রাজধানীর পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স রয়েছে। ১৭টি বিষয়ে স্নাতক এবং ১৬টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়, যা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বিষয়ের দিক থেকে কোনো অংশেই কম নয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও প্রতিবছর বাড়ছে, কিন্তু বাড়ছে না শিক্ষক আর শ্রেণিকক্ষ। এ দুই সমস্যাই চরম।
শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকের চরম সংকট
শরীফুল আলম সুমন ও মাসুদ রানা

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য সংযুক্তি মিলিয়ে আছেন ১০৯ জন শিক্ষক। শ্রেণিকক্ষ ৪২টি। সেই হিসাবে গড়ে ১৫৬ শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন একজন শিক্ষক, ৪০৫ শিক্ষার্থীর জন্য একটি শ্রেণিকক্ষ। অথচ জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা বলা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এ কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, শিক্ষক আর শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে নিয়মিত পাঠ কার্যক্রম হয় না। অনেক সময়ই শিক্ষক থাকলে শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা পাওয়া যায় না। আবার শ্রেণিকক্ষ পাওয়া গেলে শিক্ষক থাকেন না।
১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৯২৩ সালে কলেজে রূপান্তরিত হয়। গত সপ্তাহে সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক সমস্যা নিয়েই চলছে কলেজটি। শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সংকট ছাড়াও সেশনজট ও পরিবহন সংকটের পাশাপাশি রয়েছে আবাসন সমস্যা। একটিমাত্র ছাত্রাবাস দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে বেদখলে।
গত ফেব্রুয়ারিতে বেশ কিছু দাবিতে মানববন্ধনও করে কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো—শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাসকে পূর্ণাঙ্গ হল করা, আবাসন সংকট নিরসন, শিক্ষক সংকট নিরসন, একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণ ও সব শিক্ষার্থীর জন্য পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা।
জানা যায়, রসায়ন, গণিত, অর্থনীতি, বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ ১২টি বিভাগে রয়েছে চারটি করে শিক্ষকের পদ। তবে সংযুক্তি মিলিয়ে শিক্ষকের সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সের নিয়মিত পাঠদান করতে হিমশিম খেতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত অন্য কলেজের মতো কবি নজরুল সরকারি কলেজেও সেশনজট চরমে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে পাঁচটি ব্যাচ থাকার কথা থাকলেও আছে আট থেকে ৯টি। প্রায় প্রতিটি বর্ষেই নতুন ও পুরনো ব্যাচ রয়েছে। কলেজে একটি গ্রন্থাগার থাকলেও সেখানে পড়ার সুযোগ নেই শিক্ষার্থীদের।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক সময়ই শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একটি বর্ষের ক্লাস শেষ হলে আমাদের ঢুকতে হয়। এ ছাড়া প্রায়ই স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা থাকে। তখন আর ক্লাস হয় না। ফলে আমাদের সিলেবাস শেষ হয় না।’
কলেজে ছাত্র ও ছাত্রী উভয়েই পড়ালেখা করলেও বাথরুম-টয়লেটও অপ্রতুল। মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৪০ শতাংশই ছাত্রী। কমনরুমে গুটি কয়েক বাথরুমের ওপর সবাইকে নির্ভর করতে হয়। এ ছাড়া বর্তমানে পরিবহন সুবিধা বলতে বিআরটিসির দুটি ডাবল ডেকার বাস রয়েছে।
কলেজের একমাত্র আবাসিক হল শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাস পুরান ঢাকার কাগজীতলায় অবস্থিত। ছাত্রাবাসটির বড় অংশই বেদখল হয়ে গেছে। দখলদারদের সঙ্গে সমঝোতা করে ৫০ জন শিক্ষার্থী সেখান থাকছে বলে জানা গেছে। কিন্তু ছাত্রাবাসটিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কক্ষগুলো নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে। দিনের বেলায়ও বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয়। আগে এই কলেজ চত্বরেই মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ছিল। এখন প্রতিষ্ঠানটি আলাদা হয়ে গেছে। ওই চত্বরে থাকা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ডাফরিন ছাত্রাবাসটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তাই কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ডাফরিন হলটি কলেজের নামে বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজীদ শিকদার বলেন, ‘আমাদের ছাত্রাবাসে সমস্যার কোনো শেষ নেই। এখানে থাকা, খাওয়া থেকে শুরু করে সবটাতেই সমস্যা। প্রায় সময়ই পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ থাকে না। তা ছাড়া দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বৃষ্টি হলে কক্ষগুলো ভিজে থাকে, সহজে শুকায় না। বাধ্য হয়েই এমন গুমোট পরিবেশে থাকতে হয়।’
কয়েক বছর আগেও সরকার সমর্থক সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমে এসেছে। অভিযোগ ছিল, কলেজে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হলে তাকে নির্দিষ্ট ফির বাইরে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হতো, যা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পকেটে যেত।
জানতে চাইলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাওলাদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি কলেজের সুনাম ধরে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও সেটা অব্যাহত থাকবে।’
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক সংকট রয়েছে। কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর কোর্স কারিকুলামে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম। সরকারি কলেজে পদ সৃষ্টির জন্য সরকারকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের কলেজে ১০ তলা ভবন নির্মাণের প্রকল্প পাস হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে কাজ শুরু হবে। এই ভবন নির্মাণ হলে শ্রেণিকক্ষের সংকট অনেকটাই দূর হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাসটি উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। এ ছাড়া আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে দুটি বাস কেনার অনুমতির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। এটা পাস হলেই নতুন বাস কিনব।’
সম্পর্কিত খবর

মার্কিন শুল্ক সংকট
ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেও আসতে পারে সুখবর
- ৩৫% থেকে শুল্ক কমে ১৮-২০% হওয়ার প্রত্যাশা
নিজস্ব প্রতিবেদক

শুল্ক নিয়ে পুনরায় বৈঠকের সময় চেয়ে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে মার্কিন প্রশাসনকে। ওয়াশিংটনে গিয়ে সরাসরি বৈঠকের আহ্বান জানানো না হলেও আগামী ২৯ জুলাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভর্চুয়ালি বৈঠক করবেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। তবে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, ওই ভার্চুয়াল বেঠকের আগেই শুল্ক বিষয়ে ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশের জন্য আসতে পারে কোনো সুখবর। এর আগের টানা তিন দিনের বৈঠকের পর থেকে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়গুলো জানিয়ে যেসব ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে, তার আলোকেই বাংলাদেশের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে মার্কিন প্রশাসন।
গতকাল শুক্রবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সূত্রে আরো জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৯ জুলাই ভার্চুয়ালি বৈঠক করা হবে এবং ওই বৈঠকেই শুল্ক বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর এখন পর্যন্ত নতুন করে মার্কিন প্রশাসন থেকে আর কিছু জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, আগামী ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেও শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন করে কোনো ঘোষণা দিতে পারে।
বাংলাদেশের তরফ থেকে দেওয়া ডকুমেন্টগুলোতে কী ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ আসলে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘আমরা তো তাদের সঙ্গে যে চুক্তি করব, তার ওপরই প্রস্তুতি নিচ্ছি। চুক্তির খসড়ার ওপর এবং তাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মূলত আমরা তথ্যাদি এবং আমাদের মতামত তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন ইন্দোনেশিয়ার বিষয়ে জানিয়েছে—তাদের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক ধার্য করবে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্কের বিষয় উল্লেখ করে চুক্তি হতে পারে। আমরাও প্রত্যাশা করছি, ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ১৮ থেকে ২০ শতাংশের মতো শুল্ক নির্ধারণ করা হতে পারে বা এর চেয়ে কমও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আগামী ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্যই অপেক্ষা করছি। সেই সঙ্গে আমরা আশা করছি, ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের পরিবর্তে মার্কিন প্রশাসন থেকে প্রস্তাব আসতে পারে সেখানে গিয়ে সরাসরি বৈঠকের। এই কয় দিনের মধ্যে সে রকম প্রস্তাব আসতে পারে—এমন প্রত্যাশাও রয়েছে আমাদের।’

সরেজমিন
আ. লীগের কার্যালয়ের সামনে নতুন ব্যানার করা হচ্ছে পরিষ্কার
তৌফিক হাসান

রাজধানীর গুলিস্তানের শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ভবনটিকে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট হিসেবে তৈরি করা হবে। আর এই ইনস্টিটিউটেই ফ্যাসিবাদের উত্থান, কার্যকলাপ ও পতন নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করা হবে।
গতকাল শুক্রবার ওই কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে এবং সেখানে উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
দেখা যায়, ভবনটির দেয়ালে দুটি লাল রঙের ব্যানার লাগানো। উভয় ব্যানারেই লেখা, ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, নিচতলায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। ভেতরে জমে থাকা ময়লা পানি ওয়াসার স্যুয়ারেজের গাড়ি দিয়ে নিষ্কাশন করা হচ্ছে।
শ্রমিকদের একজন হাফিজুর রহমান জানান, বুধবার থেকে তাঁরা এই কাজ করছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা দৈনিক হিসেবে কাজ করতাছি।
ভবনটির বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদস্য এস এম শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে আমরা ফ্যাসিবাদের উত্থান-পতন নিয়ে স্টাডি করব। একই সঙ্গে ফ্যাসিজম রোধে আমরা কী করতে পারি তা নিয়েও বিস্তর স্টাডি করব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এটা নিয়ে সচেতন করব।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি যে গুলিস্তানের মতো ব্যবসায়ী অঞ্চলে একটা ভবন আমরা কিভাবে ব্যবহার না করে ফেলে রাখি। এটাকে ঠিকঠাক করতে পারলে আশপাশের জনগণ উপকৃত হবে। এটা হয়েছিল গণশৌচাগার। গুলিস্তানের মতো একটা জায়গায় এত দুর্গন্ধ সহনীয় নয়। তাই আমরা নিজস্ব উদ্যোগে এটা পরিষ্কারের কার্যক্রম শুরু করেছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাত্রাবাড়ী থানার সংগঠক মুজাইদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ১৭ বছর এখান থেকে যে ফ্যাসিজম চালানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই ভবনে। এটিকে সরকারিভাবে দেশের স্বার্থে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে চিন্তাই আমরা করছি। কবে নাগাদ এই কার্যক্রম শেষ হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।’
এর আগে গত ১৭ মে ভবনটিতে টাঙানো হয়েছিল ‘জুলাই যোদ্ধাদের প্রধান কার্যালয়’ লেখা ব্যানার। তবে কে বা কারা এটি টাঙিয়েছিল সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভবনটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে ভবনটিকে গণশৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। প্রায় এক বছর ধরে মলমূত্র জমে থাকার কারণে উৎকট গন্ধও তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুলিস্তানে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১০ তলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ২০১৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করেছিলেন দলের সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল।

জামায়াত আমির
দল নিয়ন্ত্রণ করেছি দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যারা নিজেদের দলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবে না।’
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বেগমপাড়া কিংবা পিসিপাড়া নেই উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা কখনোই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি এবং যাবেনও না।
জামায়াত আমির বলেন, বিগত ৫৪ বছরে জামায়াতে ইসলামী দেশের একজন নাগরিকের প্রতিও অবিচার করেনি, জুলুম করেনি। জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি কিংবা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হননি, হবেও না। জামায়াত দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের সংকটকালে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বিদেশ থেকে দেশে এসে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আধিপত্যবাদের দোসর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। যে কারণে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিচারিক হত্যা করা হয়েছে।
পৃথিবীর একমাত্র অসামপ্রদায়িক ধর্ম ইসলাম উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, ধর্ষক, খুনি, লুটেরাদের ভয় আছে—এ জন্য তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আমিরে জামায়াত বলেন, সব ধর্মের নারী-পুরুষই রাষ্ট্রের কাছে সমান। রাষ্ট্র ধর্ম বা লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য করতে পারে না। ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ইসলাম ও দেশপ্রেমিক সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে চায় জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের রাজনীতি হবে কেবলই মানুষ ও মানবতার কল্যাণে।
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রমুখ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্যই জামায়াতে ইসলামী ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জামায়াতে ইসলামীকে কোনো ষড়যন্ত্রই অগ্রযাত্রা থেকে থামাতে পারেনি, পারবেও না। একটি বৈষম্যহীন, সুখী-সমৃদ্ধ, আধুনিক, কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

নীলক্ষেতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এইচএসসির ব্যাবহারিক খাতা
- অঙ্কনসহ পূর্ণ খাতা কিনে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার মান ও নৈতিক অবক্ষয়ের অভিযোগ
মানজুর হোছাঈন মাহি

এইচএসসি পরীক্ষার ব্যাবহারিক খাতা শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে লেখার কথা। কারণ এতে কেবল তথ্য নয়, শেখার প্রক্রিয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে ঠিক উল্টো। রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় এখন একটি সরল হিসাব—টাকা দিলেই মিলবে পুরো লেখা ও অঙ্কনসহ খাতা।
রাজধানীর খিলগাঁও মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফ আহমেদ (ছদ্মনাম) চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সে এখনো কোনো ব্যাবহারিক খাতা লেখেনি। কারণ জানতে চাইলে বলে, ‘সব খাতা নীলক্ষেত থেকে কিনে নেব।
শুধু শরীফ নয়, রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা ব্যাপক। তারা ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় নীলক্ষেত থেকে কেনে অঙ্কন ও লেখা সম্পন্ন ব্যাবহারিক খাতা—যেন একটি অবাধ বাণিজ্য এবং চলছে প্রকাশ্যেই।
নীলক্ষেতের দোকানে সরেজমিন : ‘লিখে দিচ্ছে আমাদের লোক’
শিক্ষার্থী পরিচয়ে ঢাকার নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাবহারিক খাতার এই ‘বাজার’ বেশ সুসংগঠিত।
১৩৮ নম্বর দোকান ‘হ্যাপি বুক হাউজ’-এ গিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের খাতা চাইলে দোকানদার বলেন, ‘পেয়ে যাবেন, আজকেই দেওয়া যাবে। একদম আপডেট খাতা।
৯৪ নম্বর দোকান ‘সালমা বই ঘর’-এ গেলে পুরো বিজ্ঞান বিভাগের এক সেট খাতা দেখানো হয়। রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত ও আইসিটি—সব বিষয়ের খাতা অঙ্কনসহ প্রস্তুত। দোকানদার জানান, প্রতিটি খাতা ৩০০ টাকা, আইসিটির জন্য ২০০ টাকা—মোট দাম তিন হাজার ৪০০ টাকা।
১০৩ নম্বর দোকান ‘ইব্রাহীম মেডিকেল বুক হাউজ’-এও একই চিত্র। প্রশ্ন করলে দোকানি বলেন, ‘আমাদের লোক আছে, তারাই লিখে দেয়।’ আবার ‘হ্যাপি বুক হাউজ’-এর একজন বলেন, ‘নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রীরা এগুলো লেখেন ও আঁকেন।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা শিক্ষাব্যবস্থার ভয়াবহ এক অনিয়ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশীদ বলেন, “ব্যাবহারিক খাতার কেনাবেচা এখন এক ধরনের ‘স্টার্টআপ বিজনেস’-এ পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিখছে না, বরং শিখছে কিভাবে অর্থের বিনিময়ে পাস করা যায়।”
তিনি আরো বলেন, ‘এই সংস্কৃতি শিক্ষক, প্রিন্সিপাল ও প্রশাসনের জেনেও চোখ বন্ধ রাখার ফল। ওপেন সিক্রেট এই দুর্নীতি শুধু শিক্ষার মান নয়, একটি জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে।’
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আরেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘এটি একাডেমিক ফ্রডের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। টার্ম পেপার, থিসিস, ব্যাবহারিক—সবই টাকা দিয়ে কেনা যাচ্ছে। এখনই না থামালে ভবিষ্যতে আমরা আত্মপ্রবঞ্চনার মধ্যে ডুবে যাব।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহসানুল কবির বলেন, ‘ব্যাবহারিক খাতার কেনাবেচা গুরুতর সমস্যা। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের খাতা নিজেরা লেখায় না, তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের উচিত কেনা খাতা গ্রহণ না করা। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কড়া মনিটরিং ও অডিট চালু করতে হবে।’