নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ও আনসার আল ইসলামের জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে সংগঠন চাঙ্গা করতে চাইছে। দুই বছর আগে নাশকতা থেকে সরে আল-কায়েদা মতাদর্শী এবিটির (আনসার আল ইসলামসহ) সঙ্গে সমঝোতা করে জেএমবি। এর পর থেকে আইএস মতাদর্শী হিসেবে পরিচিত নব্য জেএমবিতে যোগ দিচ্ছে না পুরনো জেএমবির সদস্যরা। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এবিটির বড় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করতে চান জেএমবির নেতারা।
এবিটি-জেএমবি জোট বাঁধে দুই বছর আগে!
এস এম আজাদ

সূত্র মতে, এবিটির সামরিক শাখার প্রধান সৈয়দ জিয়াউল হক (চাকরিচ্যুত মেজর) এবং জেএমবির বাংলাদেশ শাখার সাবেক আমির খোরশেদ আলম জিয়া (বগুড়ায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত) দুই সংগঠনের মধ্যে ওই সমঝোতা করেছিলেন। ভিন্ন তরিকার মুসলিম ও নিরপরাধ নারী-শিশুসহ হত্যার
কর্মকাণ্ড ভুল ছিল বলে স্বীকার করে নেয় জেএমবি। একইভাবে ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ বন্ধ করতেও চাপ দেয় এবিটি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে জেএমবি ভারত ও পাকিস্তানে সক্রিয়। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসি ও কারাদণ্ডের পর ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতে থাকা সালাউদ্দিন সালেহীন সানি ছিলেন জেএমবির বাংলাদেশ শাখার আমির। এরপর খোরশেদ জিয়াকে দায়িত্ব দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে সংগঠকের কাজ করছেন।
ওই কর্মকর্তারা জানান, ‘প্রটেক্টর টেক্সট’ ওয়েবসাইট ব্যবহার করে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন সালেহীন। খোরশেদ আলম জিয়া নিহত হলে শ্যালক আবু রায়হান মাহমুদ ওরফে আবদুল হাদীকে বাংলাদেশ শাখার আমিরের দায়িত্ব দেন সালেহীন।
সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, “জেএমবিকে বলা হয়ে থাকে ‘জওয়াল’ সংগঠন। বিভিন্ন দেশে তাদের আমির হয়ে থাকে। বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আমির হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে দায়িত্বে ছিলেন সালাউদ্দিন সালেহীন। এরপর আমিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন খোরশেদ আলম জিয়া। বন্দুকযুদ্ধে খোরশেদ জিয়া মারা যাওয়ার পর আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আবদুল হাদী। সালেহীনের আর্থিক সাপোর্ট ও নির্দেশনায় কাজ চলছিল।”
সিটিটিসি ইউনিটের আরেক কর্মকর্তা জানান, পুরনো জেএমবিতে রায়হান ছাড়া দুজন শুরা সদস্য সক্রিয় আছে। আরো ৩০ থেকে ৪০ জন সদস্য আছে। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে নব্য জেএমবির হামলার আগে ও পরে নাশকতা নিয়ে জেএমবির সদস্যরা দ্বিধায় পড়ে। মাজারের খাদেম, হিন্দু ধর্মাবলম্বী, ভিন্ন তরিকার বক্তা, তাজিয়া মিছিল, পীর-দরবেশদের টার্গেট করার মাধ্যমে অনেক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলেও ধারণা করেন তাঁরা। খোরশেদ জিয়া দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি এবিটি ও আনসার আল ইসলামের কর্মকাণ্ড সঠিক বলে মনে করেন। পাশাপাশি দেখেন, এবিটি অনলাইনের মাধ্যমে অনেক সদস্য সংগ্রহ করে ফেলেছে। সক্রিয়ও আছে। পুরনো জেএমবির সদস্যরা প্রযুক্তিতে পিছিয়ে। একপর্যায়ে তিনি এবিটির নেতা মেজর (চাকরিচ্যুত) জিয়ার কাছে একসঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেন। জিয়া তখন খোরশেদ জিয়াকে ভিন্ন তরিকার লোক হত্যা ও ডাকাতি বন্ধ করার পরামর্শ দেন। এতে রাজি হন জেএমবি নেতা। এর পরও এবিটির সদস্যরা জেএমবিকে বিশ্বাস করছিল না। তখন এবিটির টার্গেটে থাকা প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে মুন্সীগঞ্জে হত্যার মাধ্যমে বিশ্বাস অর্জন করে জেএমবি। ঢাকা বিভাগের সামরিক কমান্ডার আব্দুর রহমান (মুন্সীগঞ্জে গত বছরের ২৮ জুন বন্দুকযুদ্ধে নিহত) ছিলেন ওই হামলার অপারেশনাল কমান্ডার।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবিটির সঙ্গে সমঝোতার আগে মামুনুর রশীদ রিপন, শরিফুল ইলাম খালিদ, সোহেল মাহফুজ, জাহাঙ্গীর আলম রাজীব গান্ধীসহ অনেক জঙ্গি পুরনো জেএমবি থেকে নব্য জেএমিতে যোগ দেয়। তবে সমঝোতার পর আর কেউ নব্য জেএমবিতে যায়নি। খোরশেদ জিয়া নিহত হওয়ার পর এই জোট কোনো কর্মকাণ্ড চালাতে পারেনি। তবে অনলাইনে এবিটির জঙ্গিদের সহায়তা নিয়ে জেএমবিও সদস্য সংগ্রহ করে চলেছে। পাশাপাশি সালেহীনের নির্দেশনায় ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের আড়ালে মতাদর্শী বাড়ানোর কাজও চলছে।
অর্থায়ন নিয়ে মতবিরোধ : তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারতে বসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনুদানের নামে টাকা সংগ্রহ করছেন সালেহীন। সেই টাকা আবু রায়হানসহ কয়েকজনের মাধ্যমে দেশে ব্যয় করা হয়। মসজিদ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জেএমবির নিজস্ব নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য আব্দুর রাকিব সৌদি আরব থেকে টাকা পাঠান। তিনি মদিনা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন। তিনি কিছুদিন আগেও দেশে এসেছিলেন। তিনি সৌদি আরবে আছেন। আব্দুল ওয়াহেদ নামের আরেকজন টাকা পাঠান, যিনি থাকেন ইয়েমেনে। ওয়াহেদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। আগে তিনি সৌদি আরবে ছিলেন। সালেহীন পুরো টাকা খরচ না করে ছবি তুলে দাতাদের দেখান। তবে আবু রায়হান অনৈতিকভাবে টাকা নিজের কাছে রাখার বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না। এ নিয়ে সম্প্রতি তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।
সম্পর্কিত খবর

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক
জঙ্গি সন্দেহে বাংলাদেশি গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ
কূটনৈতিক প্রতিবেদক

জঙ্গি সন্দেহে মালয়েশিয়ায় সম্প্রতি কয়েকজন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জোরালো অবস্থান তুলে ধরে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিদের বিষয়ে তথ্য দিয়ে তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
মালয়েশিয়া সফররত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল শুক্রবার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো মোহাম্মদ বিন হাজি হাসানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ৩২তম আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামে (এআরএফ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি জঙ্গিবাদের অভিযোগে যে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করেছে তাঁদের ব্যাপারে তদন্তে বাংলাদেশ সরকার মালয়েশিয়ার সঙ্গে কাজ করবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গতকাল মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং তথ্য ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযোগের তদন্তে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চান। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ ও সহযোগিতা সহজতর করার আশ্বাস দেন।
এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে দুই নেতা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। উভয় পক্ষ বাংলাদেশে চলমান সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, এলডিসি-পরবর্তী সহায়তা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের উপমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদলের প্রধানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০০৬ সালে এআরএফের সদস্য পদ লাভ করে। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৭টি সদস্যের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ এআরএফের দুটি অগ্রাধিকার খাত ‘সন্ত্রাসবাদ দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ’ এবং ‘দুর্যোগ ত্রাণ’-এর সহসভাপতিত্ব করছে। এআরএফ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পরবর্তী অধিবেশন আগামী বছর ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল বিকেলে আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন। তিনি জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রভাব বিবেচনা করে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দেওয়ার আহবান জানান। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আসিয়ান সদস্যদের বাংলাদেশের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার প্রচেষ্টাকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করার আহবান জানান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. ফরহাদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

জাতিসংঘের তথ্য
১৮ মাসে আরো দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও নির্যাতনের কারণে গত ১৮ মাসে বাংলাদেশে নতুন করে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০১৭ সালে মায়ানমার থেকে প্রায় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর এটি সর্বোচ্চসংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা। নতুন আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ইউএনএইচসিআর জানায়, গত জুন পর্যন্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নতুন এক লাখ ২১ হাজার রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে অনেককে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি, যদিও তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছে।
কক্সবাজারের মাত্র ২৪ বর্গকিলোমিটার জায়গায় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের কারণে এটি এরই মধ্যে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, নতুন করে আরো রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় বিদ্যমান সহায়তাব্যবস্থার ওপর চরম চাপ পড়ছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি আছে। ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্য সহায়তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ভারতে বাঙালিবিরোধী ষড়যন্ত্র
দিল্লির কাছে কারণ জানতে চেয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দিল্লিতে বাঙালি উচ্ছেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। ভারতজুড়ে ‘বাঙালিবিরোধী’ এক ‘অপচেষ্টা’ চলছে বলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তোলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই উদ্যোগ নিলেন।
দক্ষিণ দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে সম্প্রতি চলা উচ্ছেদ অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে এই আবেদন করা হয়। এই উচ্ছেদ অভিযান এমন জায়গায় হচ্ছে, যেখানে মূলত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি অভিবাসী শ্রমিকরা থাকেন।
মমতার অভিযোগের পরেই আদালতে ওই ঘটনার বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছে। তবে সেটি তিনি করেননি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য সচিবকেও এ বিষয়ে আদালতকে পৃথকভাবে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে দিল্লির মুখ্য সচিবের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথাবার্তা বলতে হবে।
সূত্র : টেলিগ্রাফ

হেফাজতের বিক্ষোভ
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এটি স্পষ্ট হুমকি বলে মন্তব্য করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, ‘জাতিসংঘ বা কোনো বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে মানবাধিকার ইস্যুতে হস্তক্ষেপ দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। এ ধরনের কার্যালয় স্থাপন সরকারের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রতিফলন। দেশীয় ইসলামী মূল্যবোধ, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে এ মন্তব্য করেন হেফাজতের সিনিয়র নেতারা। সমাবেশে বক্তারা জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আঞ্চলিক কার্যালয় ঢাকায় স্থাপনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান।
সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, দেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেশের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে দিতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জোবায়ের রশীদ, মাওলানা এহতেশামুল হক সাকী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করেছি। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত এই সরকারকে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো অধিকার দেওয়া হয়নি।
হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ আমরা শুধু প্রাথমিক প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে না আসে, তাহলে হেফাজতে ইসলাম সারা দেশে তীব্র আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবে। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও আমরা এই মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হতে দেব না।
মামুনুল হক বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এজেন্ডা ও ইতিহাস আমরা জানি। তাই বাংলাদেশে তাদের ডেকে আনার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। জনগণ তা মেনে নেবে না।’
হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, ‘বর্তমান সরকার সুযোগের অপব্যবহার করছে। বিশ টাকার নোট থেকে মসজিদের ছবি সরিয়ে মন্দিরের ছবি দিয়েছে। দেশে মানবাধিকার কার্যালয় করার ম্যান্ডেট এ সরকারকে দেওয়া হয়নি।’
তিনি জানান, প্রয়োজনে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও এবং ঢাকা ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।