<p>প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম শতভাগ পর্যন্ত বাড়ানো হয় গত ৩০ জুন। এর সাড়ে চার মাস পরই গত রবিবার লিবরা ইনফিউশন লিমিটেডের ছয়টি জেনেরিকের ২৩টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে।</p> <p>সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, প্যাকেজিং সরঞ্জাম ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, গত রবিবার যে ২৩টি ওষুধের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে, ২০১৩ সালের পর এই প্রথম সেই ওষুধগুলোর দাম বাড়ানো হলো। ৫ থেকে ১০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। এই ওষুধগুলো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের তালিকায় রয়েছে। </p> <p>আইয়ুব হোসেন জানান বলেন, ২৪টি ওষুধের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা আবেদন করেছিল লিবরা ইনফিউশন লিমিটেড। পরে মূল্য টেকনিক্যাল সাবকমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মূল কমিটি ২৩টি ওষুধের দাম পুনর্নির্ধারণ করে দিয়েছে।</p> <p>রাজধানীর বিভিন্ন ওষুধের দোকান ঘুরে জানা গেছে, এসব ওষুধের বাইরেও বেড়েছে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকসহ ওষুধের দাম। এর মধ্যে ইভেন্টি ৪০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট ৪০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা হয়েছে। কেফুক্লাভ ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট ৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৫ টাকা। ফিউরোক্ল্যাভ ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট ৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। মোক্সাসিল ৫০০ মিলিগ্রাম ক্যাপসুল সাড়ে ছয় থেকে বেড়ে হয়েছে সাত টাকা।</p> <p>এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে সরকার। বাকি সব ওষুধের দাম কম্পানিগুলোই নির্ধারণ করে।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতো সম্প্রতি অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম বাড়ছে। এতে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবায় পিছিয়ে পড়বে। যেসব ওষুধের দাম কম্পানিগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করে, সেখানে সরকারের নজরদারি বাড়িয়ে ওষুধের বাজারে শৃঙ্খলা আনতে হবে।</p> <p>এদিকে দাম বাড়ার ফলে লিবরা ইনফিউশনের ৫০০ মিলির কলেরা স্যালাইনের দাম আগে ছিল ৬১ টাকা, সেটার দাম বাড়িয়ে ৭২ টাকা করা হয়েছে। ১০০০ মিলির কলেরা ৮৮ টাকার স্যালাইন ৯৮ টাকা করা হয়েছে। ৫০০ মিলির হাপটসম্যান সলিউশন ৭৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮২ টাকা, ৯৫ টাকার ১০০০ মিলির হাটসম্যান ১০৫ টাকা, ৫৫ টাকার ৫০০ মিলির হাটসম্যান প্লাস ৬৬ টাকা, ৭১ টাকার ১০০০ মিলির হাটসম্যান ৮০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া দশমিক ০৯ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইডের দাম ৬৪ থেকে বাড়িয়ে ৬৬ টাকা করা হয়েছে।</p> <p>দেশের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্য বলছে, চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে প্রতিবছর দেশে ৮৬ লাখ মানুষ আর্থিক সমস্যায় পড়ে। ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে ১৬ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া থেকে বিরত থাকে।</p> <p>কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, সব কিছুর দাম বাড়তি, কিন্তু নিম্নবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের আয় বাড়েনি। দফায় দফায় ওষুধের দামও বাড়ে তাহলে স্বাস্থ্য সেবাগ্রহণ সাধারণ মানুষের পক্ষে আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়বে।</p> <p>বাংলাদেশে ওষুধশিল্প সমিতি সূত্র বলছে, ২১৪টি কম্পানি এখন চালু আছে। কম্পানিগুলো দেড় হাজার ধরনের জেনেরিক ওষুধ তৈরি করে, যা প্রায় ৩১ হাজার ব্র্যান্ড নামে বিপণন হচ্ছে। এই ওষুধ তৈরিতে স্থানীয় কম্পানিগুলো বছরে প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল ব্যবহার করে। এ কাঁচামালের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি হয়, যা মূলত ভারত ও চীন থেকে আসে।</p> <p>ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওষুধের দাম পুনর্নির্ধারণ প্রতিবছর হবে, সেটা হলো নিয়ম; কিন্তু আমরা যদি ভোক্তার দিক থেকে দেখি, তাহলে  দেখা যাবে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে; সব মিলিয়ে জনগণের ওপর চাপ বাড়বে।’ তিনি বলেন, সব ওষুধের দাম ফর্মুলার ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে। তাতে ওষুধের বাজারে শৃঙ্খলা আসবে।</p> <p> </p>