হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে খরস্রোতা খোয়াই নদীর ওপর নির্মিত শত বছরের পুরনো রেল সেতুর অবস্থা নাজুক হওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। সেতুর ওপর রেললাইনের অনেক স্লিপার ক্ষয় হয়ে সরে গেছে। বাঁশ দিয়ে আটকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে স্লিপারগুলোকে। এ ছাড়া শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় আরো ছয়টি সেতু এবং পুরো রেললাইনের অবস্থায়ই নড়বড়ে।
বাঁশে আটকানো স্লিপারে খোয়াই রেল সেতু!
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

হবিগঞ্জ : ঢাকা-সিলেট রেলপথের হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ অংশে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সাতটি সেতুর অবস্থা একেবারেই নাজুক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দুর্বল হয়ে পড়েছে সেতুগুলো। মাঝেমধ্যে মেরামতের উদ্যোগ নিলেও কাজ হয় নামেমাত্র। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই ট্রেন চলাচল করছে।
গতকাল বুধবার শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনের অদূরে শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার এলাকায় খোয়াই সেতুতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিনের পুরনো স্লিপারগুলো প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। দুর্বল হয়ে গিয়ে এক জায়গার স্লিপার অন্য জায়গায় সরে গেছে। সেতুর পিলারগুলোতে দেখা দিয়েছে একাধিক ফাটল। যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানায়, বাকি পাঁচটি সেতুরও একই অবস্থা।
এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট পথের শায়েস্তাগঞ্জ অংশে একাধিক স্থানে রেললাইনের অবস্থাও নাজুক। এগুলো মেরামতের উদ্যোগ না নিলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুতাং এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম মজনু জানান, শুধু ব্রিজ নয়, পুরো লাইনেই দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। ট্রেন চলাচলের সময় রীতিমতো কাঁপতে থাকে লাইন। এভাবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে চলাচলে যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
শায়েস্তাগঞ্জ জহুরচান বিবি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো সিলেট অঞ্চলের নেতাদের হাতেই ছিল। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দিক থেকেও সিলেট বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এ ছাড়া গ্যাস, পর্যটন, চা পাতা, পাথর, মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে; কিন্তু সিলেট বিভাগের রেললাইনের ব্যাপারে আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। কর্তৃপক্ষ সময়মতো উদ্যোগ না নেওয়ায় কুলাউড়ায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনার দায় রেল কর্তৃপক্ষের।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অবস্থা দেখলে মনে হয়, রেল কর্তৃপক্ষ আমাদের দয়া করছে। অথচ অন্যান্য লাইনে নতুন নতুন বগি দিয়ে ট্রেন চালানো হচ্ছে।’ তিনি অবিলম্বে এই রুটে রেললাইন ও ব্রিজগুলো মেরামতের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে ঢাকা-সিলেট রেলপথের শায়েস্তাগঞ্জে দায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রেললাইন মেরামতের কাজ চলছে। এ ব্যাপারে পরে কথা বলব।’
ময়মনসিংহ : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সেতু ভেঙে ট্রেন দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হওয়ার পর থেকে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর রেল নির্মিত সেতুটি নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ফেসবুকে নিজেদের আতঙ্কের কথা জানিয়ে রেলওয়ের বক্তব্য জানতে চেয়েছে অনেক মানুষ। এ অবস্থায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে, সেতুটি পুরনো হলেও এটি ঝুঁকিমুক্ত। সেতুটি পরীক্ষা করে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।
রেলওয়ের লোকজন জানিয়েছে, সেতুটি শত বছর আগের নির্মিত। ট্রেনগুলো চলাচলের সময় গতি অনেকটা কমিয়ে দেওয়া হয়। তবে সেতুটি নাজুক হওয়ার কারণেই গতি কমানো হয় কি না তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানাতে পারেননি।
সেতুটিতে কর্মকর্তারা কোনো ত্রুটি না দেখলেও সেতুর আশপাশে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নীরব।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ রেল বিভাগের প্রকৌশল শাখার সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সুকুমার বিশ্বাস বলেন, সেতুটি শত বছরের পুরনো। তবে তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এতে এখনো কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলে বা দেখা দিলে তাঁরা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
লালমনিরহাট : জেলার বুড়িমারী রেলপথের বাউরা রেলস্টেশন থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে ১ নম্বর মেইন লাইনের আপ পয়েন্টে (হাতিবান্ধা দিকে) অনেক কাঠের স্লিপার ভেঙে ও পচে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় অনেক কাঠের স্লিপারে ক্লিপও নেই। কিছু পিন (ক্লিপ) কাঠ দিয়ে খোজ দিয়েছে। যেসব স্থানে আছে তা আবার নড়বড়ে। একই অবস্থা বিপরীত দিকে বাউরা রেলস্টেশন থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে ১ নম্বর মেইন লাইনের ডাউন পয়েন্টেও (পাটগ্রাম দিকে)। এর ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেইন লাইনের আপ ও ডাউন পয়েন্টে কাঠের স্লিপার নষ্ট হওয়ায় পিন (ক্লিপ) নড়বড়ে হয়ে গেছে। কিছু জায়গায় পিন (ক্লিপ) খোয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মতিয়ার রহমান ও মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘বাউরা রেলস্টেশনে আপ এবং ডাউন পয়েন্টে অনেক কাঠের স্লিপার পচে গেছে। কোনো কোনো স্থানে পিন (ক্লিপ) নেই। অনেক পিন (ক্লিপ) কাঠ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থা থাকলে এখানে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিইএম) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি না দেখলে তো বুঝব না। আপনার কাছে হয়তো মনে হয় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি এখনই আমাদের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে বলে দিচ্ছি বিষয়টি দেখার জন্য। তাদের কাছ থেকে সত্যতা যাচাই করব, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমি নিজে ওই লাইনে যখন যাব তখন দেখব।’
সম্পর্কিত খবর

মোদি ও শেহবাজ শরিফের শোক
- বাংলাদেশে জাতিসংঘের কার্যালয়ের শোক
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। একই ঘটনায় পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারও শোক প্রকাশ করেছেন।
নরেন্দ্র মোদি এক্স বার্তায় লিখেছেন, ‘ঢাকায় একটি মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত ও দুঃখিত বোধ করছি। নিহতদের মধ্যে অনেকেই তরুণ শিক্ষার্থী।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এক বার্তায় লিখেছেন, ‘ঢাকার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত।
এদিকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক্স বার্তায় লিখেছেন, ‘ঢাকায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় মূল্যবান প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। নিহতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।
এদিকে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধিদল। গতকাল এক শোকবার্তায় ইইউ প্রতিনিধিদল বলেছে, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এ দুর্ঘটনায় নিহত, তাদের পরিবারবর্গ এবং ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’
বার্তায় আরো উল্লেখ করা হয়, ‘আমাদের হৃদয় শোকাহত—আমরা নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের কার্যালয় গতকাল এক ফেসবুক বার্তায় বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা
সরকারি চাকরিতে জুলাই যোদ্ধাদের কোটা থাকছে না
বিশেষ প্রতিনিধি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা রাখা হবে না বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারকে সরকারিভাবে ফ্ল্যাট দেওয়া এবং সরকারি চাকরিতে তাদের জন্য কোটা রাখা হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাঁদের পুনর্বাসনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুসারে মন্ত্রণালয় যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
তিনি আরো বলেন, ‘পুনর্বাসন নানাভাবে হতে পারে। তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি যেভাবে পুনর্বাসিত হতে চান সেভাবে করা হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সমকক্ষ করা হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওইভাবে (সমকক্ষ) কেউ দেখছে না। আমরাও দেখছি না। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা পেতে ৩০ থেকে ৩৫ বছর লেগেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্তকরণ, আহতদের চিকিৎসা ব্যয় এবং তাঁদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাসহ পুনর্বাসন করার উদ্দেশ্যে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ২৮ এপ্রিল ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠন করা হয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের জুলাই শহীদ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে সরকার ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী মোট ৮৪৪ জন শহীদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে প্রকাশ করে।
আহত হওয়ার ধরন অনুসারে জুলাই যোদ্ধাদের তিনটি শ্রেণিভুক্ত করে ৪৯৩ জনকে ‘ক’ শ্রেণিতে, ৯০৮ জনকে ‘খ’ শ্রেণিতে এবং এক হাজার ৬৪২ জনকে ‘গ’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। সম্প্র্রতি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে ‘ক’ শ্রেণির ১১৪ জন, ‘খ’ শ্রেণির ২১৩ জন এবং ‘গ’ শ্রেণির এক হাজার ৪৪২ জন, মোট এক হাজার ৭৬৯ জনের তালিকা পাওয়া গেছে, যা যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ
একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান না থাকার প্রস্তাবে বিএনপির আপত্তি
- বিমান দুর্ঘটনার খবরে সংলাপ মুলতবি, আজ আবার বসবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা থাকার প্রশ্নে একমত হলেও প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি থাকার প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। তবে গুরুত্বপূর্ণ ওই তিনটি পদে একই ব্যক্তির থাকার বিষয়ে বিধি-নিষেধ আরোপে সম্মত নয় বিএনপি।
এই ইস্যুতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আর সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে আলোচনাকালে কমিশনের প্রস্তাবে বিএনপি সমর্থন জানালেও ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) বাম প্রগতিশীল দলগুলো।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৬তম দিনে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়। দুপুরের খাবার বিরতির পর বিমান দুর্ঘটনার খবর পৌঁছলে শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর সংলাপ মুলতবি করা হয়।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। আমি, আপনি ও আমরা সবাই যে জায়গায় উপনীত হয়েছি, তার সাফল্য ও ব্যর্থতা সবকিছুর ঊর্ধ্বে হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। একটা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলাম আমরা।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘৫৩ বছর ধরে আমরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধানের চার মূলনীতি বাতিল করে সংস্কার কমিশন নতুন প্রস্তাব করেছিল, আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। আবার নতুন করে প্রস্তাব এনেছেন, যার মধ্যে চার মূলনীতি নাকচ করা হয়েছে। তাই আমরা আপত্তি জানিয়েছি। এ ক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে বলেছি, প্রস্তাবটি হতে পারে, ‘সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির সঙ্গে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ উল্লেখিত হবে। অন্যথায় এটা গ্রহণ করা যাবে না।” সিপিবি ক্ষমতায় গেলে একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান থাকবেন না বলে জানান তিনি।
এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁর দল মনে করে, দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত থাকা দরকার। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কোনো দলের সংসদীয় কমিটি যদি মনে করে যে তারা দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবে, তাহলে গণতান্ত্রিক এ প্রক্রিয়ার সুযোগ বন্ধ করা ঠিক হবে না। প্রধানমন্ত্রী এবং তার সঙ্গে সংসদ নেতার ভূমিকাটা প্রায় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, এই দুই ক্ষেত্রে একত্রে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সংসদ নেতা থাকতে কোনো অসুবিধা নেই।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘গণতন্ত্রে কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁকে অপশন হিসেবে রাজনৈতিক দলের প্রধানের পদটা ছাড়তে হবে, এ রকম কোনো চর্চা সাধারণত দেখা যায় না। এটা (দলীয় পদ) তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার।’
সংলাপ শেষে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘এক ব্যক্তি যাতে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন সে বিষয়ে সংবিধানে নীতি প্রণয়ন করার প্রস্তাবকে আমরা সমর্থন জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি হলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দলীয়করণ কিভাবে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তা আমরা অতীতে বহুবার দেখেছি।’
তিনি বলেন, বিএনপি উপস্থাপিত ৩১ দফার চতুর্থ পয়েন্টে আইনসভা, মন্ত্রিসভা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, তার সঙ্গে এই প্রস্তাব সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
বিমান দুর্ঘটনায় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ মুলতবি : রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনের পরবর্তী অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ শোকবার্তা পাঠ করেন। এরপর নিহত সদস্যের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয় এবং তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়। কমিশনের সভায় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আবারও এই সংলাপ বসবে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আদালতের নির্দেশে গোপালগঞ্জে তিনজনের মরদেহ উত্তোলন
- নিরীহরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় : বিএনপি
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

আদালতের নির্দেশে গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে গোপালগঞ্জ পৌর কবরস্থান থেকে ইমন তালুকদার ও রমজান কাজীর লাশ এবং টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী থেকে সোহেল কাজীর লাশ উত্তোলন করা হয়।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর মো. সাজেদুর রহমান বলেন, নিহতের ঘটনায় মামলার বাদীরা গত রবিবার আদালতে নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলনের আবেদন করলে আদালত লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সী ও রন্টি পোদ্দারের উপস্থিতিতে নিহত রমজান কাজী, ইমন তালুকদারের লাশ গোপালগঞ্জের গেটপাড়া পৌর কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়।
এদিকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মারুফ দস্তগির সোহেল রানা মোল্লার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করে। পরে তিনটি লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ আড়াই শ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। এ ছাড়া অন্য দুজনের মধ্যে দীপ্ত সাহার মরদেহ সৎকার ও রমজান মুন্সীর মরদেহের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করা হয়।
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবান : গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাকর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় কোনো নিরীহ শান্তিপ্রিয় নাগরিক যাতে হয়রানি না হয়, সেদিকে প্রশাসনের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে জেলা বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির আহবায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, গত বুধবার গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা বা থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। আগামীতে যেকোনো নিবন্ধিত বৈধ রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ ও মিটিং-মিছিলে যাতে কোনো অপশক্তি কোনো প্রকার আক্রমণ বা বাধার সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য জেলা প্রশাসকসহ সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখার অনুরোধ রইল।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন সমাবেশ শুরুর আগে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত অঙ্গসহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এনসিপির সমাবেশ পণ্ড করতে সকাল থেকে গোপালগঞ্জ শহরে আসার সব সড়কের পাশে থাকা গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে। সেই সঙ্গে কর্তব্যরত সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের মারপিট, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে জনমনে ভীতির সৃষ্টি করে। এ ছাড়া সরকারি স্থাপনায় হামলা, ও ভাঙচুর করে এবং গোপালগঞ্জ জেলা সদরে থাকা বিএনপি নেতাদের বেশ কয়েকটি তোরণ ভাঙচুর করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট কাজী আবুল খায়ের, বিএনপি নেতা ডা. কে এম বাবর, অ্যাডভোকেট তৌফিকুল ইসলামসহ বিএনপি ও সহযোয়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।