মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সত্তরের দশকের ছাত্রনেতা এবং বঙ্গবন্ধুর চার খলিফার একজন বলে খ্যাত নূরে আলম সিদ্দিকী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোররাতে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
তিন দফা জানাজা শেষে গতকাল বুধবার রাতে তাঁকে দাফন করা হয়।
শেষ ইচ্ছানুযায়ী গাজীপুরে নিজের গড়া নবী টেক্সটাইল ও ডরিন গার্মেন্টের মসজিদের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। এর আগে গতকাল বিকেলে রাজধানীর গুলশান আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় সালাম জানিয়ে তাঁকে গার্ড অব অনার দেয় পুলিশের একটি সুসজ্জিত দল।
নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। রাষ্ট্রপতি তাঁর শোকবার্তায় মরহুমের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পৃথক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নূরে আলম সিদ্দিকী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন এবং সত্তরের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতির এই সাহসী সন্তানের অবদান পরবর্তী প্রজন্ম চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।’
নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
গতকাল এক শোকবার্তায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ যে চার ছাত্রনেতাকে সে সময় ‘চার খলিফা’ হিসেবে অভিহিত করা হতো তাঁদের অন্যতম ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।
বিকেলে গুলশান আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে তাঁর মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাজনীতিবিদসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা ডাকসুর ওই সময়ের ভিপি আ স ম আবদুর রব, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, রুহুল আমিন হাওলাদার মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
সাবেক ছাত্রনেতা ইসমত আরা গামাও হুইলচেয়ারে করে জানাজায় অংশ নিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
নূরে আলম সিদ্দিকী গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ (আজাদ মসজিদ) ও ঈদগাহ সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। ১ এপ্রিল এই মসজিদে তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গতকাল সকালে হেলিকপ্টারে মরহুমের মরদেহ ঝিনাইদহে নিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাজা ও সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আবার ঢাকায় আনা হয়।
নূরে আলম সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৪০ সালের ২৬ মে ঝিনাইদহে। বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে সেই উত্তাল সময় ১৯৭০-৭২ মেয়াদে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তিনি মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-২ আসন (বর্তমানে ঝিনাইদহ-২) থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর এক ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের শোক : আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মরহুমের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আ স ম আবদুর রব এক বিবৃতিতে বলেন, ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ এবং ২৩ মার্চসহ স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার অন্যতম অংশীদার নূরে আলম। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন সংগ্রামী ও গণতন্ত্রের আপসহীন পূজারিকে হারাল।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা পৃথক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।