প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে বর্তমানে গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগসহনীয় গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাবিটা (গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার) ও টিআর (গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ) কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থ দিয়ে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় গত ও চলতি অর্থবছরে ১২৪টি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় দুই লাখ ৫৮ হাজার থেকে দুই লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এসব ঘরের তালিকা তৈরি ও গৃহ নির্মাণ করে দেন রাজীবপুরের সদ্য বদলি হয়ে যাওয়া ইউএনও মেহেদী হাসান।
গৃহহীনের ঘরের টাকায় জমি কিনলেন ইউএনও!
কুদ্দুস বিশ্বাস, কুড়িগ্রাম (আঞ্চলিক)

শুক্রবার উপজেলার তিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, বদলি হওয়া ইউএনও ঠাকুরগাঁওয়ে মেইন রাস্তার সঙ্গে বাড়ি করার জন্য গৃহহীনের টাকা দিয়ে কোটি টাকা খরচ করে জমি কিনেছেন। রাজীবপুরের ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গৃহহীনদের ঠকিয়ে অবৈধভাবে ওই টাকা তিনি নিয়ে গেছেন।
এদিকে ইউএনওর ওই সব দুর্নীতির বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজীবপুর উপজেলা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। উপজেলা ভূমিহীন সংগঠনের উদ্যোগে ওই মানববন্ধন কর্মসূচিতে ইউএনওর নানা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দেন ভূমিহীন নেত্রী হাফিজা বেগম, আব্দুর রশীদ, ফুল মিয়াসহ অনেকেই।
সদর ইউনিয়নের সদস্য ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার নামে গৃহ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে অথচ আমি কিছুই জানি না। আমার নামে ১৬ লাখ টাকার বিল তোলা হয়েছে।’ একই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাদশা মিয়া ও আবু বক্কর অভিযোগ করেন, গত ১৫ জানুয়ারি আমাদের নামের ছয় লাখ টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে তোলা হয়।
কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু অভিযোগ করেন কুড়িগ্রামের প্রত্যাহার হওয়া ডিসি সুলতানা পারভীনের প্রভাব খাটিয়ে ইউএনও ওই দুর্নীতি করেছেন। তিনি নিজেই ঠিকাদার সেজে তাঁর নিজের এলাকার মিস্ত্রি ও নির্মাণ শ্রমিকদের রাজীবপুরে এসে নিম্নমানের কাজ করেন। যার বাড়িতে ঘর দেওয়া হয়েছে তার কাছ থেকে নির্মাণ শ্রমিকদের খাবারের ও নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের খরচও আদায় করেন ওই ইউএনও। একই ধরনের অভিযোগ করেন মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররাও।
রাজীবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাবিটা (গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার) ও টিআর (গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ) কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থ দিয়ে গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫৫টি এবং চলতি অর্থবছরে ৬৯টি বরাদ্দ পাওয়া যায়। সব ঘর নির্মাণ বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুসারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে ঘরগুলো নির্মাণ করে দেওয়ার কথা থাকলেও ইউএনও তা করেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, ‘গৃহ নির্মাণ কাজগুলো ইউএনও স্যার একা করছেন। আমাকে বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর দিতে বলেছেস আমি দিয়েছি। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’
অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও মেহেদী হাসান বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ঘর নির্মাণের দায়িত্ব দিলে তাঁরা দুর্নীতি করতেন। এ কারণে ঘরগুলো আমি এবং আমার নিজস্ব কিছু লোক দ্বারা করে দিয়েছি।’ নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো বাণিজ্য করিনি। তালিকায় নাম রয়েছে কিন্তু ঘর নেই—এমন কয়েকজনের স্বজনদের বাড়িতে ওই ঘর করে দেওয়া হয়েছে।’
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স