<p>ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কম্পানি লিমিটেডের গাজীপুর কলেজগেট শাখা থেকে ২০০৮ সালে একটি জীবন বীমার পলিসি করেছিলেন মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি ছয় মাস অন্তর পাঁচ হাজার ২১০ টাকা করে টানা ১২ বছরে এক লাখ ২৪ হাজার টাকার প্রিমিয়াম জমা দিয়েছেন।</p> <p><img alt="" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print Version Online/print /2021/11.November/02-11-2021/121/Untitled-1.jpg" style="float:left; height:146px; margin:12px; width:200px" />গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে পলিসির মেয়াদ শেষ হলে দেলোয়ার ফারইস্ট ইসলামী ইনস্যুরেন্সের রাজধানীর দিলকুশা কার্যালয়ে যান। কম্পানিটি দেলোয়ারের প্রিমিয়ামের রসিদের সব কাগজ ও দলিলপত্র নিয়ে নেয়। বীমার পাওনা টাকা কবে মিলতে পেতে পারে এ বিষয়ে কম্পানি থেকে দেলোয়ারকে সঠিক কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। প্রায় এক বছর আট মাস ফারইস্টের অফিস ঘুরেও এখনো টাকা পাননি তিনি।</p> <p>গাজীপুর এলাকায় দেড় বছর পলিসির টাকা জমা দেন দেলোয়ার। এরপর ঢাকার একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি হলে পরে দিলকুশা শাখায় তিনি পলিসির অর্থ জমা দেন। করোনার কারণে কম্পানিটির ফান্ডে টাকা নেই বলে দেলোয়ারকে জানানো হয়। দিলকুশা শাখার কর্মকর্তা আকরাম হোসেন দেলোয়ারকে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আসছেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে।</p> <p>আকরাম হোসেনের সঙ্গে কালের কণ্ঠ যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে টাকা দেওয়া বন্ধ ছিল। এ ছাড়া আগের পর্ষদে দুর্নীতি হয়েছে। সরকার থেকে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দেলোয়ারের টাকা আগামী মাস নভেম্বরের মধ্যেই দিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।’</p> <p>এরপর দেলোয়ার ফারইস্ট ইনস্যুরেন্সের একবার পল্টন, একবার দিলকুশা, আরেকবার মতিঝিল শাখায় যান। কিন্তু একেক শাখা থেকে তাঁকে একেক কথা জানানো হয়েছে।</p> <p>দেলোয়ারকে ফারইস্ট থেকে তিন বছরে মোট ৬০ হাজার টাকার বোনাস দেওয়া হয়েছে। বাকি আর এক টাকাও পাননি তিনি। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে প্রিমিয়াম জমা দিয়েছি। এত দিন টাকা দেওয়ার পর ফারইস্ট আমার টাকা দিচ্ছে না। তাহলে এত দিন টাকা কেন দিলাম, কেউ আমার দায়িত্ব নিচ্ছে না।’</p> <p>দেলোয়ার হোসেনের মতো অনেক গ্রাহকের অর্থ দিচ্ছে না ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটির পল্টন, দিলকুশা ও মতিঝিল শাখায় গ্রাহক ভিড় করছে তাঁদের পলিসির টাকা পাওয়ার জন্য। সিলেট থেকে ঢাকায় পল্টনে এসেছেন মুজিব উদ্দিন। কম্পানিটির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও অর্থ পাচ্ছেন না। আইডিআরএর একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাঁরা কিছু করতে পারেনি বলে জানান তিনি।</p> <p>ফারইস্ট ইসলামী ইনস্যুরেন্সের একটি সূত্র কালের কণ্ঠকে জানান, বর্তমানে এই কম্পানির কাছে গ্রাহকের প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা দেনা আছে। কম্পানির জমিজমা, এফডিআর আছে। আগের পর্ষদের ঝামেলার জন্য বর্তমান কমিটি ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না।</p> <p>বীমা দাবি সম্পর্কে মোবাইল ফোনে ফারইস্টের বর্তমান চেয়ারম্যান রহমত উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগের পরিচালনা পর্ষদে দুর্নীতি হয়েছে। আইডিআরএর যথাযথ তদারকি ছিল না। আইডিআরএর সময়মতো রিপোর্ট করলে এ অবস্থা হতো না।’ তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে জায়গাজমি বিক্রি করতেও পারছি না। এ ক্ষেত্রে আইডিআরএর সহায়তা নেই। প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে অর্থ ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘অসংখ্য দুর্নীতি হয়েছে এই কম্পানিতে, ২০১০ সাল থেকে কম্পানির অবস্থা খারাপ হয়েছে। আমি তো দায়িত্ব নিয়েই সব সমাধান করতে পারব না এই মুহূর্তে। এটার জন্য আইডিআরএর ব্যর্থতা আছে।’</p> <p>আইডিআরএর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ফারইস্টের নতুন কমিটি গঠন করা হলেও তাঁরা যথাযথ কাজ করতে পারছে না। কম্পানির পরিচালনা পর্ষদ তাদের মতো কাজ করছে। চলতি বছর অক্টোবরে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো অভিযোগের ভিত্তিতে বীমা আইন-২০২০-এর ৪৮ ধারা অনুসারে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত পরিচালনার জন্য কমিটি গঠন করা হয়।</p> <p>কমিটি ফারইস্ট লাইফের সাবেক চেয়ারম্যানের অবৈধ মানি লন্ডারিং এবং কম্পানির প্রশাসনের দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা যাচাই করবে। সাবেক চেয়ারম্যান ভূমি কেনাবেচায় প্রতারণামূলকভাবে বিনিয়োগ দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ, কম্পানির ফিক্সড ডিপোজিট থেকে অর্থ আত্মসাৎ, জালজালিয়াতির মাধ্যমে বিনিয়োগ করে কম্পানির অর্থ আত্মসাৎ করে থাকলে তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করবে কমিটি। এ ছাড়া অন্য যেকোনো ধরনের অনিয়ম খুঁজে পেলেও তা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করার কথা ছিল কমিটির।</p>