ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭
বিদ্যানন্দের উদ্যোগ

দুস্থ, ছিন্নমূলের জন্য ইফতার

তামজিদ হাসান তুরাগ
তামজিদ হাসান তুরাগ
শেয়ার
দুস্থ, ছিন্নমূলের জন্য ইফতার
সাধারণ মানুষের জন্য ‘সবাই মিলে বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। গত রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

খাদিজা বেগম ঢাকা শহরে জীবন চালাচ্ছেন অন্যের বাসায় কাজ করে। বিধবা এই নারীর আয়েই চলে এক মেয়ে নিয়ে দুজনের সংসার। গত রবিবার তিনি এসেছিলেন সমাজসেবামূলক সংগঠন বিদ্যানন্দের উদ্যোগে সবাই মিলে বাংলাদেশ ব্যানারে আয়োজিত ছিন্নমূল মানুষের ইফতারে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এই ইফতারে শরিক হওয়া ৫০০ জনের একজন ছিলেন তিনি।

ইফতারের এ আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে খাদিজা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, এহন জিনিসের যে দাম। কেমনে চলুম। ইফতার না হয় হইল এহানে কিন্তু শেষ রাইতে কী খামু জানি না। তয় আল্লাহ তাগো ভালা করুক যারা ইফতার দিছে।

রবিবার কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শামিয়ানা দিয়ে ঘেরা ইফতার প্রাঙ্গণ। এক পাশে কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। সাজিয়ে রাখা আছে ইফতারির প্লেট। প্লেটে রাখা আছে তরমুজ, ছোলা, মুড়ি, খেজুর, জিলাপি।

তবে ইফতারের মেন্যুর পরিবর্তন হয়। কখনো দেওয়া হয় বিরিয়ানি বা নানা রকম ফল। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে অতিথিদের ভিড়। গেটে দাঁড়ানো একজন স্বেচ্ছাসেবক নির্দেশনা দিয়ে তাদের বসিয়ে দেন লাইন করে। এর পরই শুরু হয় ইফতারির প্লেট বিতরণ।
 

খাদিজা বেগমের পর কথা হয় ইফতার করতে আসা আরো অনেকের সঙ্গে। তাদেরই একজন হাবিবুর রহমান (৬৫)। তিনি কারওয়ান বাজারে টুকরিতে করে পণ্য আনা-নেওয়ার (মিন্তি) কাজ করেন। গ্রামের বাড়ি খুলনা। এক ছেলেসহ তিনি থাকেন কারওয়ান বাজারের দোতলায়। প্রতিদিনের আয় ৫০০ টাকার মতো। কালের কণ্ঠকে হাবিবুর রহমান বলেন, মিন্তির কামে যে কয় টেকা ইনকাম করি তা খাইতেই যায়। জিনিসের দাম বাড়ে কিন্তু আমাগো কামের দাম বাড়ে না। শ্যাষ রাইতে ডিমভাত খাইছি। এহন এইহানে ইফতার করুম।

পাওয়া গেল ভিক্ষাবৃত্তি করে পেট চালানো তারা মিয়াকে। তিনিও রাত কাটান কারওয়ান বাজারে। তারা মিয়া বললেন, যে যা দেয় তাই দিয়া চলি। রাইত হইলে ঘুমাই কারওয়ান বাজারে। প্রথম রমজানে এইহানে ইফতার করছি, তাই আইজকাও আইছি। তাগো ইফতার খুব ভালা। আল্লাহ তাগো ভালো করুক।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন রমজান মাসে সারা দেশে প্রতিদিন ৯ হাজার মানুষের মাঝে ইফতারি বিতরণ করে। পাশাপাশি ঢাকায় ৫০০ জনের সেহরি বিতরণ করা হয়। এখন পর্যন্ত সিলেট ছাড়া দেশের বাকি সব বিভাগে এই কার্যক্রম চলে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ঢাকায় প্রতিদিন তিন হাজার মানুষের মধ্যে ইফতারি বিতরণ করে।

কথা হলো স্বেচ্ছাসেবকদের একজন বিপ্লব হোসেনের সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি ছাত্র অবস্থা থেকে বিদ্যানন্দের সঙ্গে যুক্ত আছি। কারওয়ান বাজারে যাঁরা আমাদের কাছে ইফতার করতে আসেন, তাঁরা মূলত ছিন্নমূল এবং খুব নিম্ন আয়ের মানুষ।

বিদ্যানন্দের হেড অব কমিউনিকেশনস সালমান খান ইয়াসিন জানালেন, বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে ইফতারি বিতরণ শুরু হয় ২০১৫ সাল থেকে। আর সবাই মিলে বাংলাদেশ নামের আয়োজনটি হচ্ছে এবার দ্বিতীয়বারের মতো। ইয়াসিন বললেন, ঢাকায় মোট পাঁচটি স্পটে ইফতারি বিতরণ করা হয়। আর আমরা সেহরি খাওয়াই গাবতলী, ভাসানটেক, মিরপুর-১২, দুয়ারীপাড়া, হাজারীবাগ ইত্যাদি জায়গায়।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এবারের রোজায় প্রায় তিন লাখ মানুষের মধ্যে বিনা মূল্যে ইফতারি বিতরণ করবে। একই সঙ্গে উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেড় হাজার পরিবারকে ইফতারসামগ্রী দেবে তারা।

হেড অব কমিউনিকেশনস সালমান খান ইয়াসিন আরো জানালেন, রাজধানীর ভাসমান দুস্থদের ইফতার করাতে ইফতার গাড়ি চালু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। গত শুক্রবার নগরীর তেজগাঁও থানায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। ডিএমপির সদস্যরাও এ কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দেবেন বিদ্যানন্দের সদস্যদের সঙ্গে। ইফতার গাড়ি প্রতিদিন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ইফতারির পাশাপাশি ঘরে ঘরে গিয়ে সাধারণ মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ইফতারি গ্রহণ করবে। দুস্থ রোজাদারদের কাছে তা পৌঁছে দেবেন পুলিশ সদস্যরা।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ভোগান্তি

শেয়ার
ভোগান্তি

রাজধানীর উত্তরার আবদুল্লাপুর সড়কটিতে জমে আছে পানি। পানির নিচে খানাখন্দ ও বড় গর্ত থাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছে ওই পথে চলাচল করা যানবাহন ও পথচারীরা। গতকাল সকালে তোলা। ছবি : লুৎফর রহমান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
কুলাউড়া সীমান্ত

বাংলাদেশি ৩ যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
শেয়ার
বাংলাদেশি ৩ যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে মাছ শিকারের সময় বাংলাদেশি তিন যুবককে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের হরিপুর সীমান্ত এলাকা থেকে বিএসএফ তাঁদের ধরে নিয়ে যায়।

তিন যুবক হলেন শরীফপুর ইউনিয়নের সঞ্জরপুর গ্রামের আনু মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়া (২৩), হরিপুর গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে মাসুক রহমান মন্টুরি (২০) এবং তৈয়ব আলী ডাগা মিয়ার ছেলে সিপার আহমদ (২২)।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে সোহাগ, মাসুক ও সিপার হরিপুর এলাকায় মাছ ধরছিলেন।

তখন ১৫-২০ জন বিএসএফ সদস্য এসে চোরাকারবারি সন্দেহে তাঁদের ধরে নিয়ে যান।

আটক মাসুক রহমান মন্টুরির ভাই ময়নুল মিয়া বলেন, ওরা বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরেই মাছ ধরছিল। ওই সময় সীমান্ত এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা বিজিবিকে জানালে তারা জানায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পরে জানতে পারি, শুক্রবার তাদের ভারতের ইরানি থানায় হস্তান্তর করেছে বিএসএফ।

এ বিষয়ে স্থানীয় শরীফপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য হারুন মিয়া বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছি, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা মাছ ধরতে গিয়ে বিএসএফের হাতে আটক হন। বিষয়টি বিজিবিকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে ৪৬ বিজিবির (শ্রীমঙ্গল) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়ার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ভয়ংকর রাতের ঢাকা ছয় মাসে ৯৭২ ছিনতাই

রেজোয়ান বিশ্বাস
রেজোয়ান বিশ্বাস
শেয়ার
ভয়ংকর রাতের ঢাকা ছয় মাসে ৯৭২ ছিনতাই

সড়কে বেপরোয়া ছিনতাই কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে গলির রাস্তায় দেশি অস্ত্রে পথচারীদের কাছ থেকে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। সর্বশেষ গত ১২ জুলাই ভোরের দিকে শ্যামলী এলাকায় একটি গলিতে চাপাতি ধরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শিমিয়ন ত্রিপুরার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, এমনকি পায়ের জুতা ও গায়ের কাপড় পর্যন্ত ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।

এর আগে এসএসসি পরীক্ষার্থী মোরশেদ আলম গত ১ জুলাই রাতে পুরান ঢাকার একটি সড়ক দিয়ে রিকশাযোগে বাসায় ফিরছিল।

পথে একদল ছিনতাইকারী তাকে ছুরি মেরে সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ জুলাই তার মৃত্যু হয়।

গত ৩ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় ধানমণ্ডির মেহেরুন্নেছা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রিনা ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি থেকে গভীর রাতে ঢাকায় ফিরে রিকশাযোগে ধানমণ্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের হোস্টেলে যাচ্ছিলেন। পথে ছিনতাইকারীরা তাঁর মাথায় ও ঘাড়ে কুপিয়ে সঙ্গে থাকা টাকা, অ্যাডমিট কার্ড, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, মোবাইল নিয়ে সটকে পড়ে।

এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় বৈঠক করেছে পুলিশ। তবে কিছুতেই ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঠিক নজরদারি না থাকায় ছিনতাইকারীরা সুযোগ নিচ্ছে। রাতের ঢাকায় ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে না আনলে মানুষের জান-মালের আরো ক্ষতি হতে পারে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের অপরাধীকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। নিয়মিত টহল জোরদার, অপরাধপ্রবণ এলাকায় নজরদারি বাড়ানো, চেকপোস্ট পরিচালনা করা, মামলা তদন্তে অগ্রগতির পাশাপাশি মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়াতে হবে। গত মঙ্গলবার রাজারবাগে পুলিশ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত জুন-২০২৫ মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত মাসে (জুনে) রাজধানীর বিভিন্ন ধানায় ৩২টি দস্যুতার মামলা হয়েছে। এর আগে জানুয়ারি মাসে ৫৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ৪৬টি, মার্চে ৩৮টি, এপ্রিলে ৩৭টি ও মে মাসে ৩২টি দস্যুতার মামলা হয় রাজধানীর বিভিন্ন থানায়।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২৫টি ছিনতাইয়ের মামলা হয় বিভিন্ন থানায়। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন সাতজন।

পুলিশ সদর দপ্তরের মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের গত ছয় মাসে সারা দেশের বিভিন্ন থানায় ৯৭২টি ছিনতাই বা দস্যুতার মামলা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী ও হাসপাতাল সূত্র বলছে, মামলার চেয়ে দেশে অনেক বেশি ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে মানুষ।

পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, রাজধানীর আটটি ক্রাইম জোনের সব থানাতেই কমবেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর, রমনা, ধানমণ্ডি, উত্তরাসহ পুরান ঢাকা এলাকায় ছিনতাই বাড়ছে। এ ছাড়া নিউমার্কেট, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, হাজারীবাগ, চকবাজার, শাহ আলী, এমনকি গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। মূলত সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ছিনতাই বেড়ে যায়।

জানা গেছে, রাতের ঢাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর টহল কার্যক্রম তেমন সক্রিয় নয়। রাজধানীর তেজগাঁও, রমনা ও পুরান ঢাকা এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রাতের ঢাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তেমন উপস্থিতি নেই। ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলোতে সক্রিয় নয় পুলিশের টহল। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ভোরের দিকে, গভীর রাতে, এমনকি সন্ধ্যার দিকেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করছে, বাস্তবায়নের চেয়ে তা টেবিলকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে বেশি। ফলে বাস্তব পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে আলোচনাগুলো হচ্ছে না। যাঁরা নতুন করে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন, তাঁদের রাজধানী বা ঢাকার অপরাধের ধরন, অপরাধীদের বৈশিষ্ট্য বুঝে উঠতে সময় লাগছে। কার্যত এর সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীচক্রগুলো।

সরকার পরিবর্তনের পর নতুন সরকার ঢাকায় পুলিশের জনবলে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। পুলিশের সর্বোচ্চ পদ আইজি ও ডিএমপি কমিশনার পদে পরিবর্তন আনা হয়। তবে পুলিশ সদস্যরা এখনো তেমন সক্রিয় হতে পারছেন না।

স্কুলছাত্র মোরশেদ আলমের মামা তারেক হোসেন বলেন, এখন তো রাতে রাস্তায় বের হতেই ভয় করে। কেউ নিরাপদ নয়। স্কুলছাত্রকেও ছাড়ছে না অপরাধীরা। তিনি বলেন, আমার ভাগিনা মোরশেদ আলম তানিম পুরান ঢাকার আহমেদ ভবানী স্কুলের ছাত্র ছিল। প্রয়োজনীয় কাজ শেষে রাতে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরি মেরে রাস্তায় ফেলে রাখে। তাকে চকবাজার বাকুশা মাজারের সামনে থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সে মারা যায়।

আহত শিক্ষার্থী রিনা জুয়েল ত্রিপুরার ভাই বলেন, ছিনতাইকারীদের কারণে আমার বোনের পরীক্ষা হুমকির মুখে পড়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাগান থানার ওসি ফজলে আশিক বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

আবার গভীর রাতে ছিনতাইকে কেন্দ্র করে গণপিটুনির ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি রাজধানীর মুগদা এলাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে আলামিন নামের এক তরুণকে রাস্তা থেকে ধরে গণপিটুনি দেয় একদল লোক। হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। মুগদা থানার ওসি সাজেদুর রহমান এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, আলামিন নামের এক তরুণকে ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা করে একদল লোক। হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, গত ৯ মাসে রাজধানীতে ছিনতাইকারীসহ এ ধরনের অপরাধে জড়িত দুই হাজারের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে।

শ্যামলী এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কবির, আল আমিন ও আসলাম নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃৃতি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীচক্রের সদস্য। তারা চাপাতি ও মোটরসাইকেল ভাড়া দেয় মাঠ পর্যায়ের ছিনতাইকারীদের। কোনো ছিনতাইকারী যখন গ্রেপ্তার হয় তখন দাদন (ব্যবসার জন্য অগ্রিম টাকা ধার, সাধারণত সুদসহ টাকা ধার দেওয়ার জন্য বেশি পরিচিত) দেয় চক্রটি, যাতে ছিনতাইকারী আসামি আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসতে পারে।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় আসামি শনাক্তের পর গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। যারা ছিনতাইয়ের জন্য চাপাতি আর মোটরসাইকেল ভাড়া দেয় তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য

ডাকাতের ফাঁদে পড়ে বাইকচালক নিহত, ছয় জেলায় ৭ লাশ উদ্ধার

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ডাকাতের ফাঁদে পড়ে বাইকচালক নিহত, ছয় জেলায় ৭ লাশ উদ্ধার

সিলেটে সড়কে ডাকাতের পাতা ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেলচালক। বরিশালে ভাড়া বাসা থেকে এক স্কুল শিক্ষকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে উদ্ধার হয়েছে আরো পাঁচজনের লাশ।

কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

সিলেট : বিমানবন্দর-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে ডাকাতের পাতা রশির ফাঁদে প্রাণ গেল সবুজ আহমদ (২১) নামের এক মোটরসাইকেলচালকের।

গুরুতর আহত হয়েছেন আরো দুজন। বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের কাটাখাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সবুজ কোম্পানীগঞ্জের উত্তর কলাবাড়ী গ্রামের মৃত মনিরুল ইসলামের (তোতা মিয়া) ছেলে।

হতাহতদের স্বজনরা জানিয়েছেন, রাস্তার ওপর ডাকাতদের আড়াআড়িভাবে টানিয়ে রাখা রশি সবুজের গলায় আঘাত হানলে তিনি ও সঙ্গের দুই আরোহী মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন।

এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান সবুজ। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম : নগরীর টাইগার পাস এলাকার একটি ড্রেন থেকে গতকাল মামুন (৩৭) নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

খুলশী থানার ওসি আফতাব উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, মামুন রিকশা চালাতেন, আবার বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের কাজ করতেন।

গত বুধবার তিনি খুলশী থানা এলাকার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যরা তাঁর নিখোঁজের বিষয়ে বৃহস্পতিবার থানায় জিডি করেছিলেন।

ওসি আরো বলেন, আমরা ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে তাঁকে খুন করা হয়েছে কি না।

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) : ফটিকছড়িতে মো. এনাম (৪৮) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নাজিরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি পুকুর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত এনাম ওই এলাকার মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।

নিহতের চাচাতো ভাই জসিমসহ স্থানীয়রা জানান, নিহত এনাম দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন এবং চোখেও ঠিকমতো দেখতে পেতেন না। পরিবারের সদস্যরা সব সময় তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করত।

ফটিকছড়ি থানার ওসি নুর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, পরিবারের চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিরাজগঞ্জ : নিখোঁজের চার দিন পর এক অটো ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে উল্লাপাড়া উপজেলার ক্ষুদ্র মনোহরা গ্রামে ফুলজোর নদীর কচুরিপানার ভেতর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত জেলহক ওরফে সোহাগ (২০) এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে।

বরিশাল : গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল নগরীর করিম কুটির এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মো. মহিউদ্দিন নামের স্কুল শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি নগরীর হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।

মো. মহিউদ্দিন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হরিদ্রাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ মাঝির ছেলে। তাঁর ছোট ভাই বরিশাল বিএম স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম নিয়ে তাঁর ভাইয়ের বিবাদ চলে আসছিল। স্কুলের দুর্নীতি নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে তাঁর ভাই লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন। সাংবাদিকদেরও তা জানিয়েছেন। এ জন্য তাঁকে বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

তাই স্বজনদের অভিযোগ, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ওই শিক্ষকের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

ফরিদপুর : ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লিফটের নিচ থেকে রাজু মাতুব্বর (৪৮) নামের এক ব্যক্তির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গতকাল দুপুরের দিকে হাসপাতালের ১০ তলা ভবনের নিচতলার বি ব্লকের ২ নম্বর লিফটের নিচ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তি বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মৃত শহীদ মাতুব্বরের ছেলে বলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুরাদ শেখ নিশ্চিত করেছেন।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুমায়ন কবির বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ওই লিফট দিয়ে মালামাল নিয়ে একজন মেকানিক ও একজন ওয়ার্ড মাস্টার ওপরে ওঠার সময় দুর্গন্ধ পান। পরে লিফটের নিচে খুলে পানিতে ভাসমান একটি মরদেহ দেখতে পান। বিষয়টি আমাকে জানালে রাতেই পুলিশকে জানানো হয়। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : গোমস্তাপুর উপজেলা থেকে  লাইলী বেগম (৫০) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দৌলতপুর মিনিবাজার এলাকার শাহজাহানের স্ত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিজ বসতবাড়ির রান্নাঘরের চালের বাঁশের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দেন লাইলী। পরে প্রতিবেশীরা খবর দিলে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।  প্রাথমিক ধারণা, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

পরিবারের বরাতে গোমস্তাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দারেশ আলী বলেন, ওই গৃহবধূ মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ