ঢাকা, শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫
২৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৩ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫
২৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৩ সফর ১৪৪৭
জান্তাকে বান কি মুন

মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচনকে বিশ্ব স্বীকৃতি দেবে না

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
শেয়ার
মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচনকে বিশ্ব স্বীকৃতি দেবে না
বান কি মুন

বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে নির্বাচন হলে এর ফলাফল দেশটির জনগণ, আসিয়ান ও বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মেনে নেবে না। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন গত রবি ও সোমবার মিয়ানমার সফরকালে দেশটির জান্তাকে এ কথা জানান। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের জান্তা আগামী আগস্টে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে।

বিশ্বের জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক, শান্তিকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীদের সংগঠন দ্য এল্ডারসের উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বান কি মুন।

দ্য এল্ডারস গতকাল মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তাদের চেয়ার এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন সহিংসতার অবসান এবং একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈধ সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য গত রবি ও সোমবার মিয়ানমার সফর করেন। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি জাতীয় ঐক্য সরকারসহ একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য সব পক্ষের ভূমিকার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

মিয়ানমারে আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে বান কি মুন সতর্ক করে বলেন, নির্বাচন তখনই হতে হবে যখন তা অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার শর্ত পূরণ করতে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা আরো সহিংসতা ও বিভাজনের ঝুঁকি তৈরি করবে এবং ওই নির্বাচনের ফলাফল মিয়ানমার, আসিয়ান ও বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃতি দেবে না।

বান কি মুন বলেন, আমি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করার এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানাতে এসেছি। তিনি বলেন, আমার বৈঠকগুলো ছিল অনুসন্ধানমূলক। আমি মিয়ানমারের জনগণকে তাদের প্রাপ্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আমার যথাসাধ্য সাহায্য করব।

দ্য এল্ডারস জানায়, বান কি মুনের ওই সফর ছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর আমন্ত্রণে। নেপিডোতে বৈঠকে বান কি মুন আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্য এবং গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব বাস্তবায়নে দ্রুত অগ্রগতির ওপর জোর দেন। গঠনমূলক আলোচনা, সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্বিচারে আটক সব বন্দির অবিলম্বে মুক্তির লক্ষ্যে মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানের প্রতি তিনি সমর্থন জানান।

বান কি মুন মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলে সাম্প্রতিক সামরিক বিমান হামলার তীব্র আন্তর্জাতিক নিন্দা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ওই হামলায় নারী, শিশুসহ ১৬০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

বান কি মুন গণতন্ত্র ও বেসামরিক শাসনের পূর্ণ রূপান্তরে গত এক দশকে মিয়ানমারের প্রতি দ্য এল্ডারসের সমর্থন এবং জাতিসংঘের মহাসচিব থাকাকালে মিয়ানমারের অগ্রগতিকে সমর্থন করার ব্যক্তিগত ইতিহাস তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, আসিয়ান সদস্য দেশগুলোকে এবং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের ব্যাপারে ঐক্য ও সংকল্প দেখাতে হবে। বান কি মুন বিশ্বাস করেন, বর্তমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একটি পথ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীকে অবশ্যই প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সীমান্তঘেঁষা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের অস্ত্রের লাইসেন্স দিচ্ছে ভারত

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
সীমান্তঘেঁষা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের অস্ত্রের লাইসেন্স দিচ্ছে ভারত

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া ভারতের আসাম রাজ্যের সরকার স্থানীয় আদিবাসী বাসিন্দাদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আসামের কট্টর হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় রাজ্যের মুসলিমদের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এর আগে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, অসমীয়া ভাষাভাষী জনগণ বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে, এমনকি নিজেদের গ্রামেও হামলার হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রায় তিন কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার এই রাজ্য জাতিগত, ভাষাগত ও ধর্মীয় দিক থেকে বিভাজিত এবং বিগত কয়েক দশকে বহু রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সাক্ষী হয়েছে।

২০১১ সালের সর্বশেষ জাতীয় আদমশুমারি অনুযায়ী, আসামের প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ মুসলিম; যাদের বেশির ভাগই বাংলাভাষী। এ ছাড়া বাকিরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বুধবার একটি ওয়েবসাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রাজ্যের যেসব আদিবাসী জনগোষ্ঠী নিজেদের জীবনের জন্য হুমকি অনুভব এবং সংবেদনশীল এলাকায় বসবাস করেন, তাঁরা অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ভারতে সাধারণত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন অত্যন্ত কঠোর। কিন্তু রাজ্যজুড়ে হঠাৎ করে সবার জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স উন্মুক্ত করে দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এই উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধীদলীয় নেতারা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেসের আইনপ্রণেতা গৌরব গগৈ বলেছেন, রাজ্য সরকারের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার এই উদ্যোগে গ্যাং সহিংসতা ও ব্যক্তিগত প্রতিশোধমূলক অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। এটি সুশাসন নয়, বরং আইনহীনতার দিকে এক বিপজ্জনক পশ্চাত্গামী পদক্ষেপ।

অসমীয়া ভাষাভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে সমর্থন দিতে শর্মার বিজেপি সরকার যে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে এই উদ্যোগ তারই অংশ। এই অভিযানের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান, যাদের শর্মা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী কিংবা সন্দেহভাজন নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

এই পদক্ষেপকে ব্যাপকভাবে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের নিশানা করেই নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়; যাদের মাতৃভাষা প্রতিবেশী বাংলাদেশের প্রধান ভাষা বাংলা। তবে অনেক জাতিগত বাঙালিই আসামের বহু পুরনো বাসিন্দা ও তারা ভারতীয় নাগরিক। এমনকি ১৯৪৭ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের সময় বাংলাদেশ আলাদা হয়ে যাওয়ার অনেক আগে থেকেই তাদের শিকড় আসামে রয়ে গেছে।

২০১৯ সালে ভারতের বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) আইন চালু করা প্রথম রাজ্য আসাম। নাগরিকত্ব যাচাইয়ের এই প্রক্রিয়া রাজ্যে চালু করার পর প্রায় ২০ লাখ মানুষ নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়েন; যাঁদের অনেকেই মুসলমান। সূত্র : এএফপি

 

মন্তব্য
শোকজের জবাবে এনসিপি নেতারা

‘নীরব প্রতিবাদ’ ও ‘চিন্তা করতে’ই কক্সবাজার সফর

বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার ও নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার ও নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
‘নীরব প্রতিবাদ’ ও ‘চিন্তা করতে’ই কক্সবাজার সফর

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পাঁচ নেতাকে দলের পক্ষ থেকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন তাঁরা। এতে বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে কিছু বিষয়ের প্রতি নীরব প্রতিবাদে তাঁদের এই কক্সবাজার সফর। এ ছাড়া তাঁরা ধীরস্থিরে চিন্তা করার জন্য সেখানে গেছেন বলে জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার এনসিপির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

সারজিস আলম ছাড়া বাকি চার নেতা গতকাল রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কক্সবাজার সফরে আসা এনসিপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা এখনো শহরের সাগর পারের বিলাসবহুল হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজে অবস্থান করছেন। গতকাল সকালে এনসিপির নেতা সারজিস আলম ও তাঁর স্ত্রী হোটেল থেকে গাড়িতে ঘুরতে বের হলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফেরেননি।

হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেলেও তাঁরা কখন কক্সবাজার ছেড়ে যাবেন, এ ব্যাপারে জানা সম্ভব হয়নি।

হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ইয়াকুব আলী বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনসিপির নেতারা হোটেল কক্ষ বুকিং রেখেছিলেন। তবে কক্ষ ছাড়ার সময় পেরিয়ে সন্ধ্যা গড়ালেও তাঁরা এখনো হোটেলে অবস্থান করছেন। এনসিপি নেতারা হোটেল কক্ষ নতুন করে বুকিং না দেওয়ায় বৃহস্পতিবার কক্সবাজার অবস্থান করবেন না ছেড়ে দেবেন, এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন বলে জানান।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  সারজিস ও তাঁর স্ত্রী গাড়ি যোগে বান্দরবান ঘুরতে গেছেন।

বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও তাঁদের সফরসূচি সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির ঐতিহাসিক দিন হঠাৎ করে কক্সবাজারে আসেন এনসিপির পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। তাঁরা হলেন হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, ডা. তাসনিম জারা, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও খালিদ সাইফুল্লাহ। এ ছাড়া সার্জিসের স্ত্রী রয়েছেন। এর পর থেকে শুরু হয় নানা গুঞ্জন।

এই গুঞ্জনের মধ্যে উখিয়ার ইনানীর সী পার্ল হোটেলে এক রাত অবস্থান করে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টসংলগ্ন হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজে ওঠেন।

বুধবার দুপুর পৌনে ১টায় এনসিপি নেতাদের দলটি উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সী পার্ল হোটেল ত্যাগ করেন। দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে পৌঁছান। পরে সেখানে শালিক রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খান তাঁরা। বিকেল ৩টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত তীরের অভিজাত হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজে গিয়ে ওঠেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে গত মঙ্গলবার কক্সবাজার সফরে যাওয়ার ঘটনায় গত বুধবার পাঁচ কেন্দ্রীয় নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় এনসিপি। নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের দুই শীর্ষ নেতার কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এই সফরের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। তবে সশরীর উপস্থিত না হলেও যথাসময়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন বলে দলের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও হাসনাত আবদুল্লাহর নোটিশের জবাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের পোস্টে প্রকাশ করা হয়েছে।

গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়ে ফেসবুকে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারি যে আমাদের আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেক ভাই-বোনকে এই অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা আমার কাছে শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজনকে, শহীদ এবং আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা এবং মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে উপস্থিত থাকার কোনো ইচ্ছা বা প্রয়োজন আমি বোধ করিনি। কাজেই এর পরদিন ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। উদ্দেশ্য ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা করা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে চিন্তা করা। একই সঙ্গে এটি ছিল একটি অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।

তিনি বলেন, ৪ আগস্ট রাতে প্রথমে আমি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তাঁকে না পেয়ে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে অবহিত করি যে, আমি আমার স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ভ্রমণে যাচ্ছি। যেহেতু তিনি সে সময় অফিসে আহ্বায়কের সঙ্গে ছিলেন, আমি তাঁকে অনুরোধ করি যাতে তিনি আহ্বায়ককে বিষয়টি জানান। তিনি আমাকে জানান যে তিনি তা করবেন। প্রায় ৩০ মিনিট পর নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আমাকে নিশ্চিত করেন যে তিনি আহ্বায়ককে বিষয়টি জানিয়েছেন এবং আহ্বায়ক এতে সম্মতি প্রদান করেছেন। পরবর্তী সময়ে আমার সঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সস্ত্রীক সারজিস আলম, তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।

বিকেল পৌনে ৫টার দিকে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়ে ফেসবুকে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তা-ভাবনা করতে। সাগরের পারে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণ-অভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।

কক্সবাজার সফরের আগে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে বিষয়টি জানিয়েছেন বলে জানান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

মন্তব্য
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির হুমকি

দাবি না মানলে ১২ আগস্ট দেশজুড়ে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
শেয়ার
দাবি না মানলে ১২ আগস্ট দেশজুড়ে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট

গাড়ি দুর্ঘটনায় চালকের জামিন না পাওয়ার আইন সংশোধনসহ আট দফা দাবি মানতে সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে এসব দাবি না মানলে পরদিন ১২ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে দেশব্যাপী টানা ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের স্টেশন সড়কের একটি হোটেলে বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট পালনের এই ঘোষণা দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কফিল উদ্দিন।

তিনি বলেন, সারা দেশেই দাবির পক্ষে প্রচার চলছে।

উপদেষ্টা দুটি দাবি মানার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আমরা বলেছি, সব দাবি মানতে হবে। আগামী ১১ আগস্ট (মঙ্গলবার) বিকেলের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে না নিলে ১২ আগস্ট ভোর ৬টা থেকে ১৫ আগস্ট ভোর ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে।

আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল এই  সমাবেশের আয়োজন করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণ ও পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সভাপতি মোরশেদুল আলম কাদেরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন হুমায়ুন কবির খান, একরামুল করিম ও হুমায়ুন কবির সোহেল।

কফিল উদ্দিন বলেন, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ ধারায় বলা হয়েছে, একজন চালকের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে তাঁর জামিন মিলবে না, পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমরা বলছি, দুর্ঘটনার কারণে মামলা হতে পারে, কোর্ট সাজা দিতে পারেন। কিন্তু জামিন পাওয়া যাবে কি না, তা নির্ধারণ করা আদালতের বিষয়।

এটি নাগরিক অধিকার। আইনে জামিন নিষিদ্ধ করে রাখা উচিত নয়। এই ধারাগুলো সংশোধন করতে হবে।

সমাবেশ থেকে জানানো হয়, আট দফা দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরো জোরদার হবে এবং ধর্মঘট থেকে পেছানোর সুযোগ থাকবে না।

আট দফা দাবি হলো সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ নম্বর ধারা সংশোধন করা; পুরনো বাণিজ্যিক যানবাহনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) ২০ ও ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা।

সেটা না হওয়া পর্যন্ত পুরনো গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত রাখা; বাজেটে বাণিজ্যিক যানবাহনের ওপর আরোপিত দ্বিগুণ অগ্রিম আয়কর কমিয়ে আগের মতো বহাল করা; মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন রাস্তা থেকে সরানোর জন্য সহায়ক হিসেবে বাণিজ্যিক রিকন্ডিশন্ড যানবাহন আমদানির সময়সীমা পাঁচ থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা; দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিকের জিম্মায় দেওয়ার বিধান কার্যকর করা; মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের জন্য স্ক্র্যাপ নীতিমালা প্রণয়ন করা; মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ও অনুমোদনহীন হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স-নবায়ন দ্রুত দেওয়া এবং শ্রমিক ফেডারেশনের ১২ দফা বাস্তবায়ন করা।

 

মন্তব্য

ইউরোপের প্রলোভনে নেপালে নিয়ে ৯ যুবককে বিক্রি

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা
শেয়ার
ইউরোপের প্রলোভনে নেপালে নিয়ে ৯ যুবককে বিক্রি

ইউরোপের প্রলোভনে নেপালে নিয়ে ৯ যুবককে বিক্রি করে দেয় দেশের মানবপাচারচক্র। সেই দুঃস্বপ্ন, বেদনাদায়ক স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। আর স্বপ্নভরা দুই চোখে এখন শুধুই হতাশার ছাপ। ভুক্তভোগী যুবক জুয়েল মিয়া বলেন, আসামি আহসান হাবীব সাজু স্পেনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নানা প্রলোভন দেখান।

আমাদের ৯ জনের কাছ থেকে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা বাগিয়ে নেন। কিন্তু আমাদের ইউরোপে নেওয়া হয়নি। এখন আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।

মামলার বাদী লিখন মিয়া বলেন, আমাদের ৯ জনকে স্পেনের বদলে নেপালে নিয়ে যায় মানবপাচারচক্র।

চার-পাঁচ দিন পর জানতে পারি, আমাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে বাড়িতে যোগাযোগ করি। এরপর দেশে ফিরে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেছি। এখন সুষ্ঠু বিচার ও টাকা ফেরত চাই।

ভুক্তভোগী মো. শহিদ বলেন, আমরা জমি বিক্রি করে, ঋণ নিয়ে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে দিয়েছি। টাকা দেওয়ার যথেষ্ট প্রমাণ তাঁদের কাছে রয়েছে। তাঁরা আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমরা এখন নিরুপায় হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলার ৯ জন ব্যক্তিকে ইউরোপে ভালো বেতনের চাকরির সঙ্গে ভালো সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখানো হয়।

এ জন্য ভিসা ও ডকুমেন্টসসহ বিভিন্ন খরচ হিসেবে তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে আসামি আহসান হাবীব সাজু ২০ লাখ টাকা করে চুক্তি করেন। কথা হয়, প্রথমে ১৫ লাখ টাকা এবং ইউরোপে পৌঁছে বাকি টাকা দিতে হবে। পরে চুক্তি অনুযায়ী নগদ ৫৯ লাখ টাকা, ব্যাংক হিসাবে ৬৬ লাখ টাকা এবং বিকাশে বিভিন্ন সময়ে ১০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। তবে ভুক্তভোগীদের জানানো হয়, বিমানে প্রথমে নেপাল এবং পরবর্তী সময়ে তাঁদের গাম্বিয়া হয়ে স্পেনে নেওয়া হবে। পরে তাঁদের পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সেই কথামতো জুলাই মাসের ৬ থেকে ১৪ তারিখ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তাঁদের নেপালে নেওয়া হয়।

সেখানে নিয়ে আসামি সাজু তাঁদের আবাসিক হোটেলে আটক রাখেন। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয় ৫০ লাখ টাকা। টাকা না দিলে তাঁদের মেরে ফেলার হুমকি দেন। টাকা না পেয়ে আসামি সাজু তাঁদের নেপালে বিক্রি করে দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগীরা নেপালের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কৌশলে তাঁরা ২৩ জুলাই দেশে ফিরে আসেন। পরে গত ২৪ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় লিখন মিয়া বাদী হয়ে মামলা করেন।

এই মামলার আসামিরা হলেন আহসান হাবীব সাজু ও সাজুর সহযোগী মো. বাবলা। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে আটক। গত ২৪ জুলাই তাঁরা গ্রেপ্তার হন। পরদিন গত ২৫ জুলাই সাজুকে দুই দিনের রিমান্ডে নিতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পায় পুলিশ। এ ছাড়া ওই দিন অন্য আসামি বাবলাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

ভুক্তভোগীদের আইনজীবী রুহুল আমিন বলেন, আসামি আহসান হাবীব সাজু ও বাবলা ভুক্তভোগী ৯ জনের কাছ থেকে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা নেন। কিন্তু তাঁদের স্পেনে না পাঠিয়ে নেপালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁদের বিক্রি করে সাজু দেশে ফিরে আসেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ