<p>দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক দিন ধরেই মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তবে সামনে এই বৃষ্টিপাত আরো বাড়বে। এমনকি উজানেও বৃষ্টিপাত বাড়বে। এতে পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে দেশের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকেছে। সামনে বৃষ্টিপাত বাড়লে তা মধ্য জুলাই নাগাদ বন্যায় রূপ নিতে পারে।</p> <p>জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর বর্তমানে মৌসুমি বায়ু মোটামুটিভাবে সক্রিয়, তবে সামনে তা পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারে। এতে বৃষ্টিপাতের এলাকা বাড়বে। উজানেও বৃষ্টি বাড়বে। হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশের নদ-নদীর পানি বাড়বে।’</p> <p>গতকাল সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।</p> <p>আগামী তিন দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে কুমিল্লায়, ১০৩ মিলিমিটার।</p> <p>বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল বলেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল। তবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি হ্রাস পাচ্ছে। ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ৬০টির বেড়েছে, ৩৯টির কমেছে আর একটি স্টেশনের পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।</p> <p>বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তত্সংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশের স্থানগুলোয় ভারিবৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে এই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। </p> <p>কুড়িগ্রামে তিস্তা ও ধরলার পানি বিপত্সীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। ফলে জেলা সদর, নাগেশ্বরী, উলিপুর, চিলমারী, রাজারহাটসহ কয়েকটি উপজেলার নদ-নদীর অববাহিকার প্রায় ৬০টি চরের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি প্রায় ১০ হাজার মানুষ। অনেকেই রাস্তা বা বাঁধের ওপর আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। এসব এলাকায় পাট, বীজতলা, সবজিসহ ফসলের ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক। </p> <p>পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ৩০টি পয়েন্টে নদীভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব এলাকায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সদর উপজেলার বাংটুর ঘাট, মোগলবাসা, জগমোহনের চরসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কের ওপর পানি ওঠায় যাত্রাপুরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।</p> <p>যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধে (হার্ড পয়েন্টে) ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ১.২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে জেলা সদর, কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে এসব এলাকার বীজতলা, সবজিবাগান, পাট ও তিলক্ষেত।</p> <p>ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদীর তীব্র স্রোতে গাইবান্ধার ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালা ও আবাদি জমি। ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা, ভুষিরভিটা, রতনপুর, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী, গলনা ও জিয়াডাঙ্গা গ্রামে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে।</p> <p>সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, সাঘাটা ও ভরতখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়ও তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মুন্সিরহাট, গোবিন্দি, হাটবাড়ী গ্রামে নদীভাঙনে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া মুন্সিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, বাজার, পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, গাছপালাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।</p> <p>গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা থেকে ভুষিরভিটা পর্যন্ত ৬৫০ মিটার এলাকা ভাঙন রোধের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। এরই মধ্যে টেন্ডারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ওই এলাকায় বালুভর্তি ৬৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এ ছাড়া সাঘাটায় ভাঙনকবলিত এলাকায় ঠিকাদারের মাধ্যমে ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।</p> <p>এদিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর কলসপাড় ইউনিয়নের পূর্ব সূর্যনগর গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে আট বছর বয়সী শিশু লামিয়া সহপাঠীদের সঙ্গে যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে যায়। পরে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।</p> <p>[প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়েছেন জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা।]</p>