অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের নিয়ম এখনো বহাল। তবে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খুলে দেওয়ায় কর্মস্থলমুখী যাত্রীর চাপ কিভাবে সামাল দেওয়া হবে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
করোনার বিধি-নিষেধ যত ঢিলেঢালা হচ্ছে, ততই ভোগান্তিতে পড়ছে রাজধানীতে গণপরিবহন ব্যবহারকারীরা। দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন মাত্রার বিধি-নিষেধ (লকডাউন) জারি করে আসছে সরকার। এর মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিধি-নিষেধের পরিধি কমছে।
গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন পথে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাস রুটগুলোর মাঝপথের যাত্রীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে। বাস ছাড়ার মূল স্ট্যান্ড থেকেই বাসগুলো পুরোপুরি ভরে যাচ্ছে। এর পরের বেশির ভাগ স্ট্যান্ড থেকে যাত্রীদের বাসের ‘বন্ধ দরজা’ দেখতে হচ্ছে। বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নারী যাত্রীদের। রাজধানীর সদরঘাট থেকে গাজীপুর, টঙ্গী, মিরপুর ও উত্তরার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বাসগুলো ফুলবাড়িয়ায় এসেই যাত্রী বোঝাই হয়ে যায়। পল্টন, কাকরাইল বা শান্তিনগর থেকে যাত্রীরা আর বাসে উঠতে পারছে না। প্রায় একই ছবি ঢাকার অন্য পথেও। আজিমপুর থেকে যেসব বাস উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর ও ধামরাই যাচ্ছে, সেসব বাসের বেশির ভাগ আসনই কলাবাগানের আগে যাত্রীতে ভরে যায়। পরের স্ট্যান্ডগুলোতে বাসে ওঠার জন্য যাত্রীদের বাসের পর বাস অপেক্ষা করতে হয়। নিরুপায় হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেপে বাড়তি ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে।
মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী শিখর পরিবহনের হেল্পার সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘অফিস সময়ে যাত্রীরাই জোর করে বাসে উঠে যায়। এতে সিটে থাকা যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে চায় না। অনেক সময় পুলিশ সার্জেন্ট জরিমানা করেন। এ কারণে অর্ধেক যাত্রী নিয়েই চলি, ঝামেলা কম।’ তিনি বলেন, ‘কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও তালতলায় অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে থাকে, তখন কিছু করার থাকে না।’
কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী মেগান আরেং নিয়মিত মতিঝিলে অফিস করেন। গত মাসের শুরুর দিক পর্যন্ত অর্ধেক যাত্রীর বাসে উঠতে তেমন সমস্যা হতো না। দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যেতেন গন্তব্যে। এখন সেটা চূড়ান্ত ভোগান্তিতে রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, আড়াই ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হয়েও ঠিক সময়ে গন্তব্য যেতে কষ্ট হচ্ছে। একদিকে যানজট বেড়েছে, অন্যদিকে বাসে উঠতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। যেদিন বাসে ওঠা সম্ভব হয় না, সেদিন কয়েক শ টাকা বাড়তি খরচ করে অফিসে পৌঁছতে হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে বাসের অপেক্ষায় আধাঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ আদিল। তিনি বলেন, ‘এখনো বাসে উঠতে পারলাম না। হয় বাসের দরজা বন্ধ, না হয় ভেতরে অনেক যাত্রী দাঁড়ানো আছে। সেসব বাসে আমার উঠলেও দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। বাসওয়ালারা পরের স্টপেজের জন্য আসন খালিই রাখে না।’
সদরঘাট থেকে বিশ্বরোডগামী ভিক্টর পরিবহনের হেলপার রুহুল মিয়া বলেন, ‘যাত্রী যা পাই, সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিই। কয়েকজন দাঁড়িয়ে গেলে, পরের স্টেশনে যাত্রী নামলে দাঁড়ানো যাত্রীরা বসতে পারে।’
ঢাকা সিটি কলেজের সামনে থেকে গতকাল ভিআইপি-২৭ বাসে ওঠা হাফিজ মিয়া বলেন, ‘আজিমপুর থেকে উঠলে যে ভাড়া, সিটি কলেজ, কলাবাগান বা আসাদ গেট থেকে উঠলেও একই ভাড়া দিতে হয়। অথচ কলাবাগানের পর আর বাসেই ওঠা যায় না। উঠলেও মহাখালী পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।’
লকডাউন সম্পর্কিত কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাঠ প্রশাসন) শেখ রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। ঢাকার মধ্যে বাসে চলাচলে সমস্যা তৈরি হলে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাত্র তো সরকারি অফিস পুরোপুরি খোলার সিদ্ধান্ত হলো। কী ধরনের সমস্যা হয় দেখা যাক, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের স্টকে আর কোনো বাস নাই। যা ছিল সবই সড়কে চলছে। তাই আমাদের পক্ষে আর বাস বাড়ানো সম্ভব না। যাত্রীরা তো ভোগান্তিতে পড়ছেই, বিশেষ করে অফিস টাইমে। অনেক যাত্রী রাস্তা আটকে রেখে বাসে জোর করে উঠতে চায়। তারাও বা কী করবে। গতকাল এ বিষয়ে সড়কের সচিব বরাবর একটি চিঠি দিয়েছি। আমরা তাদের বলছি যত আসন তত যাত্রীতে বাস ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি ও ৬০ শতাংশ ভাড়া দুটিই কমবে।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘আপাতত যত আসন তত যাত্রীর সুযোগ নেই। তা ছাড়া এখন করোনা পরিস্থিতিও ভালো না। বর্তমান নির্দেশনার আরো এক মাস মেয়াদ শেষে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এখন এই অবস্থা মেনেই চলতে হবে। রাতারাতি অতিরিক্ত গাড়ি নামানো সম্ভব না।’