করোনা মহামারির মধ্যে গত বছর দুই লাখের বেশি শ্রমিক দেশে ফিরে এলেও প্রবাসী আয়ে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এত বেশি আয় নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এসব প্রশ্ন ছাপিয়ে যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে, সেটা হলো প্রবাসীদের জন্য টেকসই ব্যবস্থা দেওয়া। যাতে তাঁরা দেশে আরো বেশি টাকা পাঠাতে উৎসাহী হন।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সংলাপ
প্রবাসী আয় অব্যাহত রাখতে আরো উদ্যোগ দরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক

এ ছাড়া প্রবাসী আয় বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখতে অভিবাসন ব্যয় কমানো, কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের মাধ্যমে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান এবং দক্ষ শ্রমিক তৈরির ওপর জোর দেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ এসেছে। একই সঙ্গে প্রবাসগামীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
গতকাল রবিবার ‘সাম্প্রতিক প্রবাসী আয়-রেমিট্যান্স প্রবাহ : এত টাকা আসছে কোথা থেকে?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে বিশিষ্টজনরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
এই সংলাপের আয়োজক এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট) বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ।
প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বিদেশে শ্রমবাজারে প্রতিবছর পাঁচ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
সংলাপে যুক্ত হয়ে সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘প্রবাসীদের যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, তা নতুন নয়। করোনার কারণে এটা নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রবাসী আয় বাড়ার ক্ষেত্রে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা বেশি ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়া ভিসা খরচ কমে যাওয়া, হজের খরচ না হওয়া এবং ওই সময়ে যে নগদ অর্থ আসে তা না আসায়, চোরাচালান কমা ও আমদানি কমে যাওয়ায় এটা বেড়েছে। তবে এটা কত দিন অব্যাহত থাকবে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন আছে। এ ছাড়া বিদেশফেরতদের নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। বিদেশফেরতদের শুধু প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগের ফলে তা বাস্তবায়নে ধীরগতির বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রে সব ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না দেখতে হবে।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রবাসী আয় বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ হতে পারে দেশে অনেকে কাজ হারানোর ফলে বিদেশ থেকে তাঁদের স্বজনরা বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। আবার প্রণোদনার ফলে অনেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। কোনো কাগজপত্র ছাড়া পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়ার ফলে এটা বেড়ে থাকতে পারে। আবার হজের সময় স্বজনদের কাছে যে টাকা পাঠানো হতো এবার তা পাঠাতে না পারাও একটি কারণ। প্রবাসী আয় বাড়ার ফলে সুবিধাভোগীরা যেমন উপকৃত হয়েছেন, তেমনি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে আমদানি দায় পরিশোধের সক্ষমতা বেড়েছে।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারপারসন অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, এবার রামরু মনে করেছিল প্রবাসী আয় কমবে। কেননা করোনায় কাজ হারিয়ে অনেকে দেশ থেকে টাকা নিয়েছেন। এপ্রিল, মে ও জুন মাসে ৬১ শতাংশ লোক কোনো টাকা পাঠাননি। এর পরও প্রবাসী আয় বেড়েছে। এর মানে প্রবাসীরা ভালো আছেন তেমন নয়। করোনার এ সময়ে প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক দেশে এসেছেন, যাঁদের বেশির ভাগই আর যেতে পারেননি। তাঁদের পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। কাজ হারিয়ে অনেকে বিদেশে আছেন। তাঁদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে হবে।
সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, যাঁরা কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন তাঁদের বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এমএফএস, এজেন্ট ব্যাংকিং, ওয়ালেটবেজ সেবার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে সুবিধাভোগীর হাতে অর্থ পৌঁছে যাওয়ায় এখন অনেকে বৈধ পথে টাকা পাঠাচ্ছেন। এ ছাড়া বিদেশে কর ছাড় পেয়ে অনেকে বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে পেরেছেন।
এ ছাড়া সংলাপে যুক্ত হন আয়োজক কমিটির সদস্য, দূতাবাস কর্মকর্তা, বিদেশফেরত কয়েকজন প্রবাসী এবং বিদেশে অবস্থানরত কিছু প্রবাসী।
বিদেশফেরত শ্রমিকরা দেশে এসে সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের জন্য বড় অঙ্কের তহবিল ঘোষণা করা হলেও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অদক্ষতার কারণে তা বিতরণ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’