আর তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা করেছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধ, জেনোসাইড। এখন তারা মিয়ানমারের অন্যদের সঙ্গেও তা করে যাচ্ছে। জান্তার হাতে নাগরিকদের রক্ত। ওই রক্তাক্ত হাতে গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্র হাত রাখবে না।
কালের কণ্ঠ : এনইউজির বৈশ্বিক স্বীকৃতি কত দূর?
অং কিয়াও মো : আমরা কূটনৈতিক লড়াইয়ে জান্তার চেয়ে অনেক এগিয়ে আছি। বিদেশে মিয়ানমারের অনেক দূতাবাস এখনো এনইউজির নিয়ন্ত্রণে নেই। তবে অস্ট্রেলিয়াসহ আরো কিছু জায়গায় এনইউজির প্রতিনিধির দপ্তর চালু হয়েছে। আমাদের স্বীকৃতি দিন দিন বাড়ছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অস্ত্রের মুখে মিয়ানমারে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া জান্তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। তাদের সম্পর্ক হওয়া উচিত মিয়ানমারের জনগণ ও জনগণের বৈধ প্রতিনিধির সঙ্গে।
কালের কণ্ঠ : মিয়ানমারে জান্তার বিরুদ্ধে যারা সশস্ত্র লড়াই করছে, তারা কি এনইউজির নির্দেশে তা করছে?
অং কিয়াও মো : মিয়ানমারে এখন যা হচ্ছে তা নির্দিষ্ট কোনো দলের বিষয় নয়। জনগণ মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বিক্ষোভ, লড়াইয়ের জন্য তাদের কোনো নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ তারা গণতন্ত্র, ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে। মিয়ানমারে যেকোনো বিক্ষোভে বলা হয়, তারা এনইউজিকেই তাদের বৈধ সরকার বলে মনে করে।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে সংঘর্ষ চলছে। সেখান থেকে আসা গোলায় এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা হতাহত হচ্ছে।
অং কিয়াও মো : মিয়ানমারে এখনো রোহিঙ্গা জেনোসাইড চলছে। সেখানে এখনো ছয় লাখ রোহিঙ্গা আছে। সীমান্তে যা ঘটেছে তা রাখাইনে ও মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতির একটি অংশমাত্র। রাখাইনে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকান আর্মি লড়াই করছে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কোনো নীতি-নৈতিকতা নেই। কে বেঁচে থাকল আর কে মরল তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। নির্বিচারে গোলা ফেলার কারণে তাদের জীবন দিতে হচ্ছে। পরিস্থিতি অনেক উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের উচিত মিয়ানমারের সঙ্গে আরো কঠোর অবস্থান নেওয়া।
কালের কণ্ঠ : রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নজরে আছে। আপনি কতটা আশাবাদী?
অং কিয়াও মো : অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে। এটি রাতারাতি হবে না। আমাদের তথ্য সরবরাহ করতে হবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত দায় আছে। রোহিঙ্গারা ন্যায়বিচার না পেলে মিয়ানমারের অন্যদের কোনো আশা নেই। তাই আমাদের আশা রাখতেই হবে।
কালের কণ্ঠ : রোহিঙ্গা নিয়ে এনইউজির অবস্থান কী?
অং কিয়াও মো : এনইউজি ২০২১ সালেই রোহিঙ্গা নিয়ে তাদের নীতির কথা জানিয়েছে। শুধু নীতি ঘোষণা করলেই হবে না, বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা আইসিজেতে মামলায় মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছি। আন্তর্জাতিক আদালতকে (আইসিসি) বলেছি, বিচার নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল করতে হবে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : আপনি একজন রোহিঙ্গা। আপনাকে এনইউজির অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে কি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার বার্তা দেওয়া হয়েছে?
অং কিয়াও মো : হ্যাঁ। এনইউজিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মন্ত্রী এবং আরো উপদেষ্টা নিয়োগের সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে মিয়ানমারে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হলে অবশ্যই তাতে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত।
কালের কণ্ঠ : আপনারা কি স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছেন?
অং কিয়াও মো : বিষয়টি আমার এখতিয়ারে নেই। তবে আমার ধারণা, এনইউজির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করছে।
কালের কণ্ঠ : এনইউজির ভবিষ্যৎ কী?
অং কিয়াও মো : আমরা একসময় মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ নেব। সংখ্যালঘুসহ সবার অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। জনগণের সরকার হয়ে উঠব। আমরা ৭০ বছর ধরে একনায়কতন্ত্রের অবসান চেয়ে আসছি। মিয়ানমারের জনগণ আমাদের পাশে আছে। আমরাই তাদের বৈধ প্রতিনিধি।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
অং কিয়াও মো : কালের কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।