ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় কাটান কষ্টের জীবন

  • মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরত্বের সঙ্গে লড়ে যুদ্ধাহত হয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। এমন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার
  • বীরত্বের কাহিনি নিয়ে থাকছে ধারাবাহিক আয়োজন
শরীফ আহমেদ শামীম, গাজীপুর
শরীফ আহমেদ শামীম, গাজীপুর
শেয়ার
কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় কাটান কষ্টের জীবন
মুক্তিযোদ্ধা বিমল দাস

ঘোড়াশাল সার কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প। সিদ্ধান্ত হয় সার কারখানা শত্রুমুক্ত করার। কমান্ডার নজরুল ইসলামের নির্দেশে গেরিলা সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় ৫০ সদস্য করে চারটি সুইসাইড টিম। আমাদের দায়িত্ব ছিল শত্রুর সংখ্যা, গোলাবারুদ ও গতিবিধি রেকি করা।

৯ ডিসেম্বর কালীগঞ্জের খলাপাড়ার দিকে রেকি করার সময় শত্রুবাহিনী আচমকা হামলা চালায়। একটি মর্টার শেলের স্প্লিন্টার বুকের বাঁ দিক ভেদ করে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।

ওপরের বর্ণনা গাজীপুরের কালীগঞ্জের খলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিমল চন্দ্র দাসের (৭০)।

কালের কণ্ঠর কাছে সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করেন তিনি। একাত্তরে বিমল দাস ছিলেন কালীগঞ্জের জামালপুর হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। নিজের মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। সেদিনের সেই প্রাণবন্ত তরুণ যুদ্ধাহত হয়ে হারিয়ে ফেলেন কর্মক্ষমতা।
আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক বছর কাটান দুর্বিষহ জীবন।

যুদ্ধক্ষেত্রে শেলে আহত হওয়ার পর বিমল এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন। পরে শুনেছেন, আড়াই ঘণ্টা পর তাঁকে খুঁজে বের করে দালান বাজারে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান দুই সহযোদ্ধা লাল মিয়া ও জসিম উদ্দিন। সেখানে ডা. জামাল আর কিছু না থাকায় জুতা সেলাইয়ের সুতা দিয়েই বিমলের বুক সেলাই করেন। পরে ক্ষতস্থানে পচন ধরে।

স্প্লিন্টার আঘাত করার সময় বিমলের শার্টের নিচে একটি এলএমজি ঝোলানো ছিল। শেলের টুকরার আঘাতে অস্ত্রটি ভেঙে যায়। এতে বিমলের শরীরে আঘাত অনেক কম লাগে। না হলে তখনই হয়তো তাঁর প্রাণ যেত।

যুদ্ধে যাওয়া প্রসঙ্গে যুদ্ধাহত বিমল দাস বলেন, ন্যাশনাল জুট মিলের পাশেই ছিল তাঁদের বাড়ি। বাড়ির অদূরে ছিল শ্রমিক কলোনি এবং ন্যাশনাল জুট মিল শ্রমিক লীগের অফিস। এলাকায় শ্রমিক নেতারা চলমান পাকিস্তানি স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আলোচনা, সভা-সমাবেশ করতেন। বড় ভাই নির্মল চন্দ্র দাস ছিলেন আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিমল ৭ মার্চ ঢাকা গিয়ে রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক জনসভায় অংশ নেন। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভাষণের আলোকে এলাকায় প্রতিরোধ কমিটির কাজ শুরু হলে তিনিও তাতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কয়েক বন্ধু মিলে তাঁর বড় ভাই ২০ এপ্রিল ভারতে চলে যান। মে মাসের শেষের দিকে তিনি নিজেও প্রতিবেশী বড় ভাই লাল মিয়ার সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিতে আখাউড়া হয়ে ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার হাপানিয়া ক্যাম্পে পৌঁছেন। হাপানিয়ার বাগমারা এলাকায় অবস্থিত মেলাঘর কেন্দ্রে ২১ দিনের গেরিলা ট্রেনিং নেন। আগস্টে আবার দেশে প্রবেশ করে যুদ্ধে যোগ দেন বিমল।

দেশ স্বাধীন হলে বিমলকে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় চার মাস পর কিছুটা সুস্থ হলে বাড়ি ফেরেন তিনি। বাড়ি পৌঁছে জানতে পারেন, দেশ স্বাধীন হলে বাড়ি ফিরেছিলেন বড় ভাই নির্মল চন্দ্র দাসও। ছোট ভাইকে দেখতে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হলে রাজাকাররা তাঁকে ধরে নিয়ে গুম করে। আর কখনোই খোঁজ পাওয়া যায়নি নির্মলের। বিমলের ভালোভাবে সুস্থ হতে লাগে চার বছর। কিন্তু হারিয়ে ফেলেন কর্মক্ষমতা। এ কারণে জীবিকা অর্জনের জন্য কোনো কাজ আর করতে পারেননি। বোঝা হন পরিবারের অন্যদের। বছরের পর বছর খুব কষ্টে দিন যাপন করেন একাত্তরের রণাঙ্গনের এই বীর যোদ্ধা। এখন স্ত্রী আর দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার চলে শুধু মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায়।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সরেজমিন

আ. লীগের কার্যালয়েই হবে ফ্যাসিবাদ বিষয়ে গবেষণা

তৌফিক হাসান
তৌফিক হাসান
শেয়ার
আ. লীগের কার্যালয়েই হবে ফ্যাসিবাদ বিষয়ে গবেষণা
গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় এসে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে। ভবনটির সামনে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ লেখা ব্যানার টানানো হয়েছে। ছবি : কালের কণ্ঠ

রাজধানীর গুলিস্তানের শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ভবনটিকে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট হিসেবে তৈরি করা হবে। আর এই ইনস্টিটিউটেই ফ্যাসিবাদের উত্থান, কার্যকলাপ ও পতন নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করা হবে।

গতকাল শুক্রবার ওই কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে এবং সেখানে উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

দেখা যায়, ভবনটির দেয়ালে দুটি লাল রঙের ব্যানার লাগানো। উভয় ব্যানারেই লেখা, আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, নিচতলায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। ভেতরে জমে থাকা ময়লা পানি ওয়াসার স্যুয়ারেজের গাড়ি দিয়ে নিষ্কাশন করা হচ্ছে।

ভবনটির ভেতরে ইট-বালু, সিমেন্ট পরিষ্কারের কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। এরই মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা পরিষ্কার শেষ করে চতুর্থ তলা পরিষ্কার করা হচ্ছে।

শ্রমিকদের একজন হাফিজুর রহমান জানান, বুধবার থেকে তাঁরা এই কাজ করছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমরা দৈনিক হিসেবে কাজ করতাছি।

চারতলা পর্যন্ত পরিষ্কার করছি। আমরাই পুরোটা পরিষ্কার করব।

ভবনটির বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদস্য এস এম শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এখানে আমরা ফ্যাসিবাদের উত্থান-পতন নিয়ে স্টাডি করব। একই সঙ্গে ফ্যাসিজম রোধে আমরা কী করতে পারি তা নিয়েও বিস্তর স্টাডি করব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এটা নিয়ে সচেতন করব।

এটা নতুন পুরনো সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি শিক্ষাকেন্দ্র হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা চিন্তা করেছি যে গুলিস্তানের মতো ব্যবসায়ী অঞ্চলে একটা ভবন আমরা কিভাবে ব্যবহার না করে ফেলে রাখি। এটাকে ঠিকঠাক করতে পারলে আশপাশের জনগণ উপকৃত হবে। এটা হয়েছিল গণশৌচাগার। গুলিস্তানের মতো একটা জায়গায় এত দুর্গন্ধ সহনীয় নয়। তাই আমরা নিজস্ব উদ্যোগে এটা পরিষ্কারের কার্যক্রম শুরু করেছি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাত্রাবাড়ী থানার সংগঠক মুজাইদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, গত ১৭ বছর এখান থেকে যে ফ্যাসিজম চালানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই ভবনে। এটিকে সরকারিভাবে দেশের স্বার্থে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে চিন্তাই আমরা করছি। কবে নাগাদ এই কার্যক্রম শেষ হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

এর আগে গত ১৭ মে ভবনটিতে টাঙানো হয়েছিল জুলাই যোদ্ধাদের প্রধান কার্যালয় লেখা ব্যানার। তবে কে বা কারা এটি টাঙিয়েছিল সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভবনটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে ভবনটিকে গণশৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। প্রায় এক বছর ধরে মলমূত্র জমে থাকার কারণে উৎকট গন্ধও তৈরি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুলিস্তানে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১০ তলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ২০১৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করেছিলেন দলের সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল।

 

 

 

মন্তব্য

বৃষ্টি বেশি থাকবে আরো কয়েক দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বৃষ্টি বেশি থাকবে আরো কয়েক দিন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে গতকাল শুক্রবার। সেই সঙ্গে মৌসুমি বায়ু বা বর্ষাও বাংলাদেশের ওপর সক্রিয়। দুইয়ে মিলে আগামী কিছুদিন দেশে বৃষ্টি বেশি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণও হতে পারে।

বৃষ্টিপাতের এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতেও।

দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৫১টি পর্যবেক্ষণাগারের মধ্যে ৪৮টিতেই গতকাল বৃষ্টির রেকর্ড পাওয়া গেছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে, ৭৩ মিলিমিটার। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৫১ মিলিমিটার, বাগেরহাটের মোংলায় ৪৯ মিলিমিটার ও নীলফামারীর ডিমলায় ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আগামী কিছুদিনের বৃষ্টিপাতের চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, বৃষ্টি আরো বাড়তে পারে সামনে। বিশেষ করে ২৮ ও ২৯ জুলাই বৃষ্টি অনেক বেশি হতে পারে। ২৯ জুলাইয়ের পর আবার তা কিছুটা কমতে পারে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ শনিবার ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণও হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা থাকতে পারে প্রায় অপরিবর্তিত।

এদিকে গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তর এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

অমাবস্যা ও নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো এক থেকে তিন ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

ভারি বর্ষণের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামীকাল রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটার বা বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে বলেও জানিয়েছে অধিদপ্তর।

 

 

মন্তব্য
জামায়াত আমির

দল নিয়ন্ত্রণ করেছি দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দল নিয়ন্ত্রণ করেছি দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব
শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যারা নিজেদের দলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবে না।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বেগমপাড়া কিংবা পিসিপাড়া নেই উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা কখনোই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি এবং যাবেনও না।

যাঁরা দেশ ও জনগণকে ভালোবাসে না, তাঁরাই বিদেশে নিজেদের দ্বিতীয় ঠিকানা গড়ে তুলেছেন এবং তাঁরা নিজেদের স্বার্থে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

জামায়াত আমির বলেন, বিগত ৫৪ বছরে জামায়াতে ইসলামী দেশের একজন নাগরিকের প্রতিও অবিচার করেনি, জুলুম করেনি। জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি কিংবা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হননি, হবেও না। জামায়াত দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

যারা দলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের সংকটকালে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বিদেশ থেকে দেশে এসে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আধিপত্যবাদের দোসর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। যে কারণে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিচারিক হত্যা করা হয়েছে।

পৃথিবীর একমাত্র অসামপ্রদায়িক ধর্ম ইসলাম উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, ধর্ষক, খুনি, লুটেরাদের ভয় আছেএ জন্য তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে।

যারা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে, তাদের মা-বোন যদি প্রয়োজনে বাজারে যেতে পারে, হাসপাতালে যেতে পারে, প্রয়োজনীয় মৌলিক সব কাজ করতে পারেতাহলে কেন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে নারীদের চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি হবে?

আমিরে জামায়াত বলেন, সব ধর্মের নারী-পুরুষই রাষ্ট্রের কাছে সমান। রাষ্ট্র ধর্ম বা লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য করতে পারে না। ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ইসলাম ও দেশপ্রেমিক সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে চায় জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের রাজনীতি হবে কেবলই মানুষ ও মানবতার কল্যাণে।

জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রমুখ।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্যই জামায়াতে ইসলামী ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জামায়াতে ইসলামীকে কোনো ষড়যন্ত্রই অগ্রযাত্রা থেকে থামাতে পারেনি, পারবেও না। একটি বৈষম্যহীন, সুখী-সমৃদ্ধ, আধুনিক, কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

 

মন্তব্য

নীলক্ষেতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এইচএসসির ব্যাবহারিক খাতা

    অঙ্কনসহ পূর্ণ খাতা কিনে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মান ও নৈতিক অবক্ষয়ের অভিযোগ
মানজুর হোছাঈন মাহি
মানজুর হোছাঈন মাহি
শেয়ার
নীলক্ষেতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এইচএসসির ব্যাবহারিক খাতা

এইচএসসি পরীক্ষার ব্যাবহারিক খাতা শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে লেখার কথা। কারণ এতে কেবল তথ্য নয়, শেখার প্রক্রিয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে ঠিক উল্টো। রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় এখন একটি সরল হিসাবটাকা দিলেই মিলবে পুরো লেখা ও অঙ্কনসহ খাতা।

তারপর তা জমা পড়বে পরীক্ষাকেন্দ্রে, মিলবে নম্বর, পাসও।

রাজধানীর খিলগাঁও মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফ আহমেদ (ছদ্মনাম) চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সে এখনো কোনো ব্যাবহারিক খাতা লেখেনি। কারণ জানতে চাইলে বলে, সব খাতা নীলক্ষেত থেকে কিনে নেব।

নিজের হাতে লিখে লাভ কী? সবাই তো কিনে জমা দিচ্ছে।

শুধু শরীফ নয়, রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা ব্যাপক। তারা ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় নীলক্ষেত থেকে কেনে অঙ্কন ও লেখা সম্পন্ন ব্যাবহারিক খাতাযেন একটি অবাধ বাণিজ্য এবং চলছে প্রকাশ্যেই।

 

নীলক্ষেতের দোকানে সরেজমিন : লিখে দিচ্ছে আমাদের লোক

শিক্ষার্থী পরিচয়ে ঢাকার নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাবহারিক খাতার এই বাজার বেশ সুসংগঠিত।

দোকানে দোকানে পাওয়া যায় প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা খাতা। প্রতিটি খাতা আগেই লেখা ও অঙ্কন করা। চাহিদা অনুযায়ী সাজানো থাকে আলাদা আলাদা কলেজের নামে।

১৩৮ নম্বর দোকান হ্যাপি বুক হাউজ-এ গিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের খাতা চাইলে দোকানদার বলেন, পেয়ে যাবেন, আজকেই দেওয়া যাবে। একদম আপডেট খাতা।

দাম প্রথমে বলা হয় ৪০০ টাকা। দরদামের পর ৩০০ টাকায় বিক্রি করেন।

৯৪ নম্বর দোকান সালমা বই ঘর-এ গেলে পুরো বিজ্ঞান বিভাগের এক সেট খাতা দেখানো হয়। রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত ও আইসিটিসব বিষয়ের খাতা অঙ্কনসহ প্রস্তুত। দোকানদার জানান, প্রতিটি খাতা ৩০০ টাকা, আইসিটির জন্য ২০০ টাকামোট দাম তিন হাজার ৪০০ টাকা।

১০৩ নম্বর দোকান ইব্রাহীম মেডিকেল বুক হাউজ-এও একই চিত্র। প্রশ্ন করলে দোকানি বলেন, আমাদের লোক আছে, তারাই লিখে দেয়। আবার হ্যাপি বুক হাউজ-এর একজন বলেন, নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রীরা এগুলো লেখেন ও আঁকেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা শিক্ষাব্যবস্থার ভয়াবহ এক অনিয়ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশীদ বলেন, ব্যাবহারিক খাতার কেনাবেচা এখন এক ধরনের স্টার্টআপ বিজনেস-এ পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিখছে না, বরং শিখছে কিভাবে অর্থের বিনিময়ে পাস করা যায়।

তিনি আরো বলেন, এই সংস্কৃতি শিক্ষক, প্রিন্সিপাল ও প্রশাসনের জেনেও চোখ বন্ধ রাখার ফল। ওপেন সিক্রেট এই দুর্নীতি শুধু শিক্ষার মান নয়, একটি জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে।

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আরেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, এটি একাডেমিক ফ্রডের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। টার্ম পেপার, থিসিস, ব্যাবহারিকসবই টাকা দিয়ে কেনা যাচ্ছে। এখনই না থামালে ভবিষ্যতে আমরা আত্মপ্রবঞ্চনার মধ্যে ডুবে যাব।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহসানুল কবির বলেন, ব্যাবহারিক খাতার কেনাবেচা গুরুতর সমস্যা। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের খাতা নিজেরা লেখায় না, তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।

তিনি বলেন, শিক্ষকদের উচিত কেনা খাতা গ্রহণ না করা। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কড়া মনিটরিং ও অডিট চালু করতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ