বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কোনো নীতিমালা নেই। বর্জ্য সংগ্রহের জন্য নিয়োগ করা ঠিকাদারদের মৌখিকভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায়ের জন্য বলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ সিটির অনেক এলাকায় সেটা মানা হচ্ছে না। ঠিকাদাররা ঠিক করে দিচ্ছেন কিভাবে বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে এবং কত টাকা তাঁদের দিতে হবে।
ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা নেই
ঠিকাদারদের খবরদারি বাসিন্দাদের অসন্তোষ
শাখাওয়াত হোসাইন

বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন যে ঠিকাদাররা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন। নিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহও করা হয় না। ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের এক ধরনের ‘জিম্মি’ করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগও উঠেছে।
জানা গেছে, বাসা বা ফ্ল্যাটপ্রতি সিটি করপোরেশন নির্ধারিত বর্জ্যের ফি ছিল ৩০ টাকা। সে ফি দিতে হতো প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারীদের।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কোনো নীতিমালা এখনো করা হয়নি। তবে বাসাপ্রতি ১০০ টাকা আদায়ের জন্য মৌখিকভাবে সব ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। আর রেস্টুরেন্ট ও দোকানের বর্জ্যের অর্থের পরিমাণ এখনো ঠিক করা হয়নি।
ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, বেশ কিছু অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। সিটি করপোরেশন ১০০ টাকার বেশি আদায় না করার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে।
সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স পাওয়ার পর থেকে ঠিকাদাররা অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাসা-বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের অর্থ হঠাৎ করে বাড়িয়ে দিয়েছেন ঠিকাদাররা। যেসব এলাকায় ৫০ টাকা নেওয়া হতো, এখন সেখানে ১০০ টাকা দিতে হয়। ঠিকাদারের লোকের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে বর্জ্য দিতে হচ্ছে। বাড়ির মালিক বা ভাড়াটিয়া নিজে ডাস্টবিনে বর্জ্য ফেলে দিয়ে এলেও ঠিকাদারের নির্ধারিত অর্থ দিতে হয়। বাসাবো এলাকায় এর আগে ৫০ টাকা ফি নেওয়া হতো। কিন্তু এখন আদায় করা হচ্ছে বাসাপ্রতি ১০০ টাকা করে। শান্তিনগর এলাকায় বাসাপ্রতি আদায় করা হচ্ছে ২০০ টাকা। করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর আগে বর্জ্য সংগ্রহকারীরা ফ্ল্যাটের দরজার সামনে থেকে বর্জ্য নিয়ে আসতেন। কিন্তু এখন নিজস্ব উদ্যোগে বর্জ্য নিচে নিয়ে দিতে হয়। নয়তো বর্জ্য নিতে চান না তাঁরা। অনেক এলাকায় এমনটি চলছে। সোবহানবাগ এলাকায় সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনে বর্জ্য ফেললে ‘জরিমানা’ আদায় করার হুমকি দিয়ে ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। অতিরিক্ত অর্থ নিলেও ১০০ টাকার রসিদ দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে মানিকনগর এলাকায়।
পূর্ব মানিকনগরের ৯৬/২ হোল্ডিয়ের বাসিন্দা শিহাব আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে ১০০ টাকা দিতাম বর্জ্যের জন্য। কিন্তু এখন দিতে হয় ১২০ টাকা। নয়তো বর্জ্য বাসার নিচে দিয়ে আসতে হয়। ১২০ টাকা দিলেও রসিদ দেয় ১০০ টাকার।’
বাসার ভেতরে প্রবেশ করে ফ্ল্যাটের দরজার মুখ থেকে বর্জ্য আনার বিষয়ে সিটি করপোরেশন উৎসাহিত করে না। ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
এদিকে আগে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিকরা নিজেদের কর্মী দিয়ে বর্জ্য ডাস্টবিনে ফেলতেন। ঠিকাদার নিয়োগের পর রেস্টুরেন্টপ্রতি মাসে তিন হাজার টাকা আদায়ের চেষ্টা হয়েছে। পরে মাসে দুই হাজার টাকায় মিটমাট করেছে রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। একই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন বিভিন্ন শপিং মলের দোকান মালিকরা। নিজেদের উদ্যোগে বর্জ্য ডাস্টবিনে ফেলতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বর্জ্যের পরিমাণ যা-ই হোক, এলাকাভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা ধার্য করেছিলেন ঠিকাদাররা। পরে মেয়রের সঙ্গে দোকান মালিক সমিতির নেতাদের বৈঠকে দোকানপ্রতি ৩০ টাকা ঠিকাদার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নিজেরা সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনে বর্জ্য ফেলতাম। কিন্তু এখন ঠিকাদাররা তা করতে দেয় না। তাদের মাধ্যমে বর্জ্য দিতে হয়।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে দেড় লাখের মতো দোকান রয়েছে। শুরুর দিকে দোকানপ্রতি ৩০০ টাকার বেশি ধার্য করেছিলেন ঠিকাদাররা। কোনো কোনো এলাকায় আরো বেশি ধার্য করা হয়েছিল।’
সম্পর্কিত খবর

ডেঙ্গু রোগী বেড়েই চলেছে

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগী বেড়েই চলেছে। বড়দের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও। এক সপ্তাহ ধরে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ১০ মাস বয়সী মরিয়ম। গতকাল তোলা।

ঠাকুরগাঁও ও সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলি দুই বাংলাদেশি নিহত
ঠাকুরগাঁও ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মো. রাসেল (১৫) নামে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরে উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে শুক্রবার রাতে সুনামগঞ্জের বাগানবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন শফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের আরেকজন বাংলাদেশি।
নিহত রাসেল ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার রাজবাড়ী এলাকার নিয়াজ উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, গতকাল ভোর ৪টার দিকে রাসেলসহ কয়েকজন মিনাপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যায়। এ সময় ভারতের কিষানগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে রাসেল ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। নিহত যুবকের লাশ ফেরত আনার জন্য পতাকা বৈঠকে বসার আহবান জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে সুনামগঞ্জে নিহত শফিকুল ইসলাম দোয়ারাবাজার উপজেলার ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে শফিকুলসহ ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু আনতে যায়। তখন বিএসএফ টহল দলের নজরে পড়লে তারা চোরাকারবারিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিতে গুরুতর আহত শফিকুলকে সঙ্গীরা বাড়িতে নিয়ে আসে।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গুলিটি সরাসরি শফিকুলের বুকে লেগেছে।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. ক. জাকারিয়া কাদির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় বিবৃতি ও পতাকা বৈঠক আহবান করে প্রতিবাদ জানিয়েছি। পাশাপাশি সীমান্তে নজরদারি আরো জোরদার করা হয়েছে।
আড়াই মাস পর যুবকের মরদেহ ফেরত
ঝিনাইদহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবক ওবাইদুল হোসেনের মরদেহ প্রায় আড়াই মাস পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে গোপালপুর সীমান্ত এলাকায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁর মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ। এ সময় নিহত যুবকের পিতা হানেফ আলী, মহেশপুর থানার ওসি তদন্ত সাজ্জাদুর রহমান, স্থানীয় যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দীন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল মহেশপুর সীমান্তে ওবাইদুল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ।

ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব
ফ্যাসিজমমুক্ত করতেই নতুন টেলিকম নীতিমালা
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিজম থেকে টেলিকম খাতকে মুক্ত করতেই অন্তর্বর্তী সরকার নতুন নীতিমালা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি বলেছেন, টেলিকম খাতকে করমুক্ত করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের দাবি পূরণে নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। দ্রুতই প্রস্তাবিত নীতিমালা উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপিত হবে। নীতিমালাকে সমৃদ্ধ করতে যৌক্তিক পরামর্শগুলো বিবেচনা করা হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং লাইসেন্সিং নীতি সংস্কার’বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দের সভাপতিত্বে বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ জুলফিকার। তিনি জানান, ডিজিটাল অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে টেলিকম অপারেটররা।
প্রস্তাবিত নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, নতুন লাইসেন্সিং কাঠামো প্রযুক্তি নিরপেক্ষ করার পাশাপাশি নীতিমালায় লাইসেন্স তিনটিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে। একই লাইসেন্সের আওতায় একাধিক ধরনের সেবা দিতে পারবেন অপারেটররা। ভয়েস, ডেটা (ইন্টারনেট), ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভ্যাস) ও ওভার-দ্য-টপ (ওটিটি) সার্ভিস দেওয়ার সুযোগ থাকছে নতুন লাইসেন্স নীতিমালায়। এটি এই খাতের বিকাশে সহায়তা করবে। তবে শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ না রাখায় উন্নয়নের গতি স্লথ হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, ‘প্রজন্মের দাবি পূরণে কানেক্টিভিটি থেকে জেনারেশন সার্ভিস ট্রান্সফরমেশনের জন্য নতুন নীতিমালা হচ্ছে। অনেক বেশি জঞ্জালের ওপর থেকে এই নীতিমালা করতে যাওয়ায় এটিকে অনেকটা বিবরণমূলক করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশের কল্যাণে কারো কারো স্বার্থে আঘাত আসতে পারে। কেননা আমরা নেটওয়ার্কের জঞ্জাল ছেঁটে ফেলব। নীতিমালাকে সমৃদ্ধ করতে যৌক্তিক পরামর্শগুলো বিবেচনা করা হবে। একই সঙ্গে সরকারের ভালো উদ্যোগকেও সবার স্বাগত জানানো উচিত।’
বিশেষ সহকারী আরো বলেন, ‘নীতিমালায় লাইসেন্সের সংখ্যা কতগুলো হবে তা নির্ভর করবে লাইসেন্স অবলিগেশন অ্যান্ড কেপিআই পারফরম্যান্সের ওপর। তবে বিটিআরসি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারে কী পরিমাণ লাইসেন্স লাগবে বা কী পরিমাণ লাইসেন্স থাকলে অপটিমাল হয়। তবে এই লাইসেন্স সংখ্যার নাম করে নতুন বিনিয়োগকারীদের বাধা দেওয়া যাবে না। তা ছাড়া টোল কালেক্টর হিসেবে যে লাইসেন্সগুলো বিগত সরকারের সময় দেওয়া হয়েছিল সেগুলো কন্টিনিউ করা হবে না।’ বিদেশি কম্পানির দেশীয় প্রতিনিধিদের দেশের বৃহত্তম স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার আহবান জানান তিনি।
নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে তা অন্তত ১৫ বছরের জন্য টেলিযোগাযোগ খাতকে সুরক্ষা দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. জহুরুল ইসলাম।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ‘বিগত সময়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা পেশিশক্তি খাটিয়েছেন। এখনো ৯ কোটি মানুষ ও আড়াই কোটির মতো হাউসহোল্ড আনকানেক্টেড। এই অবস্থার উত্তরণ করতে, সেবার ব্যবহার সুফল বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। সে কারণে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে পলিসিটা ধীরে ধীরে করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘টেলিকম পলিসি সরকারের এখতিয়ার। অরাজক পরিস্থিতির উত্তরণ থেকে সরকার এই পরিবর্তন আনছে। তাই অংশীজনদের নিয়েই এরপর গাইডলাইন করবে। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কাউকে নতুন নীতিমালায় বঞ্চিত করা হবে না।
বিশ্বব্যাংক পরামর্শক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের বর্তমান লিডারশিপ গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য। তারা একটি যুগোপযোগী পলিসি উপহার দেবেন বলে সবার প্রত্যাশা।’
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির বলেন, ‘আমি মনে করি, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কনসিস্টিন্সি, ক্যাপাসিটি, কোলাবরেশন ও কো-অর্ডিনেশন দরকার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ থাকা দরকার। প্রতিবছর মোবাইল অপারেটররা নেটওয়ার্ক চালু রাখতে ৬০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। সে কারণে দেশে টেলিকম রোডম্যাপ দরকার।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘দেশের মানুষের মোট চাহিদা ৭.৫ টেরাবাইট। এর ৬৫-৭০ শতাংশ প্রয়োজন মেটায় আইএসপিরা। এ জন্য ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়। কিন্তু মোবাইল অপারেটরদের ৩৫ শতাংশ বাজার শেয়ার থাকলেও তাদের কর দিতে হচ্ছে না। এই বৈষম্য দূর করা দরকার। পলিসির মাধ্যমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যে নীতিমালা করা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক সরকারের সময় টিকবে কি না—তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
ফাইবার অ্যাট হোম সিআইও সুমন আহমেদ সাবির বলেন, গত সাত বছরে এই খাতে কত টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, তা হিসাব করা দরকার। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ খরচ সাশ্রয়ী পথ বেছে নিতে হবে।
বৈঠকে আরো বক্তৃতা করেন গ্রামীণফোন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান, রবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) (ভারপ্রাপ্ত) রিয়াজ রশীদ, বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইওহান বুসে, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ প্রমুখ।

ফেনীতে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম
বন্যা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সহায়তায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের চিন্তা সরকারের
ফেনী প্রতিনিধি

টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গতকাল শনিবার সকালে ফেনীর ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক)।
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা দুর্গত মানুষের খোঁজখবর নেন তিনি। অনেকে খাদ্য সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন। উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুধু খাদ্য নয়, প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘অতি দরিদ্র মানুষগুলো এখন অসহায়। তাদের ঘরবাড়ি নেই, খাবার নেই। প্রথমে তাদের বাঁচাতে হবে। এরপর ধাপে ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণে টেকসই বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ যেন সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন হয়, সে জন্য আমরা সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার চিন্তা করছি। এটি একটি বৃহৎ প্রকল্প—কারিগরি দক্ষতাসহ সব বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন ত্রাণ নয়, শুধু টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প, বাস্তবায়নে সময় লাগবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মিরাজ হোসেনের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘ত্রাণ কার্যক্রমে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। সবাইকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমিও একজন সেবক।
এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ফেনীর মানুষ যেন বারবার এই দুর্ভোগে না পড়ে, সে জন্য একটি স্থায়ী, টেকসই পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। কাজের মান খারাপ হলে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।’
তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে তিনি আবার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে আসবেন।
এদিকে গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘ফেনী বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ব্যানারে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরে টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণের দাবিতে এই কর্মসূচি হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে মানুষের জানমাল ও জীবিকা বিপন্ন হয়েছে। এই অবস্থায় টেকসই বাঁধ নির্মাণই একমাত্র সমাধান।