জন। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩৩ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১১ জন এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে একজন ভর্তি আছে।
চিকিৎসকরা জানান, বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের মধ্যে দুজন আইসিইউতে, তিনজনের অবস্থা সংকটাপন্ন।
বার্ন ইনস্টিটিউট পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আহতদের চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিটি রোগীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আজ পর্যন্ত মোট ১২৮টি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সিঙ্গাপুর ও চীনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত পরামর্শ করছি।’
গতকাল বার্ন ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, মাইলস্টোন ইস্যুতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে আর আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং হবে না। সংবাদকর্মীরা প্রয়োজনীয় তথ্য চাইলে তা দেওয়া হবে।