পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
সেখানে বারান্দায় একটি শয্যায় রেখে চলতে থাকে রোগীর চিকিৎসা। পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্থায়ী অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন এবং পরবর্তীতে স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর বাকির মোড়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধরা পড়ে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুসহ নানা জটিলতা। তবে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’