কালের কণ্ঠ : আপনি দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম বছর মশার উপদ্রব কম থাকলেও এখন আবার বাড়ছে। মশা সমস্যা থেকে নগরবাসীর মুক্তি কবে মিলতে পারে?
ফজলে নূর তাপস : তিন মাস আগেও ঢাকাবাসী মশারি ছাড়া ঘুমাত। গত দুই বছর ডেঙ্গু বা এডিস মশার বিস্তারের কিছু পরিবর্তন লক্ষ করেছি। আগে দেখেছি আষাঢ়ের আগেই এডিসের উৎপত্তি শুরু হয়।
ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রকট থাকে। এরপর বংশবিস্তারটা নিজ থেকেই আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে যায়। গত বছর আশ্বিন অর্থাৎ নভেম্বর পর্যন্ত এর বিস্তার হয়েছে। এ বছরও সেটার একটা রেশ এসেছে। এবার জানুয়ারিতে অনেক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার প্রজননে পরিবর্তন এসেছে। এ পরিস্থিতিতে মশক নিধন কর্মপরিকল্পনা আমরা বর্ধিত করেছি। ফলে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।
কালের কণ্ঠ : ডিএসসিসি বছরব্যাপী খাল ও নর্দমা থেকে ময়লা অপসারণ করেছে। এর পরও কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী কবে পরিত্রাণ পেতে পারে?
ফজলে নূর তাপস : ঢাকা ওয়াসা থেকে খাল বুঝে পাওয়ার পর শুরুতেই আমরা খালগুলো পরিষ্কারের কাজ শুরু করি। কারণ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে খাল জরুরি। খালগুলো থেকে আমরা প্রচুর বর্জ্য অপসারণ করেছি।
ফলে জলাবদ্ধতা এখন নেই বললেই চলে। দুঃখের বিষয়, খাল, নালা পরিষ্কার করে আসলে সেখানকার মানুষই আবার ময়লা-আবর্জনা দিয়ে সেটি ভরাট করে ফেলে। নগরে যেখানে-সেখানে ফেলা পলিথিনসহ ভারী ময়লা ড্রেনে জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
কালের কণ্ঠ : ডিএসসিসির বিভিন্ন মার্কেটে পর পর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এটা কি নাশকতা? এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পুরান ঢাকা থেকে আগুনের উৎস কেমিক্যাল গোডাউন সরানো সম্ভব কি না?
ফজলে নূর তাপস : নাশকতার শঙ্কা অমূলক নয়। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর আরো খতিয়ে দেখা উচিত। এমনটা হলে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। আসলে ঢাকা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। আমাদের অনেক স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা কিছু কর্মকৌশল নিয়েছি। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি করে দিয়েছি। দুর্যোগ মোকাবেলাকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখছি। এ জন্য বাজেটেও অর্থ বরাদ্দ রাখছি। কেমিক্যাল গোডাউনের জন্য শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে ৫০০ কেমিক্যাল মালিক স্থানান্তর করতে পারবে। জুন মাসের মধ্যে সেটা আশা করছি।
কালের কণ্ঠ : নগরের বড় একটি সমস্যা যানজট। সমস্যাটি কমাতে কী করেছেন, সামনে কী পরিকল্পনা রয়েছে?
ফজলে নূর তাপস : আমরা বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছি। যান চলাচলে দীর্ঘতম জায়গায় যত যাতায়াতের সুবিধা করবেন ততই চলাচল দ্রুত ও গতিশীল হবে। অথচ আমাদের যেখানে-সেখানে গাড়ি ঘুরানো হয়। উল্টো পথে গাড়ি চলে। এগুলো যত কম হবে, ততই স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করা যাবে। যেমন ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কে এখন মাত্র দুইটা কাটা রেখেছি। এখন মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলে।
কালের কণ্ঠ : ঢাকাকে এগিয়ে নিতে আপনার নির্বাচনী ইশতেহারে ঐতিহ্যের, সুন্দর, সচল, সুশাসিত ও উন্নত ঢাকার কথা বলেছিলেন। তিন বছরে কতটা কাজ করতে পেরেছেন?
ফজলে নূর তাপস : ঢাকাকে নিয়ে আগে কখনো কোনো পরিকল্পনাই করা হয়নি। আমি ঢাকাকে সাজাতে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের চেষ্টা করেছি। সেই সঙ্গে ঢাকার সংকটগুলো কিভাবে নিরসন করতে পারি, সেই বিষয়গুলোকেই নির্বাচনী ইশতেহারে ছোট করে পাঁচটি রূপরেখায় দাঁড় করিয়েছিলাম। রূপরেখাগুলোকে ভাগ করে কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।
কালের কণ্ঠ : আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলকে দখলমুক্ত করে আগের রূপে ফেরাতে অগ্রগতি কত দূর?
ফজলে নূর তাপস : বুড়িগঙ্গা আমরা পুনঃখনন করছি। ৫০০ বছর ধরে সেটা ভরাট হয়েছিল। এটা যে পুনঃখনন করা যায়, সেই চিন্তা শুধু করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। মেয়র হিসেবে আমি সেটা বাস্তবায়নে হাত দিয়েছি। এখন নদীর অবয়ব ফিরে এসেছে। অচিরেই সেটা নান্দনিক পরিবেশে রূপান্তরিত হবে। নদী পুনরুদ্ধার হবে। ঢাকার দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা নিরসনে এটাও অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখবে।
কালের কণ্ঠ : ডিএসসিসির রাজস্ব আয় বাড়ার প্রধান কারণ কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান?
ফজলে নূর তাপস : অনেকটা তা-ই। দুর্নীতি কমেছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এসেছে। ফলে আমরা রাজস্ব আয় প্রায় দ্বিগুণ করতে পেরেছি। আগে মানুষ ট্যাক্স দিতে চাইত না। এখন আমাদের কাছে অনেকে ফোন করে বলে, এ বছরের ট্যাক্সটা এখনো নেওয়া হলো না। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে শুধু ট্রেড লাইসেন্স থেকেই আমরা ৯০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করেছি, যেটা কোনো সময়েই হয়নি।
কালের কণ্ঠ : ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? পরিকল্পনাগুলো কাজে আসছে কি না?
ফজলে নূর তাপস : আমাদের বড় প্রতিবন্ধকতা হলো হাঁটাপথ দখলের আগ্রাসন। আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। ফুটপাত দখল এখন অনেকটাই কমে এসেছে।