দেশের সার্বিক ব্যবসা পরিবেশ নিয়ে আস্থা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, আগামী ছয় মাস (ডিসেম্বর ২০২২ থেকে জুন ২০২৩) পর্যন্ত ব্যবসায়ের পরিবেশ ভালো থাকবে। তবে উৎপাদনে ব্যবহার করা কাঁচামাল, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, অফিসভাড়া ও অন্য সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের নিয়ে করা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল রবিবার বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভে রিপোর্ট ২০২২-২৩ (ব্যবসার আস্থা সূচক) প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
বিল্ড ২০২২ সালের মার্চ থেকে আগস্ট ও সিপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দুই ধাপে দেশের আটটি বিভাগের ৫৬৭টি প্রতিষ্ঠানের ওপর অনলাইনে প্রশ্ন ও উত্তরের ভিত্তিতে জরিপ চালিয়ে
প্রতিবেদনটি তৈরি করে। এর মধ্যে ২৮৪টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনভিত্তিক এবং ২৮৩টি প্রতিষ্ঠান সেবাভিত্তিক।
এসব প্রতিষ্ঠানের ৪৮ শতাংশের অবস্থান রাজধানীতে আর ৫২ শতাংশ রাজধানীর বাইরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে করা জরিপে সামগ্রিকভাবে ব্যবসায় আস্থা পরিস্থিতির ইতিবাচক চিত্র দেখা গেলেও অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা তৈরি পোশাক খাতকে চাপে ফেলতে পারে। এ অবস্থায় ব্যবসার ব্যয় কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালের জন্য সামগ্রিক বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স (বিসিআই) দাঁড়িয়েছে ৭৪.৪ পয়েন্ট।
এই স্কোর আগামী জুন পর্যন্ত ব্যবসা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। জুন মাস শেষে ব্যবসার সামগ্রিক আস্থা সূচক ১০০ বেসিস পয়েন্টের মধ্যে ৭৮.২ পয়েন্ট স্কোর করতে পারে।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভেতে ছয় মাস (ডিসেম্বর ২০২২ থেকে জুন ২০২৩) সময়কালের জন্য সেবা খাতের চেয়ে উৎপাদন খাতকে বেশি ইতিবাচক মনে হয়েছে। সেবা খাতের স্কোর আগামী জুন মাসের শেষ নাগাদ হতে পারে ৭৫.৯ পয়েন্ট। সে তুলনায় উৎপাদন খাতের স্কোর দাঁড়াতে পারে ৮০ পয়েন্ট।
তিনি বলেন, সেবা খাতের পরিচালন
সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ পরিস্থিতির কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তাদের তুলনায় নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় আস্থা কম পরিলক্ষিত হওয়ায় এ থেকে উত্তরণের জন্যও কাজ করতে হবে।
বিল্ডের এ বছরের বিজনেস কনফিডেন্স জরিপে সাতটি বিষয়ের মধ্যে ছয়টিতে উন্নতি দেখা গেছে। এই ছয়টি বিষয় হলো কর্মসংস্থান, ক্রয়াদেশ, সেবার চাহিদা, ব্যবসায় কার্যক্রম, বিক্রয়মূল্য ও বিনিয়োগ।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—ব্যবসা পরিচালনায় বিভিন্ন ব্যয় বাড়তে থাকায় আগামী জুনের শেষ নাগাদ এই সূচক দাঁড়াতে পারে ২২.৪ শতাংশে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘বাংলাদেশ সব ধরনের সংকট কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ। বিল্ডের এই প্রতিবেদন আমাদের সামনের দিনগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে।’
স্বাগত বক্তব্যে বিল্ডের নির্বাহী পরিচালক নিহাদ কবির বলেন, ‘গত এক দশকে আমাদের বেসরকারি খাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। একই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ কটি নতুন সমস্যাও সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলো থেকে উত্তরণের রাস্তা এখনই বের করতে হবে। বিল্ডের এই জরিপ প্রতিবেদন ব্যাবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নে নীতিনির্ধারকদের সহায়তা করবে।’
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের (ডিসিসি) সভাপতি মো. সামির সাত্তার বলেন, ‘বিল্ডের এটি গবেষণামূলক কাজ। ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়ে এটি করা হয়েছে। এই জরিপ প্রতিবেদনের সঙ্গে বর্তমান ব্যবসা পরিস্থিতির অনেক মিল রয়েছে। আশা করছি নীতিনির্ধারকরা প্রতিবেদনটি গুরুত্ব দিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করবেন।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বিল্ডের লজিস্টিকস ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটির কো-চেয়ার আবুল কাসেম খান, ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপাল অঞ্চলের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমীন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ ফয়েজুল আমীন প্রমুখ।