শিয়ালের কামড়ে একটি ছাগলের মৃত্যু হয়। ছাগলের মালিক ক্ষিপ্ত হয়ে তাতে বিষ দিয়ে মাঠে ফেলে রাখেন। মৃত ওই ছাগলের মাংস খেয়ে কুকুর ও শিয়াল মারা যায়। সেসব প্রাণীর মৃতদেহ খেয়ে মহাবিপন্ন ১৪টি শকুনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন।
মৌলভীবাজার
শিয়ালকে শাস্তি দিতে গিয়ে শকুনের মৃত্যু
- ঘটনাস্থল থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন গবেষকরা
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের ওই ঘটনা অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার গবেষক ও কর্মকর্তারা। গতকাল শুক্রবার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের বড়কাপন মাঠের বিভিন্ন স্থান ঘুরে তাঁরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। শকুন ও অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত জানতে গতকাল সকালে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং আইইউসিএনের কর্মকর্তা ও গবেষকদল ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে।
এদিকে অবৈধভাবে বাংলা শকুন ও শিয়াল হত্যার বিষয়ে বন বিভাগের বর্ষিজোড়া বিট কর্মকর্তা আবু নঈম মো. নুরুন্নবী বাদী হয়ে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় গত বৃহস্পতিবার একটি এজাহার জমা দিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র জানান, শকুন হত্যার ঘটনায় মৌলভীবাজার সদর থানায় গত বৃহস্পতিবার রাতে বর্ষিজোড়া পার্কের বিট অফিসার আবু নাঈম
মোহাম্মদ নুরুন্নবী বাদী হয়ে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। সাধারণ ডায়েরিতে মো. রোকন মিয়া ও কছনু মিয়া নামের দুজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। শকুনের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়া এলাকা থেকে বিষের বোতল উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।
অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত দুজনের বাড়ির একটি ছাগলকে কামড় দেয় বন থেকে আসা শিয়াল।
মৌলভীবাজার বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বর্ষিজোড়া ইকোপার্কের বিট অফিসার আবু নাঈম মোহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, ‘স্থানীয় এলাকার মানুষের কাছ থেকে দুজনের নাম পেয়েছি। আর বেশি কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আইইউসিএনের শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দিপু বলেন, ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়নি। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিভাগে পাঠানো হয়েছে। হয়তো দু-এক দিনের মধ্যে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে।
বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মর্মাহত ১৪টি শকুনের মৃত্যুতে। গত বৃহস্পতিবার দুই দফায় শকুনের মৃতদেহগুলো সংগ্রহ করে আইইউসিএনের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিভাগে পাঠানো হয়েছে।’
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘বন বিভাগ লিখিত অভিযোগ করেছে। সেটি জিডি আকারে রুজু হয়েছে। তদন্ত করে শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি শকুনের শরীরে আইইউসিএনের স্যাটেলাইট ট্যাগ লাগানো হয়েছিল। কয়েক দিন ধরে শকুনটির অবস্থান একই জায়গায় দেখা যায়। কোনো সিগন্যালও মিলছিল না। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে শকুনের মৃত্যুর বিষয়টি ধরা পড়ে।
বন বিভাগ ও আইইউসিএনের জরিপ অনুযায়ী, দেশে ২৬০টি শকুন ছিল। এর মধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ছিল ৮০টি। এই ১৪টি শকুনের মৃত্যুর পর সংখ্যা আরও কমে গেল। বন বিভাগ থেকে এরই মধ্যে শিয়াল, কুকুর ও ছাগলের মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। বিষ প্রয়োগের ঘটনা আর যেন না ঘটে, সে জন্য স্থানীয়ভাবে জনসাধারণকে সচেতন করতে প্রচার চালানো হচ্ছে।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’