ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭
ইফতার

টিএসসিতে পরিবারের আবহ

মানজুর হোছাইন মাহি
মানজুর হোছাইন মাহি
শেয়ার
টিএসসিতে পরিবারের আবহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে শিক্ষার্থীদের ইতফার। ছবি : কালের কণ্ঠ

সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সূত্রে ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। রোজার মাসে এর প্রাঙ্গণজুড়ে থাকে এক ভিন্ন চিত্র। পরিবার ছেড়ে দূরে থাকা শিক্ষার্থীরা এখানে সতীর্থদের সঙ্গে বসে ইফতারে শরিক হন। জমে ওঠে অনেকটা পারিবারিক আবহ।

অনেক সময় রাজধানীতে থাকা সাবেক শিক্ষার্থীদের পাওয়া যায় এই আয়োজনে।

সাম্প্রতিককালে করোনা মহামারির বেশি দৌরাত্ম্যের দুটি বছর এই সমাগম বন্ধ ছিল। গত বছরের রমজান থেকে আবার টিএসসিতে ছোট ছোট দলে ইফতার করছেন হাজারো মানুষ। সাধারণত একেকটি দলে থাকেন দুজন থেকে শুরু করে পাঁচ-ছয়জন বা আরো বেশি।

গতকাল শনিবার ইফতারের আগে আগে টিএসসিতে গিয়ে পাওয়া গেল উমামা ফাতেমা ও তাঁর বন্ধুদের। কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা এবার প্রথমবারের মতো টিএসসিতে ইফতার করছেন। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হলেও করোনা মহামারির কারণে এর আগে কোনো রোজায় হলের বাইরে টিএসসিতে এসে ইফতার করতে পারেননি। টিএসসিতে ইফতার করে এবার তিনি পরিবারের সবার সঙ্গে মিলে ইফতার করার আবহ পেয়েছেন।

ফাতেমা বলেন, এ যেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বসে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সঙ্গে ইফতার। অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করছে।

বিকেলে বৃষ্টি হওয়ার কারণে গতকাল টিএসসির সবুজ মাঠে বসতে দেখা যায়নি কাউকে। ইফতারের আয়োজন বসেছিল টিএসসির বারান্দায় খবরের কাগজের পাতা, পলিথিন ইত্যাদি বিছিয়ে। টিএসসির সামনের টং দোকান, নীলক্ষেত, শিববাড়ি মন্দির সংলগ্ন এলাকা, ঢাবির হলপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ইফতারসামগ্রী কিনে এনেছেন তাঁরা।

অনেকে নিজ হাতে নানা কিছু তৈরি করে বন্ধু, সহপাঠী বা প্রিয় মানুষের সঙ্গে ইফতার করতে এসেছিলেন। টিএসসিতে ইফতার করা নিয়ে জানতে চাইলে সবাই বলেন, পরিবারের কাছে থাকতে না পারার ঘাটতিটা সহপাঠী-বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করার মাধ্যমে পুষিয়ে যাচ্ছে। সহপাঠীদের সঙ্গে ইফতার করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী মো. তৌফিক। তিনি বললেন, রমজানের সময় বাড়িতে থাকা হলে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করা হতো। কিন্তু এখন সেটা হয়ে ওঠে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সবাই মিলে টিএসসিতে বসে যে একসঙ্গে ইফতার করছি তা পরিবারের সঙ্গে না থাকার ঘাটতিটা পূরণ করে দিচ্ছে। এটা এক দারুণ অনুভূতি।

কুয়েত মৈত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সিনথিয়া মিম বলেন, টিএসসিতে ইফতার করতে খুব ভালো লাগে। হলে ইফতার করার সময় অনেকে রুমে থাকে না। একা ইফতার করতে হয়। এখানে টিএসসিতে সবাইকে না চিনলেও সবাই একসঙ্গে যে ইফতার করছি এটা খুব ভালো লাগে। 

খুঁজি বাংলাদেশ ট্রাভেলার্স নামের পর্বত আরোহীদের একটি দলের ১২ বছর উদযাপনে সদস্যরা ইফতার করতে এসেছিলেন। দলের সদস্য শাকিল চৌধুরী শুভ বলেন, টিএসসিতে ইফতার হচ্ছে সবার মিলনমেলা। আমরা আজ গ্রুপের সবাই এখানে একসঙ্গে হয়ে ইফতার করছি। ৪০ জন সদস্য একসঙ্গে ইফতার করায় মনে হচ্ছে আমরা একটি পরিবার।

টিএসসি ছাড়াও ইফতারের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর আর হলপাড়ার মাঠগুলোতেও কিছুটা একই চিত্রের দেখা মিলবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

শেয়ার
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে  পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

মন্তব্য

২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।

আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই সব শ্রেণি ও মতধারার সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনদলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

মন্তব্য

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার
রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।

সেখানে বারান্দায় একটি শয্যায় রেখে চলতে থাকে রোগীর চিকিৎসা। পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্থায়ী অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন এবং পরবর্তীতে স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর বাকির মোড়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধরা পড়ে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুসহ নানা জটিলতা। তবে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন।

এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।

খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। 

পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।    

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ