<p>সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা। রাজধানীর মানিকনগর বিশ্বরোড ও টিটিপাড়া মোড়ের মাঝামাঝি মূল সড়কে দেখা গেল হাত দেড়েক দূরে দূরে একটি করে ইটের টুকরা। পাশে ফুটপাতে বসে শ দেড়েক নারী-পুরুষ। জানতে চাইলে আমেনা খাতুন নামের একজন বলেন, ‘আগের দিন এখানে টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়েছিল, তাই আজ পণ্য নিতে এসেছি আমরা। রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয়, তাই ইট দিয়ে সিরিয়ালে জায়গা রেখেছে সবাই।’</p> <p>জানা যায়, সোমবার আসা লোকজনদের অনেকেই আগের দিনও এসেছিলেন। কিন্তু লাইনের পেছনের দিকে থাকায় তারা পণ্য পায়নি। তাই আবারও এসেছে। এমনই একজন মো. আসাদ। তিনি বলেন, ‘রবিবার লাইনের পেছনে থাকায় পণ্য কিনতে পারিনি। তাই আজ এসেছি।’ আসাদ আগে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। এখন কাজ বন্ধ থাকায় সংসার চলছে কষ্টে। টিসিবির পণ্য পেলে অনেকটাই সাশ্রয় হয়।</p> <p>কঠোর লকডাউনের পর থেকেই ট্রাক সেলের সম্ভাব্য স্পটগুলোতে সকাল থেকেই ভিড় লেগে থাকে। গত ৫ জুলাই থেকে সুলভ মূল্যে পণ্য দিচ্ছে টিসিবি। ডিলাররা জানিয়েছেন, প্রথম দিকে যে পরিমাণ ভিড় হতো এখন তার দ্বিগুণ। আগে এত মানুষকে টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে কখনো দেখেননি বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। মানিকনগরের মতো এমন লাইন দেখা গেছে শহরের মুগদা হাসপাতালের সামনে, গ্রিন রোড ল্যাবএইড হাসপাতালের কাছে, মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা ইউটার্নের নিচে, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায়। এ ছাড়া মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়ও সকাল থেকে মানুষকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব এলাকায় কোথাও ট্রাক এসেছে সকাল পৌনে ১১টা, কোথাও ১১টায় আবার কোথাও তারও পর।</p> <p>তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ট্রাকগুলো প্রতিদিন একই জায়গায় থাকে না। ঢাকা শহরে ১৫০টির বেশি স্পট থাকলেও বর্তমানে ট্রাক সেল হয় ৭৫টি। প্রতিদিন ট্রাক সেলের স্পট টিসিবির ওয়েবসাইটে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে জানানো হয়। তবে সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারে না। ফলে আগের দিন যেখানে বিক্রি হয় সেই স্পটে গিয়ে অপেক্ষা করলেও সব সময় পণ্য পায় না তারা। ঢাকা শহরের পাশাপাশি ঢাকার জেলা ও উপজেলাগুলোতে আরো ৪৭টি ট্রাক রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও জেলা-উপজেলা মিলিয়ে দেশব্যাপী ৪৫০টি ট্রাকে পণ্য বিতরণ করছে টিসিবি। এসব ট্রাকের প্রতিটিতে এক হাজার লিটার তেল—জনপ্রতি সর্বোচ্চ পাঁচ লিটার, ৭০০ কেজি চিনি—জনপ্রতি সর্বোচ্চ দুই কেজি ও ৪০০ কেজি মসুর ডাল দেওয়া হয়—জনপ্রতি পায় সর্বোচ্চ দুই কেজি। বাজারে তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪৫ থেকে ১৪৯ টাকা হলেও টিসিবির ট্রাকে ১০০ টাকা, চিনি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা হলেও টিসিবির ট্রাকে ৫৫ টাকা ও মসুর ডাল বাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর টিসিবির ট্রাকে ৫৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।</p> <p>জানাতে চাইলে টিসিবির ডিলার মদিনা ট্রেডার্সের মালিক মো. জসিম বলেন, ‘এর আগে কখনো এত মানুষকে একসঙ্গে লাইনে দাঁড়াতে দেখি নাই। যে পরিমাণ মানুষ লাইনে দাঁড়ায় আর ট্রাকে যে পরিমাণ পণ্য থাকে, তা দিয়ে অর্ধেক মানুষকেও দেওয়া যায় না। পণ্য বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ালে ভালো হয়।’</p> <p>সকাল সাড়ে ১০টায় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক নারী-পুরুষ টিসিবির ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছে। পণ্য নিয়ে ট্রাক পৌঁছায় পৌনে ১১টার দিকে। তবে ট্রাকটি দাঁড়ায় বছিলা তিন রাস্তার মোড়ের দিকে ঢাকা উত্তর সিটির গণশৌচাগার অংশের উল্টো দিকের সড়কে। ট্রাকের পেছন পেছন ছুটে গিয়ে লাইনে দাঁড়ায় অপেক্ষমাণ লোকজন। ভিড় আর চাপাচাপিতে লাইন না হয়ে মানুষের জমাটবদ্ধ অবস্থা দেখা গেছে। বাধ্য হয়েই প্রথম দাঁড়ানোর স্থান থেকে কিছুটা এগিয়ে নতুন জায়গায় দাঁড় করানো হয় ট্রাক। একপর্যায়ে কিছুটা শৃঙ্খলা আসে। নারী ও পুরুষের পৃথক দুটি লাইন তৈরি হয় ট্রাকের পেছনে।</p> <p>প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকের পেছনেই এমন লাইন দেখা যায়। ডিলার প্রতিনিধিরা বারবার লাইনে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেও শেষ পর্যন্ত কাজ হয় না। হতাশ হয়ে বিক্রিতে মনোযোগ দেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা। এসব লাইনে শুধু যে নিম্ন আয়ের মানুষ থাকে তা নয়। মাধ্যবিত্তদেরও দেখা যায়। তবে এখন লাইনে দাঁড়ানো ৯০ শতাংশই নিম্নবিত্ত।</p> <p>শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরেও টিসিবির পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইন হচ্ছে বলে জানা গেছে। টিসিবির পণ্য কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ট্রাক ঘিরে ভিড় করছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার বুশরা ট্রেডার্সের বিক্রেতা মো. রুবেল বলেন, ‘গত রমজানেও পণ্য নিয়ে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বিক্রি শেষ করতে। কিন্তু এখন মানুষের ভিড় সামলানোই কষ্টকর হয়ে যায়। পণ্যও নিমেষে শেষ হয়ে যায়। আমরা চাই লাইনে দাঁড়ানো সবার হাতে পণ্য পৌঁছাতে; কিন্তু সব সময় পারা যায় না। তাই পণ্য বাড়িয়ে দিলে ভালো হতো।’</p> <p>টিসিবির সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগে ১৮ জুলাই পর্যন্ত পণ্য বিক্রি করা হবে। এরপর তিন-চার দিন বিরতিতে আবার শুরু হয়ে ২৯ জুলাই পর্যন্ত চলবে।</p>