ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

‘মেয়েটাকে আর ছুঁয়ে দেখতে পারি না’

  • ওয়াহিদ ম্যানশনের সামনে স্বজনদের কান্নার রোল
জহিরুল ইসলাম
জহিরুল ইসলাম
শেয়ার
‘মেয়েটাকে আর ছুঁয়ে দেখতে পারি না’

কবরের ওপর হাত বুলিয়ে কী যেন খুঁজছিলেন তিনি। বারবার চোখ মুছছিলেন আর কবরের ওপর পড়ে থাকা ঝরা পাতা সরাচ্ছিলেন। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছিল কবরের ওপর। গতকাল বৃহস্পতিবার এমন আবেগঘন দৃশ্য দেখা যায় আজিমপুর কবরস্থানে।

কবরটি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত রেহনুমা তারান্নুম দোলার। যিনি হাত বোলাতে বোলাতে কাঁদছিলেন তিনি দোলার বাবা দলিলুর রহমান দুলাল। তিনি বলছিলেন, ‘মেয়েটাকে এক বছর ছুঁয়ে দেখতে পারি না। কোনো আবদারও করে না।

কবরে হাত বুলিয়ে তার ছোঁয়া পেতে চেষ্টা করছিলাম। জানি কোনো লাভ নেই! তবু আসি তার শান্তি কামনায়।’

গতকাল চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির এক বছর পূর্ণ হয়েছে। গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টা মোড়ের ওয়াহিদ ম্যানশন নামের একটি ভবনের আগুনে পুড়ে নিহত হন ৭১ জন।

তাদের মধ্যে ১১ জনকে দাফন করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে।

চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির এক বছর উপলক্ষে গতকাল সকাল ৯টায় ‘ঐক্যবদ্ধ সামাজিক সংগঠন’ ব্যানারে ওয়াহিদ ম্যানশনের সামনে দোয়ার আয়োজন করা হয়। একই সঙ্গে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কালো ব্যাজ ধারণ ও গণস্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়।

প্রিয়জনকে হারিয়ে দিশাহারা পরিবারগুলোর সদস্যরা এখনো স্মৃতি হাতড়ে ফিরছেন। পরিবারগুলোর অভিযোগ, গত এক বছরেও সরকারি-বেসরকারি কোনো ধরনের সহায়তা পায়নি তারা।

ওয়াহিদ ম্যানশনে ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনায় নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

অবশ্য গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ক্ষতিগ্রস্ত ৩১ পরিবারের সদস্যদের চাকরি, দোকান বরাদ্দ ও নগদ সহায়তা হস্তান্তর করে।

সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নিহতদের পরিবারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন জড়ো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যদের কান্না ও আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। চুড়িহাট্টা একতা সংঘ, প্রতিদান ফাউন্ডেশন, সোনাইমুড়ী থানা মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশন, মানবতার ডাক, হিউম্যান হেলপফুল অর্গানাইজেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে এবং নিহতদের স্মরণ করে গণস্বাক্ষর করেন পথচারী ও স্থানীয় লোকজন। সেই সঙ্গে সবাইকে পরিয়ে দেওয়া হয় কালো ব্যাজ। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে কোরআন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

ওয়াহিদ ম্যানশনের সামনে গণস্বাক্ষরে অনেকেই লিখতে দেখা যায়, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি,’ ‘দোষীদের শনাক্তের দাবি’, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের দায়িত্ব’, ‘কেমিক্যাল নামের মৃত্যু’। আবার কেউ বা লিখেছেন, ‘পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল গোডাউন চাই না।’

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি হাফেজ হারুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের এক বছর হয়ে গেল। আমরা ওয়াহিদ ম্যানশনের সামনে দাঁড়িয়েছি, কথা বলছি। এর আগেও দাঁড়িয়েছিলাম; কিন্তু নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কোনো সুবিধা পায়নি। নিহত অনেকের স্বজনরা এখনো চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন; কিন্তু চাকরি পাচ্ছেন না। সরকারের কাছে তাঁদের জন্য সাহায্য-সহযোগিতা করার আকুল আবেদন জানাচ্ছি।’

সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় দোকানিরা ব্যস্ত ছিলেন বেচাকেনায়, দূর থেকে আসা ব্যবসায়ী আর ক্রেতাদের ছিল ফেরার তাড়া। রাস্তায় ছিল পথচারী আর চলতি পথের যাত্রীদের ভিড়। গতকাল সেই স্থানে স্বামী ও সন্তানের ছবি হাতে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী অঝোরে চোখের পানি ফেলছিলেন।

চুড়িহাট্টা শাহি মসজিদ মার্কেটের নিচতলায় গামছা-তোয়ালে-তসবিহসহ বিভিন্ন জিনিসের দোকান ছিল পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীদের। মাঝেমধ্যেই বাসা থেকে এসে বাবা-চাচাদের সঙ্গে সময় কাটাত ছোট্ট আরাফাত। রাত সাড়ে ১০টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নেওয়ার মধ্যেই ঘটে সেই বিস্ফোরণ। কিছুক্ষণ আগে দোকান থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান আলী-অপুদের আরেক ভাই দীপু হোসেন। দীপু বলেন, ‘কেন যে সবাইকে নিয়া আগে আগে চইলা গেলাম না! যদি জানতাম তাগোরে না নিয়া জীবনেও যাইতাম না।’

আজিমপুর কবরস্থানে স্বজনদের কান্না : আজিমপুর কবরস্থানে যাঁদের দাফন করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হাজি মো. ইসমাইল, মো. ইব্রাহীম, রেহনুমা তারান্নুম দোলা, ফাতেমাতুজ জোহরা বৃষ্টি, মোহাম্মদ আলী, আরাফাত, জয়নাল আবেদীন বাবুল, ইয়াসিন খান রনি, জুম্মন, আবতাহী-বিন-সালেহ।

গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বাবা জুম্মনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছেন ছেলে রাশেদ খান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার বাবা ব্যবসা করতেন সেদিন যে দুর্ঘটনা ঘটেছে এর ক্ষতি কখনো ফুরাবে না। বাবার জন্য দোয়া করতে এলাম। প্রায় দিনই আসি। সরকারের কাছে একটাই অনুরোধ, আমাদের দিকে একটু তাকান।’

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এক ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীতে দুজনসহ তিন জেলায় চার খুন

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
এক ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীতে দুজনসহ তিন জেলায় চার খুন

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবরে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। কুমিল্লায় ঘুমন্ত নারীর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও খুঁচিয়ে খুন করা হয়েছে। দিনাজপুরে চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :

গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান ও আদাবরের নবোদয় হাউজিংয়ে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি ইফতেখার হাসান বলেন, চাঁদ উদ্যান সড়কের লাউতলায় আল আমিন (৩০) নামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

এর এক ঘণ্টা পর আদাবরের নবোদয় হাউজিংয়ে ইব্রাহিম নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আদাবর থানার এসআই আলমগীর হোসেন বলেন, গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় সজীব ও রুবেল নামের দুজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

কুমিল্লা : দেবীদ্বার পৌর এলাকার সাইলচর গ্রামে মঙ্গলবার রাতে ঘুমন্ত নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত ঝরনা বেগম (৪৮) সাইলচর গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আব্দুল করিমের স্ত্রী।

ঝরনা বেগমের স্বামী আব্দুল করিম জানান, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর পারিবারিক নানা বিষয়ে দূরত্ব ছিল। স্বামীর অসুস্থতার কারণে স্ত্রী তাঁকে প্রায়ই ঘুমের ওষুধ খাওয়াতেন। আগের রাতে ঝরনা তাঁকে আটটি ঘুমের বড়ি খাওয়ালে কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।

সকালে উঠে দেখেন স্ত্রীর লাশ। তাঁর মাথা থেঁতলানো এবং রক্তাক্ত।

দেবীদ্বার-ব্রাহ্মণপাড়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. শাহীন বলেন, ‘ওই নারীর মাথায় তিনটি ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে, যেগুলো ইলেকট্রিক প্লায়ার্স বা স্ক্রু ড্রাইভারের আঘাত হতে পারে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নানামুখী, আমরা তদন্ত করছি।’

দিনাজপুর : দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ৩ নম্বর ধামইর ইউনিয়নের মাটিয়ান গ্রামে চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

গতকাল সকালে রাস্তা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত আসাদুল ইসলাম (৩৫) উপজেলার যুগীহারীখাড়িপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।

নিহতের বড় ভাই মকবুল হোসেন জানান, কয়েক দিন আগে পুরনো ভ্যান বিক্রি করে নতুন ভ্যান কেনেন আসাদুল ইসলাম। মঙ্গলবার সেই ভ্যান চালাতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি।

রাজশাহী : রাজশাহীর পুঠিয়ায় নিখোঁজ হওয়া এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার আগলা গ্রামে ঘাসের ভেতর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত মো. আবরার (৬) ওই এলাকার ডা. শওকত শরীফের ছেলে। ডা. শওকত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞ।

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কিশোরী হেফাজতে রাখা হয়েছে। আরএমপির বেলপুকুর থানার ওসি সুমন কাদেরী এসব তথ্য কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।

 

মন্তব্য

সিরিজ জিতে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ

শেয়ার
সিরিজ জিতে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ
গতকাল শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ দল। আজ সকালে দেশে ফেরার আগে এই ট্রফি হাতে উদযাপনটাও সেরে নিয়েছেন লিটন দাস, তানজিদ হাসানরা। ছবি : মীর ফরিদ, কলম্বো থেকে

বাংলাদেশ জাতীয় দলের ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়, ১৯৮৬ এশিয়া কাপ দিয়ে। তখন পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এরপর সময় গড়িয়েছে, কালের বিবর্তনে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সব ফরম্যাটে জয়ও আছে।

কিন্তু কোনো ফরম্যাটে সিরিজ জেতা হয়নি। গতকাল প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ৮ উইকেটের জয়ে নতুন ইতিহাস লিখল লিটন দাসের বাংলাদেশ। ইতিহাস গড়েও বাড়তি কোনো উচ্ছ্বাস নেই। জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাতাসে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়েছেন তানজিদ হাসান তামিম।
তবে ডাগ আউট সিরিজ জিতে দেশে ফিরছে বাংলাদেশথেকে ছুটে কেউ মাঠে ঢুকে পড়েননি। আনন্দের প্রকাশ আছে, তবে তাতে যেন মিশে দূর ভবিষ্যতের প্রত্যয়। আজ ঢাকায় ফিরেই যে ঢুকে পড়তে হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে!

জেতার জন্য ১৩৩ রান টি-টোয়েন্টিতে বড় লক্ষ্য নয়। তবে অলিখিত ফাইনালের চাপ, ব্যাটিংয়ের ফাঁকফোকর আর প্রেমাদাসার উইকেট বিবেচনায় এটা আবার আয়েশে পাড়ি দেওয়া দূরত্বেরও নয়।

কিছুটা ধাঁধার মতো। সতর্ক শুরু করলে আকস্মিক রানের চাপ বাড়তে পারে। আবার উড়িয়ে মারার ঝুঁকি আছে প্রেমাদাসায়। তাই মধ্যপন্থায় এগিয়েছে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলে পারভেজ হোসেনকে হারানোর পর তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস আক্রমণ করেছেন, তবে নিজেদের রক্ষণ আলগা করে নয়।
তাতে এই দুজনের গড়া ৮৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি অজানা আশঙ্কা দূর করে দিয়েছে। কামিন্ডু মেন্ডিসকে সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ না দিলে হয়তো ম্যাচ শেষ করেই মাঠ ছাড়তে পারতেন লিটন। টস হেরে ফিল্ডিংয়ে দল পরিচালনা এবং শুরুতে উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলানোর জন্য এটুকু তাঁর প্রাপ্য ছিল। যাওয়ার আগে অবশ্য দলকে ভরসা দিয়ে গেছেন নুয়ান থুসারাকে র‌্যাম্প শটে বাউন্ডারি মেরে। তবে ম্যাচের সেরা শট তানজিদের। মাহিশ থিকশানাকে এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে মারা তাঁর ছক্কার শটটি ইউটিউবে বিপুল ভিউ পাবে নিশ্চিত! এর আগে-পরে আরো চার, ছক্কা এবং এক বাউন্ডারিতে ২৭ বলে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে নিজের পঞ্চম ফিফটি পূর্ণ করেছেন তানজিদ। বাঁহাতি এই ওপেনারের এমন দাপুটে ব্যাটিংয়ের কারণে কোনো ঝুঁকি নিতে হয়নি তাওহিদ হৃদয়কে। ওদিকে চাপের মুখে যাচ্ছেতাই ফিল্ডিং করেছে লঙ্কানরা, ব্যক্তিগত ৬০ রানে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তানজিদ। এরপর আর আউটই হননি তিনি। ৪৭ বলে ১ বাউন্ডারি আর ৬ ছক্কায় ৭৩ রান করে অপরাজিত থেকেছেন তানজিদ। আর উইনিং স্ট্রোক খেলেছেন ২৭ রানে অপরাজিত থাকা তাওহীদ হৃদয়।

মাস তিনেক আগে ঘটা করে তাঁকে টি-টোয়েন্টির সহ-অধিনায়ক করা হয়েছিল। কিন্তু প্রথম সফরে নীরবে নতুন দায়িত্বের সঙ্গে একাদশেও জায়গা হারিয়েছিলেন শেখ মেহেদী। তাই সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটায় আর সবার চেয়ে তাঁর ওপর চাপ ছিল বেশি। যদিও মাঠে সে রকম কিছু মনে হয়নি। বরং মাত্র ১১ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন মেহেদী, যা তাঁর ক্যারিয়ারসেরা টি-টোয়েন্টি বোলিংও। এর মধ্যে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে করা ২ ওভারে ২ উইকেট নিয়েছেন। নিজের কোটা পূর্ণ করেছেন ফিল্ডিং বিধি-নিষেধ উঠে যাওয়ার পর। সে স্পেলেও জোড়া শিকার মেহেদীর। আর উইকেটগুলো যথাক্রমে কুশল পেরেরা, দীনেশ চান্ডিমাল, চারিথ আশালঙ্কা ও পাথুম নিশাঙ্কারবকলমে যাঁরা শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ড। সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাদ পড়া মুস্তাফিজুর রহমান গতকালও উজাড় করে দিয়েছেন। পাওয়ার প্লেতে নিখুঁত নিশানায় দুই ওভার করেছেন। পরের স্পেলে স্লোয়ার আর কাটারে ধন্দে রেখেছেন লঙ্কান ব্যাটারদের। তাতে ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান গুনেছেন মুস্তাফিজ, সঙ্গে আঁটসাঁট বোলিংয়ের পুরস্কার হিসেবে একটি শিকার। এর মধ্যে শামীম হোসেনকে দিয়ে দুই ওভার বোলিং করিয়ে নিয়েছেন লিটন দাস। এই সিরিজে যেন অধিনায়ককে বিমুখ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শামীম! ১০ রানের বিনিময়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার মুখে কামিন্ডু মেন্ডিসকে থামিয়েছেন তিনি। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে কাচটি দারুণ দক্ষতায় নিয়েছেন এক ম্যাচ বিরতির পর একাদশে ফেরা তানজিম হাসান। রিশাদ হোসেন ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়েছেন। তবে এক দিনে সবার তো আর সব হয় না। বাংলাদেশের বোলিং বিভাগে যেমন শরিফুল ইসলাম রান গুনেছেন ৫০! তাতে শ্রীলঙ্কার ইনিংসও শেষ দিকে দাসুন শানাকার ঝটকায় এক শ ছাড়িয়ে যায়। ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন এই অলরাউন্ডার।

অবশ্য ম্যাচের নির্ঘণ্ট করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিথ আশালঙ্কা একটা কথাই বারবার করেছেন, মেহেদী দারুণ বোলিং করেছে। টি-টোয়েন্টির একাদশে প্রত্যাবর্তনের রোমাঞ্চকর গল্প লিখলেন এই অফস্পিনার অলরাউন্ডার।

 

মন্তব্য

সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে এক দিনে ৫৫ জনকে পুশ ইন

নিজস্ব প্রতি‌বেদক ও মহেশপুর (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা
নিজস্ব প্রতি‌বেদক ও মহেশপুর (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা
শেয়ার
সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে এক দিনে ৫৫ জনকে পুশ ইন

ভারত থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার তিনটি সীমান্তপথে ৫৫ জন বাংলাদেশিকে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তাদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ, ৩৩ জন নারী এবং ১০টি শিশু।

গতকাল বুধবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে এই পুশ ইনের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট ৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক।

এর আগে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের ভারতীয় অংশে অবৈধভাবে অবস্থান করা সাত বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক আবু হানিফ মো. সিহানুক স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বিজিবি।সিলেট বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা যায়, নোয়াকোট, কালাইরাগ, তামাবিল ও শ্রীপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত দিয়ে চারটি গ্রুপে এসব বাংলাদেশিকে পুশ ইন করা হয়। পরে সীমান্ত এলাকায় টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাদের সবাইকে আটক করেন।

 

বিজিবি সূত্র জানায়, সিলেট জেলার কালাইরাগ সীমান্তে সাতটি পরিবারের ১৯ জনকে আটক করা হয়। শ্রীপুর সীমান্তের মোকামপুঞ্জি এলাকা দিয়ে পুশ ইন করা হয় ১৩ জনকে। তামাবিল বিওপির নলজুরি থেকে দুজনকে আটক করা হয়। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ জেলার নোয়াকোট বিওপি এলাকার ছনবাড়ী সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করা হয় ২১ জনকে।

পুশ ইন হওয়া ৫৫ জনের মধ্যে নড়াইলের ২৩ জন, যশোরের ১২ জন, সাতক্ষীরার ১০ জন, সিলেটের চারজন, বরিশালের দুজন এবং কুষ্টিয়া, খুলনা, হবিগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকার একজন করে রয়েছে। সিলেট ৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক  জানান,  আটককৃত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

মহেশপুর সীমান্তে ৭ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর  : ঝিনাইদহের মহেশপুর বিজিবির পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক ভারত থেকে বাংলাদেশ আসার সময় বিএসএফ তাদের আটক করে। পরে মহেশপুর সীমান্তের বাগাডাঙ্গা বিওপিকে অবগত করে তারা। আটক ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে বিকেলে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের কাছ থেকে তাদের গ্রহণ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, এই সাতজনের মধ্যে দুজন পুরুষ, দুজন নারী এবং তিনটি শিশু রয়েছে। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তাদের মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

 

মন্তব্য

কুমিল্লায় ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত নারীকে, দিনাজপুরে ভ্যানচালককে হত্যা

    রাজশাহীতে শিশুর লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
কুমিল্লায় ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত নারীকে, দিনাজপুরে ভ্যানচালককে হত্যা

কুমিল্লায় ঘুমন্ত নারীর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও খুঁচিয়ে খুন করা হয়েছে। দিনাজপুরে চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। রাজশাহীর পুঠিয়ায় পাওয়া গেছে ছয় বছরের এক শিশুর লাশ। কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :

কুমিল্লা : দেবীদ্বার পৌর এলাকার সাইলচর গ্রামে মঙ্গলবার রাতে ঘুমন্ত নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত ঝরনা বেগম (৪৮) সাইলচর গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আব্দুল করিমের স্ত্রী।

ঝরনা বেগমের স্বামী আব্দুল করিম জানান, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর পারিবারিক নানা বিষয়ে দূরত্ব ছিল। স্বামীর অসুস্থতার কারণে স্ত্রী তাঁকে প্রায়ই ঘুমের ওষুধ খাওয়াতেন। আগের রাতে ঝরনা তাঁকে আটটি ঘুমের বড়ি খাওয়ালে কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।

সকালে উঠে দেখেন, স্ত্রীর লাশ। তাঁর মাথা থেঁতলানো এবং রক্তাক্ত। ঘটনার পর থেকে ঝরনা বেগমের বড় ছেলে সবুজ নিখোঁজ রয়েছে।

দেবীদ্বার-ব্রাহ্মণপাড়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. শাহীন বলেন, ওই নারীর মাথায় তিনটি ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে।

যেগুলো ইলেকট্রিক প্লায়ার্স বা স্ক্রু ড্রাইভারের আঘাত হতে পারে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নানামুখী, আমরা তদন্ত করছি।

দিনাজপুর : দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ৩ নম্বর ধামইর ইউনিয়নের মাটিয়ান গ্রামে চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সকালে রাস্তা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত আসাদুল ইসলাম (৩৫) উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের যুগীহারীখাড়িপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।

নিহতের বড় ভাই মকবুল হোসেন জানান, কয়েক দিন আগে পুরনো ভ্যান বিক্রি করে নতুন ভ্যান কেনেন আসাদুল ইসলাম। মঙ্গলবার সেই ভ্যান চালাতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি।

রাজশাহী : রাজশাহীর পুঠিয়ায় নিখোঁজ হওয়া এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার আগলা গ্রামে ঘাসের ভেতর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত মো. আবরার (৬) ওই এলাকার ডা. শওকত শরীফের ছেলে। ডা. শওকত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ।

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কিশোরী হেফাজতে রাখা হয়েছে। আরএমপির বেলপুকুর থানার ওসি সুমন কাদেরী এসব তথ্য কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে দুই কিশোরী আবরারকে খেলতে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে দুই কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আবরারকে ঘাসের ভেতরে পাওয়া যাবে বলে তারা জানায়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ