<p>কারো যদি অভিবাসনের ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে সন্দেহ থেকে থাকে, তাহলে তাকে লুইস ভন আনের কথা বলা যেতে পারে। মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালার এই নাগরিকের বয়স এখন ৪১। তিনি ১৮ বছর বয়সে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান নর্থ ক্যারোলাইনার ডিউক ইউনিভার্সিটিতে গণিত বিষয়ে পড়াশোনা করতে। এরপর তিনি পিটসবার্গের কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন।</p> <p>লুইস কম্পিউটার বিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক হতে চেয়েছিলেন, যিনি ‘মানুষভিত্তিক কম্পিউটেশন’ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবেন। সহজ করে বলতে গেলে এটা বলতে বোঝায় যে মানুষ ও কম্পিউটার কিভাবে সবচেয়ে দক্ষতার সঙ্গে জটিল কোনো কাজের সমাধান করতে পারে। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানজনক পুরস্কার ম্যাকআর্থার ফেলোশিপ প্রগ্রাম অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এটি একই সঙ্গে ‘মেধা বৃত্তি বা জিনিয়াস গ্রান্ট’ নামেও পরিচিত, কারণ এটি পেতে হলে অবশ্যই প্রতিভাবান হতে হয়।</p> <p>এরপর লুইস মাত্র ত্রিশের কোঠাতেই কোটিপতি বনে যান গুগলের কাছে দুটি ব্যবসা বিক্রির মাধ্যমে। বর্তমানে লুইস পিটসবার্গভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডুয়োলিঙ্গোর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী। ডুয়োলিঙ্গো বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা শেখার অ্যাপ, যা বিশ্বব্যাপী ৩০ কোটি মানুষ ব্যবহার করে।</p> <p>মিষ্টভাষী ও সুদর্শন লুইস নম্রভাবে বলেন, তাঁর সফলতার পেছনে সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে যে শিশু বয়স থেকেই তিনি ইংরেজি শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। জন্মগতভাবেই এই স্প্যানিশ ভাষা ব্যবহারকারী বলেন, তাঁর চিকিৎসক মা তাঁকে খুব ছোটবেলা থেকেই ইংরেজি শেখার ওপর জোর দিয়েছিলেন।</p> <p>তাঁর মধ্যবিত্ত পরিবারের তখন যথেষ্ট অর্থ ছিল, যা দিয়ে তাঁকে রাজধানী গুয়াতেমালার একটি বেসরকারি ইংরেজি ভাষার স্কুলে পাঠানো হয়েছিল। লুইস বলেন, এটা অবশ্যই তাঁকে গুয়াতেমালার বেশির ভাগ নাগরিকের তুলনায় কিছুটা বাড়তি সুবিধা দিয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, দেশটির প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা দরিদ্রতার মধ্যে বাস করে, যার ৯ শতাংশ অতিদরিদ্র। অনেকে শিক্ষারই সুযোগ পায় না।</p> <p>ডুয়োলিঙ্গো তৈরির পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে গুয়াতেমালা বা বিশ্বের অন্য জায়গার মানুষের জন্য বিনা মূল্যে ব্যবহারের মতো একটি ভাষা শেখার অ্যাপ তৈরি করা, যাতে তারা অর্থনৈতিক একটি সুবিধা পায়, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বহুভাষী হওয়ার ওপর নির্ভরশীল। লুইস বলেন, ‘আমি এমন কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম, যা সবাইকে শিক্ষার সমান সুযোগ দেবে। এরপর আমি ভাষার ওপর গুরুত্ব দিলাম, কারণ গুয়াতেমালায় বেড়ে ওঠার সময় আমি দেখেছি যে সবাই ইংরেজি শিখতে চায়।’</p> <p>লুইস বলেন, ‘আর ইংরেজি না বলা একটি দেশে ইংরেজি জানার মানে হচ্ছে আপনার আয়ের সামর্থ্য বেড়ে দ্বিগুণ হবে। আমি বোঝাতে চাইছি যে আপনি ইংরেজি জানলে দ্বিগুণ আয় করতে পারবেন। তাই বিনা মূল্যে ভাষা শেখার একটি উপায় বের করার পরিকল্পনা সেখান থেকেই আসে, আর সেটাই ডুয়োলিঙ্গো।’</p> <p>২০০৯ সালে অ্যাপটি নিয়ে কাজ শুরু করেন লুইস এবং সহপ্রতিষ্ঠাতা সেভেরিন হ্যাকার। সে সময় কার্নেগি মেলনে অধ্যাপক ছিলেন লুইস এবং সেভেরিন ছিলেন তাঁর একজন শিক্ষার্থী। ভাষাবিজ্ঞান ও ভাষা মনে রাখার বিশেষত্ব নিয়ে ২০১২ সালে চালু করা হয় ডুয়োলিঙ্গো, যাতে প্রাথমিকভাবে ইংরেজি, ফরাসি ও স্প্যানিশ ভাষা শেখার সুযোগ ছিল।</p> <p>বর্তমানে ডুয়োলিঙ্গোতে ২৮টি ভাষার ১০০টিরও বেশি কোর্স আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে ইংরেজি, স্প্যানিশ ও ফ্রেঞ্চ। যদিও আরবি থেকে শুরু করে ইউক্রেনীয় পর্যন্ত সব ধরনের ভাষা শেখার সুযোগ আছে এখানে। সংখ্যালঘুদের ভাষা প্রচারেও গুরুত্ব দেয় ডুয়োলিঙ্গো; ওয়েলস, নাভাজো, গায়েলিক ও হাওয়াইয়ান ভাষা শেখার কোর্স আছে এতে। ডুয়োলিঙ্গোর এখন বার্ষিক মুনাফা ৯ কোটি ডলার। এর মধ্যে এক কোটি ৫০ লাখ ডলার আসে অ্যাপটি বিনা মূল্যে ব্যবহারের সময় যে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, তার জন্য। আর বাকি সাত কোটি ৫০ লাখ ডলার মুনাফা আসে এর ২ শতাংশ ব্যবহারকারীর কাছ থেকে, যারা টাকা দিয়ে অ্যাপটির বিজ্ঞাপনমুক্ত প্রিমিয়াম ভার্সন ব্যবহার করে থাকে। সূত্র : বিবিসি।</p>