ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ১২ বছর

সময় পার হলেও আপিল করেনি অর্ধেক আসামি

  • ► হত্যা মামলার বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে
    ► বিস্ফোরক মামলা এখনো নিম্ন আদালতেই
এম বদি-উজ-জামান
এম বদি-উজ-জামান
শেয়ার
সময় পার হলেও আপিল করেনি অর্ধেক আসামি

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ১২ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় এই বাহিনীর একদল সদস্যের হাতে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় এরই মধ্যে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্ট থেকে রায় দেওয়া হয়েছে। এখন মামলাটির বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে আপিল বিভাগে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা ৩২টি আপিল করেছেন এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ও অন্যান্য মেয়াদে সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে আপিল করার অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) ৩৯টি আবেদন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৭১টি আবেদন করা হয়েছে আপিল বিভাগে। এর মধ্যে আসামিপক্ষে ৫১টি এবং রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাজা বাড়াতে ২০টি আবেদন করা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার নির্ধারিত সময়সীমা এরই মধ্যে পার হলেও এখনো সাজাপ্রাপ্ত প্রায় অর্ধেক আসামি কোনো আবেদন করেননি।

সব আবেদন দাখিল করা শেষ হলে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা মামলার সারসংক্ষেপ দাখিল করা হবে। এরপর তা আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত হয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে যাবে। ফলে আপিল বিভাগে কখন এ মামলার বিচার শুরু হবে, তা নির্ভর করছে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের ওপর। তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে চলতি বছরেই শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অভিন্ন আসামিদের বিরুদ্ধে করা মামলায় নিম্ন আদালতে এখনো বিচার সম্পন্ন হয়নি। এই মামলায় ২০১০ সালে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলেও গত ১০ বছরে এক হাজার ২৬৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১৮৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে এ মামলায় নিম্ন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হয়ে রায় প্রদানে আরো কয়েক বছর লেগে যেতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

হত্যা মামলায় ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর প্রকাশ্য আদালতে সংক্ষিপ্ত রায় দেওয়া হয়। গত বছরের ৮ জানুয়ারি ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

রায়ে ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে ২৮ জন আপিল না করায় তাঁদের সাজা বহাল রাখা হয়। সব মিলিয়ে ৫৫২ জনকে সাজা দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ে ২৮৩ জনকে খালাস দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে যাঁদের সাজা খাটা হয়ে গেছে তাঁরাও মুক্তি পাচ্ছেন না। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার আসামি হওয়ায় ওই মামলার বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় তাঁরা এখনো কারাবন্দি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রত্যেক আসামির জন্য পৃথকভাবে একটি করে পেপারবুক দিয়ে আপিল করার নিয়ম থাকলেও এ মামলায় তার ব্যতিক্রম করা হয়েছে। এ মামলায় এক হাজার ৯৬০ খণ্ডে একটি পেপারবুকেই ৬৬ হাজার পৃষ্ঠার নথি হওয়ায় হয়রানি ও খরচ এড়াতে প্রধান বিচারপতি প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে বিশেষ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তাঁর সিদ্ধান্তের পরই একটি পেপারবুক দিয়ে লিভ টু আপিল আবেদন দাখিল করা হয়েছে। অন্য আসামিরা পেপারবুক ছাড়াই শুধু মেমো দিয়ে আবেদন দাখিল করেছেন। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে অর্ধেক আসামি আপিল বিভাগে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে পেরেছেন। যাঁরা এখনো আবেদন করতে পারেননি তাঁরাও বিলম্ব মওকুফের আবেদন দিয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে লিভ টু আপিল আবেদন করার সুযোগ পেতে পারেন।

জানা গেছে, হাইকোর্ট যাঁদের খালাস দিয়েছেন এঁদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া সাজা কম দেওয়া হয়েছে এমন কয়েকজনের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাজা বাড়াতে আবেদন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ রকম ২০টি আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আর সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ২০৩ জনের পক্ষে ৪৯টি আবেদন দাখিল করা হয়েছে। কয়েকজন আসামির পক্ষে কারাগার থেকে দুটি আবেদন (জেল আপিল) করা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে এই আপিলের বিচারের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হবে। যদিও এরপর রিভিউ আবেদন করার সুযোগ থাকবে। রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করা ছাড়া আর কোনো সুযোগ থাকবে না। এই নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের পর সরকার বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নামকরণ করেছে।

আপিল বিভাগে শুনানির বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, সব আপিল দাখিল হওয়ার পর মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণের জন্য আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করা হবে। তিনি বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে এই বছরের শেষ দিকে এ মামলার শুনানি হতে পারে। তবে এরও আগে যাতে শুনানি করা যায় সে জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তারিখ নির্ধারণের জন্য আবেদন করা হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে লিভ টু আপিল আবেদন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক আসামির ক্ষেত্রে মামলার সারসংক্ষেপ তৈরি করা হবে। চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন জানানো হবে। চেম্বার আদালত তা আপিল বিভাগের ফুল কোর্টে পাঠালে সারসংক্ষেপ দাখিল করা হবে। এরপর প্রধান বিচারপতি শুনানির তারিখ নির্ধারণ করবেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ে যাঁরা খালাস পেয়েছেন বা যাঁদের কম সাজা হয়েছে, এরই মধ্যে সাজা খাটা হয়ে গেছে তাঁরা রায়ের সুবিধা পাচ্ছেন না। কারণ হলো, এই মামলার অনেক আসামি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলারও আসামি। ওই মামলায় জামিন না পাওয়ায় অনেকেই অহেতুক হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলায় বিচার শেষে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় আর ২৭৮ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। এরপর ফাঁসির আসামিদের সাজা অনুমোদনের জন্য নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। কারাবন্দি আসামিরা সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেন। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও পৃথক তিনটি আপিল করা হয়। সব আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় দেন।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তৃতীয় জয়

শেয়ার
তৃতীয় জয়

শান্তি মার্দির (জার্সি নং-২০) হ্যাটট্রিকে গতকাল অনূর্ধ্ব-২০ সাফে ভুটানকে ৪-১ গোলে হারিয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। আসরে স্বাগতিকদের এটি টানা তৃতীয় জয়। ছবি : বাফুফে

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলায় এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলায় এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন আয়কর ও পাঁচজন কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তা। এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে পৃথক আদেশ জারি করেন।

আদেশে বলা হয়েছে, গত ২২ জুন জারি করা বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন।

বিষয়টি তদন্ত করে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ সময়ে তাঁরা বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া আয়কর কর্মকর্তারা হলেন মির্জা আশিক রানা, অতিরিক্ত কর কমিশনার, কর অঞ্চল-৮, ঢাকা; মাসুমা খাতুন, যুগ্ম কর কমিশনার, কর অঞ্চল-২; মুরাদ আহমেদ, যুগ্ম কর কমিশনার, কর অঞ্চল-১৫; মোরশেদ উদ্দীন খান, যুগ্ম কর কমিশনার, কুষ্টিয়া; মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, যুগ্ম কর কমিশনার, নোয়াখালী; আশরাফুল আলম প্রধান, যুগ্ম কর কমিশনার, কক্সবাজার; শিহাবুল ইসলাম, উপকর কমিশনার, খুলনা; নুশরাত জাহান, উপকর কমিশনার, রংপুর এবং ইমাম তৌহিদ হাসান, উপকর কমিশনার, কুমিল্লা।

কাস্টমস বিভাগ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, অতিরিক্ত কমিশনার, নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর; সিফাত-ই-মরিয়ম, অতিরিক্ত কমিশনার; মো. শাহাদাত জামিল, দ্বিতীয় সচিব, এনবিআর; শফিউল বশর, রাজস্ব কর্মকর্তা এবং সবুজ মিয়া, রাজস্ব কর্মকর্তা।

গত জুন মাসে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ২৮ ও ২৯ জুন তাঁরা সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেন। পরে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। আন্দোলনের পর শুরু হয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

এরই মধ্যে তিনজন এনবিআর সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এনবিআরের আরো দুই সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।

মন্তব্য
ছাত্রদলের আলোচনাসভায় বক্তারা

গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
শেয়ার
গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে

ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটরিয়ামে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে গণ-অভ্যুত্থানের বাঁক বদলের দিন শীর্ষক এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে খাটো করার অপচেষ্টা চলছে।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় ছাত্রদল, ডান-বাম ছাত্রসংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আলোচনাসভার প্রধান অতিথি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আন্দোলনের মূলে ছিল ছাত্রসমাজের চেতনা।

আজ সেই চেতনাকে বিকৃত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা আত্মত্যাগের অবমূল্যায়ন। তিনি আরো বলেন, যে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য ১৯৭১ সালে লাখো শহীদ জীবন দিয়েছিলেন, তা ভুলে গিয়ে শেখ মুজিব চার বছরের মাথায় গণতন্ত্রকেই ভ্যানিশ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বলেন, তাঁর কন্যা (শেখ হাসিনা) তো ডাবল ফ্যাসিস্ট হয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কখনো প্রত্যাবর্তন করুক, তা বাংলাদেশের মানুষ চায় না।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো উল্লেখ করেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আন্দোলনকারীদের রক্তদানকে যারা কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে ফাটল ধরাতে চাইছে এবং বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতৃস্থানীয় নেতাদের নামে কুৎসা রটানোর চেষ্টা করছে, তারা ফ্যাসিবাদের আগমনকে স্বাগত জানায়। তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে, কেননা মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব তাঁর বক্তব্যে বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনার জেরে একটি গুপ্ত সংগঠন রাজনৈতিক ইন্ধন দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা বুয়েট ও চুয়েটে আমাদের সর্বোচ্চ নেতাদের নিয়ে নোংরা স্লোগান দিয়েছে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, জামায়াতের এক নায়েবে আমিরের ভাগ্নি জামাইয়ের নেতৃত্বে তারেক রহমানবিরোধী অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সমালোচনা গ্রহণ করি, তবে মনে রাখা উচিতআমাদেরও সহ্যের সীমা আছে। একাত্তর ও চব্বিশের পরাজিত শক্তি ছাড়া বাকি সবার সঙ্গে আমাদের ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা রয়েছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচার নিয়ে শহীদ পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। অথচ আমরা বিচার নিশ্চিত না করে বিভাজনের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেত্রী মুক্তা বাড়ই বলেন, আজ রাজাকারদের পুনর্বাসন ও নরমালাইজেশন শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে গোটা দেশে মবতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহবায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ছাত্রদলের সহযোদ্ধারা প্রথম দিন থেকেই আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিলেন। ১৫ জুলাই একাত্তর হলে প্রথম হামলায়ও ছাত্রদলের ভাইয়েরা আহত হয়েছিলেন। এখানে এককভাবে কোনো সংগঠনের কৃতিত্ব দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি বলেন, এই অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব শহীদদের, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। আমাদের গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনাসভায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান, ইসলামী ছাত্র মজলিসের দপ্তর সম্পাদক নূর মোহাম্মদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুভাশিষ চাকমা, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি সাইদুল হক নিশান, ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহবায়ক আবু বাকের মজুমদারসবাই ছাত্ররাজনীতির মধ্যে বিভাজন অপপ্রচারের রাজনীতি বন্ধ করার আহবান জানান।

মন্তব্য

বিমানবন্দর থেকেই ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বিমানবন্দর থেকেই ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৯৬ জন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ১৩১ জনকে আটকে দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। মূলত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় কারণ দেখিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়।

দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার জানিয়েছে, ওই ১৩১ জনকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯৬ জন বাংলাদেশের নাগরিক।

গত শুক্রবার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালে মালয়েশিয়ার বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সির অভিযানে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়।

দ্য স্টারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৩০০ জনের বেশি যাত্রীর কাগজপত্র যাচাই করে ১৩১ জনকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৯৬ জন বাংলাদেশি পুরুষ, ৩০ জন পাকিস্তানি পুরুষ ও পাঁচজন ইন্দোনেশীয় নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত শর্ত পূরণে ঘাটতি পাওয়া গেছে।

শর্ত পূরণ না হওয়া বলতে সন্দেহজনক হোটেল বুকিং, ইমিগ্রেশন কাউন্টারে হাজির না হওয়া এবং পর্যাপ্ত অর্থ সঙ্গে না রাখার মতো কারণ দেখানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা সাধারণত ভ্রমণকারীর প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করে। কেউ যদি বলে যে সে এক মাস থাকবে, কিন্তু সঙ্গে মাত্র ৫০০ রিঙ্গিত আনে, তাহলে তার বক্তব্যে সন্দেহ তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক।

মালয়েশিয়ায় প্রবেশের জন্য যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো পূরণ করেই যেন আগ্রহীরা ভ্রমণের প্রস্তুতি নেয়, বিবৃতিতে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সি বলছে, মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক যেকোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা, আর্থিক সামর্থ্য এবং থাকা-খাওয়ার নির্ভরযোগ্য পরিকল্পনার প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।

এদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যাঁদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, নিশ্চয়ই তাঁদের ট্যুরিস্ট হিসেবে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে ব্যর্থ মনে করেছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ