ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭
বিশেষ সাক্ষাৎকার

মিয়ানমারের প্রবাসী সরকারের স্বীকৃতি দিন দিন বাড়ছে

  • কোনো রাখঢাক ছাড়াই মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ বৈঠক করেছেন মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী প্রবাসী সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি)’ সঙ্গে। গতকাল মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে ওই বৈঠকে যোগ দেন এনইউজির মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা অং কিয়াও মো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদী হাসান
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
মিয়ানমারের প্রবাসী সরকারের স্বীকৃতি দিন দিন বাড়ছে
অং কিয়াও মো

কালের কণ্ঠ : মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এনইউজির বৈঠকে আপনিও ছিলেন। বৈঠক কেমন হলো?

অং কিয়াও মো : বৈঠক খুব ভালো ও ফলপ্রসূ হয়েছে। মালয়েশিয়া মিয়ানমারের গণতন্ত্রায়নের পক্ষে সহায়ক ভূমিকা নিচ্ছে। তাই আমাদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক করা নিয়ে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখিয়েছেন, মিয়ানমারের গণতন্ত্র, শান্তি ও সাম্যের পক্ষের শক্তিকে সমর্থন করা প্রয়োজন। বৈঠকের পর মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ এনইউজির সঙ্গে আলোচনা করতে আসিয়ান সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন।

 

কালের কণ্ঠ : আসিয়ান সদস্যরা একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না। আসিয়ান সদস্য মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এনইউজির বৈঠক মিয়ানমারকে কী বার্তা দিতে পারে?

অং কিয়াও মো : মালয়েশিয়া অনেক আগে থেকেই এনইউজির সঙ্গে আলোচনা করছে।

অনেক দেশ সাহস করেনি। মালয়েশিয়া এখন প্রকাশ্যেই মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এনইউজির পক্ষে দাঁড়ানোর অর্থ মিয়ানমারের জনগণের পক্ষে দাঁড়ানো। কারণ আমরাই মিয়ানমারের জনগণের বৈধ সরকার ও জনগণের প্রতিনিধি।

 

কালের কণ্ঠ : মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া কী?

অং কিয়াও মো : জান্তা বুঝতে পারছে, চীন ও রাশিয়া ছাড়া কেউই তাদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না। জাতিসংঘ, আসিয়ান—কোথাও তারা নেই। এটি তাদের ব্যর্থতা।

তারা ব্যর্থ হতেই থাকবে। কারণ তারা অবৈধ।

আর তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা করেছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধ, জেনোসাইড। এখন তারা মিয়ানমারের অন্যদের সঙ্গেও তা করে যাচ্ছে। জান্তার হাতে নাগরিকদের রক্ত। ওই রক্তাক্ত হাতে গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্র হাত রাখবে না।

 

কালের কণ্ঠ : এনইউজির বৈশ্বিক স্বীকৃতি কত দূর?

অং কিয়াও মো : আমরা কূটনৈতিক লড়াইয়ে জান্তার চেয়ে অনেক এগিয়ে আছি। বিদেশে মিয়ানমারের অনেক দূতাবাস এখনো এনইউজির নিয়ন্ত্রণে নেই। তবে অস্ট্রেলিয়াসহ আরো কিছু জায়গায় এনইউজির প্রতিনিধির দপ্তর চালু হয়েছে। আমাদের স্বীকৃতি দিন দিন বাড়ছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অস্ত্রের মুখে মিয়ানমারে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া জান্তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। তাদের সম্পর্ক হওয়া উচিত মিয়ানমারের জনগণ ও জনগণের বৈধ প্রতিনিধির সঙ্গে।

 

কালের কণ্ঠ : মিয়ানমারে জান্তার বিরুদ্ধে যারা সশস্ত্র লড়াই করছে, তারা কি এনইউজির নির্দেশে তা করছে?

অং কিয়াও মো : মিয়ানমারে এখন যা হচ্ছে তা নির্দিষ্ট কোনো দলের বিষয় নয়। জনগণ মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বিক্ষোভ, লড়াইয়ের জন্য তাদের কোনো নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ তারা গণতন্ত্র, ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে। মিয়ানমারে যেকোনো বিক্ষোভে বলা হয়, তারা এনইউজিকেই তাদের বৈধ সরকার বলে মনে করে।

 

কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে সংঘর্ষ চলছে। সেখান থেকে আসা গোলায় এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা হতাহত হচ্ছে।

অং কিয়াও মো : মিয়ানমারে এখনো রোহিঙ্গা জেনোসাইড চলছে। সেখানে এখনো ছয় লাখ রোহিঙ্গা আছে। সীমান্তে যা ঘটেছে তা রাখাইনে ও মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতির একটি অংশমাত্র। রাখাইনে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকান আর্মি লড়াই করছে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কোনো নীতি-নৈতিকতা নেই। কে বেঁচে থাকল আর কে মরল তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। নির্বিচারে গোলা ফেলার কারণে তাদের জীবন দিতে হচ্ছে। পরিস্থিতি অনেক উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের উচিত মিয়ানমারের সঙ্গে আরো কঠোর অবস্থান নেওয়া।

 

কালের কণ্ঠ : রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নজরে আছে। আপনি কতটা আশাবাদী?

অং কিয়াও মো : অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে। এটি রাতারাতি হবে না। আমাদের তথ্য সরবরাহ করতে হবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত দায় আছে। রোহিঙ্গারা ন্যায়বিচার না পেলে মিয়ানমারের অন্যদের কোনো আশা নেই। তাই আমাদের আশা রাখতেই হবে।

 

কালের কণ্ঠ : রোহিঙ্গা নিয়ে এনইউজির অবস্থান কী?

অং কিয়াও মো : এনইউজি ২০২১ সালেই রোহিঙ্গা নিয়ে তাদের নীতির কথা জানিয়েছে। শুধু নীতি ঘোষণা করলেই হবে না, বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা আইসিজেতে মামলায় মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছি। আন্তর্জাতিক আদালতকে (আইসিসি) বলেছি, বিচার নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল করতে হবে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

 

কালের কণ্ঠ : আপনি একজন রোহিঙ্গা। আপনাকে এনইউজির অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে কি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার বার্তা দেওয়া হয়েছে?

অং কিয়াও মো : হ্যাঁ। এনইউজিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মন্ত্রী এবং আরো উপদেষ্টা নিয়োগের সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে মিয়ানমারে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হলে অবশ্যই তাতে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত।

 

কালের কণ্ঠ : আপনারা কি স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছেন?

অং কিয়াও মো : বিষয়টি আমার এখতিয়ারে নেই। তবে আমার ধারণা, এনইউজির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করছে।

 

কালের কণ্ঠ : এনইউজির ভবিষ্যৎ কী?

অং কিয়াও মো : আমরা একসময় মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ নেব। সংখ্যালঘুসহ সবার অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। জনগণের সরকার হয়ে উঠব। আমরা ৭০ বছর ধরে একনায়কতন্ত্রের অবসান চেয়ে আসছি। মিয়ানমারের জনগণ আমাদের পাশে আছে। আমরাই তাদের বৈধ প্রতিনিধি।

 

কালের কণ্ঠ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

অং কিয়াও মো : কালের কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শোভাযাত্রা

শেয়ার
শোভাযাত্রা

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে জুলাই কন্যারা রিকশা শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

রাতে ফেসবুক পোস্ট ভোরে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রাতে ফেসবুক পোস্ট ভোরে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবনির্মিত রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইক (২৩) নামের এক শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে।

পুলিশ ও হল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে ভোর সোয়া ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

জগন্নাথ হলের স্টাফ মানিক কুমার দাস বলেন, ভোরবেলা দেখি ভবনের নিচে একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে অন্য স্টাফদের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাঁকে মৃত বলে জানান।

শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর বলেন, রবীন্দ্র ভবনের পাশে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি।

ফুটেজে দেখা গেছে, সঞ্জু ভবনের ছাদ থেকে পড়ে যান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

ওসি আরো বলেন, এ ঘটনায় আপাতত অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এর আগে রাত আড়াইটার দিকে সঞ্জুর নিজ ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে লেখা ছিল, আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি, উল্টো মানুষকে দোষারোপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি, আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি, নিজের দোষ ঢেকে অন্যজনকে দোষ দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমার কারণে কারো কোনো ক্ষতি হলে সেই দায় একান্তই আমার, আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সঞ্জু মানসিকভাবে কিছুটা অস্থিরতায় ভুগছিলেন বলে সহপাঠীরা জানিয়েছে। দুই দিন ধরে সে হলে ছিল না। রবিবার ভোর ৪টার দিকে হলে ফিরে আসে, তবে কিছুক্ষণ পরই ছাদের দিকে চলে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফরা তাকে ভবনের নিচ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন।

মন্তব্য
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিকল্প প্রস্তাব

৭৬ আসনের উচ্চকক্ষ ও সরাসরি ভোট, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
৭৬ আসনের উচ্চকক্ষ ও সরাসরি ভোট, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের স্বার্থে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হতে পারে ৭৬ এবং এসব আসনের সদস্যরা নির্বাচিত হবেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। একই সঙ্গে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে বিরোধ থাকায় সেখানেও বিকল্প প্রস্তাব আনা হয়েছে। সেখানে সংরক্ষিত নারী আসন বাদ দিয়ে বিদ্যমান সংসদীয় আসনের নির্বাচনে দলগুলোকে এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৩তম দিনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। আজ মঙ্গলবার আবারও আলোচনা চলবে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

কমিশন সূত্র জানায়, সংসদের উচ্চকক্ষের নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলা ও প্রতিটি সিটি করপোরেশন এলাকা উচ্চকক্ষের একেকটি একেক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত বা চিহ্নিত হবে এবং প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকা থেকে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন করে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। বর্তমানে দেশে ৬৪টি প্রশাসনিক জেলা ও ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে বিধায় উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হবে ৭৬। জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষের নাম প্রস্তাব করা হয় সিনেট। রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে একমত হলেও উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচনের বিষয়ে মতভেদ দেখা দেয়। যে কারণে নতুন এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।

সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সমাজের বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কী পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন হবে সে ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কমিশন থেকে দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায়ও কিছু কিছু প্রস্তাব এসেছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। 

সংসদে নারীদের জন্য স্থায়ীভাবে ১০০ আসন করার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন উল্লেখ করে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, এ ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত প্রশ্ন এখনো রয়েছে। এ পদ্ধতি নির্ধারণে আমরা এখনো একমতের জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও নারী আসন বৃদ্ধির প্রশ্নে বিএনপি আগের অবস্থানে রয়েছে বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবে বিএনপি একমত। তবে ওই আসনগুলোতে নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতে হতে হবে।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা উচ্চকক্ষের বিষয়ে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা চালুর পক্ষে। অধিকাংশ দল এ বিষয়ে একমত। নারী আসনের বিষয়েও আমরা ১০০ আসনে পিআর পদ্ধতির পক্ষে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করেছে কমিশন। আমরা এর বিরোধী। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হতে হবে। কমিশন এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন বাধ্যবাধকতার কথা বলেছে। আমরা এটি সমর্থন করি। তবে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এ জন্য আরো সময় প্রয়োজন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কমিশনের কর্মকাণ্ড সংগত মনে হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে দলের অভ্যন্তরে ৩০ শতাংশ নারীকে কমিটিতে রাখতে পারছে না, সেখানে ৩০ শতাংশ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সামর্থ্য আছে বলে মনে করি না।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বর্তমান ৬৫ অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত আসন চায় না কমিশন। আমরা বলেছি, সংরক্ষিত আসন ১০০ করতে। আর বর্তমান বাস্তবতায় ৩০ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কঠিন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা বলেছি এবার ৫ শতাংশ দেওয়া যেতে পারে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কমিশন নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল ও ৩৩ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা এই মুহূর্তে অসম্ভব।

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ দল একমত।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, নারীদের সংরক্ষিত আসন দরকার নেই; বরং তাদের নির্বাচিত হয়েই সংসদে আসা উচিত।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নারীদের আসনে সরাসরি নির্বাচন করতে হবে। তিনটি সাধারণ আসন মিলে একটি নারী আসনে ভোট হতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, নারীদের সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারলেই তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।

মন্তব্য
খুলনায় যুবদল নেতা হত্যা

আরো একজন তথ্যদাতা গ্রেপ্তার, কিলিং মিশনের তিনজন এখনো অধরা

খুলনা অফিস
খুলনা অফিস
শেয়ার
আরো একজন তথ্যদাতা গ্রেপ্তার, কিলিং মিশনের তিনজন এখনো অধরা

খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আলাউদ্দিনকে (২২) গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে রবিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

এদিকে সিসিটিভির  ফুটেজ দেখে কিলিং মিশনের যে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে, তাদের কেউ এখনো ধরা পড়েনি।

তবে ওই মামলায় এ পর্যন্ত মোট দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার রাতে প্রথমে গ্রেপ্তার করা সজল শেখ নামের চরমপন্থী সদস্য বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে। আজ মঙ্গলবার  রিমান্ড শেষে তাঁকে আবার আদালতে তোলা হবে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কেএমপির দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানিয়েছেন।

যুবদল নেতা মাহবুবকে শুক্রবার দুপুরে দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ার নিজ বাড়ির সামনে তিন অস্ত্রধারী প্রথমে একাধিক গুলি করে এবং পরে দুই পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।

দৌলতপুর থানার ওসি জানান, ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে আলাউদ্দিনকে রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পশ্চিম মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সজলের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা দুজনই নিহত মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে খুনিরা এসে মাহবুব মোল্লাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করে।

দুটি গুলি তাঁর মাথা ও মুখের ডান পাশে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য দুই পায়ের রগ কেটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে দুর্বৃত্তরা।

কিলিং মিশনের তিন সদস্যকে দ্রুতই গ্রেপ্তর করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে পুলিশ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ