<p>এবার ডেঙ্গুর গতি-প্রকৃতি আগের চেয়ে বিপজ্জনক। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের অনেকেরই শারীরিক পরিস্থিতির হঠাৎ করে অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে শিশু ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এমনকি ঘটছে মৃত্যুও। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন এমন ভীতিকর তথ্য।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ডেঙ্গুর মিউটেশনও আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে। ডেঙ্গুর নতুন কোনো ভেরিয়েন্টও হতে পারে। ফলে সবার সাবধানে থাকা উচিত।</p> <p>এই মৌসুমে ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত কতজন শিশু মারা গেছে সে তথ্য এখনো নথিভুক্ত করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেটি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।</p> <p>ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সফি আহম্মেদ মোয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিশুরা এখন খুব বেশি ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে আছে। প্রতিদিনই আমার এখানে ১০-১২ জন করে ভর্তি করছি। এ ছাড়া রোগী আসছে আরো বেশি। যাদের অবস্থা বেশি খারাপ, শুধু সেই শিশুদের আমরা ভর্তি করছি। এখনো এ হাসপাতালে আইসিইউ, এইচডিইউসহ বিভিন্ন ইউনিটে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩৬ শিশু ভর্তি রয়েছে। শুধু জুলাইয়ে এখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯৮টি শিশু ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া জুনেও ডেঙ্গু আক্রান্ত এক শিশুর মৃত্যু হয়। এই চার শিশুর মধ্যে একজন ডেঙ্গুর সঙ্গে করোনায়ও আক্রান্ত ছিল।’</p> <p>এদিকে করোনা মহামারির মধ্যে দেশে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। গতকাল সোমবার সকাল থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরো ২৮৭ জন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ২৭৯ জন। ঢাকার বাইরে নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা আটজন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের ডেঙ্গু বিষয়ক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।</p> <p>বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯৭৮ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে ৯৪০ জন। বাকি ৩৮ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ১৮২ জন এবং এই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছে দুই হাজার ২০০ জন। এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এডিস মশা নিধনে তাঁদের সব কার্যক্রমই চলছে। তবে সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাঁদের দাবি, সিটি করপোরেশন থেকে নিয়মিত ছিটানো হচ্ছে মশার ওষুধ। লার্ভা নিধনে মাঠে রয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।</p> <p>গতকাল থেকে এডিসের লার্ভার উৎস নিধনে নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণকক্ষে মোট ৩৪টি উৎসর তথ্য এসেছে। এর মধ্যে ২৪টি সমাধান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল সকালে সায়েদাবাদ বাসটার্মিনাল ভবনে পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে নগরভবনে ফেরার পর হঠাৎ মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নিয়ন্ত্রণকক্ষে  ঢোকেন। সেখানে তিনি নিয়ন্ত্রণকক্ষের অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ নেন এবং তালিকা ধরে ধরে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ফোন করে লার্ভার উৎসস্থলে অভিযান পরিচালনা করার নির্দেশনা দেন। এদিকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ সিটির ১১ ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে গতকাল ২৮টি নির্মাণাধীন ভবন ও বাসাবাড়িকে মোট তিন লাখ ৮৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।</p> <p>এদিকে এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। গতকাল সকালে মিরপুর-১ এলাকায় মশক নিধনে চিরুনি অভিযান ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। এ সময় মেয়র বলেন, ‘কারো একার পক্ষে এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রত্যেককে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’ এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে উত্তরের ১০টি অঞ্চলে চলছে ১০ দিনের মশক নিধনে চিরুনি অভিযান। গতকাল এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তার রোধে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২৭টি মামলায় মোট চার লাখ ৭৩ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ডিএনসিসি।</p> <p> </p>