দেশে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্যফেরত, যারা এইচআইভি ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে দেশে ফিরেছে, কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে বলছে না। এতে চিকিৎসার বাইরে থেকে তিনি নিজের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সংক্রমণঝুঁকিতে ফেলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস ও এসটিডি প্রগ্রামের লাইন ডিরেক্টর ডা. খুরশীদ আলম।
খুরশীদ আলম জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস প্রগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ১২ লাখ ৪১ হাজার ৬২৫ জন মানুষের এইচআইভি পরীক্ষা করে শনাক্ত হয় ৯৪৭ জন। এর মধ্যে ১২৮ জন রোহিঙ্গা। এই সময়ে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ২৩২ জন।
নিবন্ধে বলা হয়, চলতি বছর এইডস আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৪০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০৭, খুলনা বিভাগে ১২৬, রাজশাহী বিভাগে ৯৬, সিলেট বিভাগে ৫৩, ময়মনসিংহ বিভাগে ২১, বরিশালে ৫৮ ও রংপুরে ১৮ জন রয়েছে।
এর বাইরে ১২৮ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর রোগী।
গত এক বছরে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ জনগোষ্ঠী (৩৩ শতাংশ), রোহিঙ্গা (১৩ শতাংশ), বিদেশফেরত প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্য (১৮ শতাংশ), ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী (১১ শতাংশ), নারী যৌনকর্মী (১ শতাংশ), সমকামী (১৪ শতাংশ), পুরুষ যৌনকর্মী (৯
শতাংশ) ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ (১ শতাংশ) রয়েছে। আক্রান্তদের ৭০.৫ শতাংশ পুরুষ, ২৮.৬ শতাংশ নারী ও শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গ।
বিবাহিত ৬৩.৪৬ শতাংশ ও অবিবাহিত ২৯.০৪ শতাংশ।
অন্যান্য ৫. ৯৩ শতাংশ।
বয়সভেদে ২৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে আক্রান্তের হার ৬৬.৭৪ শতাংশ। ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে ১০.৮৮ শতাংশ। শূন্য থেকে ১৮ বছরের ৬ শতাংশ।
দেশে এ পর্যন্ত এইডস শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৭০৮।
মারা গেছে এক হাজার ৮২০ জন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের দেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশি। কারণ সবাইকে শনাক্ত করা যায়নি। কোথায় কে আছে, আমরা জানি না।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, বিগত কয়েক বছরের তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, দেশে এইডসে আক্রান্তদের একটা বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্যফেরত ব্যক্তি বা তাদের পরিবার। শনাক্ত হওয়া মাত্র তাদের চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। তাহলে তাদের পরিবার ও সন্তান নিরাপদে থাকবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমানের ভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (এনডিসি) ডা. আশরাফী আহমেদ, জাতিসংঘের প্রতিনিধি রাজেন্দ্র বোহরা প্রমুখ।