ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭
বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস আজ

শিশুশ্রম নিরসনে অবহেলা অর্থনীতিতে ধাক্কার শঙ্কা

এম সায়েম টিপু
এম সায়েম টিপু
শেয়ার
শিশুশ্রম নিরসনে অবহেলা অর্থনীতিতে ধাক্কার শঙ্কা
ঢাকার কামরাঙ্গীর চর এলাকার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নাঈম (১৫)। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তার হেসেখেলে দিন কাটানোর কথা। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পরিবার বিপদে পড়ায় তাকে কাজ করতে হচ্ছে খেলনা বানানোর কারখানায়। মেশিনে সিলভার দিয়ে ছোট হাঁড়ি-পাতিল বানানো ও পলিশ করা তার দায়িত্ব। ঝুঁকির হলেও তা করতে হচ্ছে শিশু নাঈমকে। গতকাল কামরাঙ্গীর চরে। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

নানা সূচকে দেশের অর্থনীতি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসা পেলেও শিশুশ্রম নিরসনে ধীরগতির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্প হাতে নিলেও এখনো এর কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে জাতিসংঘ ২০২১ সালকে ‘আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম নিরসন বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করলেও বাংলাদেশে তা বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি নানা চাপে পড়তে হতে পারে দেশকে।

জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে সরকার। ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি খাত শিশুশ্রমমুক্ত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে; এরই মধ্যে আটটি খাত থেকে শিশুশ্রম নিরসন করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে এক লাখ শিশুর শিশুশ্রম নিরসন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প শিগগিরই শুরু হবে বলে তিনি আশা করেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৩ সালের জরিপে দেখা যায়, শিশুশ্রমে নিযুক্ত শিশুর সংখ্যা ১৩ লাখ। চলতি বছরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্যমাত্র এক লাখ শিশুকে শিশুশ্রমমুক্ত করা। ফলে নির্ধারিত সময়ে এই বিশালসংখ্যক শিশুকে শ্রম নিরসন কঠিন হয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপের কথা উল্লেখ করে পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির কালের কণ্ঠকে বলেন, এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শ্রম আইন সংশোধনের ৯ দফা সুপারিশ করেছে, যা আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ এসেছে।

  এতেও শিশুশ্রম নিরসনে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

মোহাম্মদ নাসির বলেন, এর আগে রপ্তানি খাতের কারখানায় ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম দূরীকরণের জন্য বলা হয়।  কিন্তু সম্প্রতি তারা শুধু রপ্তানি খাত নয়, কৃষি, বনজ, মৎস্য এমনকি গৃহকর্মী খাতসহ সব ধরনের শিল্প এবং সেবা খাতের শিশুশ্রম বন্ধের পরামর্শ দিয়েছে।

শিশুশ্রম বিশেষজ্ঞ এডুকো বাংলাদেশের ‘অধিকার’ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আফজাল কবির খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০১৯ সালে জাতিসংঘ ২০২১ সালকে ‘আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম নিরসন বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা প্রায় কঠিন। সরকারের একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, এ জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া সামাজিক আন্দোলন তৈরি করতে হবে আন্তরিকভাবে।

করোনার প্রভাবে দেশে শিশু শ্রমিক বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি প্রকল্পে ৩০০ শিশু নিয়ে কাজ করলেও সেখানে প্রায় শতাধিক শিশু আর আসে না। করোনায় কাজের উৎস কমে যাওয়ায় শিশুরা কম মজুরিতে এসব কাজে ঢুকে পড়ছে।

আজ বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস

আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস’। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউনিসেফসহ বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা যৌথভাবে দিবসটি উদযাপন করছে।

দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষের আহবান, শিশুশ্রমের অবসান’। ২০১৯ সালে জাতিসংঘ ২০২১ সালকে ‘আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম নিরসন বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করে। আইএলও ১৯৯২ সালে প্রথম শিশুশ্রমের জন্য প্রতিরোধ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক ২০০২ সালের ১২ জুন থেকে আইএলও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবছর দিবসটি ‘শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইএলওর কনভেনশন শিশুশ্রম নিরসনে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে। শিশুশ্রম নিরসনের চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণে এরই মধ্যে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। মহামারিকে পরাজিত করে সবার সহযোগিতায় এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে আমরা সফল হবই।’ 

দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। শ্রম মন্ত্রণালয়, আইএলও ঢাকা অফিস, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আলোচনা অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

ছয়টি খাত ‘শিশুশ্রমমুক্ত’ ঘোষণা

দেশের রেশম, ট্যানারি, সিরামিক, গ্লাস, জাহাজ প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রপ্তানিমুখী চামড়াজাতদ্রব্য ও পাদুকা শিল্পকে ‘শিশুশ্রমমুক্ত’ ঘোষণা করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার শ্রম ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।

মহামারির কারণে অতিরিক্ত ৯০ লাখ শিশু ঝুঁকির মুখে : আইএলও

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ঢাকা অফিস গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কভিড-১৯ মহামারির কারণে অতিরিক্ত ৯০ লাখ শিশু ঝুঁকির মুখে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও ইউনিসেফ। এতে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ১৬ কোটিতে পৌঁছেছে; যা গত চার বছরে বেড়েছে ৮৪ লাখ। বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবসকে সামনে রেখে প্রকাশিত ‘চাইল্ড লেবার : গ্লোবাল এস্টিমেটস ২০২০, ট্রেন্ডস অ্যান্ড দ্য রোড ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

আইএলওর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোর অগ্রগতি যাতে না হারিয়ে যায়, সে কারণে বাংলাদেশকে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে লড়াইকে এজেন্ডার শীর্ষে রাখতে হবে। কেবল শিশুশ্রমিক এবং ঝুঁকির মুখে থাকা শিশুদের জন্যই নয়, মা-বাবা এবং জ্যেষ্ঠ ভাই-বোনদের জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যেও বাধ্যতামূলক শিক্ষা, দক্ষতা বিকাশ এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে গুরুত্ব দিয়ে আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাব।’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

শেয়ার
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে  পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

মন্তব্য

২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।

আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই সব শ্রেণি ও মতধারার সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনদলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

মন্তব্য

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার
রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।

সেখানে বারান্দায় একটি শয্যায় রেখে চলতে থাকে রোগীর চিকিৎসা। পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্থায়ী অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন এবং পরবর্তীতে স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর বাকির মোড়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধরা পড়ে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুসহ নানা জটিলতা। তবে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন।

এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।

খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। 

পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।    

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ