ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ৬ আসনে ভোট আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ৬ আসনে ভোট আজ

বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য ঘোষিত ছয়টি আসনের উপনির্বাচন আজ বুধবার। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে। আগের কয়েকটি উপনির্বাচনে ভোটকক্ষগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও এবার তা হচ্ছে না।

ছয়টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মাত্র তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

এগুলো হলো বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩। ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলটির কোনো প্রার্থী নেই। এ নির্বাচনে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন। আসনটিতে বিএনপির সিদ্ধান্ত অনুসারে পদত্যাগ করার পরও ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন উকিল আবদুস সাত্তার।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা এ আসনের নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি সম্পর্কে গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, যথারীতি আগের অন্যান্য জায়গার মতো সব প্রস্তুতি আছে। খালি একটাই নাই।

আমরা সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করি নাই।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় জানায়, আজ নির্বাচনী এলাকায় ট্রাক, পিকআপ ও ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে আগামীকাল মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে ইসির অনুমতি নিয়ে যেকোনো যান চলাচল করতে পারবে। ছয়টি আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৬৭।

ভোটকক্ষ পাঁচ হাজার ৮৯৮টি। মোট ভোটার ২২ লাখ ৫৪ হাজার ২১৭ জন। ছয়টি আসনে মোট ৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ-বিজয়নগর) আসনের নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের লক্ষ্যটা বেশ পরিষ্কার। আবদুস সাত্তারের জয়ের মধ্য দিয়ে তাঁকে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করানো বিএনপির ভুল সিদ্ধান্ত ছিলএটা প্রমাণ করতে চায় আওয়ামী লীগ। সরকারি দলটি চায় বিএনপির এই নেতা আবার সংসদে গিয়ে দলের সঙ্গে হওয়া বিরোধ নিয়ে কথা বলুন।

তবে কাগজে-কলমে ভোটের মাঠে নেই আওয়ামী লীগ। আছে দলীয় ছক ও কৌশলী প্রচারণা। সেই ছক আর প্রচারণায় বেশ ফুরফুরে পদত্যাগ-পরবর্তী বিএনপি নেতা আবদুস সাত্তার ভুঞা। একসঙ্গে প্রচারের পর এবার ভোটের দিনও মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। ভোটের আগের দিনও জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা আবদুস সাত্তারের পক্ষে কাজ করতে দুই উপজেলায় দায়িত্ব ভাগ করে কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।

উল্টো চিত্র অন্য তিন প্রার্থীর বেলায়। পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদের হদিস নেই ভোটের আগের দিনও। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ জানিয়েছেন, তিনি এজেন্ট দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন। জাকের পার্টির প্রার্থী প্রচারে নানাভাবে সহযোগিতা পেয়ে খুশি। জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা প্রতীক বরাদ্দ পেয়েও বিবৃতি দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান. ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলা) আসনের রিটার্নিং অফিসার ও রংপুর বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন জানান, ১২৮টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭২টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আসনটিতে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে ৯ জন প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় রয়েছেন চারজন। এর মধ্যে একজন জেলা জাসদের সভাপতি সাবেক এমপি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন। তিনি ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন নন্দীগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র ও সাবেক বিএনপি নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল। তিনি কুড়াল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুশফিকুর রহমান কাজল। তিনি ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। পিছিয়ে নেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক একতারা। তরুণ ও নতুন ভোটারদের মুখে মুখে হিরো আলমের নাম।

বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বগুড়া-৬ (সদর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু। তবে তাঁর সঙ্গে নেই ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদ ও জাতীয় পার্টি। জাসদ থেকে রয়েছেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক এমদাদ এবং জাতীয় পার্টি ( জাপা) থেকে রয়েছেন জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর। এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা হলেন বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ, গণফ্রন্টের আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. নজরুল ইসলাম, জাকের পার্টির মো. ফয়সাল বিন শফিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মাসুদার রহমান হেলাল, স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার বাদল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনের ভোট নিয়ে গতকাল পুরাতন স্টেডিয়ামে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের ব্রিফ করেন পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব। তিনি একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওদুদ, ব্যবসায়ী ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটন এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রার্থী কামরুজ্জামান খান।

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৪ দলীয় জোট থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির অধ্যাপক ইয়াসিন আলী, জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) সিরাজুল ইসলাম, জাকের পার্টির এমদাদুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সাফি আল আসাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায়।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু

শুল্ক আলোচনায় ইতিবাচক সমাধান চায় পোশাক খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুল্ক আলোচনায় ইতিবাচক সমাধান চায় পোশাক খাত

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর)। এই আলোচনা ৯ জুলাই শুরু হয়ে ১১ জুলাই পর্যন্ত চলবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প গত ৭ জুলাই ১৪টি দেশের সরকারপ্রধানদের কাছে চিঠি পাঠানোর পর বাংলাদেশ নতুন দফায় আলোচনা শুরু করা প্রথম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন, যিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে উপস্থিত থেকে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেবেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন।

এ ছাড়া বাণিজ্যসচিব এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নিতে এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন।

শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশ আশা করছে, গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ফলপ্রসূ আলোচনার অগ্রগতির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে।

এর আগে সোমবার বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে।

এদিকে শুল্ক আলোচনায় ইতিবাচক সমাধান আশা করেছে দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর হলে দেশের রপ্তানি খাতের ওপর বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

আমরা ভেবেছিলাম শুল্ক ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকবে। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, সেটা খুবই চিন্তার বিষয়। যেসব কারখানার রপ্তানির ৫০ শতাংশ বা তার বেশি যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর, সেসব প্রতিষ্ঠান বেশি বিপদে পড়বে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় একক বাজার। শুরু থেকেই আমরা সরকারকে বলেছি যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে।

আমরাও নিজেদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তার প্রস্তুতি রেখেছি। কিন্তু শুল্ক নিয়ে আলোচনার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়নি।

ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আদায় হয়েছে। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।

 

মন্তব্য

শিশু কান্না

শেয়ার
শিশু কান্না
দাবি আদায়ে কয়েক দিন ধরেই আন্দোলন করছেন তথ্য আপারা। গতকালও মিছিল করেন তাঁরা। বাড়িতে ছোট সন্তানদের দেখার কেউ না থাকায় সঙ্গে নিয়ে আসেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মেট্রো রেল স্টেশনে বসিয়ে রাখেন তাদের। দীর্ঘ সময় একা থেকে এক শিশু কান্না শুরু করেছে। পাশেই আরেক শিশু ঘুমিয়ে পড়েছে। গতকাল তোলা। ছবি : শেখ হাসান
মন্তব্য
চীনা রাষ্ট্রদূত

বিনিয়োগের অনুকূলে পরিবেশ আনতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বিনিয়োগের অনুকূলে পরিবেশ আনতে হবে

বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও চীনা কম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ আরো অনুকূলে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে চায়না-বাংলাদেশ শিল্প ও সরবরাহ চেইন সহযোগিতা শীর্ষক এক সেমিনারে এ কথা জানান রাষ্ট্রদূত।

ইয়াও ওয়েন জানান, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০টি চীনা কম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যাদের মোট প্রত্যাশিত বিনিয়োগ অঙ্গীকার কয়েক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

তিনি বলেছেন, সুরক্ষার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় ফোরামের আলোচনা হচ্ছে। এতে অন্য কোনো দেশের উদ্বেগের কিছু নেই।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে অবকাঠামো, এনার্জি, বন্দর খাতে বিনিয়োগে চ্যালেঞ্জ আছে।

এসব চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়েও চীনা কম্পানিগুলো বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগে আগ্রহী।

চায়নিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিএইবি) আয়োজিত সেমিনারে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে যেকোনো দেশ বিনিয়োগ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিডা সহযোগিতা করবে। চীনা বিনিয়োগ বাড়াতে সেখানে বিডার একটি অফিস খোলা হবে।

তবে বাংলাদেশে চায়না টাউন নেই। ঢাকায় একটি চায়না টাউন প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এ ছাড়া তিনি বলেন, বাংলাদেশের শক্তিশালী ও দক্ষ শ্রমশক্তিকে, বৈশ্বিকভাবে কাজ করা চীনা কম্পানিগুলোর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে শীর্ষ দেশও চীন। তবে চীনের সঙ্গে আমাদের এনার্জি ও বিদ্যুৎ খাতে দুই দেশের সহযোগিতার আরো সুযোগ আছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন চীনা কম্পানি আইসিটি খাতে সহযোগিতা করছে। সাইবার নিরাপত্তা খাতেও আমরা চীনের সহযোগিতা পাচ্ছি। তবে আমাদের হাই-টেক পার্কে চীনা বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আরো সুযোগ নিতে পারেন।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন চায়নিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের সভাপতি হান কুন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাহেলা আক্তার, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মোকছেদ আলী ও ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম বেপারী।

 

১২ ক্ষেত্রে কাজ করতে সম্মত তিন দেশ

সম্প্রতি কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১২টি ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান। বাংলাদেশে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গতকাল ঢাকায় এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

ইয়াও ওয়েন জানান, ১২টি ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে তিন দেশ। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, শিল্প, পরিবেশ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি সহযোগিতা ইত্যাদি। তিন দেশের সহযোগিতার ভিত্তি হলো পারস্পরিক আস্থা।

এক প্রশ্নের উত্তরে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির পরিপ্রেক্ষিতে চীন সুরক্ষা পেতে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেও সুরক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে। আশা করি, বাংলাদেশ এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা জামায়াতে ইসলামী ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। সে লক্ষ্যেই এই বৈঠক হয়েছে। তবে সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি, কেননা নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণের বিষয়।

মন্তব্য

কলকাতায় চোরাচালানের কাঠি নাড়ছেন

    তাজুল : রাজনীতি মানেই দুর্নীতি—শেষ পর্ব
বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
কলকাতায় চোরাচালানের কাঠি নাড়ছেন

সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের আদি ব্যবসা ছিল চোরাচালান। চোরাচালানের মাধ্যমেই ব্যবসায় হাতিখড়ি হয়েছিল তাঁর। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন এই দুর্নীতিবাজ। সেখান থেকে তিনি আবার তাঁর পুরনো ব্যবসা নতুন করে চালু করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাজুল কলকাতায় অবস্থান করে বাংলাদেশ-ভারতের চোরাচালানের একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কলকাতায় বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন। সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ-ভারত চোরাচালান রুটে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেই শূন্যতা পূরণ করেছেন তাজুল। কলকাতায় চোরাচালানের পুরনো সাথিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন করে শুরু করেছেন তাঁর আদি ব্যবসাটি।
জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর বিপুল সম্পদ আছে। তাঁর ঘনিষ্ঠরা সেই সম্পদগুলো দেখভাল করছেন। তাজুলের আত্মীয়, এপিএস এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। দুবাইয়েও তাজুলের রয়েছে বিপুল সম্পত্তি।
দুবাই ছাড়াও তাঁর সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। তবে তাজুল কৌশলগত কারণে কলকাতায়ই অবস্থান করছেন। তাঁর ছোট ভাই অবস্থান করছেন দুবাইয়ে। তাঁদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। সবকিছুই পরিচালিত হচ্ছে তাজুলের নির্দেশে।

কলকাতা থেকে তাজুল নিজে এখন দুবাই যাচ্ছেন না। কারণ দুবাইয়ে তাঁর যেসব সম্পদ আছে সেগুলো দেখভাল করার জন্য বিশ্বস্ত লোক রয়েছে। কলকাতা থেকে ব্যবসা পরিচালনা তাঁর জন্য সহজ। এখনো বিপুল অবৈধ অর্থের লেনদেনের লোভেই কলকাতায় থিতু হয়েছেন তিনি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দুবাইয়ে শুধু তাজুল ইসলাম নয়, তাঁর স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামেরও বিপুল সম্পদ রয়েছে। দুবাইয়ে কমপক্ষে চারটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক তাজুল। এসব অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁর ছোট ভাই ও এপিএস এগুলো দেখাশোনা করেন। দুবাইয়ে তাজুল ইসলামের আরো কিছু বিনিয়োগ রয়েছে। সেগুলো আছে অন্যদের নামে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তাজুলের একাধিক বাড়ি রয়েছে। সেগুলোও আছে অন্যদের নামে। এসব বাড়ি দেখভাল করেন তাজুল ইসলামের ছেলে ও ভাতিজা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় তাজুল ইসলামের বাড়ি রয়েছে দুটাি। বাড়ি দুটির মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ কোটি টাকা। কানাডার টরন্টোতেও তাজুল ইসলামের বাড়ি আছে। বাড়িটি এক কেয়ারটেকার দেখাশোনা করছেন। দেশে তাজুলের জব্দ হওয়া সম্পদ তাজুলের প্রকৃত সম্পদের তুলনায় সামান্যই। দেশে তাজুলের বেশির ভাগ সম্পদই এখনো অনেকের কাছে অজানা। বিদেশেও তাঁর বহু অবৈধ সম্পদ সম্পর্কে খোঁজ নেয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, বেনামি সম্পদগুলোর ব্যাপারে দুদক কিছু করতে পারছে না। দুদক শুধু সেটুকুই জব্দ করেছে, যেগুলো তাজুলের নিজের বা তাঁর পরিবারের নামে ছিল। যেসব সম্পদ বেনামে রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে কোনো কিছু করার ক্ষেত্রে আইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

তাজুল ও তাঁর স্ত্রীর দেশে বিভিন্ন নামে, এমনকি তাজুলের গাড়িচালকের নামেও জমি, ফ্ল্যাট রয়েছে। শুধু রাজধানীর গুলশান, বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় নয়, ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, খিলগাঁও, মিরপুরেও বিনিয়োগ রয়েছে তাঁর। ঢাকা মহানগরে তাজুল ইসলামের কম হলেও ৪২টি ছোট-বড় ফ্ল্যাট রয়েছে। বিভিন্ন শপিং মলে দোকান রয়েছে কম হলেও ৫০টি। এসব ফ্ল্যাট ও দোকান তাঁর সহকারী, গৃহকর্মী ও গাড়িচালকের নামে কেনা হয়েছে। তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছিলেন আজমল। আজমলের নামে মিরপুরে একটি এবং জোয়ারসাহারায় আরো একটি অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। বর্তমানে আজমল পলাতক রয়েছেন। তবে তাঁর নামে কেনা এই অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এসব অ্যাপার্টমেন্টে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যাঁরা বাড়িতে ভাড়া থাকেন, তাঁরা জানেন, এটি সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বাড়ি। ধানমণ্ডি ও খিলগাঁওয়ে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তাজুল ইসলামের বিশেষ সহকারীর নামে। এ ছাড়া তাজুল ইসলাম যে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার, সেই ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তার নামেও বাড়ি আছে। এগুলোর মূল মালিক তাজুল। তাজুল তাঁদের দিয়ে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন। আবার হেবা দলিলের মাধ্যমে এসব সম্পদের নিজের মালিকানা নিশ্চিত করেছেন। বাড়িগুলো এখন পর্যন্ত জব্দ করা হয়নি। এসব বাড়ির ভাড়া বাবদ যে বিপুল অর্থ আসছে, তা হুন্ডির মাধ্যমে কলকাতায় যাচ্ছে তাজুল ইসলামের কাছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, বাংলাদেশে এখনো তাজুল ইসলামের বিপুল বিনিয়োগ আছে, সেখান থেকে অর্থ তোলা হচ্ছে। কুমিল্লা শহরে তাজুল ইসলামের বেনামে একটি বহুতল মার্কেট রয়েছে, যেখান থেকে প্রতি মাসে অন্তত ১০ লাখ টাকা ভাড়া তোলা হয়। ভাড়ার অর্থ সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছেন। এ কারণে তাজুল কলকাতায় সপরিবারে অবস্থান করছেন নির্ভাবনায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যায়, কলকাতায় আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা অভাব-অনটনে আছেন। তবে তাজুল নিউ টাউনের একটি সুরম্য ফ্ল্যাটে সপরিবারে থাকছেন। বিশাল ফ্ল্যাটে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভাড়ায় থাকেন বলা হলেও কেউ কেউ মনে করছেন, চোরাচালানের চক্রের পক্ষ থেকে তাঁকে সেখানে রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁকে কোনো ভাড়া দিতে হয় না। বাংলাদেশে যেমন রাজকীয়ভাবে তাজুল ইসলাম চলতেন, এখন কলকাতায়ও ঠিক একই রাজকীয় কায়দায় চলছেন। বিলাসবহুল গাড়ি, দামি বাড়ি ছাড়াও তাজুল ইসলামের রয়েছে ব্যক্তিগত কর্মচারী। সম্প্রতি একটি অফিসও নিয়েছেন বলে শোনা গেছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, তাজুল ইসলাম শিগগিরই দুবাই যাবেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পরই তাজুল বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর এপিএস ও ছোট ভাইদুজনই গত বছরের ৩ আগস্ট দুবাই চলে যান। তাঁরা সেখানেই অবস্থান করছেন। অন্যদিকে তাজুল ইসলামের স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলাম গত বছরের ৫ আগস্টের পর কিছুদিন কলকাতায় অবস্থান করেন। তারপর সেখান থেকে দুবাই গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আবার কলকাতায় ফেরেন। সূত্র জানায়, তাজুল ইসলাম তাঁর পুরনো ব্যবসা ঠিকঠাক করে দুবাইয়ে পাড়ি জমাবেন এবং সেখানেই তিনি অবস্থান করবেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের বেশি সময়ে রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিণত করেছেন তাজুল। এই দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুণ্ঠন করেছেন, তার খুব সামান্যই এখন পর্যন্ত নজরে এসেছে এবং দুদক সেগুলো জব্দ করেছে। এখনো তাঁর বিপুল সম্পদ ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পরও তাজুল বহাল তবিয়তে আছেন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ