সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা। রাজধানীর মানিকনগর বিশ্বরোড ও টিটিপাড়া মোড়ের মাঝামাঝি মূল সড়কে দেখা গেল হাত দেড়েক দূরে দূরে একটি করে ইটের টুকরা। পাশে ফুটপাতে বসে শ দেড়েক নারী-পুরুষ। জানতে চাইলে আমেনা খাতুন নামের একজন বলেন, ‘আগের দিন এখানে টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়েছিল, তাই আজ পণ্য নিতে এসেছি আমরা।
দীর্ঘ হচ্ছে টিসিবির লাইন
আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে খালি হাতে ফিরছে অনেকে
রোকন মাহমুদ

জানা যায়, সোমবার আসা লোকজনদের অনেকেই আগের দিনও এসেছিলেন। কিন্তু লাইনের পেছনের দিকে থাকায় তারা পণ্য পায়নি। তাই আবারও এসেছে।
কঠোর লকডাউনের পর থেকেই ট্রাক সেলের সম্ভাব্য স্পটগুলোতে সকাল থেকেই ভিড় লেগে থাকে। গত ৫ জুলাই থেকে সুলভ মূল্যে পণ্য দিচ্ছে টিসিবি। ডিলাররা জানিয়েছেন, প্রথম দিকে যে পরিমাণ ভিড় হতো এখন তার দ্বিগুণ।
তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ট্রাকগুলো প্রতিদিন একই জায়গায় থাকে না। ঢাকা শহরে ১৫০টির বেশি স্পট থাকলেও বর্তমানে ট্রাক সেল হয় ৭৫টি। প্রতিদিন ট্রাক সেলের স্পট টিসিবির ওয়েবসাইটে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে জানানো হয়। তবে সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারে না। ফলে আগের দিন যেখানে বিক্রি হয় সেই স্পটে গিয়ে অপেক্ষা করলেও সব সময় পণ্য পায় না তারা। ঢাকা শহরের পাশাপাশি ঢাকার জেলা ও উপজেলাগুলোতে আরো ৪৭টি ট্রাক রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও জেলা-উপজেলা মিলিয়ে দেশব্যাপী ৪৫০টি ট্রাকে পণ্য বিতরণ করছে টিসিবি। এসব ট্রাকের প্রতিটিতে এক হাজার লিটার তেল—জনপ্রতি সর্বোচ্চ পাঁচ লিটার, ৭০০ কেজি চিনি—জনপ্রতি সর্বোচ্চ দুই কেজি ও ৪০০ কেজি মসুর ডাল দেওয়া হয়—জনপ্রতি পায় সর্বোচ্চ দুই কেজি। বাজারে তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪৫ থেকে ১৪৯ টাকা হলেও টিসিবির ট্রাকে ১০০ টাকা, চিনি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা হলেও টিসিবির ট্রাকে ৫৫ টাকা ও মসুর ডাল বাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর টিসিবির ট্রাকে ৫৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
জানাতে চাইলে টিসিবির ডিলার মদিনা ট্রেডার্সের মালিক মো. জসিম বলেন, ‘এর আগে কখনো এত মানুষকে একসঙ্গে লাইনে দাঁড়াতে দেখি নাই। যে পরিমাণ মানুষ লাইনে দাঁড়ায় আর ট্রাকে যে পরিমাণ পণ্য থাকে, তা দিয়ে অর্ধেক মানুষকেও দেওয়া যায় না। পণ্য বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ালে ভালো হয়।’
সকাল সাড়ে ১০টায় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক নারী-পুরুষ টিসিবির ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছে। পণ্য নিয়ে ট্রাক পৌঁছায় পৌনে ১১টার দিকে। তবে ট্রাকটি দাঁড়ায় বছিলা তিন রাস্তার মোড়ের দিকে ঢাকা উত্তর সিটির গণশৌচাগার অংশের উল্টো দিকের সড়কে। ট্রাকের পেছন পেছন ছুটে গিয়ে লাইনে দাঁড়ায় অপেক্ষমাণ লোকজন। ভিড় আর চাপাচাপিতে লাইন না হয়ে মানুষের জমাটবদ্ধ অবস্থা দেখা গেছে। বাধ্য হয়েই প্রথম দাঁড়ানোর স্থান থেকে কিছুটা এগিয়ে নতুন জায়গায় দাঁড় করানো হয় ট্রাক। একপর্যায়ে কিছুটা শৃঙ্খলা আসে। নারী ও পুরুষের পৃথক দুটি লাইন তৈরি হয় ট্রাকের পেছনে।
প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকের পেছনেই এমন লাইন দেখা যায়। ডিলার প্রতিনিধিরা বারবার লাইনে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেও শেষ পর্যন্ত কাজ হয় না। হতাশ হয়ে বিক্রিতে মনোযোগ দেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা। এসব লাইনে শুধু যে নিম্ন আয়ের মানুষ থাকে তা নয়। মাধ্যবিত্তদেরও দেখা যায়। তবে এখন লাইনে দাঁড়ানো ৯০ শতাংশই নিম্নবিত্ত।
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরেও টিসিবির পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইন হচ্ছে বলে জানা গেছে। টিসিবির পণ্য কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ট্রাক ঘিরে ভিড় করছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার বুশরা ট্রেডার্সের বিক্রেতা মো. রুবেল বলেন, ‘গত রমজানেও পণ্য নিয়ে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বিক্রি শেষ করতে। কিন্তু এখন মানুষের ভিড় সামলানোই কষ্টকর হয়ে যায়। পণ্যও নিমেষে শেষ হয়ে যায়। আমরা চাই লাইনে দাঁড়ানো সবার হাতে পণ্য পৌঁছাতে; কিন্তু সব সময় পারা যায় না। তাই পণ্য বাড়িয়ে দিলে ভালো হতো।’
টিসিবির সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগে ১৮ জুলাই পর্যন্ত পণ্য বিক্রি করা হবে। এরপর তিন-চার দিন বিরতিতে আবার শুরু হয়ে ২৯ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’